বৈতালিক

  • ওগো মা — ফাতেমা ছুটে আয়

    বাণী

    ওগো মা — ফাতেমা ছুটে আয়, তোর দুলালের বুকে হানে ছুরি।
    দ্বীনের শেষ বাতি নিভিয়া যায় মাগো, বুঝি আঁধার হ’ল মদিনা-পুরী।।
    	কোথায় শেরে খোদা, জুলফিকার কোথা,
    	কবর ফেঁড়ে এসো কারবালা যথা —
    তোমার আওলাদ বিরান হ’ল আজি, নিখিল শোকে মরে ঝুরি’।।
    কোথায় আখেরী নবী, চুমা খেতে তুমি, যে গলে হোসেনের
    সহিছ কেমনে? সে গলে দুশমন হানিছে শমসের।
    	রোজ্‌হাশরে নাকি কওসরের পানি
    	পিয়াবে তোমরা গো গোনাহ্‌গারে আনি,
    দেখ না কি চেয়ে, দুধের ছেলেমেয়ে পানি বিহনে মরে পুড়ি।।
    
  • কোন রস-যমুনার কূলে বেণু-কুঞ্জে

    বাণী

    কোন রস-যমুনার কূলে বেণু-কুঞ্জে
    হে কিশোর বেণুকা বাজাও।
    মোর অনুরাগ যায় সেথা, তনু যেতে নারে,
    তুমি সেই ব্রজের পথ দেখাও।।
    মোর অন্ধ আঁখি কাঁদে চাঁদের তৃষায়
    তব পানে হাত তুলে রাত কেটে যায়,
    বঁধু, এই ভিখারিনী সেই মাধুকরী চায় –
    মধুবনে, গোপীগণে যে মধু দাও।।
    প্রেমহীন-নীরস জীবন ল’য়ে
    পথে পথে ফিরি বৈরাগিনী হয়ে,
    বুঝি আমি চাই তব প্রেম নাহি পাই –
    কৃপা কর প্রেমময়, তুমি মোরে চাও।।
    
  • গ্রহণী-রোগ-সমা গৃহিণী প্রিয়তমা

    বাণী

    গ্রহণী-রোগ-সমা গৃহিণী প্রিয়তমা, প্রসীদ! কর ক্ষমা! দেবী নমস্তে।
    শতমুখীধারিণী ভীমহুঙ্কারিণী যেন গন্ডারিনী দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে।দেবী নমস্তে।।
    চীৎকারে মাঝ রাতে পড়শীরা জেগে যায়
    তক্তাপোষের নীচে ছেলে পিলে ভেগে যায়
    পদভরে দুদ্দাড় ভেঙ্গে পড়ে ঘর দ্বার
    চেড়ীদের সর্দার হাতা-বেড়ী-হস্তে।দেবী নমস্তে।।
    শান্ত শিষ্ট এই গোবেচারা স্বামী
    তোমার পুলিশ কোর্টে চিরকাল আসামী
    তেড়ে আসে বীরজায়া তুমি কুঁদো মোটকা।
    বেগতিক দেখে ছুটি আমি রোগা পট্‌কা।
    কাঁছাকোঁচা বেসামাল ব্যস্তে সমস্তে।দেবী নমস্তে।।
    তুমি পূর্বজন্মে ছিলে ভোজপুরি দারোয়ান
    আমি বলীবর্দ তুমি ছিলে গাড়োয়ান;
    ময়দা ছিলাম আমি তুমি নিয়ে ঠাসতে।
    আহা হা টুটি কেন টিপে ধর? আস্তে, শ্বস্তে।দেবী নমস্তে।।
    
  • ছাড়িতে পরান নাহি চায় তবু যেতে হবে হায়

    বাণী

    	ছাড়িতে পরান নাহি চায় তবু যেতে হবে হায়
    	মলয়া মিনতি করে তবু কুসুম শুকায়॥
    		রবে না এ মধুরাতি
    		জানি তবু মালা গাঁথি
    মালা	চলিতে দলিয়া যাবে তবু চরণে জড়ায়॥
    		যে কাঁটার জ্বালা সয়ে
    		উঠে ব্যথা ফুল হয়ে
    	আমি কাঁদিব সে-কাঁটা লয়ে নিশীথ বেলায়॥
    		নীরবে রবে যবে পরবাসে
    		আমি দূর নীল আকাশে
    	জাগিব তোমারি আশে নূতন তারায়॥
    

    বৈতালিক

  • জাগো যোগমায়া জাগো মৃন্ময়ী

    বাণী

    জাগো যোগমায়া জাগো মৃন্ময়ী চিন্ময়ী রূপে জাগো,
    তব কনিষ্ঠা কন্যা ধরণী কাঁদে আর ডাকে মা গো।।
    	বরষ বরষ কৃথা কেঁদে যাই
    	কৃথাই মা তোর আগমনী গাই
    সেই কবে মা আসিলি ত্রেতায় আর আসিলি না গো।।
    কোটী নয়নের নীল পদ্ম মা ছিঁড়িয়া দিলাম চরণে তোর,
    জাগিলিনে তুই, এলিনে ধরায় মা কবে হয় হেন কঠোর।
    	দশ ভুজে দশ গ্রহরণ ধরি’
    	আয় মা দশ দিক আলো করি’
    দশ হাতে আন্‌ কল্যাণ ভরি’ নিশীথ-শেষে ঊষা গো।।
    
  • তুমি চ’লে যাবে দূরে লায়লী

    বাণী

    (হায়) 	তুমি চ’লে যাবে দূরে লায়লী তব মজনু কাঁদিবে একা।
    	বুঝি পাব না তোমায় জীবনে বুঝি এই নিয়তির লেখা।।
    

    নাটিকা: ‘লায়লী-মজনু’

  • তুমি দিয়েছ দুঃখ-শোক-বেদনা তোমারি জয়

    বাণী

    তুমি দিয়েছ দুঃখ-শোক-বেদনা, তোমারি জয় তোমারি জয়।
    ভালোবাস যারে কাঁদাও তাহারে ছলানাময়।
    	তোমারি জয়, তোমারি জয়, তোমারি জয়॥
    তুমি কাঁদায়েছ বসুদেব দেবকীরে,
    নন্দ যশোদা ব্রজের গোপীরে,
    কাঁদাইলে তুমি শত শ্রীমতীরে হে নিরদয়।
    	তোমারি জয়, তোমারি জয়, তোমারি জয়॥
    তোমারে চাহিয়া কোটি নয়নে বিরহ অশ্রু ঝুরে,
    ধরণী যে আজ ডুবু ডুবু শ্যাম সাগর সলিলে পুরে।
    ভক্তে কাঁদাতে হে ব্যথা বিলাসী
    যুগে যুগে আসি’ বাজাইলে বাঁশি
    তবুও এ-প্রাণ তোমারি পিয়াসি মানে না ভয়।
    	তোমারি জয়, তোমারি জয়, তোমারি জয়।
    

    বৈতালিক

  • তোমার আকাশে উঠেছিনু চাঁদ

    বাণী

    তোমার আকাশে উঠেছিনু চাঁদ, ডুবিয়া যাই এখন।
    দিনের আলোকে ভুলিও তোমার রাতের দুঃস্বপন।।
    	তুমি সুখে থাক আমি চলে যাই,
    	তোমারে চাহিয়া ব্যথা যেন পাই,
    জনমে জনমে এই শুধু চাই — না-ই যদি পাই মন।।
    ভয় নাই রাণী রেখে গেনু শুধু চোখের জলের লেখা,
    জলের লিখন শুকাবে প্রভাতে, আমি চলে যাব একা!
    	ঊর্ধ্বে তোমার প্রহরী দেবতা,
    	মধ্যে দাঁড়ায়ে তুমি ব্যথাহতা, —
    পায়ের তলার দৈত্যের কথা ভুলিতে কতক্ষণ।।
    
  • তোমার কবরে প্রিয় মোর তরে

    বাণী

    তোমার কবরে প্রিয় মোর তরে একটু রাখিও ঠাঁই।
    মরণে যেন সে পরশ পাই গো জীবনে যা পাই নাই।।
    	তোমারে চাহিয়া ওগো প্রিয়তম
    	কাঁদিয়া আমার কাটিল জনম,
    কেঁদেছি বিরহে এবার যেন গো মিলনে কাঁদিতে পাই।।
    ঐ কবরের বাসর ঘরে গো তোমার বুকের কাছে
    কাঁদিবে লায়লী, মজনু তোমার য’দিন ধরণী আছে।
    	যে যাহারে চায় কেন নাহি পায়,
    	কেন হেথা প্রেম-ফুল ঝ’রে যায় —
    প্রেমের বিধাতা থাকে যদি কেউ শুধাইব তারে তাই।।
    

    নাটিকা: ‌‘লায়লী মজনু’

  • দেশপ্রিয় নাই শুনি ক্রন্দন সহসা

    বাণী

    ‘দেশপ্রিয় নাই’ শুনি ক্রন্দন সহসা প্রভাতে জাগি’।
    আকাশে ললাট হানিয়া কাঁদিছে ভারত চির-অভাগী।।
    বহুদিন পরে আপনার ঘরে মা’র কোলে মাথা রাখি’,
    ঘুমাতে এসেছে শ্রান্ত সেননী, জাগায়ো না তারে ডাকি’।
    দেশের লাগিয়া দিয়াছে সকলি, দেয়নি নিজেরে ফাঁকি —
    তাহারি শুভ্র শান্ত হাসিটি অধরে রয়েছে লাগি’।।
    স্বার্থ অর্থ বিলাস বিভব গৌরব সম্মান
    মায়ের চরণে দিয়াছে সে-বীর অকাতরে বলিদান,
    রাজ-ভিখারির ছিল সম্বল শুধু দেহ আর প্রাণ
    তাই দিয়ে দিল শেষ অঞ্জলি দানবীর বৈরাগী।।
    

    প্রথম খন্ড

  • দেশপ্রিয় নাই শুনি ক্রন্দন সহসা প্রভাতে

    বাণী

    ‘দেশপ্রিয় নাই’ শুনি ক্রন্দন সহসা প্রভাতে জাগি’।
    আকাশে ললাট হানিয়া কাঁদিছে ভারত চির-অভাগী।।
    দেশবন্ধুর পার্শ্বে জ্বলিছে দেশপ্রিয়ের চিতা
    এতদিন পরে বক্ষে এসেছে দুঃখের সাথি মিতা,
    বহিছে অশ্রুগঙ্গা, জ্বলিছে শোকের দীপাম্বিতা —
    নিভে যাবে চিতা, রয়ে যাবে ধুম, চিরদিন বুকে জাগি’।।
    তুমি এসেছিলে হিন্দু-মুসলমানের মিলন-হেতু
    পদ্মা ও ভাগীরথীর মাঝারে তুমি বেঁধেছিলে সেতু,
    অন্ধকারের বুকে ছিলে তুমি দীপ্ত চন্দ্র-কেতু —
    বন্ধন হল নন্দন-ফুল-হার তোমার ছোয়া লাগি’।।
    

    দ্বিতীয় খন্ড

  • ফোরাতের পানিতে নেমে

    বাণী

    ফোরাতের পানিতে নেমে 
    ফাতেমা দুলাল কাঁদে অঝোর নয়নে রে।।
    দু'হাতে তুলিয়া পানি 
    ফেলিয়া দিলেন অমনি — পড়িল কি মনে রে।।
    দুধের ছাওয়াল আসগর এই পানি চাহিয়ে রে,
    দুশ্‌মনের তীর খেয়ে বুকে ঘুমাল খুন পিয়ে রে;
    শাদীর নওশা কাশেম শহীদ এই পানি বিহনে রে।।
    এই পানিতে মুছিল রে হাতের মেহেদী সকিনার,
    এই পানিরই ঢেউয়ে ওঠে, তারি মাতম্‌ হাহাকার;
    শহীদানের খুন মিশে আছে, এই পানিরই সনে রে।।
    বীর আব্বাসের বাজু শহীদ হ'ল এরি তরে রে,
    এই পানির বিহনে জয়নাল খিয়াম তৃষ্ণায় মরে রে;
    শোকে শহীদ হ'লেন হোসেন জয়ী হয়েও রণে রে।। 
    
  • বনের হরিণ বনের হরিণ

    বাণী

    বনের হরিণ বনের হরিণ ওরে কপট চোর।
    কেমন ক’রে করলি চুরি প্রিয়ার আঁখি মোর।।
    	লায়লীরে তুই দেখ্‌লি কখন
    	কর্‌লি বদল তোদের নয়ন,
    ওরে বন হয়েছে স্বর্গ আমার হেরি নয়ন তোর।।
    

    নাটকঃ ‘লায়লী-মজনু’

  • বরষ গেল আশ্বিন এলো উমা এলো কই

    বাণী

    বরষ গেল, আশ্বিন এলো, উমা এলো কই
    শূন্য ঘরে কেমন করে পরান বেঁধে রই।।
    ‌	ও গিরিরাজ! সবার মেয়ে
    	মায়ের কোলে এলো ধেয়ে,
    আমারই ঘর রইল আঁধার, আমি কি মা নই?
    নাই শাশুড়ি ননদ উমার, আদর করার নাই (কেহ)
    মা অনাদরে কালী সেজে বেড়ায় নাকি তাই।
    	মোর গৌরী বড় অভিমানী,
    	সে বুঝবে না মার প্রাণ-পোড়ানী;
    আনতে তারে সাধতে হবে তার যে স্বভাব ঐ।।
    
  • বরের বেশে আসবে জানি

    বাণী

    বরের বেশে আসবে জানি আজ মম সুন্দর।
    পার হ’য়ে দূর বিরহ-লোক বহু যুগের পর।।
    	আসে সে ঐ চুপে চুপে
    	আমার মধুর মরণ রূপে
    আর সে ছেড়ে যাবে না গো আমার-ঘর।।
    

    নাটকঃ ‘লায়লী-মজনু’

  • বহে শোকের পাথার আজি সাহারায়

    বাণী

    বহে শোকের পাথার আজি সাহারায়।
    নবীজী নাই-উঠ্‌ল মাতম মদিনায়।।
    	আঁখি-প্রদীপ এই ধরনীর
    	গেল নিভে ঘির্‌ল তিমির,
    দীনের রবি মোদের নবী চায় বিদায়।
    সইল না রে বেহেশ্‌তী দান দুনিয়ায়।।
    	না পূরিতে সাধ-আশা
    	না মিটিতে তৌহিদ-পিপাসা,
    যায় চ’লে দীনের শাহানশাহ্ — হায় রে হায়,
    সেই শোকেরি তুফান বহে ‘লু’ হাওয়ায়।।
    বেড়েছে আজ দ্বিগুণ পানি দজ্‌লা ফোরাত নদীতে,
    তূর ও হেরা পাহাড় ফেটে অশ্রু-নিঝর ব’য়ে যায়।
    ধরার জ্যোতি হরণ ক’রে উজল হ’ল ফের বেহেশত্
    কাঁদে পশু-পাখি ও তরুলতায়,
    সেই কাঁদনের স্মৃতি দোলে দরিয়ায়।।
    
  • ভোলো ভোলো গো লায়লী মজনুর ভালোবাসা

    বাণী

    ভোলো ভোলো গো লায়লী মজনুর ভালোবাসা।
    সেই তো প্রেমিক প্রেম কয় তারে,
    প্রিয়া যদি কয় ভোলো সে-প্রিয়ারে।
    আজি হতে তাই ছাড়িলাম আমি তোমারে পাবার আশা
    			ভোলো মজনুর ভালোবাসা।।
    
  • যেয়ো না যেয়ো না মদিনা-দুলাল

    বাণী

    যেয়ো না যেয়ো না মদিনা-দুলাল হয়নি যাবার বেলা।
    সংসার-পাথারে, আজো দোলে পাপের ভেলা।।
    মেটেনি তোমায় দেখার পিয়াসা
    মেটেনি কদম জিয়ারত আশা
    হযরত, এই জমেছে প্রথম দীন-ই-ইসলাম মেলা।।
    ছড়ায়ে পড়েনি তোমার কালাম আজিও সকল দেশে,
    ফিরিয়া আসেনি সিপাহীরা তব আজও বিজয়ীর বেশে।
    দিনের বাদশা চাও ফিরে চাও
    শোক-দুর্দিনে বেদনা ভোলাও
    গুনাহ্‌গার এই উম্মতে তব হানিও না অবহেলা।।
    

    বৈতালিক

  • সেই রবিয়ল আউয়ালেরই চাঁদ এসেছে ফিরে

    বাণী

    সেই রবিয়ল আউয়ালেরই চাঁদ এসেছে ফিরে
    		ভেসে আকুল অশ্রুনীরে।
    আজ মদিনার গোলাপ বাগে বাতাস বহে ধীরে
    		ভেসে আকুল অশ্রুনীরে।।
    	তপ্ত বুকে আজ সাহারার
    	উঠেছে রে ঘোর হাহাকার
    মরুর দেশে এলো আঁধার শোকের বাদল ঘিরে।।
    চবুতরায় বিলাপ করে কবুতরগুলি খোঁজে নবীজীরে।
    কাঁদিছে মেষশাবক, কাঁদে বনের বুলবুলি গোরস্থান ঘিরে।।
    	মা ফাতেমা লুটিয়ে প’ড়ে
    	কাঁদে নবীর বুকের পরে
    আজ দুনিয়া জাহান কাঁদে কর হানি শিরে।।
    
  • স্মরণ-পারের ওগো প্রিয়

    বাণী

    স্বরণ-পারের ওগো প্রিয়, তোমায় আমি চিনি যেন
    তোমায় চাঁদে চিনি আমি, তুমি আমায় তারায় চেন॥
    	নূতন পরিচয়ের লাগি’
    	তারায় তারায় থাকি জাগি’
    বারে বারে মিলন মাগি, বারে বারে হারাই হেন॥
    নূতন চোখের প্রদীপ জ্বালি’ চেয়ে আছি নিরিবিলি,
    খোলো প্রিয় তোমার ধরার বাতায়নের ঝিলি-মিলি।
    	নিবাও নিবু-নিবু বাতি,
    	ডাকে নূতন তারার ভাতি,
    ওগো আমার দিবস রাতি কাঁদে বিদায়-কাঁদন কেন॥
    

    নাটিকাঃ ‌‘ঝিলিমিলি’