বাণী

বনের হরিণ আয় রে বনের হরিণ আয়
কাজল-পরা চোখ নিয়ে আয় আমার আঙিনায় রে।।
(দেখ্‌) নেই বনে কেউ এক্‌লা দুপুর
আয় ঝরা পাতায় বাজিয়ে নুপুর, ঝুমুর ঝুমুর
তোরে ডাকে নোটন পায়রার দল ডাকে মেঘের ঝরোকায় রে।।
কি দেখে তুই ধীরি ধীরি চাস্‌ রে ফিরি ফিরি,
বন্‌-শিকারির তীর নহে ও, ঝরনা ঝিরি ঝিরি।
	মাদল বাজে ঈশান কোণে
	ঝড় উঠেছে আমার মনে
সেই তুফানের তালে তালে নাচ্‌বি চপল পায় রে।।

বাণী

বল্ সই বসে কেনে একা আনমনে
চল সই সই পাতাবি গাঁদা ফুলের সনে।।
নিয়ে পাথর কুচি, আউস ধানের গুছি
অজয় নদীর ধারে খেল্‌ব নিরজনে।।
দেখিস্‌ আস্‌বে ফিরে তোর চাঁদ নতুন চাঁদে,
চাঁদ-মুখ রেখে ঘরে কে সই রইতে পারে 
		আঁধার কয়লা খাদে!
আস্‌বে পোষা কোকিল, ডাকবে মহুল বনে।।
কিন্‌বে ধেনো জমি এবার টাকা এনে,
সে আর যেন গয়না কাপড় না কেনে
তোর বলতে যদি লাজে বাধে মুখে
আমি বল্‌ব তারে যা তুই ভাবিস মনে।।

বাণী

বেদনার বেদীতলে পেতেছি আসন, হে দেবতা!
সেথা আর কেহ নাই আমরা দু’জন, কহিব কথা।।
	বাহির ভুবনে তব কত পূজারি
	সেথায় মনের কথা কহিতে নারি,
তাই হৃদয় দেউলে রেখে’ দিয়েছি আগল —
সেথা তোমার চরণ-তলে জানাব গোপন প্রাণের ব্যথা।।
	পূজা-মন্দির হ’তে এসে চুপে চুপে
	হে দেবতা! সাজায়েছি প্রিয় রূপে!
সবার সমুখে তাই মালা দিতে লাজ পাই —
প্রেমের বাসর ঘরে পরাব বরণ-মালা, হব প্রণতা।।

বাণী

বেলা প’ড়ে এলো জল্‌কে সই চল্ চল্
ডাকিছে ওই তটিনী ছল্‌ ছল্‌।।
বকের সারিকার মালিকা দুলিয়ে
আসিছে সাঁঝ ঐ চিকুর এলিয়ে
আকাশের কোলে শিশু শশীরে ঐ
দেখিতে আসিছে তারকা দলে দল।।
কমলিনীর মলিন মুখ
হাসে জলে শাপলা শালুক
বনের পথে হলো আঁধার
জোনাকী ঐ চমকে ঝলমল্‌।।

বাণী

ব’লো না ব’লো না ওলো সই
		আর সে কথা।।
তরু কি লতার কাছে
এসে কভু প্রেম যাচে
তরু বিনা নাহি বাঁচে
		অসহায় লতা।।
ভুলিতে যার নাই তুলনা
সখি তার কথা তুলো না
প্রাণহীন পাষাণে গড়া
		সে যে দেবতা।।

বাণী

বাদল ঝর ঝর আসিল ভাদর
বহিছে তরলতর পুবালি পবন।
মেঘলা যামিনী, দামিনী চমকায়
কালো মেয়ের ভীরু প্রেমের মতন।।
আমি ভুলে গেছি, মেঘেরা ভোলেনি
সেই কালো চোখ, সেই বিনুনী-বেণী,
প্রিয়ার দূতী সম, স্বরণে আনে মম
এসেছিল একদিন এমন শুভ-লগন।।
আর কিছু ছিল কি, ছিল না ত’ স্মরণে,
শুধু জানি দুই জন ছিনু এই ভুবনে।
সহসা মোদের মাঝে ছুটে এলো পারাপার
কে কোথায় হারাইনু, কূল নাহি পেনু আর,
মনে পড়ে বরষায়, তার সেই অসহায়
বিদায় বেলার আঁখি অশ্রু-সঘন।।