বাণী

তরুণ-তমাল-বরণ এসো শ্যামল আমার।
ঘন শ্যাম তুলি বুলায়ে মেঘ-দলে এসো দুলায়ে আঁধার।।
কাঁদে নিশীথিনী তিমির কুন্তলা
আমারি মত সে উতলা,
এসো তরুণ দুরন্ত ভাঙি’ হৃদয় দুয়ার।।
তপ্ত গগনে ঘনায়ে ঘন দেয়া
ফুটায়ে কদম কেয়া,
আমার নয়ন-যমুনায় এসো জাগায়ে জোয়ার।।

বাণী

পরদেশি বঁধুয়া, এলে কি এতদিনে
আসিলে এতদিন কেমনে পথ চিনে।।
তোমারে খুঁজিয়া কত রবি-শশী
অন্ধ হইল প্রিয় নিভিল তিমিরে
তব আশে আকাশ-তারা দ্বীপ জ্বালি'
জাগিয়াছে নিশি ঝুরিয়া শিশিরে।
শুকায়েছে স্বরগ দেবতা তোমা বিনে।।
কত জনম ধরি' ছিলে বল পাসরি'
এতদিনে বাঁশরি বাজিল কি বিপিনে।।

বাণী

		করুণা তোর জানি মাগো আসবে শুভদিন।
		হোক না আমার চরম ক্ষতি থাক না অভাব ঋণ।।
			আমায় ব্যথা দেওয়ার ছলে
			টানিস্ মা তোর অভয় কোলে,
		সন্তানে মা দুঃখ দিয়ে রয় কি উদাসীন।।
(তোর)	কঠোরতার চেয়ে বেশি দয়া জানি ব’লে,
		ভয় যত মা দেখাস্ তত লুকাই তোরই কোলে।
			সন্তানে ক্লেশ দিস্ যে এমন
			হয়ত মা তার আছে কারণ,
তুই		কাঁদাস্ ব’লে বল্‌ব কি মা হ’লাম মাতৃহীন।।

বাণী

এলো শ্যামল কিশোর তমাল-ডালে বাঁধে ঝুলনা।
সুনীল শাড়ি পরো ব্রজনারী পরো নব নীপ-মালা অতুলনা।।
	ডাগর চোখে কাজল দিও,
	আকাশী রং প'রো উত্তরীয়,
নব-ঘন-শ্যামের বসিয়া বামে দুলে দুলে ব'রলা, 'বঁধু, ভুলো না'।।
	নৃত্য-মুখর আজি মেঘলা দুপুর,
	বৃষ্ট্রির নূপুর বাজে টুপুর টুপুর।
	বাদল-মেঘের তালে বাজিছে বেণু,
	পান্ডুর হ'ল শ্যাম মাখি' কেয়া-রেণু,
বাহুতে দোলনায় বাঁধিবে শ্যামরায় ব'লো, 'হে শ্যাম, এ বাঁধন খুলো না'।।

বাণী

আমার	দুখের বন্ধু, তোমার কাছে চাইনি ত’ এ সুখ।
আমি	জানিনি ত বুকে পেয়েও কাঁদবে এ মন বুক।।
		আমার শাখায় যবে ফোটেনি ফুল
		আমি চেয়েছি পথ আশায় আকুল,
আজ	ফোটা ফুলে কাঁদে কেন কুসুম ঝরার দুখ।।
প্রিয়	মিলন-আশায় ছিনু সুখে ছিলে যবে দূর,
আজ	কাছে পেয়ে পরান কাঁদে বিদায়-ভয়াতুর।
		এ যে অমৃতে গরল মিশা
		প্রাণে কেবলি বাড়িছে তৃষা,
আমার	স্বর্গে কেন মলিন ধরার বেদন জাগরূক।।

বাণী

চৈতালি চাঁদনী রাতে —
নব মালতীর কলি মুকুল-নয়ন তুলি’
নিশি জাগে আমারি সাথে।।
পিয়াসি চকোরীর দিন-গোনা ফুরালো
শূন্য-গগনের বক্ষ জুড়ালো
দক্ষিণ-সমীরণ মাধবী-কঙ্কণ
	পরায়ে দিল বনভূমির হাতে।।
চাঁদিনী তিথি এলো, আমারি চাঁদ কেন এলো না;
বনের বুকের আঁধার গেল গো — মনের আঁধার গেল না।
এ মধু-নিশি মিলন-মালায়
কাঁটার মত আমি বিঁধিয়া আছি, হায়!
সবারই আঁখিতে আলোর দেয়ালি
	অশ্রু আমারি নয়ন-পাতে।।