বাণী

বিরহী বেণুকা যেন বাজে সখি ছায়ানটে।
উথলি’ উঠিল বারি শীর্ণা যমুনাতটে।।
	নীরব কুঞ্জে কুহু
	গেয়ে ওঠে মুহু মুহু,
আঁধার মধু বনে বকুল চম্পা ফোটে।।
সহসা সরস হল বিরস বৃন্দাবন,
চন্দ্রা যামিনী হাসে খুলি মেঘ-গুণ্ঠন।
	সে এলো, তারে নিরখি’
	পরান কি রবে সখি,
আবেশে অঙ্গ মম থরথর কেঁপে ওঠে।।

বাণী

দরিয়ায় ঘোর তুফান, পার কর নাইয়া।
রজনী আঁধার ঘোর, মেঘ আসে ছাইয়া।।
যাত্রী গুনাহ্গার, জীর্ণ তরুণী,
অসীম পাথারে কাঁদি পথ হারাইয়া।।
হে-চির কাণ্ডারী, পাপে তাপে বোঝাই তরী
তুমি না করিলে পার, পার হব কেমন করি’,
সুখ-দিনে ভুলে’ থাকি, বিপদে তোমারে স্মরি –
ডুবাবে কি তব নাম আমারে ডুবাইয়া।।
মা’র কাছে মার খেয়ে শিশু যেমন মাকে ডাকে
যত দাও দুখ শোক, ডাকি ততই তোমাকে,
জানি শুধু তুমি আছ, আসিবে আমার ডাকে –
তোমারি এ তরী প্রভু, তুমি চল বাহিয়া।।

বাণী

ওগো মা — ফাতেমা ছুটে আয়, তোর দুলালের বুকে হানে ছুরি।
দ্বীনের শেষ বাতি নিভিয়া যায় মাগো, বুঝি আঁধার হ’ল মদিনা-পুরী।।
	কোথায় শেরে খোদা, জুলফিকার কোথা,
	কবর ফেঁড়ে এসো কারবালা যথা —
তোমার আওলাদ বিরান হ’ল আজি, নিখিল শোকে মরে ঝুরি’।।
কোথায় আখেরী নবী, চুমা খেতে তুমি, যে গলে হোসেনের
সহিছ কেমনে? সে গলে দুশমন হানিছে শমসের।
	রোজ্‌হাশরে নাকি কওসরের পানি
	পিয়াবে তোমরা গো গোনাহ্‌গারে আনি,
দেখ না কি চেয়ে, দুধের ছেলেমেয়ে পানি বিহনে মরে পুড়ি।।

বাণী

কেন চঞ্চল অঞ্চল দুলিয়া ওঠে রহি’ রহি’।
মুহু মুহু কুহু কুহু কুহু যে কহে এলে কে বিরহী।।
কেন নূপুর বেজে ওঠে ছন্দে
দোলা লাগে অঙ্গে আনন্দে,
দখিন হাওয়া কেন অধীর হল হেন —
কুসুমের কানে যায় কি কথা কহি’।।

বাণী

	মোরা ছিনু একেলা, হইনু দু’জন।
	সুন্দরতর হ’ল নিখিল ভুবন।।
আজি	কপোত-কপোতী শ্রবণে কুহরে,
	বীণা বেণু বাজে বন-মর্মরে।
	নির্ঝর-ধারে সুধা চোখে মুখে ঝরে,
	নূতন জগৎ মোরা করেছি সৃজন।।
	মরিতে চাহি না, পেয়ে জীবন-অমিয়া!
	আসিব এ কুটিরে আবার জনমিয়া।
	আরো চাই আরো চাই অশেষ জীবন।।
আজি	প্রদীপ-বন্দিনী আলোক-কন্যা,
	লক্ষ্মীর শ্রী লয়ে আসিল অরণ্যা,
	মঙ্গল-ঘটে এলো নদীজল-বন্যা,
	পার্বতী পরিয়াছে গৌরী-ভূষণ।।

বাণী

আমি ভাই ক্ষ্যাপা বাউল, আমার দেউল আমারি এই আপন দেহ।
আমার এ প্রাণের ঠাকুর নহে সুদূর অন্তরে মন্দির-গেহ।।
সে থাকে সকল সুখে সকল দুখে আমার বুকে অহরহ,
কভু তায় প্রণাম করি, বক্ষে ধরি, কভু তা’রে বিলাই স্নেহ।।
ভুলায়নি আমারি কুল, ভুলেছে নিজেও সে কুল,
ভুলে বৃন্দাবন গোকুল মোর সাথে মিলন বিরহ।
সে আমার ভিক্ষা-ঝুলি কাঁধে তুলি’, চলে ধূলি-মলিন পথে,
নাচে গায় আমার সাথে একতারাতে, কেউ বোঝে, বোঝে না কেহ।।