বাণী

শূন্য আজি গুল-বাগিচা যায় কেঁদে দখিন হাওয়া।
রাঙা গুলের বাজার আজি স্মৃতির কাটায় ছাওয়া।।
ধূলি ঢাকা ফুল সমাধি আজি সে গুলিস্তানে
ছিল যথায় খুশির জলসা বুলবুলির গজল গাওয়া।।
শুকনো পাতায় ছেয়েছে আজ সাকির চরণ রেখা
নাহি সেথায় বঁধুর লাগি বঁধূর আসা-যাওয়া।।
নাহি মিঠা পানির নহর আছে প'ড়ে বালুচর
এ যেন গো হৃদয়ের ভরা-ডুবির পথ বাওয়া।।

বাণী

ঝিলের জলে কে ভাসালো নীল শালুকের ভেলা
		মেঘলা সকাল বেলা।
বেণু বনে কে খেলে রে পাতা ঝরার খেলা।
		মেঘলা সকাল বেলা।।
	কাজল বরণ পল্লী মেয়ে
	বৃষ্টি ধারায় বেড়ায় নেয়ে,
ব'সে দিঘীর ধারে মেঘের পানে রয় চেয়ে একেলা।।
দুলিয়ে কেয়া ফুলের বেনী শাপলা মালা প'রে
খেলতে এলো মেঘ পরীরা ঘুমতী নদীর চরে।
বিজলিতে কে দূর বিমানে, সোনার চুড়ির ঝিলিক হানে,
বনে বনে কে বসালো যুঁই-চামেলির মেলা।।

বাণী

মনের রঙ লেগেছে বনের পলাশ জবা অশোকে
রঙের ঘোর জেগেছে পারুল কনক-চাঁপার চোখে।।
মুহু মুহু বোলে কুহু কুহু কোয়েলা, মুকুলিত আমের ডালে
				গাল রেখে ফুলের গালে।
দোয়েলা দোল দিয়ে যায়, ডালিম ফুলের নব-কোরকে।।
ফুলের পরাগ ফাগের রেণু ঝুরু ঝুরু ঝরিছে গায়ে
				ঝিরি ঝিরি চৈতী বায়ে
বকুল বনে ঝিমায় মধুপ মদির নেশার ঝোঁকে।।
হরিত বনে হরষিত মনে হোরির হর্‌রা জাগে
				রঙিলা অনুরাগে
নূতন প্রণয়-সাধ জাগে চাঁদের রাঙা আলোকে।।

বাণী

মহুয়া বনে লো মধু খেতে, সই,
বাহিরে চাঁদ এলো, ঘরে মোর চাঁদ কই।।
আমার নাচের সাথী কোথা পাইনে দেখা
সরে না পা ওলো নাচতে একা
সে বিনে সখী লো আমি আমার নই।।
মিছে মাদলে তাল হানে মাদলিয়া,
সে কি গেল বিদেশ, মোরে না বলিয়া।
দূরে বাঁশি বাজে পলাশ পিয়াল বনে,
বুঝি ঐ বঁধু মোর, যেন লাগে মনে
সে মোরে ভুলে নাচে কাহার সনে?
সে যে জানতো না সজনী কভু আমি বৈ।।

বাণী

আমায় নহে গো – ভালবাস শুধু ভালবাস মোর গান।
বনের পাখিরে কে চিনে রাখে গান হ’লে অবসান।।
চাঁদেরে কে চায় – জোছনা সবাই যাচে,
গীত শেষে বীণা প’ড়ে থাকে ধূলি মাঝে;
তুমি বুঝিবে না বুঝিবে না —
আলো দিতে পোড়ে কত প্রদীপের প্রাণ।।
যে কাঁটা-লতার আঁখি-জল, হায়, ফুল হ’য়ে ওঠে ফুটে —
ফুল নিয়ে তায় দিয়েছ কি কিছু শূন্য পত্র-পুটে!
সবাই তৃষ্ণা মিটায় নদীর জলে,
কী তৃষা জাগে সে নদীর হিয়া-তলে —
বেদনার মহাসাগরের কাছে কর সন্ধান।।

বাণী

ব্রজ–গোপী খেলে হোরী
খেলে আনন্দ নবঘন শ্যাম সাথে।
রাঙা অধরে ঝরে হাসির কুম্‌কুম্‌
অনুরাগ–আবীর নয়ন–পাতে।।
পিরীতি–ফাগ মাখা গোরীর সঙ্গে
হোরি খেলে হরি উন্মাদ রঙ্গে।
বসন্তে এ কোন্ কিশোর দুরন্ত
রাধারে জিনিতে এলো পিচ্‌কারী হাতে।।
গোপীনীরা হানে অপাঙ্গ খর শর ভ্রুকুটি ভঙ্গ
অনঙ্গ আবেশে জর জর থর থর শ্যামের অঙ্গ।
শ্যামল তনুতে হরিত কুঞ্জে
অশোক ফুটেছে যেন পুঞ্জে পুঞ্জে
রঙ–পিয়াসি মন ভ্রমর গুঞ্জে
ঢালো আরো ঢালো রঙ প্রেম–যমুনাতে।।