বাণী

ভোল লাজ ভোল গ্লানি জননী মুক্ত আলোকে জাগো।
কবে সে ঘুমালি মরণ-ঘুমে মা আর তো জাগিলি না গো।।
চরণে কাঁদে মা তেমনি জলধি
বক্ষ আঁকড়ি কাঁদে নদ-নদী,
ত্রিশ কোটি সন্তান নিরবধি — 
			কাঁদে আর ডাকে মা গো।।
যে তিতিক্ষা যে শিক্ষা ল’য়ে
অতীতে ছিলি মা রাজরানী হয়ে,
ল’য়ে সে-মহিমা পুন নির্ভয়ে — 
			বিশ্ব-বুকে-দাঁড়া গো।।
বিশ্বের এই খল কোলহলে
তুই আয় কল্যাণ-দীপ জ্বেলে’,
বিরোধের শেষে তুই শান্তি মা — 
			মৃত্যু শেষে সুধা গো।।

বাণী

কিশোরী সাধিকা রাধিকা শ্রীমতী।
চির-কিশোর আরাধিকা শ্রীমতী।।
	কমলা গোলোকে
	গোপিনী ভুলোকে,
সেবিকা প্রকৃতি পরমা তপতী।।
	শ্যাম ভুবন কালো
	রাই অরুণ আলো,
হরি পূজারিণী প্রেম মূর্তিমতী।।
	ব্রজধাম বাসিনী
	লীলা বিলাসিনী,
শ্যাম নাম ভাষিণী বিরহ ভারতী।।
	শ্যাম মেঘ গলে
	রাই বিজলি দোলে,
শ্যাম পত্র কোলে রাই ফুল আরতি।।
	লয়ে যাঁহার নাম
	হরি হন রাধা শ্যাম,
সুর নর অবিরাম করে যাঁর প্রণতি।।

বাণী

একদা সব সুরাসুরের খেয়াল হল দাদা।
সমুদ্রেরে ঘেঁটে ঘুঁটে করতে হবে দধিকাদা।।
দেখেছ তো গয়লানিরা যে-ভাবে দুই মথে।
(তেমনি) সাগরকে সব ঘুঁটেছিলেন মন্দার পর্বতে।।
(অর্থাৎ) মন্দার গিরি হয়েছিল দই ঘুঁটবার কাঠি।।
আর কূর্ম হলেন সমুদ্ররূপ দই রাখবার বাটি।।
কাঠি এলো, বাটি এলো, দড়া কোথায় পান।
(সবে) বাসুকীর শ্রী-লেজুড় ধ’রে মারেন হেঁচ্কা টান।।
বাসুকী কয় ল্যাজ ছাড়ো বাপ গ্যাজ উঠল মুখে।
বাসুকীকে করল দড়া দেবতারা সব রুখে।।
ল্যাজ ধরল দেবতা, অসুর দানব ধরে মুড়ো।
সাগর বলে আস্তে বাবা একি প্রলয় হুড়ো।।
যা আছে মোর বের করছি — ঘাঁটিস্‌নে আর পেট।।
উচ্চৈঃশ্রবা, চন্দ্র, লক্ষ্মী — সব দিচ্ছি ভেট।।
(ক্রমে) অমৃত যেই উঠল অমনি লাগলো গুঁতোগুঁতি।
দৈত্যেরা সব কোপ্‌নি আঁটে দেবতা কষেন ধুতি।।
মাঝে থেকে শ্রীবিষ্ণু মোহিনী রূপ ধ’রে।
ছোঁ মেরে সেই সুধার ভাণ্ড নিয়ে পড়লেন স’রে।।
অমৃত খান দেবতারা সব, অসুর মাটি চাটে।
(যেমন) দোহন শেষে দুগ্ধ খোঁজে বাছুর শুকনো বাঁটে।।
(ক্রম) ঘটর ঘটর ঘোঁটার ঠেলায় উঠলো হলাহল।
ত্রাহি ত্রাহি বলে ত্রিলোক, করে কোলাহল।।
বিষের জ্বালায় সৃষ্টি বুঝি পটল তোলে ওই।
সিদ্ধিখোর শ্রীপিশাচপতি কয় ডেকে মাভৈঃ।।
ছুটে এসে পাগ্‌লা ভাঙোড় এক সুমুদ্দুর বিষ।
ঢক ঢকিয়ে ফেললে গিলে গা করে নিস্‌পিস্‌।।
বলদে যে বেড়ায় চ’ড়ে ছাই পাঁশ গায়ে মাখে।
তাকে ছাড়া চতুর দেবতা বিষ দেবে বল কাকে।।
ফুলের মধ্যে ধুতরো নিলেন মশান যাহার ঘর।
(পোড়া) কপালে তার আগুন জ্বলে — জয় ন্যাংটেশ্বর।।

নাটক : ‘সতী’ (মন্মথ রায়-রচিত)

বাণী

বিদায়-সন্ধা আসিল ঐ ঘনায় নয়নে অন্ধকার।
হে প্রিয়, আমার, যাত্রা-পথ অশ্রু-পিছল ক’রো না আর॥
	এসেছিনু ভেসে স্রোতের, ফুল
	তুমি কেন প্রিয় করিলে ভুল
তুলিয়া খোঁপায় পরিয়া তা’য় ফেলে দিলে হায় স্রোতে আবার॥
	হেথা কেহ কারো বোঝে না মন
	যারে চাই হেলা হানে সে’ জন
যারে পাই সে না হয় আপন হেথা নাহি হৃদি ভালোবাসার।
	তুমি বুঝিবে না কি অভিমান
	মিলনের মালা করিল ম্লান
উড়ে যাই মোর, দূর বিমান সেথা গা’ব গান আশে তোমার॥

বাণী

দোলা লাগিল দখিনার বনে বনে
বাঁশরি বাজিল ছায়ানটে মনে মনে॥
	চিত্তে চপল নৃত্যে কে
	ছন্দে ছন্দে যায় ডেকে;
যৌবনের বিহঙ্গ ঐ ডেকে ওঠে ক্ষণে ক্ষণে॥
বাজে বিজয়-ডঙ্কা তারই এলো তরুণ ফাল্গুনী,
জাগো ঘুমন্ত – দিকে দিকে ঐ গান শুনি’।
	টুটিল সব অন্ধকার –
	খোলো খোলো বন্ধ দ্বার;
বাহিরে কে যাবি আয় সে শুধায় জনে জনে॥

বাণী

সদা মন চাহে মদিনা যাবো,
আমার রসূলে আরবী, না হেরে নয়নে,
			কি সুখে গৃহে র’বো।।
মদিনার বুকে রয়েছে ঘুমায়ে আমার বুকের নিধি
তায় বুকে তার মিলাইব বুক পায়ে লুটাইব নিরবধি
ধূলিকণা হবো, আমি ধূলিকণা হবো
(ওগো) নবী পদরেখা যেই পথে আঁকা 
			সেই পথে বিছাইবো।
আবিল হতে দেবো না, মধুর স্বপন তপ্ত বরণ
আবিল হতে দেবো না।
সদা আকুল পিয়াসা জাগে
পদমুখো হ'য়ে কদম রসূল
চুম্‌ দিবো অনুরাগে।
ধূলি হ’বো, আমি সেই পথের ওই ধূলি হ’বো
নবী যে পথ দিয়ে চলেছিলেন
সেই পথের ওই ধূলি হবো
শুধু পায়ের চিহ্ন পরশ পাবো
			সেই পথের ওই ধূলি হ’বো।।
প্রিয় নবীর রাঙা পা দু'খানি
চুমিব সদা দিবস-যামী,
আমার জীবনে লেগেছে নয়নের স্বাদ
জুড়াতে আমার দেখিবো
পোড়া নয়নের মোর আছে বড় খেদ
মিটেনি আমার তৃষা গো
হেথা নয়নের তৃষা অধরে মিটাতে
			এবার আমি ধূলি হ’বো।।

লেটোদলের গান
কীর্তনের সুরে নাত-এ রসুল