বাণী

আমার বিদায়-রথের চাকার ধ্বনি ঐ গো এবার কানে আসে।
পুবের হাওয়া তাই কেঁদে যায় ঝাউ-এর বনে দীঘল শ্বাসে।।
	ব্যথায়-বিবশ গুলঞ্চ ফুল
	মালঞ্চে আজ তাই শোকাকুল,
মাটির মায়ের কোলের মায়া ওগো আমার প্রাণ উদাসে।।
অঙ্গ আসে অলস হ’য়ে নেতিয়ে-পড়া অলস ঘুমে,
স্বপন-পারের বিদেশিনীর হিম-ছোঁওয়া যায় নয়ন চুমে।
	হাতছানি দেয় অনাগতা
	আকাশ ডোবা বিদায়-ব্যথা,
লুটায় আমার ভুবন ভরি’ বাঁধন-ছেঁড়ার কাঁদন-ত্রাসে।।
মোর বেদনার কর্পূর-বাস ভরপুর আজ দিগ্বলয়ে,
বনের আঁধার লুটিয়ে কাঁদে হরিণটি তার হারার ভয়ে।
	হারিয়ে-যাওয়া মানসী হায়
	নয়ন-জলে শয়ন তিতায়,
ওগো, এ কোন্ যাদুর মায়ায় দু’চোখ আমার জলে ভাসে।।
আজ আকাশ-সীমায় শব্দ শুনি অচিন পায়ের আসা-যাওয়ার,
তাই মনে হয় এই যেন শেষ আমার অনেক দাবিদাওয়ার।
	আজ কেহ নাই পথের সাথি
	সামনে শুধু নিবিড় রাতি,
আমায় দূরের বাঁশি ডাক দিয়েছে, রাখ্‌বে কে আর বাঁধন-পাশে।।

বাণী

আমি	গগন গহনে সন্ধ্যা-তারা
	কনক গাঁদার ফুল গো।
	গোধূলির শেষে হেসে উঠি আমি
	এক নিমেষের ভুল গো।
আমি	কণিকা,
আমি	সাঁঝের অধরে ম্লান আনন্দ-কণিকা
আমি	অভিমানিনীর খুলে ফেলে দেওয়া মণিকা
আমি	দেব-কুমারীর দুল গো।।
	আলতা রাখার পাত্র আমার আধখানা চাঁদ ভাঙা
	তাহারি রং গড়িয়ে পরে (ঐ) অস্ত-আকাশ রাঙা।
আমি	একমুঠো আলো কৃষ্ণা-সাঁঝের হাতে
আমি	নিবেদিত ফুল আকাশ-নদীতে রাতে
	ভাসিয়া বেড়াই যাঁর উদ্দেশে গো
	তার পাই না চরণ-মূল।।

বাণী

প্রিয়	তুমি কোথায় আজি কত সে দূর।
প্রাণ	কাঁদে ব্যথায় বিরহ-বিধুর।।
	স্বপন-কুমারী, স্বপনে এসে
	মিশাইলে কোন্ ঘুমের দেশে
	তড়িত-শিখা ক্ষণিক হেসে
	লুকালে মেঘে আঁধারি’ হৃদি-পুর।।
	আপনা নিয়ে ছিনু একেলা
	কোন্ সে কূলে ভিড়ালে ভেলা
	জীবন নিয়ে মরণ-খেলা
	খেলিতে কেন আসিলে নিঠুর।।
	ঊষার গাঙে গাহন করি’
	দাঁড়ালে নভে রঙের পরী
	প্রেমের অরুণ উদিল যবে
	মিশালে নভে, হে লীল-চতুর।।

বাণী

ভ্রমর-নূপুর পরিহিতা কৃষ্ণ-কুন্তলা।
বলয়-কাঁকন ঝনকিতা ছন্দ-চঞ্চলা।।
মলয়-সমীর ঝিরি ঝিরি অঙ্গে গুঞ্জরে
কদম-কেশর১ ঝুরুঝুরু চম্পা মুঞ্জরে,
চটুল নয়ন চমকিত জোছনা-অঞ্চলা।।
বিধুর কোকিল-কুহরিত আম্রকুঞ্জে২ গো
রূপের পরাগ ঝরে তব পুঞ্জে পুঞ্জে গো,
নিখিল-ভুবন তব রাস-নৃত্য হিন্দোলা।।

১. আমের মুকুল, ২. কদম কুঞ্জে

বাণী

বক্ষে আমার কাবার ছবি চক্ষে মোহাম্মদ রসুল।
শিরোপরি মোর খোদার আরশ গাই তাঁরি গান পথ বেভুল।।
লায়লী প্রেমে মজনু পাগল আমি পাগল লা-ইলা’র,
প্রেমিক দরবেশ আমায় চেনে অরসিকে কয় বাতুল।।
হৃদয়ে মোর খুশির বাগান বুলবুলি তায় গায় সদাই,
ওরা খোদার রহম মাগে আমি খোদার ইশ্‌ক্‌ চাই।
আমার মনের মস্‌জিদে দেয় আজান হাজার মোয়াজ্জিন
প্রাণের ‘লওহে’ কোরান লেখা রুহ্‌ পড়ে তা রাত্রি দিন।
খাতুনে জিন্নত মা আমার হাসান হোসেন চোখের জেল,
ভয় করি না রোজ-কেয়ামত পুল সিরাতের কঠিন পুল।।

বাণী

কৃষ্ণ কৃষ্ণ বল্ রসনা রাধা রাধা বল্,
রাধাকৃষ্ণ রাধাকৃষ্ণ রাধাকৃষ্ণ বল্।।
যোগে খোঁজেন শিব কৃষ্ণ-গোবিন্দে
ব্রহ্মা পূজেন রাধা-চরণারবিন্দে,
অধরা যুগল চাঁদে ধরিল প্রেমের ফাঁদে গোপ গোপীদল।।
(মোর) শ্রীকৃষ্ণে থাকে যেন অটল মতি
সেই মতি দেন্ মোর রাধা শ্রীমতী,
মন-বৃন্দাবনে ফোটে কৃষ্ণ নামের ফুল —
ঝরায়ে সে-ফুল রাই দেন সবে প্রেম-ফল।।
রাধাকৃষ্ণ বল্ ওরে নর-নারী
সংসার বনে তোরা যেন শুক-শারি,
তার, পরানে নিত্য রাস-রসের উল্লাস —
যাহার হৃদয়ে দোলে মূরতি যুগল।।