বাণী

	বন-ফুলে তুমি মঞ্জরি গো
	তোমার নেশায় পথিক-ভ্রমর ব্যাকুল হ'ল গুঞ্জরি' গো।।
তুমি	মায়ালোকের নন্দিনী ন্দনের আনন্দিনী
তুমি	ধূলির ধরার বন্দিনী, যাও গহন কাননে সঞ্চরি গো।।
	মৃদু পরশ-কুঞ্চিতা তুমি বালিকা
	বল্লভ-ভীতা পল্লব অবগণি্ঠিতা মুকুলিকা।
তুমি	প্রভাত বেলায় মঞ্জরি লাজে সন্ধ্যায় যাও ঝরি'
	অরণ্যা-বল্লরি শোভা, পুণ্য পল্লী-সুন্দরী।।

বাণী

বাদল ঝর ঝর আসিল ভাদর
বহিছে তরলতর পুবালি পবন।
মেঘলা যামিনী, দামিনী চমকায়
কালো মেয়ের ভীরু প্রেমের মতন।।
আমি ভুলে গেছি, মেঘেরা ভোলেনি
সেই কালো চোখ, সেই বিনুনী-বেণী,
প্রিয়ার দূতী সম, স্বরণে আনে মম
এসেছিল একদিন এমন শুভ-লগন।।
আর কিছু ছিল কি, ছিল না ত’ স্মরণে,
শুধু জানি দুই জন ছিনু এই ভুবনে।
সহসা মোদের মাঝে ছুটে এলো পারাপার
কে কোথায় হারাইনু, কূল নাহি পেনু আর,
মনে পড়ে বরষায়, তার সেই অসহায়
বিদায় বেলার আঁখি অশ্রু-সঘন।।

বাণী

আমি	বন্ধন-হারা কুমারীর বেণী, তন্বী-নয়নে বহ্ণি,
আমি	ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম উদ্দাম, আমি ধন্যি!
আমি	উন্মন মন উদাসীর,
আমি	বিধবার বুকে ক্রন্দন-শ্বাস, হা হুতাশ আমি হুতাশীর।
আমি	বঞ্চিত ব্যথা পথবাসী চির-গৃহহারা যত পথিকের,
আমি	অবমানিতের মরম-বেদনা, বিষ-জ্বালা, প্রিয়-লাঞ্ছিত বুকে গতি ফের!
আমি	অভিমানী চির-ক্ষুব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যথা সুনিবিড়,
	চিত-চুম্বন-চোর-কম্পন আমি থর-থর-থর প্রথম পরশ কুমারীর!
আমি	গোপন-প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল-ক’রে দেখা অনুখন,
আমি	চপল মেয়ের ভালোবাসা, তা’র কাঁকন-চুড়ির কন-কন!
আমি	চির-শিশু, চির-কিশোর,
আমি	যৌবন-ভীতু পল্লীবালার আঁচড় কাঁচলি নিচোর!
আমি	উত্তর-বায়ু, মলয়-অনিল, উদাস পূরবী হাওয়া,
আমি	পথিক-কবির গভীর রাগিণী, বেণু-বীণে গান গাওয়া।
আমি	আকুল নিদাঘ-তিয়াসা, আমি রৌদ্র-রুদ্র রবি,
আমি	মরু-নির্ঝর ঝর-ঝর, আমি শ্যামলিমা ছায়া-ছবি!
আমি	তুরীয়ানন্দে ছুটে চলি, এ কি উন্মাদ, আমি উন্মাদ!
আমি	সহসা আমারে চিনেছি, আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ!
আমি	অর্ফিয়াসের বাঁশরী,
	মহা-সিন্ধু উতলা ঘুমঘুম
	ঘুম্‌ চুমু দিয়ে করি নিখিল বিশ্বে নিঝ্‌ঝুম
	মম বাঁশরীর তানে পাশরি’।
আমি	শ্যামের হাতের বাঁশরী।
আমি	পরশুরামের কঠোর কুঠার,
	নিঃক্ষত্রিয় করিব বিশ্ব, আনিব শান্তি শান্ত উদার!
	মহা-বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত
আমি	সেই দিন হব শান্ত,
যবে	উত্‍পীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না —
	অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না —
	বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত
আমি	সেই দিন হব শান্ত।
আমি	বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন,
আমি	স্রষ্টা-সূদন, শোক-তাপ হানা খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন!
আমি	বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দেবো পদ-চিহ্ন!
আমি	খেয়ালী-বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন!
আমি	চির-বিদ্রোহী বীর —
	বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির!
	শির নেহারি’ আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির!
বল	বীর -
	বল উন্নত মম শির!
বল	বীর, বল বীর।

বাণী

বনমালার ফুল জোগালি বৃথাই বন-লতা
বনের ডালায় কুসুম শুকায়, বনমালি কোথা।।
	শুকনো পাতার গুনে নূপুর
	চমকে ওঠে বনে ময়ূর,
রাস নাই আজ নিরাশ ব্রজে গভীর নীরবতা।।
যমুনা-জল উজান বেয়ে কদম-তলে আসি’
ভাটিতে যায় ফিরে, নাহি শু’নে শ্যামের বাঁশি।
	তমাল-ডালে ঝুলনা আর
	গোপীরা বাঁধেনি এবার,
শ্রাবণ এসে কেঁদে শুধায় ঘনশ্যামের কথা।।

বাণী

ব্যথিত প্রাণে দানো শান্তি, চিরন্তন, ধ্রুব-জ্যোতি।
দুখ-তাপ-পীড়িত-শোকার্ত এই চিত যাচে তব সান্ত্বনা ত্রিভুবন-পতি।।
বেদনা যাতনা ক্লেশ মুক্ত কর, বিপদ নিবার, সব বিঘ্ন হর,
আঁধার পথে তুমি হাত ধরো, প্রভু অগতির গতি।।
সকল গ্লানি হতে হে নাথ বাঁচাও, চিত্তে অটল প্রসন্নতা দাও
যেন সুখে ও দুখে সদানন্দে থাকি, অবিচল থাকে যেন তব পদে মতি।।

বাণী

বেদনার সিন্ধু-মন্থন শেষ, হে ইন্দ্রানী,
জাগো, জাগো করে সুধা-পাত্রখানি।।
রোদন-সায়রে ধুয়ে পুষ্পতনু
এসো অশ্রুর বরষার ইন্দ্র-ধনু,
হের কুলে অনুরাগে জীবন-দেবতা জাগে
	ধরিবে বলিয়া তব পদ্মপাণি।।
তব দুখ-রাত্রির তপস্যা শেষ- এলো শুভ দিন,
অতল-তমসা-লক্ষ্মী গো তুমি অমরার
এসো এসো পার হ'য়ে ব্যথার পাথার।
অশ্রুত অশ্রুর নীরবতা কর দূর
	কূলে কূলে হাসির তরঙ্গ হানি।।