বিজন গোঠে কে রাখাল বাজায় বেণু আমি সুর শুনে তা'র বাউল হয়ে এনু (গো)।। ঐ সুরে পড়ে মনে কোন সুদুর বৃন্দাবনে যেত নন্দ-দুলাল ব্রজ-গোপাল বাজিয়ে বেণু বনে পথে লুটতো কেঁদে গোপাবালা, ভূরতো তৃণ-ধেণু গো কেঁদে ভুলতো তৃণ-ধেণু।। কবে নদীয়াতে গোরা ও ভাই ডেকেছিল এমনি সুরে এমনি পাগল-করা। কেঁদে ডাকতো বৃথাই শচীমাতা, সাধতো বসুন্ধরা, প্রেমে গ'লে যত নর-নারী যাচতো পদ-বেণু গো তারা যাচতো পদ-রেণু।।
তোরা যারে এখনি হালিমার কাছে লয়ে ক্ষীর সর ননী আমি খোয়াবে দেখেছি কাঁদিছে মা বলে আমার নয়ন-মণি॥ মোর শিশু আহমদে যেদিন কাঁদিয়া হালিমার হাতে দিয়াছি সঁপিয়া সেই দিন হ’তে কেঁদে কেঁদে মোর কাটিছে দিন রজনী॥ পিতৃহীন সে সন্তান হায় বঞ্চিত মা’র স্নেহে তারে ফেলে দূরে কোল খালি করে (আমি) থাকিতে পারি না গেহে। অভাগিনী তার মা আমিনায় মনে করে সে কি আজো কাঁদে হায় বলিস তাহারি আসার আশায় দিবানিশি দিন গণি॥
এ নহে বিলাস বন্ধু ফুটেছি জলে কমল এ যে ব্যথা রাঙা হৃদয় আঁখি জলে টলমল।। কমল মৃণাল দেহ ভরেছে কন্টক ঘায় শরণ লয়েছি গো তাই শীতল দীঘির জল।। ডুবেছি আজ কালো জলে কত যে জ্বালা স'য়ে শত ব্যথা ক্ষত লয়ে হইয়াছি শতদল।। কবি রে কোন ক্ষত মুখে ফোটে যে তোর গীত সুর সে ক্ষত দেখিল না কেউ দেখিল তোরে কেবল সে গীতি দেখিল না কেউ শুনিল গীতি কেবল।।
একাদশীর চাঁদ রে ওই রাঙা মেঘের পাশে যেন কাহার ভাঙা কলস আকাশ গাঙে ভাসে।। সেই কলসি হতে ধরার ’পরে অঝোর ধারায় মধু ঝরে রে দলে দলে তাই কি তারার মৌমাছিরা আসে।। সেই মধু পিয়ে ঘুমের নেশায় ঝিমায় নিশীথ রাতি বন-বধূ সেই মধু ধরে ফুলের পাত্র পাতি’। সেই মধু এক বিন্দু পিয়ে সিন্ধু ওঠে ঝিলমিলিয়ে রে সেই চাঁদেরই আধখানা কি তোমার মুখে হাসে।।
ওমা যা কিছু তুই দিয়েছিলি ফিরিয়ে দিলাম তোকে। তুই ছাড়া আর বলতে আপন (কেউ) রইল না ত্রিলোকে।। তুই কোলে নেবার দায় এড়িয়ে রেখেছিলি মন ভুলিয়ে খেলনা দিয়ে, তুই পালিয়েছিলি ঘুম পাড়িয়ে (মায়ার) কাজল দিয়ে চোখে।। কোটি জনম কাট্ল কেঁদে মাগো তোকে ভুলে, (মা) তোরে মনে পড়েছে আজ, (এবার) নে মা কোলে তু’লে। এই পুত্র জায়া মায়ার ছবি তুই ছাড়া মা মিথ্যা সবই, ভুলব না আর এবার আমি জড়াব না দুঃখ-শোকে।।
গভীর রাতে জাগি’ খুঁজি তোমারে। দূর গগনে প্রিয় তিমির–‘পারে।। জেগে যবে দেখি বঁধু তুমি নাই কাছে আঙিনায় ফুটে’ ফুল ঝ’রে পড়ে আছে, বাণ–বেঁধা পাখি সম আহত এ প্রাণ মম — লুটায়ে লুটায়ে কাঁদে অন্ধকারে।। মৌনা নিঝুম ধরা, ঘুমায়েছে সবে, এসো প্রিয়, এই বেলা বক্ষে নীরবে। কত কথা কাঁটা হ’য়ে বুকে আছে বিঁধে কত আভিমান কত জ্বালা এই হৃদে, দেখে যাও এসো প্রিয়১ কত সাধ ঝ’রে গেল — কত আশা ম’রে গেল হাহাকারে।।
১. দেখিবে এসো প্রিয়
