বাণী

এ জনমে মোদের মিলন হবে না আর, জানি জানি।
মাঝে সাগর, এপার ওপার করি মোরা কানাকানি।।
	দুজনে দুকূলে থাকি’
	কাঁদি মোরা চখা-চখি,
বিরহের রাত পোহায় না আর বুকে শুকায় বুকের বাণী।।
	মোদের পূজা আরতি হায়
	চোখের জলে, গহন ব্যথায়,
মোদের বুকে বাজায় বীণা বেদনারি বীণাপাণি।।
	হেথায় মিলন-রাতের মালা
	ম্লান হয়ে যায় প্রভাত বেলা,
সকালে যার তরে কাঁদি, বিকালে তায় হেলাফেলা।
	মোদের এ প্রেম-ফুল না শুকায়
	নিঠুর হাতে কঠোর ছোঁওয়ায়,
ব্যথার মাঝে চির-অমর মোদের মিলন-কুসুমদানি।।

বাণী

শূন্য এ–বুকে পাখি মোর আয় ফিরে আয় ফিরে আয়!
তোরে না হেরিয়া সকালের ফুল অকালে ঝরিয়া যায়।।
		তুই নাই ব’লে ওরে উন্মাদ
		পান্ডুর হ’ল আকাশের চাঁদ,
কেঁদে নদী–জল করুণ বিষাদ ডাকে: ‘আয় ফিরে আয়’।।
		গগনে মেলিয়া শত শত কর
		খোঁজে তোরে তরু, ওরে সুন্দর!
তোর তরে বনে উঠিয়াছে ঝড় লুটায় লতা ধূলায়!
		তুই ফিরে এলে, ওরে চঞ্চল
		আবার ফুটিবে বন ফুল–দল
ধূসর আকাশ হইবে সুনীল তোর চোখের চাওয়ায়।।

বাণী

আমার	সকলি হরেছ হরি এবার আমায় হ’রে নিও।
যদি	সব হরিলে নিখিল-হরণ তবে ঐ চরণে শরণ দিও।।
আমায়	ছিল যারা আড়াল ক’রে 
	হরি তুমি নিলে তাদের হ’রে,
ছিল	প্রিয় যারা গেল তারা (হরি) এবার তুমিই হও হে প্রিয়।।

বাণী

আমি বাউল হ’লাম ধূলির পথে ল’য়ে তোমার নাম।
আমার একতারাতে বাজে শুধু তোমারই গান, শ্যাম।।
	নিভিয়ে এলাম ঘরের বাতি
	এখন তুমিই সাথের সাথি,
আমি যেখানে যাই সেই সে এখন আমার ব্রজধাম।।
আমি আনন্দ-লহরি বাজাই নূপুর বেঁধে পায়ে,
শ্রান্ত হ’লে জুড়াই তনু বন-বীথি বটের ছায়ে।১
	ভাবনা আমার তুমি নিলে
	আমায় ভিক্ষা-পাত্র দিলে
কখন তুমি আমার হবে পূরবে মনস্কাম।।

১. শ্রান্ত হলে জুড়াই তবু বংশী-বটের ছায়ে।

বাণী

এ কি অপরূপ রূপের কুমার হেরিলাম সখি যমুনা কূলে,
তার	এ সুনীল লাবনি গলিয়া গলিয়া ঢলিয়া পড়িছে গগন-মূলে ॥
যেন	কমল ফুটেছে সখি, সহস্র-দল রূপে-কমল ফুটেছে,
	রূপের সাগর মন্থন করি’ সখি চাঁদ যেন উঠছে। সখি গো —
	কালো সে রূপের মাঝে হয়ে যায় হারা
	কোটি আলো-রাধিকা-রবি, শশী, তারা,
	প্রেম-যমুনার তীরে সই আমি রিবধি দেখি তারে,
		দেখি আর চেয়ে রই।
	আমি এই রূপ চেয়ে থাকি
সখি	জনমে জনমে জীবনে মরণে এই রূপ চেয়ে থাকি।
ঐ	মোহন কালোর গহন কাননে হারাইয়া যাক আঁখি ॥

বাণী

পিয়াল ফুলের পিয়ালায় বঁধু অন্তর-মধু ঢেলে পিয়াব তোমায়।
রচিব হৃদয়ে মাধবী-কুঞ্জ বাহিরে ফাগুন যদি যেতে চায়।।
		বেল-ফুল যায় যদি ঝুরে
		প্রেম-ফুল দিব ডালি ভ’রে,
নিশি জেগে আমি গান শোনাব বনের বিহগ যদি মাগে বিদায়।।
		আর যদি নাহি বহে দখিনা বাতাস
	(বঁধু)	অঞ্চল আছে মোর, আছে কেশ-পাশ,
যায় যদি যাক্ ডুবে চৈতালী চাঁদ আমার চাঁদ যেন চ’লে নাহি যায়।