বুনো ফুলের করুণ সুবাস
বাণী
বুনো ফুলের করুণ সুবাস ঝুরে। নাম-না-জানা গানের পাখি, তোমার গানের সুরে।। জানাতে হায় এলে কোথা বনের ছায়ার মনের ব্যথা, তরুর ছায়া ফেলে এলে মরুর বুকে উড়ে।। এলে চাঁদের তৃষ্ণা নিয়ে কৃষ্ণা তিথির রাতে, পাতার বাসা ফেলে এলে সজল নয়ন-পাতে। ওরে পাখি, তোর সাথে হায় উড়তে নারি দূর অলকায়, বন্ধনে যে বাঁধা আমি মলিন মাটির পুরে।।
আমি রবি-ফুলের ভ্রমর
বাণী
আমি রবি-ফুলের ভ্রমর। তা’র আলোক-মধু প্রিয়ে আমি আলোর মধুপ অমর।। ঐ শ্বেত-শতদল ফুটলো যেদিন গভীর গগন নীল সায়রে তা’র আলোর শিখা আকাশ ছেপে ছড়িয়ে গেল বিশ্ব ‘পরে — স্তরে স্তরে, সেই বহ্নি-নলের পরাগ-রেণু আমিই যেন প্রথম পেনু, প্রথম পেনু গো তাই বাহির পানে ধেয়ে এনু গেয়ে আকুল স্বরে। আজ জাগো জগৎ! ঘুম টুটেছে বিশ্বে নিবিড় তমোর।। তাঁ’র জাগরণীর অরুণ কিরণ — গন্ধ যেদিন নিশি-শেষে এই অন্ধ জগৎ জাগিয়ে গেল আকাশ-পথের হাওয়ায় ভেসে — হঠাৎ এসে; আমি ঘুম-চোখে মোর পেনু আভাস, ঘরের বাহির করা সে-বাস ভাঙলে আবাস মোর।। তাই কূজন-বেণু বাজায়ে চলি আলোর দেশের শেষে যথা সহস্রদল কমল, আনন জাগ্ছে প্রিয়তমর।। যেন এ শ্বেত-সরোজ-সরোদ বাঁধা সপ্ত সুরের রঙিন তারে রচ্ছে সুরের ইন্দ্রধনু গগন-সীমায় তোরণ-দ্বারে তমোর ‘পারে, তার সে-সুর বাজি’ আমার পাখায় গহন-গহন শাখায় শাখায় তারায় কাঁপায় গো। জাগে ঐ কমলে পরশ প্রিয়ার চরণ নিরুপমর।।
ও কালো ডাগর চোখে
বাণী
ও কালো ডাগর চোখে বল জল আনিল কে। কে গো সেই নিঠুর হিয়া না জানি কিসের ঝোঁকে।। দু আঁখি ছাপিয়ে গেল তিতিল কপোলখানি উজল নীলাকাশে সহসা ঢাকিল কে।। পড়েছে ঘোমটা খসে খোঁপাটি গেছে খুলে ঢেকেছে মুখখানি তার পাগল এলো চুলে। না জানি কাহার কথা ব্যথিত ভাবছে মনে সে জনা দেখিল না এ ছবি এমন ক্ষণে স্বরগে হয়তো মেলে, মেলে না মর্তলোকে।।
এই শিকল পরা ছল
বাণী
এই শিকল পরা ছল মোদের এ শিকল-পরা ছল। এই শিকল পরেই শিকল তোদের করব রে বিকল।। তোদের বন্ধ কারায় আসা মোদের বন্দী হতে নয়, ওরে ক্ষয় করতে আসা মোদের সবার বাঁধন–ভয়। এই বাঁধন প’রেই বাঁধন–ভয়কে কর্ব মোরা জয়, এই শিকল– বাঁধা পা নয় এ শিকল ভাঙা কল।। তোমার বন্ধ ঘরের বন্ধনীতে কর্ছ বিশ্ব গ্রাস, আর ভয় দেখিয়েই ক’র্বে ভাবছ বিধির শক্তি হ্রাস সেই ভয় দেখানো ভূতের মোরা ক’র্বো সর্বনাশ, এবার আন্বো মাভৈঃ বিজয়–মন্ত্র বল–হীনের বল।। তোমরা ভয় দেখিয়ে কর্ছ শাসন জয় দেখিয়ে নয়; সেই ভয়ের টুঁটি ধর্ব টিপে কর্ব তারে লয়। মোরা আপনি ম’রে মরার দেশে আন্ব বরাভয়, প’রে ফাঁসি আন্ব হাসি মৃত্যু–জয়ের ফল।। ওরে ক্রন্দন নয় বন্ধন এই শিকল–ঝঞ্ঝনা, এ যে মুক্তি–পথের অগ্রদূতের চরণ–বন্দনা! এই লাঞ্ছিতেরাই অত্যাচারকে হান্ছে লাঞ্ছনা, মোদের অশ্রু দিয়েই জ্ব’লবে দেশে আবার বজ্রানল।।
অরুণ কিরণ সুধা-স্রোতে ভাসাও প্রভু মোরে
বাণী
অরুণ কিরণ সুধা-স্রোতে, ভাসাও প্রভু মোরে। গ্লানি পাপ তাপ মলিনতা, যাক ধুয়ে চিরতরে।। প্রশান্ত স্নিগ্ধ তব হাসি, ঝরুক অশান্তি প্রাণে বুকে১ প্রভাত আলোর ধারা, যেমন ঝরে সব ঘরে।। যেমন বিহগেরা জাগি ভোরে, আলোর নেশার ঘোরে আকাশ পানে ..., বন্দে প্রেম-মনোহরে২।।
১. পান্ডুলিপিতে পরিবর্ত লাইন হিসেবে ‘সবারে আজ যেন ভালোবাসি’ লেখা আছে।
২. পান্ডুলিপিতে গানটির সঙ্গে কবি-কৃত স্বরলিপি আছে।