শ্যামের সাথে চল সখি খেলি সবে হোরি
বাণী
শ্যামের সাথে চল সখি খেলি সবে হোরি। রঙ নে, রঙ দে, মদির আনন্দে, আয় লো বৃন্দাবনী গোরী।। আয় চপল যৌবন-মদে মাতি অল্প-বয়সী কিশোরী।। রঙ্গিলা গালে তাম্বুল-রাঙা ঠোঁটে হিঙ্গুল রঙ লহ ভরি; ভুরু-ভঙ্গিমা সাথে রঙ্গিম হাসি পড়ুক মুহু মুহু ঝরি’।। আগুন-রাঙা ফুলে ফাগুন লাগে লাল, কৃষ্ণচূড়ার পাশে অশোক গালে-গাল। আকুল করে ডাকি’ বকুল বনের পাখি, যমুনার জল লাল হ’ল আজ আবির, ফাগের রঙে ভরি।।১
১. শ্যাম অঙ্গ আজি রঙে রঙে রাঙা হয়ে কি শোভা ধরেছে মরি! মরি!
বিদ্রোহী (দ্বিতীয় খন্ড)
বাণী
আমি বন্ধন-হারা কুমারীর বেণী, তন্বী-নয়নে বহ্ণি, আমি ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম উদ্দাম, আমি ধন্যি! আমি উন্মন মন উদাসীর, আমি বিধবার বুকে ক্রন্দন-শ্বাস, হা হুতাশ আমি হুতাশীর। আমি বঞ্চিত ব্যথা পথবাসী চির-গৃহহারা যত পথিকের, আমি অবমানিতের মরম-বেদনা, বিষ-জ্বালা, প্রিয়-লাঞ্ছিত বুকে গতি ফের! আমি অভিমানী চির-ক্ষুব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যথা সুনিবিড়, চিত-চুম্বন-চোর-কম্পন আমি থর-থর-থর প্রথম পরশ কুমারীর! আমি গোপন-প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল-ক’রে দেখা অনুখন, আমি চপল মেয়ের ভালোবাসা, তা’র কাঁকন-চুড়ির কন-কন! আমি চির-শিশু, চির-কিশোর, আমি যৌবন-ভীতু পল্লীবালার আঁচড় কাঁচলি নিচোর! আমি উত্তর-বায়ু, মলয়-অনিল, উদাস পূরবী হাওয়া, আমি পথিক-কবির গভীর রাগিণী, বেণু-বীণে গান গাওয়া। আমি আকুল নিদাঘ-তিয়াসা, আমি রৌদ্র-রুদ্র রবি, আমি মরু-নির্ঝর ঝর-ঝর, আমি শ্যামলিমা ছায়া-ছবি! আমি তুরীয়ানন্দে ছুটে চলি, এ কি উন্মাদ, আমি উন্মাদ! আমি সহসা আমারে চিনেছি, আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ! আমি অর্ফিয়াসের বাঁশরী, মহা-সিন্ধু উতলা ঘুমঘুম ঘুম্ চুমু দিয়ে করি নিখিল বিশ্বে নিঝ্ঝুম মম বাঁশরীর তানে পাশরি’। আমি শ্যামের হাতের বাঁশরী। আমি পরশুরামের কঠোর কুঠার, নিঃক্ষত্রিয় করিব বিশ্ব, আনিব শান্তি শান্ত উদার! মহা-বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত আমি সেই দিন হব শান্ত, যবে উত্পীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না — অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না — বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত আমি সেই দিন হব শান্ত। আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন, আমি স্রষ্টা-সূদন, শোক-তাপ হানা খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন! আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দেবো পদ-চিহ্ন! আমি খেয়ালী-বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন! আমি চির-বিদ্রোহী বীর — বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির! শির নেহারি’ আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির! বল বীর - বল উন্নত মম শির! বল বীর, বল বীর।
সেদিন বলেছিলে এই সে ফুলবনে
বাণী
সেদিন ব’লেছিলে এই সে ফুলবনে, আবার হবে দেখা ফাগুনে তব সনে॥ ফাগুন এলো ফিরে লাগে না মন কাজে, আমার হিয়া ভরি, উদাসী বেণু বাজে; শুধাই তব কথা দখিনা সমীরণে॥ শপথ ভুলিয়াছ বন্ধু, ভুলিলে পথ কি গো, বারেক দিয়ে দেখা লুকালে মায়ামৃগ। আঁচলে ফুল লয়ে হল’ না মালা গাঁথা, আসার পথ তব ঢাকিল ঝরা পাতা; পূজার চন্দন শুকালো অঙ্গনে॥
লক্ষ্মী মাগো নারায়ণী আয়
বাণী
লক্ষ্মী মাগো নারায়ণী আয় এ আঙিনাতে। সুধার পাত্র সোনার ঝাঁপি ল’য়ে শুভ হাতে।। সৌভাগ্যদায়িনী তুই মা এসে দারিদ্র্য ক্লেশ নাশ কর মা হেসে কোজাগরী পূর্ণিমা আন মা দুঃখের আঁধার রাতে।। আন্ কল্যাণ শান্তি শ্রী, জননী কমলা, এ অভাবের সংসারে থাক মা হয়ে অচঞ্চলা। রূপ দে মা যশ দে, দে জয়, অভয় পদে দে মা আশ্রয়, ধরা ভরবে শস্যে ফুলে ফলে মা তোর আসার সাথে।।
যাও হেলে দুলে এলোচুলে কে গো বিদেশিনী
বাণী
পুরুষ : যাও হেলে দুলে এলোচুলে কে গো বিদেশিনী কাহার আশে কাহার অনুরাগিনী। স্ত্রী : আমি কনক চাঁপার দেশের মেয়ে এনু ঊষার রঙের গান গেয়ে আমি মল্লিকা গো পল্লীবাসিনী। পুরুষ : চিনি চিনি ওই চুড়ি কাঁকনের রিনিকি রিনি তুমি ভোর বেলা দাও স্বপনে দেখা। স্ত্রী : তোমার রঙে কবি আঁক আমারি ছবি তুমি দেবতা রবি আমি তব পূজারিণী। পুরুষ : এসো ধরণীর দুলালী আলোর দেশে যথা তারার সাথে চাঁদ গোপনে মেশে স্ত্রী : আনো আলোক তরী আমি যাই গো ভেসে দ্বৈত : চলো যাই ধরণী ধূলির ঊর্ধে পুরুষ : যথা বয় অনন্ত স্ত্রী : প্রেম মন্দারিণী পুরুষ : যথা বয় অনন্ত দ্বৈত : প্রেম মন্দারিণী॥