বাণী

এসো হৃদি-রাস-মন্দিরে এসো হে রাসবিহারী কালা।
মম নয়নের পাতে রাখিয়াছি গেঁথে অশ্রু-যূথীর মালা।।
	আমি	ত্যাজিয়াছি কবে লাজ-মান-কুল
		বহি’ কলঙ্ক এসেছি গোকুল,
আমি ভুলিয়াছি ঘর শ্যাম নটবর কর মোরে গোপবালা।।
		আমার কাঁদন-যমুনার নদী
	শ্যাম হে ভাঁটি টানে শুধু বহে নিরবধি,
তারে বাঁশরির তানে বহাও উজানে ভোলাও বিরহ-জ্বালা।।

বাণী

একটুখানি দাও অবসর বসতে কাছে,
তোমায় আমার অনেক যুগের অনেক কথা বলার আছে।।
গ্রহ ঘিরে উপগ্রহ, ঘোরে যেমন অহরহ;
আমার আকুল এ বিরহ তেমনি প্রিয় তোমায় যাচে॥
চিরকালই রইলে তুমি আমার পাওয়ার বহুদূরে
আজকে ক্ষণিক কইব কথা সকরুণ গানের সুরে।
করব পূজা গানে গানে, চাইব না আর নয়ন পানে;
আমার চোখের অশ্রুলেখা দেখে তুমি চেন পাছে॥

বাণী

চরণ ফেলি গো মরণ-ছন্দে মথিয়া চলি গো প্রাণ।
মর্তের মাটি মহিমান করি স্বর্গেরে করি ম্লান।।
	চিতার বিভূতি মাখিয়া গায়
	লজ্জা হানি গো অন্নদায়,
বাঁধিয়াছি বিদ্যুল্লাতায় — দেবরাজ হতমান।
পাতাল ফুঁড়িয়া করি গো মাতাল রসাতল-অভিযান।।

নাটিকা : ‘সেতু-বন্ধ’

বাণী

তুমি সুখে থাক প্রিয়া আমি আজ চ’লে যাই।
তোমারে চাহিয়া জনমে জনমে এই ব্যথা যেন পাই।।
	দুদিনের সাথী দু’দিনের লাগি’
	এসেছিনু আমি তব অনুরাগী,
হৃদয় বাণীতে চেয়েছিনু শুধু আর কিছু চাহি নাই।।
আকাশে তব দিয়ে গেনু ফুল কণ্ঠে গানের মালা,
হয়তো একদা অন্তরে তব জাগিবে স্মৃতির জ্বালা।
	হয়তো বা তব নয়নের কোণে
	নতুনের ছায়া জাগিবে গোপনে,
স্মৃতিটি আমার মুছে যাবে জানি তবু কিছু ক্ষতি নাই —
			এই ব্যথা যেন পাই।।

বাণী

দিনের সকল কাজের মাঝে
		তোমায় মনে পড়ে।
কাজ ভুলে যাই (আমি), মন চ’লে যায়
		সুদূর দেশান্তরে।।
	তুলসী তলায় দীপ জ্বালিয়ে
	দূর আকাশে রই তাকিয়ে,
সাঁঝের ঝরা ফুলের মতো অশ্রু বারি ঝরে।।
আঁধার রাতে বাতায়নে একলা ব’সে থাকি,
চাঁদকে শুধায় তোমার কথা ঘুমহারা মোর আঁখি।
	প্রভাত বেলায় গভীর ব‍্যথায়
	মন কেঁদে কয় তুমি কোথায়,
শূন্য লাগে এ তিন ভুবন প্রিয় তোমার তরে।।

বাণী

জয়-জগৎ-জননী, ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর বন্দিতা,
		জয় মা-ত্রিলোক তারিণী।
জয় আদ্যাশক্তি পরমেশ্বরী নন্দন-লোক-নন্দিতা
			জয় দুর্গতিহারিণী।।
তোমাতে সর্বজীবের বসতি, সর্বাশ্রয় তুমি মা,
জয় হয় সব বন্ধন পাপ-তাপ তব পদ চুমি’ মা।
তুমি শাশ্বতী, সৃষ্টি-স্থিতি, তুমি মা প্রলয়কারিণী।।
তুমি মা শ্রদ্ধা, প্রেম, ভক্তি তুমি কল্যাণ সিদ্ধি
ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ তুমি তিন-জন ঋদ্ধি,
জয় বরাভয়া ত্রিগুণময়ী দশ-প্রহরণ-ধারিণী।।

নাটক : ‘বিদ্যাপতি’ (স্তব)