বাণী

	মসজিদে ঐ শোন্ রে আজান, চল নামাজে চল্ ।
	দুঃখে পাবি সান্ত্বনা তুই বক্ষে পাবি বল।।
	ময়লা-মাটি লাগবে যা তোর দেহ-মনের মাঝে —
	সাফ হবে সব, দাঁড়াবি তুই যেম্‌নি জায়নামাজে;
(চল্)	রোজগার তুই করবি যদি আখেরের ফসল।।
	হাজার কাজের অছিলাতে নামাজ করিস কাজা
	খাজনা তারি দিলি না, যে দ্বীন-দুনিয়ার রাজা
তাঁরে	পাঁচ বার তুই করবি মনে, তাতেও এত ছল্।।
	কার তরে তুই মরিস খেটে; কে হবে তোর সাথী
	বে-নামাজীর আঁধার গোরে কে জ্বালাবে বাতি
(চল্)	খোদার নামে শির লুটায়ে জীবন কর্‌ সফল।।

বাণী

চৈত্র পূর্ণিমা রাত্রি, মাধবী কানন মধুক্ষরা।
মধুর আনন্দ উল্লাসে রাত্রে ভাসে বসুন্ধরা।।
মুকুল-সৌগন্ধ ভারে দখিনা পবন
নৃত্যের ছন্দে চলে মর্মরিয়া বেণু-বন।
তটিনী ঊর্মির মর্ম নিয়া
শত ভঙ্গে চন্দ্রে নিবেদিয়া —
দুর্নিবার প্রেমোচ্ছ্বাসে কণ্ঠ-কল-গীতে ভরা।।
মধুর পূর্ণিমা নিশি, পূর্ণপাত্র শিরাজি হস্তে যেন সাকি,
জোছনার মদির স্বপ্নে মুকুলিত মাধবীর আঁখি।।
গোলাপের স্নিগ্ধগন্ধে অস্থির অন্তর
আজি রাত্রি হাসিছে সমাহিত প্রসন্ন সুন্দর।
পরিতৃপ্ত চকোরের রুদ্ধ-কণ্ঠ লড়িতে চন্দ্রর
পান করি শারাব গেলাস-ভরা।।

১. সম্ভবত এখানে কবি আরো কিছু শব্দ যুক্ত করতে চেয়েছিলেন।

বাণী

দেবতা গো, দ্বার খোলো।
অভিসার নিশি বাহির দুয়ারে দাঁড়ায়ে প্রভাত হ’ল॥
	পাষাণের আবরণে তুমি যদি
	এমনি গোপন রবে নিরবধি,
বেণুকার সুরে হৃদি যমুনায় কেন এ লহর তোলো॥
আর	সহিতে পারি না একা,
প্রাণে	কেন দিয়ে আশা এত ভালোবাসা
যদি	নাহি দিবে দেখা।
	বহিতে পারি না আর এই ভার,
	এই ফুল সাজ পূজা-সম্ভার
তুমি	দেখা দেও একবার দেখা দেও —
দেখা	দিয়ে চিরতরে মোরে ভোলো॥

বাণী

পুঁথির বিধান যাক পুড়ে তোর, বিধির বিধান সত্য হোক!
(এই) খোদার উপর খোদকারী তোর মানবে না আর সর্বলোক।।
নানান মুনির নানান মত্‌ যে, মানবি বল্‌ সে কার শাসন?
				কয়জনার বা রাখবি মন?
একজনকে মানলে করবে আর এক সমাজ নির্বাসন, চারদিকে শৃঙ্খল বাঁধন!
সকল পথে লক্ষ্য যিনি চোখ পুরে নে তাঁর আলোক।।
জাতের চেয়ে মানুষ সত্য, অধিক সত্য প্রাণের টান
				প্রাণ-ঘরে সব এক সমান।
বিশ্ব-পিতার সিংহ-আসল প্রাণ বেদীতেই অধিষ্ঠান,
				আত্মার আসন তাইত প্রাণ।
জাত-সমাজের নাই সেথা ঠাই জগন্নাথের সাম্য লোক
				জগন্নাথের তীর্থ লোক।।
চিনেছিলেন খ্রিষ্ট, বুদ্ধ, কৃষ্ণ, মোহাম্মদ ও রাম
				মানুষ কী আর কী তার দাম!
(তাই) মানুষ যাদের করত ঘৃণা, তাদের বুকে দিলেন স্থান,
				গান্ধী আবার গান সে-গান।
(তোরা) মানব-শত্রু, তোদেরই হায় ফুটল না সেই জ্ঞানের চোখ।।

বাণী

উভয়		:	মোর মন ছুটে যায় দ্বাপর যুগে দূর দ্বারকায় বৃন্দাবনে।
স্ত্রী+উভয়ে	:	মোর মন হ’তে চায় ব্রজের রাখাল খেলতে রাখাল-রাজার সনে॥
স্ত্রী		:	রূপ ধরে না বিশ্বে যাহার
			দেখতে সাধ যায় কিশোর-রূপ তার
পুরুষ		:	কেমন মানায় নরের রূপে অনন্ত সেই নারায়ণে॥
স্ত্রী		:	সাজ্‌ত কেমন শিখী-পাখা বাজ্‌ত কেমন নূপুর পায়ে,
পুরুষ		:	থির কেমনে থাক্‌ত ধরা নাচ্‌ত যখন তমাল-ছায়ে।
উভয়		:	মা যশোদা বাঁধ্‌ত যখন কাঁদ্‌ত ভগবান কেমনে॥
স্ত্রী		:	সাজ্‌ত কেমন বন-মালায় বিশ্ব যাহার অর্ঘ্য সাজায়;
পুরুষ		:	যোগী-ঋষি পায় না ধ্যানে গোপ-বালা কেমনে পায়।
উভয়		:	তেম্‌নি ক’রে কালার প্রেমে সব খোয়াব এই জীবনে॥

বাণী

	চাষ কর দেহ জমিতে
	হবে নানা ফসল এতে।
	নামাজে জমি ‘উগালে’
	রোজাতে জমি ‘সামালে’,
কলেমায় জমিতে মই দিলে চিন্তা কি হে এই ভবেতে।।
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাতে
বীজ ফেল্ তুই বিধি-মতে,
পাবি ‘ঈমান’ ফসল তাতে —
		আর রইবি সুখেতে।।
নয়টা নালা আছে তাহার
ওজুর পানি সিয়াত যাহার,
ফল পাবি নানা প্রকার —
		ফসল জন্মিবে তাহাতে।।
যদি ভালো হয় সে-জমি
হজ্ জাকাত লাগাও তুমি,
আরো সুখে থাকবে তুমি —
		কয় নজরুল এসলামেতে।।

লেটো : ‘চাষার সঙ’