বাণী

কৃষ্ণা নিশীথ নাচে ঝিল্লির নূপুর বাজে।
রিমিঝিমি রিমিঝিমি মৃদু আওয়াজে।।
আঁধারের চাঁচর চিকুর খুলিয়া
আপন মনে নাচে হেলিয়া দুলিয়া,
মুঠি মুঠি হিম-কণা তারা-ফুল তুলিয়া
ছুঁড়ে ফেলে ধরণী মাঝে।।
তার	মণি-হার খুলে পড়ে উল্কা-মানিক,
তার	নাচের নেশায় ঝিমায় দশ্‌দিক।
	আধো-রাতে আমি শুনি স্বপনে
তার	গুঞ্জন-গীত কানে-কথা গোপনে,
	কালো-রূপের শিখা, ওকি শ্যামা বালিকা
	নাচে নাচে জাগাইতে নটরাজে।।

বাণী

নাচিয়া নাচিয়া এসো নন্দদুলাল,
মোর প্রাণে মোর মনে, এসো ব্রজগোপাল॥
এসো নূপুর রুনুঝুনু পায়ে, এসো প্রেম যমুনা নাচায়ে
এসো বেণু বাজায়ে, এসো ধেনু চরায়ে এসো কানাই রাখাল॥
ঝুলনে হোরিতে রাসে, এসো কুরুক্ষেত্র রণে এসো প্রভাসে,
(এসো) শিশু রূপে, এসো কিশোর বেশে
এসো কংস, অরি, এসো মৃত্যুকরাল॥

বাণী

আজ শেফালির গায়ে হলুদ
	উলু দেয় পিক পাপিয়া।
প্রথম প্রণয়-ভীরু বালা
	লাজে ওঠে কাঁপিয়া।।
বনভূমি বাসর সাজায়
	ফুলে পাতায় লালে নীলে,
ঝরে শিশির আশিস-বারি
	গগন-ঝারি ছাপিয়া।।
বৃষ্টি-ধোওয়া সবুজ পাতার
	শাড়ি করে ঝলমল,
ননদিনী ‘বৌ কথা কও’
	ডাকে আড়াল থাকিয়া।।
দেখতে এলো দিগ্‌বালিকা	
	সাদা মেঘের রথে ঐ,
শরৎ-শশীর মঙ্গল-দীপ
	জ্বলে গগন ব্যাপিয়া।।
অতীত্ প্রণয়-স্মৃতি স্মরি’
	কেঁদে যায় আশিন-হাওয়া,
উড়ে বেড়ায় বর সে ভ্রমর
	কমল-পরাগ মাখিয়া।।

বাণী

আমার	প্রাণের দ্বারে ডাক দিয়ে কে যায় বারে বারে।
তাঁর		নূপুর-ধ্বনি রিনি ঝিনি বাজে বন-পারে।।
			নিঝুম রাতে ঘুমাই যবে
			সে ডাকে আমায় বেণুর রবে,
		স্বপন কুমার আসে স্বপন-অভিসারে।।
আমি		জল নিতে যাই নদী তটে এক্‌লা নাম ধ’রে সে ডাকে
		ধরতে গেলে পালিয়ে সে যায় বন-পথের বাঁকে।
			বিশ্ব-বধূর মনোচোরা
			ধরতে সে চায়, দেয় না ধরা,
আমি		তা’রি স্বয়ম্বরা, আমি সঁপেছি প্রাণ তারে।।

বাণী

কে পাঠালে লিপির দূতী গোপন লোকের বন্ধু গোপন।
চিন্‌তে নারি হাতের লেখা মনের লেখা চেনে গো মন।।
	গান গেয়ে যাই আপন মনে
	সুরের পাখি গহন বনে,
সে সুর বেঁধে কার নয়নে — জানে শুধু তা’রি নয়ন।।
	কে গো তুমি গন্ধ-কুসুম
	গান গেয়ে কি ভেঙেছি ঘুম,
তোমার ব্যথার নিশীথ নিঝুম — হেরে’ কি মোর গানের স্বপন।।
	নাই ঠিকানা নাই পরিচয়
	কে জানে ও-মনে কি ভয়,
গানের কমল ও-চরণ ছোঁয় — তাইতে মানি ধন্য জীবন।।
	সুরের গোপন বাসর-ঘরে
	গানের মালা বদল করে,
সকল আঁখির অগোচরে — না দেখাতে মোদের মিলন।।

বাণী

হে মোর স্বামী, অন্তর্যামী, লহ সকলি আমার।
লহ প্রীতি-প্রেম-পূজা লহ পায়ে গলার হার।।
	হে প্রিয়তম, সকলি লহ;
	মান-অভিমান ব্যথা-বিরহ।
দুঃখের দাহ, সুখের মোহ লহ হে অশ্রু-ধার।।
	যাহা কিছু আপন, দিতে যা বাকি
	যাহা কিছু গোপন, লুকায়ে রাখি
যাহা কিছু প্রিয় অঞ্চলে ঢাকি; লহ হে বঁধূ এবার।।
	তোমায় চাওয়ার পাওয়ার আশা,
	তোমায় না-পাওয়ার ব্যথা-নিরাশা,
তোমারে দিলাম মোর ভালোবাসা বিফলতা হাহাকার।।