ভজন

  • ঘরে আয় ফিরে ফিরে আয়

    বাণী

    ঘরে আয় ফিরে, ফিরে আয় পথহারা ওরে ঘর-ছাড়া ফিরে আয়।
    ফেলে যাওয়া তোর বাঁশরি রে কানাই কাঁদে লুটায়ে ধূলায়।।
    	ব্রজে আয় ফিরে ওরে ও-কিশোর
    	কাঁদে বৃন্দাবন কাঁদে রাধা তোর,
    বাঁধিব না আর ওরে ননীচোর — অভিমানী মোর ফিরে আয়।।
    	তোর মা’র মতন ল’য়ে শূন্য কোল্‌
    	জাগে শূন্য মাঠ গ্রহ শোক-বিভোল
    ঝরে যায় যে ফুল মরে যায় ফসল — ওরে শ্যামল তোর বেদনায়।।
    	আসিলে ফিরে ওরে পথ-বেভুল
    	আবার উঠবে রোদ, আবার ফুঠবে ফুল,
    ধানে ভরবে মাঠ আবার বসবে হাট — জোয়ার বইবে হৃদ-যমুনায়।।
    
  • চল মন আনন্দ-ধাম

    বাণী

    চল	মন আনন্দ-ধাম।
    	চল মন আনন্দ-ধাম রে,
    	চল আনন্দ-ধাম।।
    	লীলা-বিহার প্রেম লোক
    	নাই রে সেথা দুঃখ শোক,
    সেথা	বিহরে চির-ব্রজ-বালক — 
    	বন্‌শিওয়ালা শ্যাম রে
    	চল আনন্দ-ধাম।।
    	নাহি মৃত্যু নাহি ভয়
    	নাহি সৃষ্টি, নাহি লয়,
    খেলে	চির-কিশোর চির-অভয় —
    	সঙ্গীত ওম্ না রে
    	চল আনন্দ ধাম।।
    	নাহি চরাচর নাহি রে ব্যোম
    	লীলা-সাথী গ্রহ রবি ও সোম,
    	সঙ্গীত ‘ওম্’ নাম রে
    	চল আনন্দ ধাম।।
    

    ১. অবাঙ্‌মনস-গোচরম্‌

  • জগজন মোহন সঙ্কটহারী

    বাণী

    জগজন মোহন সঙ্কটহারী
    কৃষ্ণমুরারী শ্রীকৃষ্ণমুরারী।
    রাম রচাও ত শ্যামবিহারী
    পরম যোগী প্রভু ভবভয়-হারী।।
    গোপী-জন-রঞ্জন-ব্রজ-ভয়হারী,
    পুরুষোত্তম প্রভু গোলক-চারী।।
    বন্‌শী বাজাও ত বন বন-চারী
    ত্রিভুবন-পালক ভক্ত-ভিখারি,
    রাধাকান্ত হরি শিখি-পাখাধারী —
    কমলাপতি জয় গোপী-মনহারী।।
    
  • জগতের নাথ তুমি তুমি প্রভু প্রেমময়

    বাণী

    জগতের নাথ তুমি, তুমি প্রভু প্রেমময়।
    আমি জগতের বাহিরে নহি দেহ চরণে আশ্রয়।।
    যাহাদের তরে আমি খাটিনু দিবস-রাতি,
    (আমার)যাবার বেলায় কেহ তাদের হ’ল না সাথের সাথি।
    সম্পদ মোর পাঁচ ভূতে খায়, কর্ম কেবল সঙ্গে রয়।।
    ভুলিয়া সংসার মোহে লই নাই তোমারি নাম —
    তরাতে এমন পাপী পাবে না হে ঘনশ্যাম।
    শুনেছি তোমারে যদি কাঁদিয়া কেহ ডাকে —
    তুমি অমনি তারে কর ক্ষমা চরণে রাখ তাকে।
    আমি সেই আশাতে এসেছি নাথ যদি তব কৃপা হয়।।
    
  • জবা কুসুম-সঙ্কাশ ঐ

    বাণী

    জবা কুসুম-সঙ্কাশ ঐ উদার অরুণোদয়।
    অপগত তমোভয় জয় হে জ্যোতির্ময়।।
    জননীর সম স্নেহ-সজল, নীল গাঢ় গগন-তল
    সুপেয় বারি প্রসুন ফল —
    তব দান অক্ষয়, অপহৃত সংশয়
    		জয় হে জ্যোতির্ময়।।
    
  • জাগো জাগো শঙ্খ চক্র-গদা-পদ্ম-ধারী

    বাণী

    জাগো জাগো শঙ্খ চক্র-গদা-পদ্ম-ধারী 
    জাগো শ্রীকৃষ্ণ-তিথির তিমির অপসারি’।।
    	ডাকে বসুদেব দেবকী ডাকে
    	ঘরে ঘরে, নারায়ণ, তোমাকে।
    ডাকে বলরাম শ্রীদাম সুদাম ডাকিছে যমুনা-বারি।।
    	হরি হে, তোমায় সজল নেত্রে
    	ডাকে পাণ্ডব কুরুক্ষেত্রে!
    দুঃশাসন সভায় দ্রৌপদী ডাকিছে লজ্জাহারী।।
    	মহাভারতের হে মহাদেবতা
    	জাগো জাগো, আনো আলোক-বারতা!
    ডাকিছে গীতার শ্লোক অনাগতা বিশ্বের নর-নারী।।
    
  • তিমির বিদারী অলখ-বিহারী কৃষ্ণ মুরারি

    বাণী

    তিমির বিদারী অলখ-বিহারী কৃষ্ণ মুরারি আগত ঐ
    টুটিল আগল নিখিল পাগল সর্বসহা আজি সর্বজয়ী।।
    বহিছে উজান অশ্রু-যমুনায়
    হৃদি-বৃন্দাবনে আনন্দ ডাকে, (ওরে) ‌‘আয়’,
    বসুধা যশোদার স্নেহধার উথলায়
    (ওগো) কাল্‌-রাখাল নাচে থৈ-তা-থৈ।।
    বিশ্ব ভরি' ওঠে স্তব নমো নমঃ
    অরির পুরী-মাঝে এলো অরিন্দম।
    ঘিরিয়া দ্বার বৃথা জাগে প্রহরী জন
    বন্ধ কারায় এলো বন্ধ-বিমোচন,
    ধরি' অজানা পথ আসিল অনাগত
    জাগিয়া ব্যথাহত ডাকে, মাভৈঃ।।
    
  • তুমি আনন্দ ঘনশ্যাম আমি প্রেম-পাগলিনী রাধা

    বাণী

    তুমি আনন্দ ঘনশ্যাম আমি প্রেম-পাগলিনী রাধা।
    তব ডাক শুনে ছুটে যাই বনে আমি না মানি কুলের বাধা।।
    	শূন্য প্রাণের গাগরি ঘিরে
    	নিতি আসি রস-যমুনার তীরে
    অঙ্গ ভাসায়ে তরঙ্গ-নীরে শুনি তব বাঁশি সাধা।।
    যুগ-যুগান্ত অনন্ত কাল হৃদয়-বৃন্দাবনে
    তোমাতে আমাতে এই লীলা, নাথ! চলেছে, সঙ্গোপনে।
    	মোর সাথে কাঁদে প্রেম-বিগলিতা
    	ভক্তি ও প্রীতি বিশাখা-ললিতা।
    তোমারে যে চায়, মোর মতো, হায়! সার শুধু তার কাঁদা।।
    

  • তুমি বিরাজ কোথা হে উৎসব দেবতা

    বাণী

    তুমি বিরাজ কোথা হে উৎসব দেবতা
    মম গৃহ অঙ্গনে এসো সঙ্গী হয়ে আনো আনন্দ বারতা॥
    		পূজা সম্ভারে প্রসন্ন দৃষ্টি হানো
    		শুভ শঙ্খ বাজাও দশদিক জাগানো
    হে মঙ্গলময়! আসি’ অভয় দানো আনো প্রভাত আকাশ সম নির্মলতা॥
    		লহ বিহগের গীতি অভিনন্দন
    		চাঁদের থালিকা হতে গোপীচন্দন
    আনন্দ অমরার নন্দন হে প্রণত কর চরণে কহ কথা কহ কথা॥
    
  • তুমি যদি রাধা হতে শ্যাম

    বাণী

    তুমি যদি রাধা হতে শ্যাম,
    আমারি মতন দিবস-নিশি জপিতে শ্যাম-নাম।।
    কৃষ্ণ-কলঙ্কেরি জ্বালা, মনে হ’ত মালতীর মালা
    চাহিয়া কৃষ্ণ-প্রেম জনমে জনমে আসিতে ব্রজধাম।।
    কত অকরুণ তব বাঁশরির সুর
    তুমি হইলে শ্রীমতী ব্রজ-কুলবতী বুঝিতে নিঠুর।
    তুমি যে-কাঁদনে কাঁদায়েছ মোরে
    আমি কাঁদাতাম তেমনি ক’রে
    বুঝিতে, কেমন লাগে এই গুরু-গঞ্জনা
    এ প্রাণ-পোড়ানি অবিরাম।।
    

  • তোমার প্রেমে সন্দেহ মোর

    বাণী

    তোমার প্রেমে সন্দেহ মোর দুর কর নাথ ভক্তি দাও।
    যেখানে হোক তুমি আছ — এই বিশ্বাস শক্তি দাও।।
    	যে কোন জনমে আমি
    	পাইব পাব তোমায় আমি
    অবিশ্বাসের আঁধার রাতে তোমায় পাওয়ার পথ দেখাও।।
    শত দুঃখ ব্যথার মাঝে এইটুকু দাও শন্তি নাথ।
    কাঁদিবে তুমি আমার দুঃখে আজকে যতই দাও আঘাত।।
    	হয়ত কোটি জনম পরে
    	পাব তোমায় আমার করে,
    তোমায় আমায় মিলন হবে এই আশাতেই মন দোলাও।।
    
  • তোমার সৃষ্টি মাঝে হরি হেরিতে

    বাণী

    তোমার সৃষ্টি মাঝে হরি হেরিতে যে নিতি পাই তোমায়।
    তোমার রূপের আবছায়া ভাসে গগনে, সাগরে, তরুলতায়॥
    চন্দ্রে তোমার মধুর হাসি, সূর্যে তোমার জ্যোতি প্রকাশ;
    করুণা সিন্ধু তব আভাস বারি-বিন্দুতে হিমকণায়॥
    ফোটা ফুলে হরি, তোমার তনুর গোপী-চন্দন গন্ধ পাই,
    হাওয়ায় তোমার স্নেহের পরশ অন্নে তোমার প্রসাদ খাই।
    রাসবিহারী তোমার রূপ গোলে, দুঃখ শোকের হিন্দোলে,
    তুমি, ঠাঁই দাও যবে ধর কোলে মোর বন্ধু স্বজন কেঁদে ভাসায়॥
    
  • থাক্ এ গৃহ ঘিরিয়া সদা মঙ্গল কল্যাণ

    বাণী

    থাক্ এ গৃহ ঘিরিয়া সদা মঙ্গল কল্যাণ হে ভগবান।
    দাও পুত পবিত্রতা প্রশান্তি অফুরান, হে ভগবান॥
    অন্তরে দেহে দাও বিমল্-জ্যোতি
    কর্মে প্রেরণা দাও ধর্মে মতি;
    এ গৃহের নারী হোক পুণ্যবতী
    বীরত্বে ত্যাগে হোক পুরুষ মহান; হে ভগবান॥
    এ গৃহের বারি হোক নির্মল সুশীতল হে ভগবান,
    এ গৃহের আলো হোক পুণ্যে সমুজ্জ্বল হে ভগবান।
    সকলের সাথে হেথা প্রীতি যেন রয়
    যেন নাহি থাকে হেথা রোগ শোক ভয়;
    দূর কর হিংসা পাপ সংশয়
    সার তব পায়ে নিবেদিত সকলের মনপ্রাণ, হে ভগবান॥
    
  • দুঃখ অভাব শোক দিয়েছ হে নাথ

    বাণী

    দুঃখ অভাব শোক দিয়েছ হে নাথ তাহে দুঃখ নাই
    তুমি যেন অন্তরে মোর বিরাজ করো সর্বদাই॥
    	রোগের মাঝে অশান্তিতে
    	তুমি থেকো আমার চিতে
    তোমার নামের ভজন গীতে প্রাণে যেন শান্তি পাই॥
    দুর্দিনেরি বিপদ এলে তোমায় যেন না ভুলি
    তোমার ধ্যানে পর্বত প্রায় অটল থাকি, না দুলি।
    	সুখের দিনে বিলাস ঘোরে
    	ভুলতে নাহি দিও মোরে
    আপনি ডেকে নিও কোলে দূরে যদি সরে যাই॥
    
  • দুঃখ-ক্লেশ-শোক-পাপ-তাপ শত

    বাণী

    দুঃখ-ক্লেশ-শোক-পাপ-তাপ শত
    শ্রান্তি মাঝে হরি শান্তি দাও দাও॥
    কান্ডারি হে আমার, পার কর কর পার,
    উত্তাল তরঙ্গ অশান্তি পারাবার,
    অভাব দৈন্য শত হৃদি-ব্যথা-ক্ষত,
    যাতনা সহিব কত প্রভু কোলে তুলে নাও।।
    হে দীনবন্ধু করুণাসিন্ধু,
    অম্বর ব্যাপি’ ঝরে তব কৃপা-বিন্দু,
    মরুর্‌ মতন চেয়ে আছি নব ঘনশ্যাম —
    আকুল তৃষ্ণা ল’য়ে প্রভু পিপাসা মিটাও॥
    
  • দোলে ঝুলন দোলায় দোলে নওল কিশোর

    বাণী

    দোলে ঝুলন দোলায় দোলে নওল কিশোর গিরিধারী হরষে।।
    মৃদঙ্গ বাজে নভোচারী মেঘে বারিধারা রুমু ঝুমু বরষে।।
    	নাচে ময়ুর নাচে কুরঙ্গ
    	কাজরি গাহে বন বিহঙ্গ
    যমুনা-জলে বাজে জলতরঙ্গ শ্যামসুন্দর রূপ দরশে।।
    
  • দোলে নিতি নব রূপের টেউ-পাথার

    বাণী

    দোলে নিতি নব রূপের টেউ-পাথার ঘনশ্যাম তোমারি নয়নে।
    আমি হেরি যে নিখিল বিশ্বরূপ-সম্ভার তোমারি নয়নে॥
    		তুমি পলকে ধর নাথ সংহার-বেশ
    		হও পলকে করুণা-নিধান পরমেশ।
    নাথ ভরা যেন বিষ অমৃতের ভান্ডার তোমার দুই নয়নে॥
    		ওগো মহা-শিশু, তব খেলা-ঘরে
    		একি বিরাট সৃষ্টি বিহার করে,
    সংসার চক্ষে তুমিই হে নাথ, সংসার তোমারি নয়নে॥
    		তুমি নিমেষে রচি নব বিশ্বছবি
    		ফেল নিমেষে মুছিয়া হে মহাকবি,
    করে কোটি কোটি ব্রহ্মান্ড ভুবন-সঞ্চার তোমারি নয়নে॥
    		তুমি ব্যাপক ব্রহ্ম চরাচরে
    		জড় জীবজন্তু নারী-নরে,
    কর কমল-লোচন, তোমার রূপ বিস্তার হে আমারি নয়নে॥
    
  • দোলে প্রাণের কোলে প্রভূর নামের মালা

    বাণী

    দোলে প্রাণের কোলে প্রভূর নামের মালা।
    সকাল সাঁঝে সকল কাজে জপি সে নাম নিরালা।।
    সেই নাম বসন-ভূষণ আমারি
    সেই নামে ক্ষুধা-তৃষ্ণা নিবারি,
    সেই নাম লয়ে বেড়াই কেঁদে
    	সেই নামে আবার জুড়াই জ্বালা।।
    সেই নামরেই নামাবলী গ্রহ তারা রবি শশী দোলে গগন কোলে।
    	মধুর সেই নাম প্রাণে সদা বাজে,
    	মন লাগে না সংসার কাজে
    		সে নামে সদা মন মাতোয়ালা।।
    আদর-সোহাগ মান -অভিমান আপন মনে তার সাথে;
    	কাঁদায়ে কাঁদি, পায়ে ধ'রে সাধি,
    	কভু করি পূজা, কভু বুকে বাঁধি,
    	আমার স্বামী সে ভুবন-উজালা।।
    
  • নন্দলোক হতে আমি এনেছি

    বাণী

    নন্দলোক হতে (আনন্দলোক হতে) আমি এনেছি রে মহামায়ায়।
    				এনেছি মা মহামায়ায়।
    বন্ধ যথায় বন্দী যত কংসরাজার অন্ধকারায়।।
    	বন্দী জাগো! ভাঙো আগল,
    	ফেল রে ছিঁড়ে পায়ের শিকল;
    বুকের পাষাণ ছুঁড়ে ফেলে মুক্তলোকে বেরিয়ে আয়।।
    আমার বুকের গোপালকে রে রেখে এলাম ‘নন্দালয়ে’
    সেইখানে সে বংশী বাজায় আনন্দ-গোপ-দুলাল হয়ে।
    	মা’র আদেশে বাজাবে সে
    	অভয় শঙ্খ দেশে দেশে,
    (তোরা) নারায়ণী সেনা হবি, এবার নারায়ণীর কৃপায়।।
    
  • নাচিয়া নাচিয়া এসো নন্দদুলাল

    বাণী

    নাচিয়া নাচিয়া এসো নন্দদুলাল,
    মোর প্রাণে মোর মনে, এসো ব্রজগোপাল॥
    এসো নূপুর রুনুঝুনু পায়ে, এসো প্রেম যমুনা নাচায়ে
    এসো বেণু বাজায়ে, এসো ধেনু চরায়ে এসো কানাই রাখাল॥
    ঝুলনে হোরিতে রাসে, এসো কুরুক্ষেত্র রণে এসো প্রভাসে,
    (এসো) শিশু রূপে, এসো কিশোর বেশে
    এসো কংস, অরি, এসো মৃত্যুকরাল॥