বাণী

আনন্দ-দুলালী ব্রজ-বালার সনে
			নন্দ-দুলাল খেলে হোলি!
রঙের মাতন লেগে যেন শ্যামল মেঘে
			খেলেছে রাঙা বিজলি।।
রাঙা মুঠি-ভরা রাঙা আবির-রেণু
রাঙিল পীত-ধড়া শিখি-পাখা বেণু
			রাঙিল শাড়ি কাঁচলি।।
লচকিয়া আসে মুচকিয়া হাসে
মারে আবির পিচকারি,
চাঁদের হাট তোরা দেখে যা রে দেখে যা
রঙে মাতোয়ালা নর-নারী!
শিরায় শিরায় সুরার শিহরণ
			রঙ্গে অঙ্গে পড়ে ঢলি।।

বাণী

গঙ্গার বালুতটে খেলিছে কিশোর গোরা।
চরণতলে চলে পুলকে বসুন্ধরা।।
	পড়িল কি রে খসি
	ভূতলে রাকা শশী
ঝরিছে অঝোর ধারায় রূপের পাগল-ঝোরা।।
শ্রীমতি ও শ্রীহরি খেলিছে এক অঙ্গে,
দেব-দেবী নর-নারী গাহে স্তব এক সঙ্গে।
	গঙ্গা জোয়ার জাগে
	তাহারি অনুরাগে,
ফিরে এলো কি নদীয়ায় ব্রজের ননী-চোরা।।

বাণী

মা-মা-মা-মা-মা-মাগো
এবারের পূজা মাগো দশভূজা বড় দুর্গতিময়।
পড়েছিস এ.বি.সি.ডি? বুঝিস ব্ল্যাক আউট কারে কয়?
ব্ল্যাক আউট মানে যত কালো ছিল বাহির হয়েছে মাগো
যত আলো ছিল যত ভালো ছিল, সকলেরে বলে ভাগো।
ডাইনে বাঁ ধারে ভীষণ আঁধারে হাঁটু কাঁপে আর হাঁটি
আমড়ার মত হয়ে আছি মাগো চামড়া এবং আঁটি।
নন্দী ভৃঙ্গী সিঙ্গি যাইলে তাহারাও ভয় পাবে
তাদের দিব্য দৃষ্টি লয়েও মাগো আঁধারে হোঁচট খাবে।
বলি বিগ্রহ তোর কে দেখিতে যাবে মা কুগ্রহের ফেরে
বিড়ি খেয়ে ফেরে গুন্ডারা যদি দেয় মাগো ভুঁড়ি ফেড়ে।
মা তুই বর দেওয়ার আগেই বর্বরেরা এসে
ঠেসে ধরে নিয়ে যাবে চিত্রগুপ্তের দেশে।
চোঁয়া ঢেকুর ওঠে মা মেকুর ডাকিলে কেঁদে উঠি ওঙা ওঙা;
ঢেঁকির আওয়াজ শুনলে মাগো ভয়ে খাড়া হয়ে ওঠে রোঁয়া।
সত্য পথে মা চলিতে পারি না পথে কাদা রাখে ফেলে
উচিত কথা মাগো বলিতে পারি না চিৎ করে দেয় ফেলে।
এ চিতে শক্তি দে মা চিৎ করবো ভয়কে
বলবো এবার তোরে খাব দে মা মাগো মা।।

নাট্য-গ্রন্থঃ ‘ব্লাক আউট’
ব্ল্যাক আউট নাট্যগ্রন্থের এই পাঠকে, আদি রেকর্ডের (এন. ২৭২০৬) পাঠের তুলনায়, স্বতন্ত্র গান হিসাবে বিবেচনা করা যায়।
[অগ্রন্থিত নজরুল, সংকলন ও সম্পাদনাঃ ব্রহ্মমোহন ঠাকুর, ডি.এম. লাইব্রেরি, কলকাতা, ২০০৩]

বাণী

তুমি	কোন্ পথে এলে হে মায়াবী কবি
	বাজায়ে বাঁশের বাঁশরি।
এলো	রাজ-সভা ছাড়ি’ ছুটি,
	গুণিজন তোমার সে সুরে পাশরি’।।
তোমার	চলার শ্যাম-বনপথ
	কদম-কেশর-কীর্ণ,
তুমি	কেয়ার বনের খেয়াঘাটে হলে
	গোপনে কি অবতীর্ণ?
তুমি	অপরাজিতার সুনীল মাধুরী
	দু’চোখে আনিলে করিয়া কি চুরি?
তোমায়	নাগ-কেশরের ফণী-ঘেরা মউ
	পান করাল কে কিশোরী?
	জনপুরী যবে কল-কোলাহলে
	মগ্নোৎসব রাজ সভাতলে,
তুমি	একাকী বসিয়া দূর নদী-তটে
	ছায়া-বটে বাঁশি বাজালে,
তুমি	বসি’ নিরজনে ভাঁট ফুল দিয়া
	বালিকা বাণীরে সাজালে।।
যবে	রুদ্র আসিল ডম্বরু-করে
	ত্রিশূল বিঁধিয়া নীল অম্বরে,
তুমি	ফেলিয়া বাঁশরি আপনা পাশরি,
	এলে সে-প্রলয় নাটে গো,
তুমি	প্রাণের রক্তে রাঙালে তোমার
	জীবন-গোধূলি পাটে গো।।
	হে চির-কিশোর, হে চির-তরুণ,
	চির-শিশু চির-কোমল করুণ।
	দাও অমিয়া আরো অমিয়া,
দাও	উদয়-ঊষারে লজ্জা গো তুমি
	গোধূলির রঙে রঙিয়া।
	প্রখর রবি-প্রদীপ্ত গগনে,
	তুমি রাঙা মেঘ খেল আন্‌মনে,
	উৎসব-শেষে দেউলাঙ্গনে
	নিরালা বাজাও বাঁশরি,
আমি	স্বপন-জড়িত ঘুমে সেই সুর
	শুনিব সকল পাশরি’।।

বাণী

এলো বরষা শ্যাম সরসা প্রিয়-দরশা।।
দাদুরি পাপিয়া চাতকী বোলে নব জলধারা-হরষা।।
	নাচে বন-কুন্তলা যামিনী উতলা
	খুলে পড়ে গগনে দামিনী মেখলা,
চলে যেতে ঢ’লে পড়ে অভিসারে চপল যৌবন-মদ অলসা।।
	একা কেতকী বনে কেকা কুহরে,
	বহে পূব-হাওয়া কদম্ব শিহরে।
	দুরন্ত ঝড়ে কোন্ অশান্ত চাহি রে
	ঘরে নাহি রহে মন, যেতে চায় বাহিরে,
যত ভয় জাগে তত সুন্দর লাগে শ্রাবণ-ঘন-তমসা।।

বাণী

সমবেত	:	সারাদিন পিটি কার দালানের ছাদ গো
			পাত ভ’রে ভাত পাই না, ধ’রে আসে হাত গো॥
১ম		:	তোর ঘরে আজ কি রান্ন হায়েছে?
২য়		:	ছেলে দুটো ভাত পায়নি, পথ চেয়ে রয়েছে।
৩য়		:	আমিও ভাত রাঁধিনি, দেখ্ না চুল বাঁধিনি
			শাশুড়ি মান্ধাতার বুড়ি মন্দ কথা কয়েছে।
৪র্থ		:	আমার ননদ বড় দজ্জাল বজ্জাত গো।
সমবেত	:	সারাদিন পিটি কার দালানের ছাদ গো
			পাত ভ’রে ভাত পাই না, ধ’রে আসে হাত গো॥
১ম		:	এত খায় তবু ওদের বউগুলো সুঁট্‌কো
২য়		:	ছেলেগুলো প্যাঁকাটি, বাবুগুলো মুট্‌কো।
৩য়		:	এরা কাগজের ফুল, এরা চোখে চাঁদ দেখে না।
৪র্থ		:	ইটের ভিতরে কীটের মত কাটায় এরা রাত গো।
সমবেত	:	সারাদিন পিটি কার দালানের ছাদ গো
			পাত ভ’রে ভাত পাই না, ধ’রে আসে হাত গো॥

চলচ্চিত্রঃ ‘চৌরঙ্গী’