বাণী

বাঁধিয়া দুইজনে দুঁহু ভুজ বন্ধনে কাঁদিছে শ্যাম রাই।
মিলনের মাঝে এত বেদনা যে বাজে গো – দেখি নাই, শুনি নাই।।
সাগরে মিশে নদী, তবু কাঁদে নিরবধি, বুঝি না কেন গো –
বুকে যত পায়, তত তৃষ্ণা বেড়ে যায়, সাধ মেটে না যেন গো।।
সাধ কি মেটে গো চাঁদকে হেরে চকোরিণীর সাধ কি মেটে গো –
মেঘ দেখে চাতকিনীর সাধ কি মেটে গো।
হের, নব নাগরি নব নাগর মাতিল প্রেম-রসে,
নব প্রভাত-কমলে যেন বন ভ্রমর বসে।
নব সোনার শতদলে যেন নব মেঘের ছায়া
কনকমালা ঘিরিল যেন বন নীল গিরি কায়া।
গিরিধারীরে ধরিল, ধিরিধিরি রাধা গিরিধারীরে ধরিল।।
আধ অধরে ধরে নাক’ হাসি, আধ-অধরে বাঁশি,
হেরি’ আধ অঙ্গ দাস হতে চায়, আধ অঙ্গ দাসী;
শ্রীচরণ ঘিরিয়া মন মধুকর গাহে, চরণাম্বুজ-রজ মাধুকরী চাহে।।
বলে, ভিক্ষা দাও, ভিক্ষা দাও –
ওই চরণ কমল-মধু ভিক্ষা দাও, ভিক্ষা দাও,
ঐ যুগল-রূপ রাধা-শ্যাম দেখি যেন অবিরাম (ভিক্ষা দাও, ভিক্ষা দাও)
আমি আনন্দ-যমুনা হয়ে, চরণ ধুয়ে যাব বয়ে, (ভিক্ষা দাও, ভিক্ষা দাও)
আমি নিত্য হৃদি-ব্রজধামে
হেরিব মোর রাধা-শ্যামে, (ভিক্ষা দাও, ভিক্ষা দাও)।।

বেতার গীতিচিত্রঃ ‌‘যুগল মিলন’

বাণী

দ্বৈত	:	ওগো নন্দ দুলাল নাচে ছন্দতালে
স্ত্রী	:	মধু মঞ্জির বোলে মণি কুন্তল দোলে
পুরুষ	:	চন্দন লেখা শোভে চারুভালে॥
স্ত্রী	:	রস যমুনায় জাগে ঢেউ উতরোল
পুরুষ	:	ব্রজগোপিকার প্রাণে লাগে তারি হিল্লোল
দ্বৈত	:	রাস পূর্ণিমা রাতে শিখী নাচে সাথে সাথে
		ফুল দোলে কুঞ্জেরই বকুল ডালে॥
স্ত্রী	:	নাচে নন্দ দুলাল বাজে মোহন বেণূ
পুরুষ	:	অঙ্গের লাবনিতে আলো করে অবনিতে
দ্বৈত	:	হাসিতে ঝরায় ফুল পরাগ রেণু।
স্ত্রী	:	রাঙা পায়ে রুমুঝুমু বাজে মধুর
পুরুষ	:	জীবন মরণ তার যুগল নূপুর
দ্বৈত	:	মুগ্ধ তারকা শশী রাতের দেউলে বসি
		আরতি প্রদীপ শিখা নিত্য জ্বালে॥

বাণী

তব ঐ দু’টি চঞ্চল আঁখি।
আদর সোহাগ প্রেম-অনুরাগ —
	মান অভিমান মাখামাখি।।
বুঝিতে পারি না তারই ভাষা
তবু মনে বুঝিবার আশা,
তাই বুঝি হায় নিল বাসা —
	ওরই মাঝে মোরই আঁখি।।
মুদিত কমলে ভ্রমর যেন
বন্দি হইয়া রহি হেন,
আঁখি ফিরাতে পারি না কেন —
	ওরই মাঝে ডুবে থাকি।।

বাণী

শক্তের তুই ভক্ত শ্যামা (তোরে) যায় না পাওয়া কেঁদে।
(তাই) শাক্ত সাধক রাখে তোরে ভক্তি-ডোরে বেঁধে।।
(মা) শাক্ত বড় শক্ত ছেলে
(সে) জানে দড়ি আলগা পেলে
যাবি পালিয়ে চোখে ধূলা দিয়ে মায়া জালে বেঁধে।।
(তুই) সুরাসুরে ভুলিয়ে রাখিস্‌ ইন্দ্রত্বের মোহে,
(ওমা) গুণের কিছু ঘাট নাই তোর নির্গুণ তাই কহে।
তোর মায়াতে ভুলে গিয়ে,
বিষ্ণু ঘুমান লক্ষী নিয়ে
(তোর) অন্ত খুঁজে শিব হয়েছেন ভবঘুরে বেদে।।

বাণী

তুমি	বর্ষার ঝরা চম্পা, তুমি যূথিকা-অশ্রুমতী।
তুমি	কুহেলি-মলিন ঊষা, তুমি বেদনা-সরস্বতী।।
	কদম-কেশর-কীর্ণা
তুমি	পুষ্প-বীথিকা শীর্ণা,
হ’লে	ধরণীতে অবতীর্ণা —
	ক্ষীণ তারকা স্নিগ্ধ জ্যোতি।।
	মন্দ-স্রোতা মন্দাকিনী তুমি কি অলকানন্দা,
	আঁধারের কালো-কুন্তল-ঢাকা তুমি কি ধূসর সন্ধ্যা?
			পাষাণ-দেবতা-চরণে
			তুমি মরেছ অমর মরণে,
তুমি	অঞ্জলি ঝরা কুসুমের, তুমি ব্যর্থ ব্যথা-আরতি।।

বাণী

মাগো আমি তান্ত্রিক নই তন্ত্র মন্ত্র জানি না মা।
আমার মন্ত্র যোগ-সাধনা ডাকি শুধু শ্যামা শ্যামা।।
	যাই না আমি শ্মশান মশান
	দিই না পায়ে জীব বলিদান,
খুঁজতে তোকে খুজি না মা অমাবস্যা ঘোর ত্রিযামা।।
ঝিল্লী যেমন নিশীথ রাতে একটানা সুর গায় অবিরাম
তেমনি করে নিত্য আমি জপি শ্যামা তোমারি নাম।
	শিশু যেমন অনায়াসে
	জননীরে ভালোবাসে,
তেমনি সহজ সাধনা মোর তাতেই পাব তোর দেখা মা।।