বাণী

তুমি যখন এসেছিলে তখন আমার ঘুম ভাঙেনি
মালা যখন চেয়েছিলে বনে তখন ফুল জাগেনি।।
	আমার আকাশ আঁধার কালো
	তোমার তখন রাত পোহালো
তুমি এলে তরুণ-আলো তখন আমার মন রাঙেনি।।
ওগো রুদ্ধ ছিল মোর বাতায়ন পূর্ণ শশী এলে যবে,
আঁধার-ঘরে একেলা জাগি হে চাঁদ আবার আসবে কবে।
	আজকে আমার ঘুম টুটেছে
	বনে আমার ফুল ফুটেছে
ফেলে যাওয়া তোমারি মালায় বেঁধেছি মোর বিনোদ-বেনী।।

বাণী

মধুকর মঞ্জির বাজে বাজে
		গুন্‌ গুন্‌ মঞ্জুল গুঞ্জরণে।
মৃদুল দোদুল নৃত্যে
		বন শবরী মাতে কুঞ্জবনে।।
বাজাইছে সমীর দখিনা
পল্লবে মর্মর বীণা,
বনভুমি ধ্যান–আসীনা
		সাজিল রাঙা কিশলয়–বসনে।।
ধূলি ধূসর প্রান্তর পরেছিল গৈরিক সন্ন্যাস–সাজ
নব–দূর্বাদল শ্যাম হলো আনন্দে আজ।
লতিকা–বিতানে ওঠে ডাকি’
মুহু মুহু ঘুমহারা পাখি
নব নীল অঞ্জন মাখি’
		উদাসী আকাশ হাসে চাঁদের সনে।।

বাণী

নয়নে নিদ নাহি।
নিশীথ-প্রহর জাগি, একাকিনী গান গাহি।।
কোথা তুমি কোন দূরে, ফিরিয়া কি আসিবে না,
তোমার সাজানো বনে ফুটিয়া ঝরিল হেনা —
কত মালা গাঁথি, কত আর পথ চাহি।।
কত আশা অনুরাগে হৃদয় দেউলে রেখে
পূজিনু তোমারে পাষাণ, কাঁদিলাম ডেকে ডেকে।
এস অভিনামি ফিরে, নিরাশায় এ তিমিরে
			চাঁদের তরণী বাহি’।।

বাণী

জাগে না সে জোশ ল'য়ে আর মুসলমান। 
হায় করিল জয় যে তেজ ল'য়ে দুনিয়া জাহান।। 
যাহার তক্‌বির-ধ্বনি, তক্‌দির বদলালো দুনিয়ার
না-ফরমানের জামানায় আনিল ফরমান খোদার,
হায় পড়িয়া বিরান আজি সে গুল্‌-গুলিস্তান।।
নাহি সাচ্চাই সিদ্দিকের, উমরের নাহি সে ত্যাগ আর
নাহি আর বেলালের ঈমান, নাহি আলীর জুল্‌ফিকার,
হায় নাহি আর সে জেহাদ-লাগি' বীর শহীদান।।
নাহি আর বাজুতে কুওত, নাহি খালেদ, মুসা, তারেক
নাহি বাদ্‌শাহি তখ্‌তে তাউস, ফকির আজ দুনিয়ার মালেক
হায় ইসলাম কিতাবে শুধু মুসলিম গোরস্তান।।

বাণী

আমার		গহীন জলের নদী
আমি		তোমার জলে ভেসে রইলাম জনম অবধি।।
ও ভাই		তোমার বানে ভেসে গেল আমার বাঁধা ঘর
আমি		চরে এসে বস্‌লাম রে ভাই ভাসালে সে চর।
এখন		সব হারিয়ে তোমার জলে রে আমি ভাসি নিরবধি।।
		ঘর ভাঙিলে ঘর পাব ভাই ভাঙ্‌লে কেন মন
ও ভাই		হারালে আর পাওয়া না যায় মনেরি রতন।
ও ভাই		জোয়ারে মন ফেরে না আর রে ও সে ভাটিতে হারায় যদি।।
তুমি		যখন ভাঙ রে নদী (ভাঙ যখন কূল রে নদী) ভাঙ একই ধার
আর		মন যখন ভাঙ রে নদী দুই কূল ভাঙ তার
ও ভাই		চর পড়ে না মনের কূলে রে
ও সে		একবার সে ভাঙে যদি, ও ভাই একবার সে ভাঙে যদি।।

বাণী

খেলা শেষ হল, শেষ হয় নাই বেলা।
কাঁদিও না, কাঁদিও না — তব তরে রেখে গেনু প্রেম-আনন্দ মেলা।।
খেলো খেলো তুমি আজো বেলা আছে
খেলা শেষ হলে এসো মোর কাছে,
প্রেম-যমুনার তীরে ব’সে রব লইয়া শূন্য ভেলা।।
যাহারা আমার বিচার করেছে — ভুল করিয়াছে জানি,
তাহাদের তরে রেখে গেনু মোর বিদায়ের গানখানি।
	হই কলঙ্কী, হোক মোর ভুল
	বালুকার বুকে ফুটায়েছি ফুল,
তুমিও ভুলিতে নারিবে সে-কথা — হানো যত অবহেলা।।

পাঠান্তর

খেলা শেষ হল, শেষ হয় নাই বেলা।
কাঁদিও না, কাঁদিও না — তব তরে রেখে গেনু প্রেম-আনন্দ মেলা।।
খেলো খেলো তুমি আজো বেলা আছে
খেলা শেষ হলে এসো মোর কাছে,
প্রেম-যমুনার তীরে ব’সে রব লইয়া শূন্য ভেলা।।
যাহারা আমার বিচার করেছে আর তাহাদের কেহ,
দেখিতে পাবে না কলঙ্ক কালিমাখা মোর এই দেহ।
	হই কলঙ্কী, হোক মোর ভুল
	পৃথিবীতে আমি এনেছি গোকুল,
তুমিও ভুলিতে নারিবে সে-কথা — হানো যত অবহেলা।।

[গানটি ১৯৬৫ সালে জগন্ময় মিত্রের কণ্ঠে রেকর্ডের সময় প্রশিক্ষক কমল দাশগুপ্ত বাণীর কিছু পরিবর্তন করেছিলেন।
যথা: ১. খেলা শেষ হলে যেয়ো, যেয়ো মোর কাছে, ২. হোক অপরাধ হোক মোর ভুল]