জানি আমার সাধনা নাই আছে তবু সাধ
বাণী
জানি আমার সাধনা নাই আছে তবু সাধ। তুমি আপনি এসে দেবে ধরা দূর-আকাশের চাঁদ।। চকোর নহি মেঘও নহি আপন ঘরে বন্দী রহি’ আমি শুধু মনকে কহি কাঁদ নিশি দিন কাঁদ।। কূল-ডুবানো জোয়ার কোথা পাব হে সুন্দর? হে চাঁদ আমি সাগর নহি পল্লী-সরোবর। নিশীথ রাতে আমার নীরে, প্রেমের কুমুদ ফোটে ধীরে, মোর ভীরু প্রেম যেতে নারে ছাপিয়ে লাজের বাঁধ।।
গগনে পবনে আজি ছড়িয়ে গেছে রঙ
বাণী
গগনে পবনে আজি ছড়িয়ে গেছে রঙ নিখিল রাঙিল রঙে অপরূপ ঢঙ॥ চিত্তে কে নৃত্যে মাতে দোল লাগানো ছন্দে, মদির রঙের নেশায় অধীর আনন্দে, নাচিছে সমীরে পুষ্প, পাগল বসন্ত, বাজে মেঘ মৃদঙ।। প্রাণের তটে কামোদ নটে সুর বাজিছে সুমধুর — দুলে অলকানন্দ রাঙা তরঙ্গে শিখী কুরঙ্গ নাচে রঙিলা ভ্রুভঙ্গে, বাজিছে বুকে সুর-সারং কাফির সঙ্গ্
দূর আজানের মধুর ধ্বনি বাজে বাজে
বাণী
দূর আজানের মধুর ধ্বনি বাজে বাজে মসজিদেরই মিনারে। এ কী খুশির অধীর তরঙ্গ উঠলো জেগে’ প্রাণের কিনারে।। মনে জাগে হাজার বছর আগে ডাকিত বেলাল এমনি অনুরাগে, তাঁর খোশ এলেহান, মাতাইত প্রাণ গলাইত পাষাণ ভাসাইত মদিনারে প্রেমে ভাসাইত মদিনারে।। তোরা ভোল গৃহকাজ, ওরে মুসলিম থাম চল খোদার রাহে, শোন, ডাকিছে ইমাম। মেখে’ দুনিয়ারই খা, বৃথা রহিলি না-পাক, চল মসজিদে তুই, শোন মোয়াজ্জিনের ডাক, তোর জনম যাবে বিফলে যে ভাই এই ইবাদতে বিনা রে।।
সাম্যের গান গাই (দ্বিতীয় খন্ড)
বাণী
সাম্যের গান গাই- আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই! পুরুষ-হৃদয়হীন, মানুষ করিতে নারী দিল তারে আধেক হৃদয় ঋণ। ধরায় যাদের যশ ধরে না ক’ অমর মহামানব, বরষে বরষে যাদের স্মরণে, করি মোরা উৎসব, খেয়ালের বশে তাদের জম্ম দিয়াছে বিলাসী পিতা। লব-কুশে বনে ত্যাজিয়াছে রাম, পালন করেছে সীতা! নারী সে শিখাল শিশু-পুরুষেরে, স্নেহ প্রেম, দয়া মায়া, দীপ্ত নয়নে পরল কাজল বেদনার ঘন ছায়া। সে-যুগ হয়েছে বাসি, যে যুগে পুরুষ দাস ছিল না ক’, নারীরা আছিল দাসী! বেদনার যুগ, মানুষের যুগ, সাম্যর যুগ আজি, কেহ রহিবেনা বন্দী কাহারও, উঠিছে ডঙ্কা বাজি’! নর যদি রাখে নারীরে বন্দী, তবে এর পর যুগে আপনারি রচা ঐ কারাগারে পুরুষ মরিবে ভুগে। যুগের ধর্ম এই- পীড়ন করিলে সে পীড়ন এসে পীড়া দেবে তোমাকেই! স্বর্ণ-রৌপ্য অলঙ্কারের যক্ষপুরিতে নারী করিল তোমায় বন্দিনী, বল, কোন্ সে অত্যাচারী? যে ঘোম্টা তোমা করিয়াছে ভীরু, উড়াও সে আবরণ! দূর ক’রে দাও দাসীর চিহ্ন যেথা যত আভরণ! কখন আসিল “প্লুটো” যমরাজা নিশিথ পাখায় উড়ে, ধরিয়া তোমায় পুড়িল তাহার আঁধার বিবর-পুরে! ভেঙ্গে যম্পুরী নাগিনীর মত আয় মা পাতাল ফুঁড়ি’। আধাঁরে তোমায় পথ দেখাবে মা তোমারি ভগ্ন চুড়ি! পুরুষ যমের ক্ষুধার কুকুর মুক্ত ও-পদাঘাতে লুটায়ে পড়িবে ও-চরণ-তলে দলিত যমের সাথে! সেদিন সুদূর নয়- যে দিন ধরণী পুরুষের সাথে গাহিবে নারীরও জয়।
কবিতাঃ নারী (দ্বিতীয় খন্ড)