বাণী

বল সখি বল ওরে স'রে যেতে বল।
মোর মুখে কেন চায় আঁখি-ছলছল,
	ওরে স'রে যেতে বল।।
পথে যেতে কাঁপে গা শরমে জড়ায় পা,
মনে হয় সারা পথ হয়েছে পিছল
	ওরে স'রে যেতে বল।।
জল নিতে গিয়ে সই ওর চোখে চেয়ে রই
সান-বাঁধা ঘাট যেন কাঁপে টলমল
	ওরে স'রে যেতে বল।।
প্রথম বিরহ মোর
চায় কি ও চিত-চোর;
চাঁদিনী চৈতী রাতে আনে সে বাদল
	স'রে যেতে বল
	ওরে স'রে যেতে বল।।

বাণী

দাও দাও দরশন পদ্ম-পলাশ লোচন,
	কেঁদে দু’ নয়ন হ’ল অন্ধ।
আকাশ বাতাস ঘেরা, তব ও মন্দির বেড়া
	আর কতকাল রবে বন্ধ॥
পাখি যেমন সন্ধ্যাকালে, বন্ধু-স্বজন পালে পালে
উড়ে এসে ব’সেছিল ডালে হে।
রাত পোহালে একে এক, উড়ে গেল দিগ্বিদিকে,
	প’ড়ে আছি একা নিরানন্দ।
টুটিল বাঁধন মায়ার, কবে শুনিব এবার
	ও রাঙা চরণ নূপুর ছন্দ॥
দুখ-শোক রৌদ্রজলে, ফেলে মোরে পলে পলে
	ছলিতেছ হরি কত ছল হে
জীবনের বোঝা প্রভু, বহিতে কি হবে তবু
	সহিতে পারি না আর দ্বন্দ্ব।
মরণের সোনার ছোঁওয়ায়, ডেকে লও ও রাঙা পায়
	দেখাও এবার মুখ-চন্দ॥

বাণী

কোন্ মরমীর মরম-ব্যথা আমার বুকে বেদ্না হানে
			জানি গো, সেও জানেই জানে।
আমি কাঁদি তাইতে যে তার ডাগর চোখে অশ্রু আনে,
			বুঝেছি তা প্রাণের টানে।।
বাইরে বাঁধি মনকে যত
ততই বাড়ে মর্ম-ক্ষত,
মোর সে ক্ষত ব্যথার মতো
			বাজে গিয়ে তারও প্রাণে,
			কে কয়ে যায় কানে কানে।।
উদাস বায়ু ধানের ক্ষেতে ঘনায় যখন সাঁঝের মায়া,
দুই জনারই নয়ন-পাতায় অম্‌নি নামে কাজল ছায়া।।
দুইটি হিয়াই কেমন কেমন —
বদ্ধ ভ্রমর পদ্মে যেমন,
হায়,অসহায় মূকের বেদন,
			বাজ্‌লো শুধু সাঁঝের গানে,
			পূবের বায়ুর হুতাশ তানে।।

বাণী

ছল্‌কে গাগরি গোরী ধীরে ধীরে যাও,
পলকে পরান নিতে বারেক ফিরে চাও।।
	যৌবন-ভার-নত
	ক্ষীণ তনু সহে কত,
পরানের বিনিময়ে তব ভার মোরে দাও।।
ঝলকে বিজলি-জ্বালা মদির নয়ন তলে
পতঙ্গ পোড়ে অনলে তবু সে পড়ে না জলে,
নয়নে চাহিয়া দহি, নয়ন ফিরায়ে দাও।।

বাণী

আয় গোপিনী খেলবি হোরি ফাগের রাঙা পিচ্‌কারিতে
আজ শ্যামে লো করব ঘায়েল আবির হাসির টিট্‌কারিতে।।
রঙে রাঙা হয়ে শ্যাম আজ হবে যেন রাই কিশোরী
যমুনা জল লাল হবে আজ আবির ফাগের রঙে ভরি
কপালে কলঙ্ক মোদের ধুয়ে যাবে রঙ ঝারিতে।।
গুরুজনার গঞ্জনা আজ
সইব না লো মানব না লাজ
কূল ভুলে গোকুল পানে ভেসে যাব রাঙা গীতে।।

বাণী

		আমরা শক্তি আমরা বল, আমরা ছাত্রদল।
মোদের	পায়ের তলায় মূর্চ্ছে তুফান
		ঊর্ধ্বে বিমান ঝড় বাদল!
				আমরা ছাত্রদল॥
মোদের	আঁধার রাতে বাধার পথে যাত্রা নাঙ্গা পায়,
আমরা		শক্ত মাটি রক্তে রাঙাই বিষম চলার ঘায়।
		যুগে যুগে রক্তে মোদারে সিক্ত হল পৃথ্বীতল।
				আমরা ছাত্রদল॥
মোদের	কক্ষচ্যুত ধূমকেতু-প্রায় লক্ষ্যহারা প্রাণ,
আমরা		ভাগ্যদেবীর যজ্ঞবেদীর নিত্য বলিদান।
যখন		লক্ষীদেবী স্বর্গে উঠেন আমরা পশি নীল অতল।
				আমরা ছাত্রদল॥
		আমরা ধরি মৃত্যু রাজার যজ্ঞ-ঘোড়ার রাশ,
		মোদের মৃত্যু লেখে মোদের জীবন-ইতিহাস।
		হাসির দেশে আমরা আনি সর্বনাশী চোখের জল।
				আমরা ছাত্রদল॥
		সবাই যখন বৃদ্ধি যোগায়, আমরা করি ভুল।
		সাবধানীরা বাঁধ বাঁধে সব, আমরা ভাঙি কূল।
		দারুণ রাতে আমরা তরুণ রক্তে করি পথ পিছিল।
				আমরা ছাত্রদল॥
মোদের	চক্ষে জ্বলে জ্ঞানের মশাল বক্ষে ভরা বাক্‌,
		কণ্ঠে মোদের কুণ্ঠা-বিহীন নিত্য-কালের ডাক।
আমরা		তাজা খুনে লাল করেছি সরস্বতীর শ্বেত-কমল।
				আমরা ছাত্রদল॥
ঐ		দারুণ উপপ্লবের দিনে আমরা দানি শির,
		মোদের মাঝে মুক্তি কাঁদে বিংশ-শতাব্দীর!
মোরা		গৌরবেরি কান্না দিয়ে ভরেছি মা’র শ্যাম আঁচল।
				আমরা ছাত্রদল॥
		আমরা রচি ভালোবাসার আশার ভবিষ্যৎ,
মোদের	স্বর্গ-পথের আভাস দেখায় আকাশ-ছায়াপথ!
		মোদের চোখে বিশ্ববাসীর স্বপ্ন দেখা হোক সফল।
				আমরা ছাত্রদল॥