বাণী

নিশি নিঝুম ঘুম নাহি আসে,
হে প্রিয়, কোথা তুমি দূর প্রবাসে।।
বিহগী ঘুমায় বিহগ–কোলে,
ঘুমায়েছে ফুলমালা শ্রান্ত আঁচলে;
ঢুলিছে রাতের তারা চাঁদের পাশে।।
ফুরায় দিনের কাজ, ফুরায় না রাতি,
শিয়রের দীপ হায় অভিমানে নিভে যায়
নিভিতে চাহে না নয়নের বাতি।
কহিতে নারি কথা তুলিয়া আঁখি
বিষাদ–মাখা মুখ গুন্ঠনে ঢাকি’
দিন যায় দিন গুণে, নিশি যায় নিরাশে।।

বাণী

জগৎ জুড়ে জাল ফেলেছিস্ মা, শ্যামা কি তুই জেলের মেয়ে।
(তোর) মায়ার জালে মহামায়া, বিশ্বভুবন আছে ছেয়ে॥
	প’ড়ে মা তোর মায়ার ফাঁদে 
	কোটি নরনারী কাঁদে;
তোর মায়াজাল ততই বাঁধে পালাতে চায় যত ধেয়ে॥
চতুর যে-মীন সে জানে মা জাল থেকে যে মুক্তি আছে;
(তাই)	জেলে যখন জাল ফেলে মা সে লুকায় জেলের পায়ের কাছে।
	জাল এড়িয়ে তাই সে বাঁচে।
	তাই মা আমি নিলাম শরণ
	তোর ও দুটি রাঙা চরণ,
এড়িয়ে গেলাম মায়ার বাঁধন মা তোর অভয়-চরণ পেয়ে॥

বাণী

	রাঙামাটির পথে লো মাদল বাজে, বাজে বাঁশের বাঁশি,
	বাঁশি বাজে বুকের মাঝে লো, মন লাগে না কাজে লো,
	রইতে নারি ঘরে ওলো প্রাণ হলো উদাসী লো।।
	মাদলীয়ার তালে তালে অঙ্গ ওঠে দুলে লো,
	দোল লাগে শাল পিয়াল বনে, নোটন খোঁপার ফুলে লো,
	মহুয়া বনে লুটিয়ে পরে মাতাল চাঁদের হাসি লো।।
	চোখে ভালো লাগে যাকে, তারে দেখবো পথের বাঁকে,
তার 	চাঁচড় কেশে বেঁধে দেবো ঝুমকো জবার ফুল
তার 	গলার মালার কুসুম কেড়ে করব কানের দুল।
তার 	নাচের তালের ইশারাতে বলবো ভালোবাসি লো।।

বাণী

নিশির নিশুতি যেন হিয়ার ভিতরে গো,
সে বলেও না টলেও না থমথম করে গো॥
যেন নতুন পিঞ্জরের পাখি, ঘেরা টোপে ঢাকা থাকি
জটিলা-কুটিলার ভয়ে আছি আমি ম’রে গো॥
যেন চোরের বউ কান্‌তে নারি ভয়ে ফুকারিয়া গো,
আমি রান্না ঘরে কান্না লুকাই লঙ্কা-ফোড়ন দিয়া গো।
ব্যথার ব্যথী পাইরে কোথা, জানাই যা’রে মনের ব্যথা
বুকে ধিকি ধিকি তুষের আগুন জ্ব’লবে চিরতরে
বুঝি জ্ব’লবে জনম ভ’রে গো॥

বাণী

আনারকলি! আনারকলি!
স্বপ্নে দেখে’ কোন্ ডালিম-কুমারে
এসেছিলে রেবা ঝিলামের’ পারে,
দিতে তব রাঙা হৃদয়ের অঞ্জলি।।
মরুর মণিকা বাদশাহী নওরোজে
এসেছিলে কোন্ হারানো হিয়ার খোঁজে,
তব রূপ হেরি’ হেরেমের দীপ-মালা উঠেছিল চঞ্চলি’।।
পতঙ্গ সম পাপড়ির পাখা মেলি’ আনারকলি গো — 
সেলিমের অনুরাগ-মোমের প্রদীপে পড়িলে ঢলি’ গো — 
মিলায়েছে মাটিতে মোগলের মসনদ, আনারকলি।
তুমি আজো দুলিতেছ ফুলের হাসিতে
বিরহীর বাঁশিতে, আনারকলি;
তব জীবন্ত সমাধির বিগলিত পাষাণে
আজও প্রেম-যমুনার ঢেউ ওঠে উথলি’।।

সঙ্গীতালেখ্য: ‘পঞ্চাঙ্গনা’

বাণী

বসিয়া নদী-কূলে,এলোচুলে			কে উদাসিনী
কে এলে, পথ ভুলে, এ অকূলে		বন-হরিণী।।
কলসে জল ভরিয়া চায় করুণায়		কুল-বধূরা,
কেঁদে যায় ফুলে, ফুলে, পদমূলে,		সাঁঝ-তটিনী।।
দলিয়া কত ভাঙা-মন, ও চরণ,		করেছ রাঙা
কাঁদায়ে কত না দিল, এলে নিখিল		মন-মোহিনী।।
হারালি গোধূলি-লগন কবি,			কোন নদী কিনারে,
একি সেই স্বপন-চাঁদ, পেতেছে ফাঁদ		প্রিয়ার সতিনী।।