বাণী

কিছু নাহি যার তোমারে দিবার কি তার ভিক্ষা লবে!
তুমি কেঁদে গেলে আমারে শুধুই নীরবে কাঁদিতে হবে।।
	হেথা একদিন কিশোর বেলায়
	বেঁধেছিনু ঘর পুতুল-খেলায়,
সে সাথি আমার ফিরিবে না আর নব বসন্ত-উৎসবে।।
একদা হেথায় ফুটেছিল হেনা,
সে-ফুল আবার ফুটিবে হেথায় সে তো আর আসিবে না
	ওগো ভিখারি কি দিব তোমায়
	শূন্য দেউলে কুসুম শুকায়,
ক্ষমিও আমার শত অপরাধ, ভিখারিনী আমি ভবে।।

বাণী

অম্বরে মেঘ-মৃদঙ বাজে জলদ-তালে
লাগিল মাতন ঝড়ের নাচন ডালে ডালে।।
	দিগন্তের ঐ দুর্গ-মূলে
	ধূলি-গৈরিক কেতন দুলে
কে দুরন্ত আগল খুলে ঘুম ভাঙালে।।
থির সাগরের নীল তরঙ্গে আনন্দেরি
সেই নাচনের তালে তালে বাজিল ভেরি।
	মাভৈঃ মাভৈঃ ডাক শুনি যার
	পথ ছেড়ে দে রথ এল তাঁর।
দুর্দিনে সে বজ্র-শিখার আগুন জ্বালে।।

বাণী

এমনি মধুর ক্ষণে প্রিয়তম নাহি পাশে।
আকুল পরান মম চম্পা-ফুল-সুবাসে।।
উতলা সমীরে বাজে ব্যাকুল বাঁশি
কাননে উছলি’ পড়ে সুরের রাশি,
আলোকে সুরভি তারি গগন ভরিয়া হাসে।।
বাতায়নে মোর নিশীথের তারা সুধায় নীরবে ডাকি,
‘হায় গো উদাসী এমন নিশায় সজল কেন গো আঁখি।’
	সুদূরে রহিল বঁধু একেলা আমি
	অসহ বিরহ সহি দিবসযামী,
আশার মালিকা রচি’, বসিয়া তাহারি আশে।।

বাণী

পালিয়ে তুমি বেড়াবে কি এমনিভাবে
এমনি ক'রে জনম কি মোর কেঁদেই যাবে।।
	ওগো চপল বনের পাখি
	ধরা তুমি দেবে না কি,
অন্তরালে থাকি' শুধু গান শোনাবে।।
কেন এলে নিঠুর তুমি পথিক হাওয়া
তোমার স্বভাব ফুল ফুটিয়েই ঝরিয়ে যাওয়া
	হে বিরহী, লীলা-চত্বর,
	অশ্রু কি মোর এতই মধুর!
কবে এসে আমার অভিমান ভাঙাবে।।

বাণী

দুর্গম গিরি, কান্তার–মরু, দুস্তর পারাবার হে!
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে, যাত্রীরা হুঁশিয়ার।।
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ —
ছিঁড়িয়াছে পাল কে ধরিবে হাল, কার আছে হিম্মত।
কে আছো জোয়ান, হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যত,
এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার।।
তিমির রাত্রি, মাতৃ–মন্ত্রী সান্ত্রীরা সাবধান!
যুগ-যুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান।
ফেনাইয়া ওঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান,
ইহাদেরে পথে নিতে হবে সাথে, দিতে হবে অধিকার।।
অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানে না সন্তরণ,
কান্ডারী, আজি দেখিব তোমার মাতৃ–মুক্তি–পণ।
’হিন্দু না ওরা মুসলিম’– ওই জিজ্ঞাসে কোন্‌ জন,
কান্ডারী, বল, ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা’র।।
গিরি–সংকট, ভীরু যাত্রীরা, গরজায় গুরু বাজ —
পশ্চাৎ পথ যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ।
কান্ডারী, তুমি ভুলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ মাঝ?
করে হানাহানি, তবু চল টানি’– নিয়েছ যে মহাভার।।
ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান —
আসি’ অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন্ বলিদান!
আজি পরীক্ষা জাতির অথবা জাতেরে করিবে ত্রাণ,
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, কান্ডারী হুঁশিয়ার।।

বাণী

সন্ধ্যা–গোধূলি লগনে কে
রাঙিয়া উঠিলে কারে দেখে।।
হাতের আলতা পড়ে গেল পায়ে
অস্ত–দিগন্ত বনান্ত রাঙায়ে,
আঁখিতে লজ্জা, অধরে হাসি —
কেন অঞ্চলে মালা ফেলিলে ঢেকে।।
চিরুনি বিনোদ বিনুনীতে বাঁধে
দেখিলে সে কোন সুন্দর চাঁদে,
হৃদয়ে ভীরু প্রদীপ শিখা
কাঁপে আনন্দে থেকে থেকে।।