বাণী

ভীরু এ মনের কলি ফোটালে না কেন ফোটালে না —
জয় করে কেন নিলে না আমারে, কেন তুমি গেলে চলি।।
		ভাঙ্গিয়া দিলে না কেন মোর ভয়,
		কেন ফিরে গেলে শুনি অনুনয়;
কেন সে বেদনা বুঝিতে পার না মুখে যাহা নাহি বলি।।
কেন চাহিলে না জল নদী তীরে এসে,
সকরুণ অভিমানে চলে গেলে মরু–তৃষ্ণার দেশে।।
		ঝোড়ো হাওয়া ঝরা পাতারে যেমন
		তুলে নেয় তার বক্ষে আপন
কেন কাড়িয়া নিলে না তেমনি করিয়া মোর ফুল অঞ্জলি।।

বাণী

ওরে ও-স্রোতের ফুল!
ভেসে ভেসে হায় এলি অসহায় কোথায় পথ-বেভুল।।
	কোল্ খালি ক’রে কোন্ লতিকার
	নিভাইয়া নয়নের জ্যোতি কা’র,
বনের কুকুম অকূল পাথারে খুঁজিয়া ফিরিস্ কূল।।
ভবনের স্নেহ নারিল রাখিতে ঠেলে ফেলে দিল যা’রে,
সারা ভুবনের স্নেহ কি কখনো তাহারে ধরিতে পারে।
	জল নয়, তোর জননী যে ভুঁই
	অভিমানী! সেথা চল্ ফিরে তুই,
ধূলিতেও যদি ঝরিস্ সেথায় স্বর্গ সেই অতুল।।

বাণী

নিশি না পোহাতে যেয়ো না যেয়ো না দীপ নিভিতে দাও।
নিবু-নিবু প্রদীপ নিবুক হে পথিক ক্ষণিক থাকিয়া যাও॥
ঢুলিয়া পড়িতে দাও ঘুমে অলস আঁখি ক্লান্ত করুণ কায়,
সুদূর নহবতে বাঁশরি বাজিতে দাও উদাস যোগিয়ায়।
	হে প্রিয় প্রভাতে ও-রাঙা পায়
	বকুল ঝরিয়া মরিতে চায়,
তব হাসির আভায় তরুণ অরুণ প্রায় দিক রাঙিয়ে যাও॥

বাণী

	আমারে সকল ক্ষুদ্রতা হ’তে বাঁচাও প্রভু উদার!
	হে প্রভু, শেখাও নীচতার চেয়ে নীচ পাপ নাহি আর।।
		যদি শতেক জন্ম-পাপে হই পাপী
		যুগ-যুগান্ত নরকেও যাপি,
	জানি জানি প্রভু, তারও আছে ক্ষমা, ক্ষমা নাই নীচতার।।
	ক্ষুদ্র করো না, হে প্রভু, আমার হৃদয়ের পরিসর,
যেন	হৃদয়ে আমার সম ঠাঁই পায় শত্রু-মিত্র-পর।
		নিন্দা না করি ঈর্ষায় কারো
		অন্যের সুখে সুখ পাই আরো,
	কাঁদি তাঁ’রি তরে অশেষ দুঃখী ক্ষুদ্র আত্মা যার।।

‘মোনাজাত’

বাণী

এলো ঐ বনান্তে পাগল বসন্ত
বনে বনে মনে মনে রং সে ছড়ায় রেচঞ্চল তরুণ দুরন্ত।।
		বাঁশীতে বাজায় সে বিধুর
		পরজ বসন্তের সুর
পান্ডু কপোলে জাগে রঙ নব অনুরাগে রাঙা হ’ল ধূসর দিগন্ত।।
		কিশলয়ে পর্ণে অশান্ত
		ওড়ে তার অঞ্চল প্রান্ত
পলাশ কলিতে তার ফুল ধনু লঘু ভার ফুলে ফুলে হাসি অফুরন্ত।।
		এলোমেলো দখিনা মলয় রে
		প্রলাপ বকিছে বনময় রে
অকারণ মন-মাঝে বিরহের বেণু বাজে জেগে ওঠে বেদনা ঘুমন্ত।।

বাণী

কাহার তরে হায় নিশিদিন কাঁদে মন-প্রাণ।
জানে শুধু সেই, জানে মোর হৃদি ব্যথা-ম্লান।।
কমল-পাতে যেন জল, — প্রণয় তার সই
বুলবুলি চপল দ'লে যায় লতিকা বিতান।।
জানে শুধু সে নিতে মন, দিতে জানে না
ছলিয়া চলে সে-মুকুল, বারণ মানে না।
জীবন ল'য়ে সে খেলে মরণ-খেলা,
সকালে যারে চাহে তাহে বিকালে হেলা।
কুসুম-সমাধি রচে সে নিঠুর পাষাণ।।
চাহি শুধু এই, — যেন সে বাসিয়া ভালো
এমনি ব্যথা পায় সে ওগো ভগবান।।