বাণী

ইরানের বুলবুলি কি এলে পথ ভুলে
গোলাপের স্বপ্ন ল’য়ে সিন্ধু নদী-কূলে।
চন্দনের গন্ধে কবি মিশালে হেনার সুরভি
তোমার গানে মরুভূমির দীর্ঘশ্বাস দুলে।।
কোন সাকির আঁখির করুণা নাহি পেয়ে
মরুচারী হে বিরহী, এলে মেঘের দেশে ধেয়ে।
	হেথা 	কাজল আঁখি নিরখি’
		তৃষ্ণা তব জুড়াল কি,
লালা ফুলের বেদনা ভুলিবে কি পলাশ ফুলে।।

বাণী

আয় গোপিনী খেলবি হোরি ফাগের রাঙা পিচ্‌কারিতে
আজ শ্যামে লো করব ঘায়েল আবির হাসির টিট্‌কারিতে।।
রঙে রাঙা হয়ে শ্যাম আজ হবে যেন রাই কিশোরী
যমুনা জল লাল হবে আজ আবির ফাগের রঙে ভরি
কপালে কলঙ্ক মোদের ধুয়ে যাবে রঙ ঝারিতে।।
গুরুজনার গঞ্জনা আজ
সইব না লো মানব না লাজ
কূল ভুলে গোকুল পানে ভেসে যাব রাঙা গীতে।।

বাণী

নিদাঘের খর তাপে ক্লান্ত এ ধরণী।
মাধুরী হারায়ে হল পাণ্ডুর বরণী।।
পিঙ্গল জটাজাল, তেজ তার অশনি।
বৈশাখী ভোরে স্মরি’ রুদ্রাণী জননী।।
ধূলি-ধূসরিত প্রসারিত অম্বর
বুক-ভরা তৃষা তার, চাহে সে নটবর,
শ্যামলী মেঘ-মালা, সেই তার জলধর —
দাহনের অবসানে জুড়াইবে আপনি।।

বাণী

বল	বীর –
	বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি’ আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির!
বল	বীর –
বল	মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি’
	চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি’
	ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া
	খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া,
	উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর!
মম	ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!
বল	বীর –
আমি	চির উন্নত শির!
আমি	চিরদূর্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস,
	মহা-প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস!
আমি	মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর,
আমি	দুর্বার,
আমি	ভেঙে করি সব চুরমার!
আমি	অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,
আমি	দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল!
আমি	মানি না কো কোন আইন,
আমি	ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন!
আমি	ধূর্জটি, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর
আমি	বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহী-সুত বিশ্ব-বিধাতৃর!
বল	বীর –
	চির-উন্নত মম শির!
আমি	ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি,
আমি	পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’।
আমি	নৃত্য-পাগল ছন্দ,
আমি	আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ।
আমি	হাম্বীর, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল,
আমি	চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’
	পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’
	ফিং দিয়া দিই তিন দোল;
আমি	চপলা-চপল হিন্দোল।
আমি	তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা,
করি	শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা,
আমি	উন্মাদ, আমি ঝঞ্ঝা!
	ধরি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা
আমি	মহামারী, আমি ভীতি এ ধরিত্রীর;
আমি	শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ঞ চির-অধীর!
বল	বীর –
আমি	চির উন্নত শির!
শির নেহারি’ আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির!
বল	বীর -
	বল উন্নত মম শির!
আমি	বেদুঈন, আমি চেঙ্গিস,
আমি	আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কুর্ণিশ!
আমি	বজ্র, আমি ঈশান-বিষাণে ওঙ্কার,
আমি	ইস্রাফিলের শিঙ্গার মহা হুঙ্কার,
আমি	পিণাক-পাণির ডমরু ত্রিশূল, ধর্মরাজের দন্ড,
আমি	চক্র ও মহা শঙ্খ, আমি প্রণব-নাদ প্রচন্ড!
আমি	ক্ষ্যাপা দুর্বাসা, বিশ্বামিত্র-শিষ্য,
আমি	দাবানল-দাহ, দাহন করিব বিশ্ব।
আমি	প্রাণ খোলা হাসি উল্লাস, – আমি সৃষ্টি-বৈরী মহাত্রাস,
আমি	মহা প্রলয়ের দ্বাদশ রবির রাহু গ্রাস!
আমি	কভূ প্রশান্ত কভূ অশান্ত দারুণ স্বেচ্ছাচারী,
আমি	অরুণ খুনের তরুণ, আমি বিধির দর্পহারী!
শির নেহারি’ আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির!
বল	বীর -
	বল উন্নত মম শির!
	উন্নত মম শির!
	উন্নত মম শির!

বাণী

কোন্‌ দূরে ও-কে যায় চ’লে যায়, সে ফিরে ফিরে চায় করুণ চোখে।
তার	স্মৃতি মেশা হায়, চেনা-অচেনায় তারে দেখেছি কোথায়
					যেন সে-কোন্ লোকে।।
শুনি	স্বপ্নে তারি যেন বাঁশি মন-উদাসী
তারি	বার্তা আসে নব মধু-মাসে, পলাশ আশোকে।।
	কৃষ্ণচূড়া তার মালা লুটায় — চৈত্র-শেষে বনের ধূলায়
	কান্না-বিধুর তার ভৈরবী সুর প্রভাতী তারায় অশ্রু ঘনায়,
					চির-বিরহী চিনি ওকে।।

বাণী

ভোরের হাওয়া এলে ঘুম ভাঙাতে কি
		চুম হেনে নয়ন-পাতে।
ঝিরি ঝিরি ধীরি ধীরি কুণ্ঠিত ভাষা
		গুণ্ঠিতারে শুনাতে॥
হিম-শিশিরে মাজি’ তনুখানি
ফুল-অঞ্জলি আন ভরি’ দুই পাণি,
ফুলে ফুলে ধরা যেন ভরা ফুলদানি
		বিশ্ব-সুষমা সভাতে॥