বাণী

কোন্ মরমীর মরম-ব্যথা আমার বুকে বেদ্না হানে
			জানি গো, সেও জানেই জানে।
আমি কাঁদি তাইতে যে তার ডাগর চোখে অশ্রু আনে,
			বুঝেছি তা প্রাণের টানে।।
বাইরে বাঁধি মনকে যত
ততই বাড়ে মর্ম-ক্ষত,
মোর সে ক্ষত ব্যথার মতো
			বাজে গিয়ে তারও প্রাণে,
			কে কয়ে যায় কানে কানে।।
উদাস বায়ু ধানের ক্ষেতে ঘনায় যখন সাঁঝের মায়া,
দুই জনারই নয়ন-পাতায় অম্‌নি নামে কাজল ছায়া।।
দুইটি হিয়াই কেমন কেমন —
বদ্ধ ভ্রমর পদ্মে যেমন,
হায়,অসহায় মূকের বেদন,
			বাজ্‌লো শুধু সাঁঝের গানে,
			পূবের বায়ুর হুতাশ তানে।।

বাণী

মৃত্যু-আহত দয়িতের তব শোনো করুণ মিনতি।
অমৃতময়ী মৃত্যুঞ্জয়ী হে সাবিত্রী সতী।।
	ঘন অরণ্যে বাজে মোর স্বর
	মোরি রোদনে উঠিয়াছে ঝড়,
সাঁঝের চিতায় ঐ নিভে যায়, মম নয়নের জ্যোতি
			হে সাবিত্রী সতী!
যুগে যুগে তুমি বাঁচায়েছ মোরে মৃত্যুর হাত হতে
			দেবী সাবিত্রী সতী!
মোরি হাত ধ’রে রাজপুরী ছেড়ে চলেছ বনের পথে
			বিধবা অশ্রুমতী!
	জীবনের তৃষা মেটেনি আমার
	তুমি এসে মোরে বাঁচাও আবার,
মৃত্যু তোমারে করিবে প্রণাম, ধরার অরুন্ধতি
			হে সাবিত্রী সতী!

বাণী

আমি	বন্ধন-হারা কুমারীর বেণী, তন্বী-নয়নে বহ্ণি,
আমি	ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম উদ্দাম, আমি ধন্যি!
আমি	উন্মন মন উদাসীর,
আমি	বিধবার বুকে ক্রন্দন-শ্বাস, হা হুতাশ আমি হুতাশীর।
আমি	বঞ্চিত ব্যথা পথবাসী চির-গৃহহারা যত পথিকের,
আমি	অবমানিতের মরম-বেদনা, বিষ-জ্বালা, প্রিয়-লাঞ্ছিত বুকে গতি ফের!
আমি	অভিমানী চির-ক্ষুব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যথা সুনিবিড়,
	চিত-চুম্বন-চোর-কম্পন আমি থর-থর-থর প্রথম পরশ কুমারীর!
আমি	গোপন-প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল-ক’রে দেখা অনুখন,
আমি	চপল মেয়ের ভালোবাসা, তা’র কাঁকন-চুড়ির কন-কন!
আমি	চির-শিশু, চির-কিশোর,
আমি	যৌবন-ভীতু পল্লীবালার আঁচড় কাঁচলি নিচোর!
আমি	উত্তর-বায়ু, মলয়-অনিল, উদাস পূরবী হাওয়া,
আমি	পথিক-কবির গভীর রাগিণী, বেণু-বীণে গান গাওয়া।
আমি	আকুল নিদাঘ-তিয়াসা, আমি রৌদ্র-রুদ্র রবি,
আমি	মরু-নির্ঝর ঝর-ঝর, আমি শ্যামলিমা ছায়া-ছবি!
আমি	তুরীয়ানন্দে ছুটে চলি, এ কি উন্মাদ, আমি উন্মাদ!
আমি	সহসা আমারে চিনেছি, আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ!
আমি	অর্ফিয়াসের বাঁশরী,
	মহা-সিন্ধু উতলা ঘুমঘুম
	ঘুম্‌ চুমু দিয়ে করি নিখিল বিশ্বে নিঝ্‌ঝুম
	মম বাঁশরীর তানে পাশরি’।
আমি	শ্যামের হাতের বাঁশরী।
আমি	পরশুরামের কঠোর কুঠার,
	নিঃক্ষত্রিয় করিব বিশ্ব, আনিব শান্তি শান্ত উদার!
	মহা-বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত
আমি	সেই দিন হব শান্ত,
যবে	উত্‍পীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না —
	অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না —
	বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত
আমি	সেই দিন হব শান্ত।
আমি	বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন,
আমি	স্রষ্টা-সূদন, শোক-তাপ হানা খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন!
আমি	বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দেবো পদ-চিহ্ন!
আমি	খেয়ালী-বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন!
আমি	চির-বিদ্রোহী বীর —
	বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির!
	শির নেহারি’ আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির!
বল	বীর -
	বল উন্নত মম শির!
বল	বীর, বল বীর।

বাণী

মহুয়া বনে লো মধু খেতে, সই,
বাহিরে চাঁদ এলো, ঘরে মোর চাঁদ কই।।
আমার নাচের সাথী কোথা পাইনে দেখা
সরে না পা ওলো নাচতে একা
সে বিনে সখী লো আমি আমার নই।।
মিছে মাদলে তাল হানে মাদলিয়া,
সে কি গেল বিদেশ, মোরে না বলিয়া।
দূরে বাঁশি বাজে পলাশ পিয়াল বনে,
বুঝি ঐ বঁধু মোর, যেন লাগে মনে
সে মোরে ভুলে নাচে কাহার সনে?
সে যে জানতো না সজনী কভু আমি বৈ।।

বাণী

	চিকন কালো বেদের কুমার কোন্‌ পাহাড়ে যাও?
কোন্‌	বন-হরিণীর পরান নিতে বাঁশরি বাজাও?
	তুমি শিস্‌ দিয়ে গান গাও
	তুমি কুটিল চোখে চাও।।
	তীর-ধনুক নিয়ে সারাবেলা
	ও শিকারি, এ কি খেলা?
শাল গাছেরই ডাল ভাঙিয়া একটু বাতাস খাও।।
কাঁকর-ভরা কাঁটার পথে (আজ) নাই শিকারে গেলে,
অশথ্‌-তলে বাজাও বাঁশি (তোমার) হাতের ধনুক ফেলে’।
	তোমার কালো চোখের কাজল নিয়ে
	ঝিল উঠেছে ঝিল্‌মিলিয়ে, ঝিল্‌মিলিয়ে।
ঐ কমল ঝিলের শাপলা নিয়ে বাঁশিখানি দাও।।

বাণী

	ও, কুল-ভাঙ্গা নদী রে,
	আমার চোখের নীর এনেছি মিশাতে তোর নীরে।।
	যে লোনা জলের সিন্ধুতে নদী, নিতি তব আনাগোনা
	মোর চোখের জল লাগবে না ভাই তার চেয়ে বেশি লোনা।
	আমায় কাঁদাতে দেখে আসবিনে তুই রে,
	উজান বেয়ে ফিরে' নদী, উজান বেয়ে ফিরে'।।
		আমার মন বোঝে না, নদী —
তাই	বারে বারে আসি ফিরে তোর কাছে নিরবধি।
	তোরই অতল তলে ডুবিতে চাই রে,
		তুই ঠেলে দিস তীরে (ওরে)।।