কাওয়ালি

  • অধীর অম্বরে গুরু গরজন মৃদঙ বাজে

    বাণী

    অধীর অম্বরে গুরু গরজন মৃদঙ বাজে।
    রুমু রুমু ঝুম্ মঞ্জীর-মালা চরণে আজ উতলা যে॥
    এলোচুলে দু’লে দু’লে বন-পথে চল আলি,
    মরা গাঙে বালুচরে কাঁদে যথা বন্-মরালী।
    		উগারি’ গাগরি ঝারি
    		দে লো দে করুণা ডারি
    ঘুঙট উতারি’ বারি ছিটা লো গুমোট সাঁঝে॥
    তালীবন হানে তালি, ময়ুরী ইশারা হানে,
    আসন পেতেছে ধরা মাঠে মাঠে চারা-ধানে।
    মুকুলে ঝরিয়া পড়ি’ আকুতি জানায় যূথী
    ডাকিছে বিরস শাখে তাপিতা চন্দনা-তুতি।
    		কাজল-আঁখি রসিলি
    		চাহে খুলি ঝিলিমিলি,
    চল, লো চল সেহেলি, নিয়ে মেঘ-নটরাজে॥
    

    নাটকঃ ‘সেতুবন্ধ’

  • আজি এ শ্রাবণ-নিশি কাটে কেমনে

    বাণী

    আজি এ শ্রাবণ-নিশি		কাটে কেমনে।
    গুরু দেয়া গরজন			কাঁপে হিয়া ঘনঘন
    শনশন কাঁদে বায়ু			নীপ-কাননে।।
    অন্ধ নিশীথ, মন			খোঁজে কারে আঁধারে,
    অন্ধ নয়ন ঝরে			শাওন-বারিধারে।
    ভাঙিয়া দুয়ার মম			এসো এসো প্রিয়তম,
    শ্বসিছে বাহির ঘর			ভেজা পবনে।।
    কার চোখে এত জল		ঝরে দিক্‌ প্লাবিয়া,
    সহিতে না পারি’ কাঁদে		‘চোখ গেল’ পাপিয়া।
    কাহার কাজল-আঁখি		চাহি’ মোর নয়নে
    ঝুরেছিল একা রাতে		কবে কোন্‌ শাওনে,
    আজি এ বাদল ঝড়ে		সেই আঁখি মনে পড়ে,
    বিজলি খুঁজিছে তারে		নভ-আঙনে।।
    
  • আজি ঘুম নহে নিশি জাগরণ

    বাণী

    আজি	ঘুম নহে, নিশি জাগরণ।
    	চাঁদেরে ঘিরি’ নাচে ধীরি ধীরি তারা অগণন।।
    	প্রখর-দাহন দিবস-আলো,
    	নলিনী-দলে ঘুম তখনি ভালো।
    	চাঁদ চন্দন চোখে বুলালো
    		খোলো গো নিঁদ-মহল-আবরণ।।
    	ঘুরে ঘুরে গ্রহ, তারা, বিশ্ব, আনন্দে
    	নাচিছে নাচুনি ঘূর্ণির ছন্দে।
    	লুকোচুরি-নাচ মেঘ তারা মাঝে
    	নাচিছে ধরণী আলোছায়া-সাজে,
    	ঝিল্লির ঘুমুর ঝুমুঝুমু বাজে
    		খুলি’ খুলি’ পড়ে ফুল-আভরণ।।
    
  • আধো ধরণী আলো আধো আঁধার

    বাণী

    আধো ধরণী আলো আধো আঁধার।
    কে জানে দুখ-নিশি পোহাল কার।।
    আধো কঠিন ধরা আধেক জল,
    আধো মৃণাল-কাঁটা আধো কমল।
    আধো সুর, আধো সুরা — বিরহ, বিহার।।
    আধো ব্যথিত বুকের আধেক আশা,
    আধেক গোপন আধেক ভাষা!
    আধো ভালোবাসা আধেক হেলা
    আধেক সাঁঝ আধো প্রভাত-বেলা
    আধো রবির আলো — আধো নীহার।।
    
  • আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন

    বাণী

    আমার	আপনার চেয়ে আপন যে জন
    			খুঁজি তারে আমি আপনায়॥
    আমি		শুনি যেন তার চরণের ধ্বনি
    			আমারি তিয়াসী বাসনায়॥
    		আমারি মনের তৃষিত আকাশে
    		কাঁদে সে চাতক আকুল পিয়াসে,
    		কভু সে চকোর সুধা-চোর আসে
    			নিশীথে স্বপনে জোছনায়॥
    আমার মনের পিয়াল তমালে হেরি তারে স্নেহ-মেঘ-শ্যাম,
    অশনি-আলোকে হেরি তারে থির-বিজুলী-উজল অভিরাম।
    		আমারি রচিত কাননে বসিয়া
    		পরানু পিয়ারে মালিকা রচিয়া
    		সে-মালা সহসা দেখিনু জাগিয়া
    			আপনারি গলে দোলে হায়॥
    
  • আমার সকলি হরেছ হরি

    বাণী

    আমার	সকলি হরেছ হরি এবার আমায় হ’রে নিও।
    যদি	সব হরিলে নিখিল-হরণ তবে ঐ চরণে শরণ দিও।।
    আমায়	ছিল যারা আড়াল ক’রে 
    	হরি তুমি নিলে তাদের হ’রে,
    ছিল	প্রিয় যারা গেল তারা (হরি) এবার তুমিই হও হে প্রিয়।।
    
  • আসল যখন ফুলের ফাগুন

    বাণী

    আসল যখন ফুলের ফাগুন, গুল্-বাগে ফুল চায় বিদায়।
    এমন দিনে বন্ধু কেন বন্ধুজনে ছেড়ে যায়॥
    মালঞ্চে আজ ভোর না হতে বিরহী বুলবুল কাঁদে,
    না ফুটিতে দলগুলি তার ঝর্‌ল গোলাব হিম-হাওয়ায়॥
    পুরানো গুল-বাগ এ ধরা, মানুষ তাহে তাজা ফুল,
    ছিঁড়ে নিঠুর ফুল-মালী আয়ুর শাখা হতে তায়॥
    এই ধূলিতে হল ধূলি সোনার অঙ্গ বে-শুমার,
    বাদশা অনেক নূতন বধূ ঝরল জীবন-ভোরবেলায়॥
    এ দুনিয়ার রাঙা কুসুম সাঁজ না হতেই যায় ঝ’রে,
    হাজার আফ্‌সোস, নূতন দেহের দেউল ছেড়ে প্রাণ পালায়॥
    সামলে চরণ ফেলো পথিক, পায়ের নিচে মরা ফুল
    আছে মিশে এই সে ধরার গোরস্থানে এই ধূলায়॥
    হল সময় — লোভের ক্ষুধা মোহন মায়া ছাড় হাফিজ,
    বিদায় নে তো ঘরের কাছে দূরের বঁধূ ডাকছে আয়॥
    
  • এ আঁখি জল মোছ পিয়া

    বাণী

    এ আঁখি জল মোছ পিয়া ভোলো ভোলো আমারে।
    মনে কে গো রাখে তারে (ওগো) ঝরে যে ফুল আঁধারে।।
    ফোটা ফুলে ভরি’ ডালা গাঁথ বালা মালিকা,
    দলিত এ ফুল লয়ে, (ওগো) দেবে গো বল কারে।।
    স্বপনের স্মৃতি প্রিয় জাগরণে ভুলিও,
    ভুলে যেয়ো দিবালোকে রাতের আলেয়ারে।
    ঘুমায়েছ সুখে তুমি সে কেঁদেছে জাগিয়া,
    তুমি জাগিলে গো যবে সে ঘুমায়ে ওপারে।।
    
  • এলো ফুল-দোল ওরে এলো ফুল দোল

    বাণী

    এলো ফুল-দোল ওরে এলো ফুল দোল আনো রঙ-ঝারি।
    অশোকমঞ্জরি অলকে পরি এসো গোপ-নারী।।
    ঝরিছে আকাশে রঙের ঝরনা
    হায় শ্যামা ধরণী হ’ল আবির-বরণা,
    ত্যজি’ গৃহ-কাজ এসো চল-চরণা — ডাকে গিরিধারী।।
    পরাগ-আবির হানে বনবালা সুরের পিচ্‌কারি হানিছে কুহু,
    রঙিন্‌ স্বপন রাতের ঘুমে অনুরাগ-রং ঝরে মনে মুহু মুহু।
    রাঙে গিরি-মল্লিকা রঙিন বর্ণে,
    রাতের আঁচল ভরে জোছনার স্বর্ণে
    কুলের কালি সখি দেবে ধুয়ে রাঙা পিচ্‌কারি।।
    
  • এসো এসো তব যাত্রা-পথে

    বাণী

    এসো এসো তব যাত্রা-পথে
    শুভ বিজয়-রথে ডাকে দূর-সাথি।
    মোরা তোমার লাগি’, হেথা রহিব জাগি’
    তব সাজায়ে বাসর জ্বালি’ আশার বাতি।।
    হের গো বিকীর্ণ শত শুভ চিহ্ন পথ-পাশে নগর-বাটে,
    স-বৎসা ধেনু গো-ক্ষুর-রেণু উড়ায়ে চলে দূর মাঠে।
    দক্ষিণ-আবর্ত-বহ্নি, পূর্ণ-ঘট-কাঁখে তম্বী,
    দোলে পুষ্প-মালা, ঝলে’ শুক্লা রাতি।।
    হের পতাকা দোলে দূর তোরণ-তলে, গজ তুরগ চলে।
    শুক্লা ধানের হের মঞ্জরী ঐ, এসো কল্যাণী গো,
    		আনো নব-প্রভাতী।।
    

    নাটক : ‘সাবিত্রী’

  • ঐ হের রসুলে খোদা এলো ঐ

    বাণী

    ঐ হের রসুলে খোদা এলো ঐ।।
    গেলেন মদিনা যবে হিজরতে হজরত
    মদিনা হলো যেন খুশিতে জিন্নত,
    ছুটিয়া আসিল পথে মর্দ ও আওরত
    লুটায়ে পায়ে নবীর, গাহে সব উম্মত
    ঐ হের রসুলে-খোদা এলো ঐ।।
    হাজার সে কাফের সেনা বদরে,
    তিন শত তের মমিন এধারে;
    হজরতে দেখিল যেই, কাঁপিয়া ডরে
    কহিল কাফের সব তাজিমের স্বরে
    ঐ হের রসুলে-খোদা এলো ঐ।।
    কাঁদিয়া কেয়ামতে গুনাহগার সব,
    নবীর কাছে শাফায়তী করিবেন তলব,
    আসিবেন কাঁদন শুনি সেই শাহে আরব
    অমনি উঠিবে সেথা খুশির কলরব
    ঐ হের রসুলে খোদা এলো ঐ।।
    
  • কা’বার জিয়ারতে তুমি কে যাও

    বাণী

    কা’বার জিয়ারতে তুমি কে যাও মদিনায়।
    আমার সালাম পৌঁছে দিও নবীজীর রওজায়।।
    	হাজিদের ঐ যাত্রা-পথে
    	দাঁড়িয়ে আছি সকাল হ’তে,
    কেঁদে’ বলি, কেউ যদি মোর সালাম নিয়ে যায়।।
    পঙ্গু আমি, আরব সাগর লঙ্ঘি কেমন ক’রে,
    তাই নিশিদিন কাবা যাওয়ার পথে থাকি প’ড়ে।
    	বলি, ওরে দরিয়ার ঢেউ
    	মোর সালাম নিয়ে গেল না কেউ,
    তুই দিস্ মোর সালামখানি মরুর ‘লু’-হাওয়ায়।।
    
  • খুশি লয়ে খুশরোজের আয় খেয়ালি

    বাণী

    খুশি লয়ে খুশরোজের আয় খেয়ালি খুশ্‌-নসীব।
    জ্বাল্‌ দেয়ালি শবেরাতের জ্বাল রে তাজা প্রাণ প্রদীপ।।
    	আন্‌ নয়া দ্বীনী ফরমান
    	দরাজ দিলে দৃপ্ত গান,
    প্রাণ পেয়ে আজ গোরস্থান তোর ডাকে জাগুক নকীব।।
    আন্‌ মহিমা হজরতের শক্তি আন্‌ শেরে খোদার,
    কুরবানী আন্‌ কারবালার আন্‌ রহম মা ফাতেমার,
    আন্‌ উমরের শৌর্য বল সিদ্দিকের আন্‌ সাচ্চা মন,
    হাসান হোসেনের সে ত্যাগ শহীদানের মৃত্যুপণ,
    রোজ হাশরে করবেন পার মেহেরবান খোদার হাবিব।।
    খোৎবা পড়বি মসজিদে তুই খতীব নূতন ভাষায়,
    শুষ্ক মালঞ্চের বুকে ফুল ফুটাবি ভোর হাওয়ায়,
    এস্‌মে-আজম এনে মৃত মুসলিমে তুই কর সজীব।।
    
  • খোল খোল খোল গো দুয়ার

    বাণী

    খোল খোল খোল গো দুয়ার।
    নীল ছাপিয়া এল চাঁদের জোয়ার।।
    সঙ্কেত-বাঁশরি বনে বনে বাজে
    	মনে মনে বাজে।
    সজিয়াছে ধরণী অভিসার-সাজে।
    নাগর-দোলায় দুলে সাগর পাথার।।
    জেগে ওঠে কাননে ডেকে ওঠে পাখি
    	চোখ গেল, চোখ গেল, চোখ গেল!
    অসহ রূপের দাহে ঝলসি’ গেল আঁখি,
    	চোখ গেল, চোখ গেল, চোখ গেল!
    ঘুমন্ত যৌবন, তনু মন, জাগো!
    সুন্দরী, সুন্দর-পরশন মাগো।
    চল বিরহিণী অভিসারে বঁধুয়ার।।
    
  • চম্পক-বরণী চলমল তরণী

    বাণী

    চম্পক-বরণী
    চলমল তরণী,
    চলে শ্যামা তরুণী
    		যৌবন-গরবী।।
    ডাকে দূর পারাবার
    ডাকে তা’রে বন-’পার,
    লালসে ঝরে তার —
    		পায়ে রাঙা করবী।।
    চলে বালা দুলে দুলে
    এলো-খোঁপা পড়ে খুলে,
    চাহে ভ্রমর কুসুম ভুলে’ —
    		তনুর তার সুরভি।।
    নাচের ছন্দে দোদুল
    টলে তা’র চরণ চটুল,
    হরিণী চায় পথ-বেভুল —
    মায়া-লোক-বিহারিণী রচি’
    		চলে ছায়া-ছবি।।
    
  • চম্পা পারুল যূথী টগর চামেলা

    বাণী

    চম্পা পারুল যূথী টগর চামেলা।
    আর সই, সইতে নারি ফুল-ঝামেলা।।
    	সাজায়ে বন-ডালি,
    	বসে রই বন-মালি
    যা'রে দিই এ ফুল সেই হানে হেলাফেলা।।
    	কে তুমি মায়া-মৃগ
    	রতির সতিনী গো
    ফুল নিতে আসিলে এ বনে অবেলা।।
    	ফুলের সাথে প্রিয়
    	ফুল মালরে নিও
    তুমিও এক সই, আমিও একেলা।।
    
  • চাঁদ হেরিছে চাঁদমুখ তার সরসীর আরশিতে

    বাণী

    চাঁদ হেরিছে চাঁদ–মুখ তার সরসীর আরশিতে।
    ছুটে তরঙ্গ বাসনা–ভঙ্গ সে অঙ্গ পরশিতে।।
    হেরিছে রজনী – রজনী জাগিয়া
    চকোর উতলা চাঁদের লাগিয়া,
    কাঁহা পিউ কাঁহা ডাকিছে পাপিয়া
    		কুমুদীরে কাঁদাইতে।।
    না জানি সজনী কত সে রজনী কেঁদেছে চকোরী পাপিয়া,
    হেরেছে শশীরে সরসী–মুকুরে ভীরু ছায়া–তরু কাঁপিয়া।
    কেঁদেছে আকাশে চাঁদের ঘরণী
    চির–বিরহিণী রোহিণী ভরণী
    অবশ আকাশ বিবশা ধরণী
    		কাঁদানীয়া চাঁদিনীতে।।
    
  • চাঁদের পিয়ালাতে আজি

    বাণী

    চাঁদের পিয়ালাতে আজি জোছনা-শিরাজি ঝরে।
    ঝিমায় নেশায় নিশীথিনী সে-শরাব পান ক’রে।।
    	সবুজ বনের জল্‌সাতে
    	তৃণের গালিচা পাতে,
    উতল হাওয়া বিলায় আতর চাঁপার আতরদানি ভ’রে।।
    সাদা মেঘের গোলাব-পাশে ঝরিছে গোলাব-পানি,
    রজনীগন্ধার গেলাসে রজনী দেয় সুরা আনি’।
    	কোয়েলিয়া কুহু কুহু
    	গাহে গজল মুহু মুহু,
    সুরের নেশা সুরার নেশা লাগে আজি চরাচরে।।
    
  • ঝঞ্ঝার ঝাঁঝর বাজে ঝনঝন

    বাণী

    ঝঞ্ঝার ঝাঁঝর বাজে ঝনঝন
    বনানী-কুন্তল এলাইয়া ধরণী
    কাঁদিছে পড়ি চরণে শনশন শনশন।।
    দোলে ধূলি-গৈরিক পতাকা গগনে,
    ঝামর কেশে নাচে ধূর্জটি সঘনে।
    হর-তপোভঙ্গের ভুজঙ্গ নয়নে,
    সিন্ধুর মঞ্জীর চরণে বাজে রনরন রনরন।।
    
  • তরুণ প্রেমিক প্রণয় বেদন জানাও

    বাণী

    তরুণ প্রেমিক প্রণয় বেদন জানাও জানাও বেদিল প্রিয়ায়।
    ওগো বিজয়ী নিখিল হৃদয় কর কর জয় মোহন মায়ায়।।
    নহে ঐ এক হিয়ার সমান হাজার কাবা হাজার মস্‌জিদ;
    কি হবে তোর কাবার খোঁজে, আশয় খোঁজ তোর হৃদয় ছায়ায়।।
    প্রেমের আলোয় যে দিল্‌ রোশন, যেথায় থাকুক সমান তাহার —
    খোদার মস্‌জিদ মুরত–মন্দির ঈসাই–দেউল ইহুদ–খানায়।।
    অমর তার নাম প্রেমের খাতায় জ্যোতির্লেখায় রবে লেখা,
    দোজখের ভয় করে না সে, থাকে না সে বেহেশ্‌ত্‌ আশায়।।