ভজন

  • শুধু নামে যাঁহার এত মধু সে বঁধু কেমন

    বাণী

    শুধু নামে যাঁহার এত মধু সে বঁধু কেমন
    শুধু নাম শুনে যাঁর জাগে জোয়ার পরানে এমন।।
    	শুধু যাহার বাঁশির সুরে
    	আমার এত নয়ন ঝুরে
    ওগো না জানি তার রূপ কেমন মদন-মোহন।।
    সে বুঝি লো' অপরূপ সে চির-নতুন
    বাঁশির সুরের মতো আঁখি-সকরুণ।
    	তারে আমি দেখি যদি
    	কাঁদিব কি নিরবধি
    ওগো, যেমন ক'রে ঐ যমুনা কাঁদে অনুক্ষণ।।
    
  • শুভ্র সমুজ্জ্বল হে চির–নির্মল

    বাণী

    শুভ্র সমুজ্জ্বল, হে চির–নির্মল শান্ত অচঞ্চল ধ্রুব–জ্যোতি
    অশান্ত এ চিত কর হে সমাহিত সদা আনন্দিত রাখো মতি।।
    দুঃখ–শোক সহি অসীম সাহসে
    অটল রহি যেন সম্মানে যশে
    তোমার ধ্যানের আনন্দ–রসে
    	নিমগ্ন রহি হে বিশ্বপতি।।
    মন যেন না টলে খল কোলাহলে, হে রাজ–রাজ!
    অন্তরে তুমি নাথ সতত বিরাজ, হে রাজ–রাজ!
    বহে তব ত্রিলোক ব্যাপিয়া, হে গুণী,
    ওঙ্কার–সংগীত–সুর–সুরধুনী,
    হে মহামৌনী, যেন সদা শুনি
    	সে সুরে তোমার নীরব আরতি।।
    
  • শোক দিয়েছ তুমি হে নাথ তুমি এ প্রাণে শান্তি দাও

    বাণী

    শোক দিয়েছ তুমি হে নাথ তুমি এ প্রাণে শান্তি দাও।
    দুখ্ দিয়ে কাঁদালে যদি তুমি হে নাথ সে দুখ ভোলাও।।
    যে হাত দিয়ে হানলে আঘাত
    তুমিঅশ্রু মোছাও সেই হাতে নাথ
    বুকের মানিক হ’রলে যা’র —
    	তারে তোমার শীতল বক্ষে নাও।।
    তোমার যে চরণ প্রলয় ঘটায়
    সেই চরণ কমল ফোটায়
    শূন্য করলে তুমি যে বুক
    	সেথা তুমি এসে বুক জুড়াও।।
    

  • শ্যাম-সুন্দর-গিরিধারী

    বাণী

    শ্যাম-সুন্দর-গিরিধারী।
    মানস মধু-বনে মধুমাধবী সুরে মুরলী বাজাও বনচারী।।
    মধুরাতে হে হৃদয়েশ মাধবী চাঁদ হয়ে এসো,
    হৃদয়ে তুলিও ভাবেরই উজান রস-যমুনা-বিহারী।।
    অন্তর মন্দিরে প্রীতি ফুলশয্যায় বিলাস কর লীলা-বিলাসী,
    আঁখির প্রদীপ জ্বালি' শিয়রে জাগিয়া রব শ্যাম, তব রূপ-পিয়াসি।
    যত সাধ আশা গেল ঝরিয়া, পর তাই গলে মালা করিয়া;
    নূপুর করিব তব চরণে গাঁথি' মম নয়নের বারি।।
    
  • শ্রী রঘুপতি রাম লহ প্রণাম

    বাণী

    দ্বৈত	:	শ্রী রঘুপতি রাম
    		লহ প্রণাম শ্রী রঘুপতি রাম
    		নব দূর্বাদল শ্যাম অভিরাম।
    স্ত্রী	:	সুরাসুর কিন্নর যোগী ঋষি নর
    পুরুষ	:	চরাচর যে নাম জপে অবিরাম॥
    স্ত্রী	:	সরযূ নদীর জল ছল ছল কান্তি
    পুরুষ	:	ঢল ঢল অঙ্গ ললাটে প্রশান্তি
    স্ত্রী	:	নাম স্মরণে টোটে শোক তাপ ভ্রান্তি
    দ্বৈত	:	পদারবিন্দে মূরছিত কোটি কাম॥
    স্ত্রী	:	জানকী বল্লভ সুঠাম অঙ্গ
    পুরুষ	:	পরশে নিমেষে হয় হরধনু ভঙ্গ
    দ্বৈত	:	রাবণ ভয় হরে যাঁহার নাম॥
    স্ত্রী	:	পিতৃ সত্যব্রত পালনকারী
    পুরুষ	:	চির বল্কলধারী কাননচারী
    দ্বৈত	:	প্রজারঞ্জন লাগি সর্বসুখ ত্যাগী
    		যে নামে ধরা হল আনন্দধাম॥
    
  • শ্রীকৃষ্ণ নাম মোর জপ-মলা নিশিদিন

    বাণী

    শ্রীকৃষ্ণ নাম মোর জপ-মলা নিশিদিন শ্রীকৃষ্ণ নাম মোর ধ্যান।
    শ্রীকৃষ্ণ বসন শ্রীকৃষ্ণ ভূষণ ধরম করম মোর জ্ঞান।।
    শয়নে স্বপনে ঘুমে জাগরণে বিজড়িত শ্রীকৃষ্ণ নাম (মোর)
    কৃষ্ণ আত্মা মম কৃষ্ণ প্রিয়তম ওই নাম দেহ মন প্রাণ।।
    কৃষ্ণ নয়ন-ধার কৃষ্ণ গলার হার এ হৃদয় তাঁরি ব্রজধাম
    ঐ নাম-কলঙ্ক ললাটে আঁকিয়া গো ত্যাজিয়াছি লাজ কুল মান।।
    

  • শ্রীকৃষ্ণ নামের তরীতে কে হবি পার

    বাণী

    শ্রীকৃষ্ণ নামের তরীতে কে হবি পার কৃষ্ণ নামের তরীতে!
    তরাইতে পাপী পতিত মানবে এলো তরী ভব-নদীতে।।
    ডাকিছে আর্তজনে বাঁশির সুরে নাইয়া কানাইয়া ‘আয় আয়’ ব’লে
    মধুর নামের তরী টলমল দোলে আশ্রিতে পারে নিতে।।
    ঘন দুর্দিন-ঘেরা আঁধার সংসার নাম প্রদীপ আশার;
    জপ প্রেম-ভরে তাঁহারই প্রিয় নাম (তরঙ্গে) তরী ডুবিবে না আর।
    তাঁর নাম পারের তরী, কান্ডারি শ্রীচরণ শরণ নে রে তোরা তাঁরই
    নামের আলোকে যাবি রে গোলকে নাম গাহিতে গাহিতে।।
    
  • শ্রীকৃষ্ণ মুরারী গদাপদ্মধারী

    বাণী

    শ্রীকৃষ্ণ মুরারী গদাপদ্মধারী
    মধুবন-চারী গিরিধারী ত্রিভুবন-বিহারী।।
    	লীলা-বিলাসী গোলকবাসী
    	রাধা তুলসী প্রেম-পিয়াসী
    মহা বিরাট বিষ্ণু ভূ-ভার হরণকারী।।
    	নব-নীরদ-কান্তি-শ্যাম
    	চির কিশোর অভিরাম
    রসঘন-আনন্দ-রূপ মাধব বনোয়ারী।।
    
  • শ্রীকৃষ্ণ রূপের করো ধ্যান অনুক্ষণ

    বাণী

    শ্রীকৃষ্ণ রূপের করো ধ্যান অনুক্ষণ
    হবে নিমেষে সংসার-কালীয় দমন।।
    	নব-জলধর শ্যাম
    	রূপ যাঁর অভিরাম
    (যাঁর)	আনন্দ ব্রজধাম লীলা নিকেতন।।
    বিদ্যুৎ - বর্ণ পীতান্বরধারী,
    বনমালা-বিভূষিত মধুবনারী;
    গোপ-সখা গোপী-বঁধু মনোহারী
    নওল-কিশোর তনু মদনমোহন।।
    
  • সকাল সাঁঝে প্রভু সকল কাজে

    বাণী

    সকাল সাঁঝে প্রভু সকল কাজে উঠুক তোমারি নাম —
    				বেজে উঠুক তোমারি নাম।
    নিশীথ রাতে তারার মত উঠুক তোমারি নাম —
    				বেজে উঠুক তোমারি নাম।।
    তরুর শাখায় ফুলের সম
    বিকশিত হোক (প্রভু) তব নাম নিরুপম,
    সাগর মাঝে তরঙ্গ সম বহুক তোমারি নাম।।
    পাষাণ শিলায় গিরি নির্ঝর সম বহুক তোমারি নাম
    অকুল সমুদ্রে ধ্রুবতারা-সম জাগি’ রহুক তব নাম
    				প্রভু জাগি’ রহুক তব নাম।
    	শ্রাবণ দিনে বারি ধারার মত
    	ঝরুক ও নাম প্রভু অবিরত
    মানস কমল বনে মধুকর সম লুটুক তোমারি নাম।।
    

    নাটক: ‌‘রূপকথা’

  • সখি লো তায় আন ডেকে

    বাণী

    সখি লো তায় আন ডেকে যে গান গেয়ে যায় পথ দিয়ে।
    সই দিব তারে কণ্ঠহার, তার কণ্ঠেরি ঐ সুর নিয়ে॥
    		কারুর পানে নাহি চায়
    	সে 	আপন মনে গেয়ে যায়
    প্রাণ কাঁপে সুরের নেশায় নয়ন আসে ঝিমিয়ে॥
    		সখি লো শুধিয়ে আয়
    		সে শিখিল এ গান কোথায়
    এত মধু তার গলায় কার অধর-সুধা পিয়ে॥
    		যার গানে এত প্রাণ মাতায়
    		না জানি কি হয় দেখ্‌লে তায়
    তার সুর শুনে কেউ প্রাণ পায় কেউ ফেলে প্রাণ হারিয়ে॥
    
  • সে চ'লে গেছে ব'লে কি গো

    বাণী

    সে চ'লে গেছে ব'লে কি গো স্মৃতিও হায় যায় ভোলা
    ওগো মনে হ'লে তারি কথা আজো মর্মে সে মোর দেয় দোলা।।
    	ঐ প্রতিটি ধূলি কণায়
    	আছে তার ছোঁওয়া লেগে হেথায়,
    আজো তাহারি আসার আশায়, রাখি মোর ঘরেরই সব দ্বার খোলা।।
    	হেথা সে এসেছিল যবে
    	ঘর ভরেছিল ফুল-উৎসবে,
    মোর কাজ ছিল শুধু ভবে তার হার গাঁথা আর ফুল তোলা।।
    	সে নাই ব'লে বেশি ক'রে
    	শুধু তার কথাই মনে পড়ে,
    হেরি তার ছবি ভুবন ভ'‌রে তারে ভুলিতে মিছে বলা।।
    

  • স্নিগ্ধ শ্যাম কল্যাণ রূপে রয়েছ

    বাণী

    স্নিগ্ধ শ্যাম কল্যাণ রূপে রয়েছ মোদেরে ঘেরি
    তব অনন্ত করুণা ও স্নেহ নিশিদিন নাথ হেরি।।
    	তব চন্দন-শীতল কান্তি
    	সৌম্য-মধুর তব১ প্রশান্তি
    জড়ায়ে রয়েছে ছড়ায়ে রয়েছে অঙ্গে ত্রিভুবনেরই।।
    বাহিরে তুমি বন্ধু স্বজন আত্মীয় রূপী মম
    অন্তরে তুমি পরমানন্দ প্রিয় অন্তরতম।
    	নিবেদন করে তোমাতে যে প্রাণ
    	সেই জানে তুমি কত মহান
    যেমনি সে ডাকে সড়া দাও তাকে তিলেক কর না দেরি।।
    

    ১. চির

  • হরি হে তুমি তাই দূরে থাক স’রে

    বাণী

    হরি হে তুমি তাই দূরে থাক স’রে
    হরি প্রভু বলে মোরা দূরে রাখি
    পাষাণ দেউলে রাখিয়াছি হায় তোমারে পাষাণ করে॥
    তোমায় চেয়েছিল গোপিনীরা
    সেদিনও চেয়েছি মীরা ডেকে প্রিয়তম বলে
    তোমায় গোপাল বলিয়া ডাকিয়া পাইল যশোদা মা শচী কোলে
    অন্তরতম হতে নিশিদিন থাক তুমি অন্তরে॥
    দেবতা ভাবিয়া পূজা দিই মোরা তুমি তাহা নাহি খাও
    তুমি লুকায়ে ভিখারি সাজিয়া মোদের পাতের অন্ন চাও।
    রাখাল ছেলের আধ খাওয়া ফল
    কেড়ে খাও তুমি হে চির সজল
    মোরা ভয় করি তাই লুকাইয়া থাক তুমি অভিমান ভরে॥
    
  • হে গোবিন্দ ও অরবিন্দ চরণে

    বাণী

    হে গোবিন্দ, ও অরবিন্দ চরণে শরণ দাও হে।
    বিফল জনম কাটিল কাঁদিয়া, শান্তি নাহি কোথাও হে।।
    	জীবন-প্রভাত কাটিল খেলায়,
    	দুপুর ফুরাল মোহের মেলায়।
    ডাকিব যে নাথ সন্ধ্যা-বেলায়, ডাকিতে পারিনি তাও হে।।
    এসেছি দুঃখ-জীর্ণ পথিক মৃত্যু-গহন রাতে।
    কিছু নাহি প্রভু সম্বল, শুধু জল আছে আঁখি-পাতে।।
    	সন্তান তব বিপথগামী,
    	ফিরিয়া এসেছে হে জীবন-স্বামী।
    পাপী তাপী তবু সন্তান আমি ধূলা মুছে-কোলে নাও হে।।
    
  • হে পার্থসারথি বাজাও বাজাও

    বাণী

    হে পার্থসারথি! বাজাও বাজাও পাঞ্চজন্য শঙ্খ
    চিত্তের অবসাদ দূর কর কর দূর
    	ভয়–ভীত জনে কর হে নিঃশঙ্ক।।
    ধনুকে টঙ্কার হানো হানো,
    গীতার মন্ত্রে জীবন দানো;
    	ভোলাও ভোলাও মৃত্যু–আতঙ্ক।।
    মৃত্যু জীবনের শেষ নহে নহে —
    শোনাও শোনাও — অনন্ত কাল ধরি’
    অনন্ত জীবন প্রবাহ বহে।
    দুর্মদ দুরন্ত যৌবন–চঞ্চল
    ছাড়িয়া আসুক মা’র স্নেহ–অঞ্চল;
    বীর সন্তানদল করুক সুশোভিত মাতৃ–অঙ্ক।।
    
  • হে পাষাণ দেবতা

    বাণী

    হে পাষাণ দেবতা!
    মন্দির দুয়ার খোল কও কথা।।
    দুয়ারে দাঁড়ায়ে শ্রান্তি-হীন দীর্ঘ দিন,
    অঞ্চলের পূষ্পাঞ্জলি শুকায়ে যায় উষ্ণ বায়;
    আঁখি দীপ নিভিছে হায়, কাঁপিছে তনুলতা।
    শুভ্রবাসে পূজারিণী, দিন শেষে —
    গোধুলির গেরুয়া রঙ হের প্রিয় লাগে এসে;
    খোল দ্বার শরণ দাও, সহে না আর নীরবতা।।
    
  • হে বিধাতা হে বিধাতা হে বিধাতা

    বাণী

    হে বিধাতা! হে বিধাতা! হে বিধাতা!
    দুঃখ-শোক-মাঝে, তোমারি পরশ রাজে,
    কাঁদায়ে জননী-প্রায়, কোলে কর পুনরায়, শান্তি-দাতা।।
    ভুলিয়া যাই হে যবে সুখ-দিনে তোমারে
    স্মরণ করায়ে দাও আঘাতের মাঝারে।
    দুঃখের মাঝে তাই, হরি হে, তোমারে পাই দুঃখ-ত্রাতা।।
    দারা-সুত-পরিজন-রূপে হরি, অনুখন
    তোমার আমার মাঝে আড়াল করে সৃজন।
    তুমি যবে চাহ মোরে, লও হে তোদের হ’রে
    ছিঁড়ে দিয়ে মায়া-ডোর, ক্রোড়ে ধর আপন।
    ভক্ত সে প্রহ্লাদ ডাকে যবে ‘নারায়ণ’,
    নির্মম হয়ে তার পিতারও হর জীবন।
    সব যবে ছেড়ে যায় দেখি তব বুকে হায় আসন পাতা।।
    
  • হে মহামৌনী তব প্রশান্ত গম্ভীর বাণী

    বাণী

    হে মহামৌনী, তব প্রশান্ত গম্ভীর বাণী শোনাবে কবে
    যুগ যুগ ধরি’ প্রতীক্ষারত আছে জাগি’ ধরণী নীরবে॥
    যে-বাণী শোনার অনুরাগে উদার অম্বর জাগে
    অনাহত যে-বাণীর ঝঙ্কার বাজে ওঙ্কার প্রণবে॥
    চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-তারায় জ্বলে যে-বাণীর শিখা
    পুষ্পে-পর্ণে শত বর্ণে যে-বাণী-ইঙ্গিত লিখা।
    যে অনাদি বাণী সদা শোনে যোগী-ঋষি মুনি জনে
    যে-বাণী শুনি না শ্রবণে বুঝি অনুভবে॥
    
  • হে মোর স্বামী অন্তর্যামী

    বাণী

    হে মোর স্বামী, অন্তর্যামী, লহ সকলি আমার।
    লহ প্রীতি-প্রেম-পূজা লহ পায়ে গলার হার।।
    	হে প্রিয়তম, সকলি লহ;
    	মান-অভিমান ব্যথা-বিরহ।
    দুঃখের দাহ, সুখের মোহ লহ হে অশ্রু-ধার।।
    	যাহা কিছু আপন, দিতে যা বাকি
    	যাহা কিছু গোপন, লুকায়ে রাখি
    যাহা কিছু প্রিয় অঞ্চলে ঢাকি; লহ হে বঁধূ এবার।।
    	তোমায় চাওয়ার পাওয়ার আশা,
    	তোমায় না-পাওয়ার ব্যথা-নিরাশা,
    তোমারে দিলাম মোর ভালোবাসা বিফলতা হাহাকার।।