বাণী

বিধুর তব অধর-কোণে মধুর হাসির রেখা।
তারি লাগি' ভিখারি মন ফেরে একা একা।।
সজাগ হয়ে আছে শ্রবণ, থির হয়েছে অধীর পবন।
তুমি কথা কইবে কখন গাইবে কুহু কেকা।।
কখন তুমি চাইবে, প্রিয়া, সলাজ অনুরাগে।
তিমির-তীরে অরুণ ঊষা তারি আশায় জাগে।
কেমন ক'রে চাঁদ যে টানে — সিন্ধু জানে, জোয়ার জানে —
দেখিতে আসি, আসিনিকো দিতে তোমায় দেখা।।

নাটক: ‌‘চক্রব্যূহ’

বাণী

বকুল ছায়ে ছিনু ঘুমায়ে গোপন পায়ে আসিলে তুমি।
রাতের শেষে ভোরের মতন ভাঙিলে স্বপন নয়ন চুমি’॥
ফুলের বুকে মধুর সম আসিলে তুমি আামার প্রাণে
মরুর বুকে উঠিল ফুটে রঙিন কুসুম বেদন ভুলি’॥
জাগিয়া হেরি পরান ভরি উঠিতেছে ঢেউ এ কি এ ব্যথার
বেদনা যত মধুও তত হিয়াতে শরম নয়নে আশার।
অকালে ফাগুন আগুন শিখায় রাঙিল মনের কানন-ভূমি॥

বাণী

বাজাও প্রভু বাজাও ঘন বাজাও ভীম বজ্র-বিষাণে দুর্জয় মহা-আহ্বান তব।
বাজাও! অগ্নি তূর্য কাঁপাক সূর্য বাজুক রুদ্রতালে ভৈরব।।
দুর্জয় মহা-আহ্বান তব, বাজাও! নট-মল্লার দীপক-রাগে
জ্বলুক তড়িৎ-বহ্নি আগে,
ভেরির রন্ধ্রে মেঘ-মন্দ্রে জাগাও বাণী জাগ্রত নব।।
দুর্জয় মহা-আহ্বান তব, বাজাও! দাসত্বের এ ঘৃণ্য তৃপ্তি
ভিক্ষুকের এ লজ্জা-বৃত্তি,
বিনাশ জাতির দারুণ এ লাজ, দাও তেজ দাও মুক্তি-গরব।।
দুর্জয় মহা-আহ্বান তব, বাজাও! খুন দাও নিশ্চল এ হস্তে
শক্তি-বজ্র দাও নিরস্ত্রে,
শীর্ষ তুলিয়া বিশ্বে মোদেরও দাঁড়াবার পুন দাও গৌরব।।
দুর্জয় মহা-আহ্বান তব, বাজাও! ঘুচাতে ভীরুর নীচতা দৈন্য
প্রের হে তোমার ন্যায়ের সৈন্য,
শৃঙ্খলিতের টুটাতে বাঁধন আন আঘাত প্রচন্ড আহব।।
দুর্জয় মহা-আহ্বান তব, বাজাও! নিবীর্য্য এ তেজঃসূর্য্যে,
দীপ্ত কর হে বহ্নি-বীর্য্যে,
শৌর্য, ধৈর্য্য মহাপ্রাণ দাও, দাও স্বাধীনতা সত্য বিভব।।

বাণী

বনের মনের কথা ফুল হয়ে জাগে।
কয় না সে কথা তবু তারে ভালো লাগে।।
	শ্যাম পল্লবে তনু ছেয়ে যায়,
	ভরে ওঠে সুরভিত সুষমায়।
ফুটে ওঠে তার না বলা বাণী রক্তিম অনুরাগে।।
বন মর্মরে সেই মৌনীর শুনি মৃদু গুঞ্জন
ললিতার মত তার ভালোবাসা, গভীর-চির গোপন।
	যত সে নিজেরে লুকাইতে চায়,
	তত মধু তার উছলিয়া যায়।
কত সে পলাশে, কত সে অশোকে কত কুঙ্কুম ফাগে।।

বাণী

বকুল চাঁপার বনে কে মোর চাঁদের স্বপন জাগালে —
অনুরাগের সোনার রঙে হৃদয়-গগন রাঙালে।।
ঘুমিয়ে ছিলাম কুমুদ-কুঁড়ি বিজন ঝিলের নীল জলে
পূর্ণ শশী তুমি আসি’ আমার সে ঘুম ভাঙালে।।
হে মায়াবী তোমার ছোঁয়ায় সুন্দর আজ আমার তনু
তোমার মায়া রচিল মোর বাদল মেঘে ইন্দ্র ধনু।
		তোমার টানে হে দরদি
		দোল খেয়ে যায় কাঁদন-নদী
কূল হারা মোর ভালোবাসা আজকে কূলে লাগালে।।

বাণী

বক্ষে আমার কাবার ছবি চক্ষে মোহাম্মদ রসুল।
শিরোপরি মোর খোদার আরশ গাই তাঁরি গান পথ বেভুল।।
লায়লী প্রেমে মজনু পাগল আমি পাগল লা-ইলা’র,
প্রেমিক দরবেশ আমায় চেনে অরসিকে কয় বাতুল।।
হৃদয়ে মোর খুশির বাগান বুলবুলি তায় গায় সদাই,
ওরা খোদার রহম মাগে আমি খোদার ইশ্‌ক্‌ চাই।
আমার মনের মস্‌জিদে দেয় আজান হাজার মোয়াজ্জিন
প্রাণের ‘লওহে’ কোরান লেখা রুহ্‌ পড়ে তা রাত্রি দিন।
খাতুনে জিন্নত মা আমার হাসান হোসেন চোখের জেল,
ভয় করি না রোজ-কেয়ামত পুল সিরাতের কঠিন পুল।।