কীর্তন

  • আজি প্রথম মাধবী ফুটিল কুঞ্জে

    বাণী

    আজি প্রথম মাধবী ফুটিল কুঞ্জে মাধব এলো না সই।
    এই যৌবন-বরমালা কারে দিব মোর বনমালী বই।।
    	সারা নিশি জেগে বৃথাই নিরালা
    	গাঁথিলাম নব মালতীর মালা,
    অনাদরে হায় সে মালা শুকায় দেখিয়া কেমনে রই।।
    	মম অনুরাগ-চন্দন ঘ’ষে,
    	লাজ ভু’লে সাঁঝ হ’তে আছি ব’সে,
    শুকাইয়া যায় চন্দন হায় রাধিকারমণ কই।।
    	চলিলাম আমি যথা মন চায়,
    	প্রভাতে আসিলে মোর শ্যামরায়
    বলিস্ আঁধারে হারাইয়া হায় গেছে রাধা রসময়ী।।
    
  • আমরা শক্তি আমরা বল আমরা ছাত্রদল

    বাণী

    		আমরা শক্তি আমরা বল, আমরা ছাত্রদল।
    মোদের	পায়ের তলায় মূর্চ্ছে তুফান
    		ঊর্ধ্বে বিমান ঝড় বাদল!
    				আমরা ছাত্রদল॥
    মোদের	আঁধার রাতে বাধার পথে যাত্রা নাঙ্গা পায়,
    আমরা		শক্ত মাটি রক্তে রাঙাই বিষম চলার ঘায়।
    		যুগে যুগে রক্তে মোদারে সিক্ত হল পৃথ্বীতল।
    				আমরা ছাত্রদল॥
    মোদের	কক্ষচ্যুত ধূমকেতু-প্রায় লক্ষ্যহারা প্রাণ,
    আমরা		ভাগ্যদেবীর যজ্ঞবেদীর নিত্য বলিদান।
    যখন		লক্ষীদেবী স্বর্গে উঠেন আমরা পশি নীল অতল।
    				আমরা ছাত্রদল॥
    		আমরা ধরি মৃত্যু রাজার যজ্ঞ-ঘোড়ার রাশ,
    		মোদের মৃত্যু লেখে মোদের জীবন-ইতিহাস।
    		হাসির দেশে আমরা আনি সর্বনাশী চোখের জল।
    				আমরা ছাত্রদল॥
    		সবাই যখন বৃদ্ধি যোগায়, আমরা করি ভুল।
    		সাবধানীরা বাঁধ বাঁধে সব, আমরা ভাঙি কূল।
    		দারুণ রাতে আমরা তরুণ রক্তে করি পথ পিছিল।
    				আমরা ছাত্রদল॥
    মোদের	চক্ষে জ্বলে জ্ঞানের মশাল বক্ষে ভরা বাক্‌,
    		কণ্ঠে মোদের কুণ্ঠা-বিহীন নিত্য-কালের ডাক।
    আমরা		তাজা খুনে লাল করেছি সরস্বতীর শ্বেত-কমল।
    				আমরা ছাত্রদল॥
    ঐ		দারুণ উপপ্লবের দিনে আমরা দানি শির,
    		মোদের মাঝে মুক্তি কাঁদে বিংশ-শতাব্দীর!
    মোরা		গৌরবেরি কান্না দিয়ে ভরেছি মা’র শ্যাম আঁচল।
    				আমরা ছাত্রদল॥
    		আমরা রচি ভালোবাসার আশার ভবিষ্যৎ,
    মোদের	স্বর্গ-পথের আভাস দেখায় আকাশ-ছায়াপথ!
    		মোদের চোখে বিশ্ববাসীর স্বপ্ন দেখা হোক সফল।
    				আমরা ছাত্রদল॥
    
  • আমি কলহেরি তরে কলহ করেছি

    বাণী

    আমি কলহেরি তরে কলহ করেছি বোঝনি কি রসিক বঁধূ।
    তুমি মন বোঝ মনোচোর মান বোঝ নাকি হে —
    তুমি ফুল চেন, চেন নাকি মধু?
    তুমি যে মধুবনের মধুকর,
    তুমি মধুরম মধুরম মধুময় মনোহর
    কলহেরি কূলে রহে অভিমান-মধু যে, চেন নাকি বঁধু হে —
    রাগের মাঝে রহে অনুরাগ-মধু যে, দেখ নাকি বঁধু হে —
    কলঙ্কী বলে গগনের চাঁদ প্রতি দিন ক্ষয় হয়
    তুমি নিত্য পূর্ণ চাঁদ সম প্রিয়তম চির অক্ষয়
    এ চাঁদে একাদশী নাই হে —
    শুধু রাধা একা দোষী হলো নিত্য কেন পায় না
    মোর কৃষ্ণ চাঁদে যে একাদশী নাই হে —
    সেই ব্রজগোপীদের ঘর আছে পর আছে
    কৃষ্ণ বিনা নাই রাধার কেহ
    আমিও জানি যেন আমাও শ্রীকৃষ্ণ কেবল রাধাময় দেহ।
    সে রাধা প্রেমে বাঁধা সে রাধা ছাড়া জানে না, রাধাময় দেহ
    সে রাধা প্রেমে বাঁধা।
    
  • আমি কি সুখে লো গৃহে রবো

    বাণী

    আমি কি সুখে লো গৃহে রবো
    সখি গো —
    আমার শ্যাম হলো যদি যোগী ওলো সখি আমিও যোগিনী হবো।
    আমি যোগিনী হবো
    শ্যাম যে তরুর তলে বসিবে লো ধ্যানে
    সেথা অঞ্চল পাতি’ রবো
    আমার বঁধুর পথের ধূলি হবো
    আমায় চলে যেতে দলে যাবে সেই সুখে লো ধূলি হবো
    সখি গো —
    আমি আমার সুখের গোধূলি বেলার
    রঙে রঙে তারে রাঙাইব
    তার গেরুয়া রাঙা বসন হয়ে
    জড়াইয়া রবো দিবস যামী
    সখি গো —
    সখি আমার কঠিন এ রূপ হবে রুদ্রাক্ষেরই মালা
    তার মালা হয়ে ভুলব আমার পোড়া প্রাণের জ্বালা
    আমার এ দেহ পোড়ায়ে হইব চিতা ছাই
    মাখিবে যোগী মোর পুড়িব সেই আশায়
    পোড়ার কি আর বাকি আছে
    আমার শ্যাম গেছে যোগী হয়ে ছায়া শুধু পড়ে আছে।।
    
  • আমি কৃষ্ণচূড়া হতাম যদি

    বাণী

    আমি		কৃষ্ণচূড়া হতাম যদি হতাম ময়ূর-পাখা, (সখা হে)!
    তোমার		বাঁকা চূড়ায় শোভা পেতাম ওগো শ্যামল বাঁকা।।
    		আমি হলে গোপীচন্দন, শ্যাম, অলকা-তিলকা হতাম;
    		শ্যাম, ও-চাঁদমুখে অলকা-তিলকা হতাম।
    		শ্রীঅঙ্গের পরশ পেতাম হ’লে কদম-শাখা।।
    		আমি বৃন্দাবনে বন-কুসুম হতাম যদি কালা,
    		কণ্ঠ ধ’রে ঝ’রে যেতাম হয়ে বনমালা।
    			আমি নূপুর যদি হতাম হরি
    			কাঁদতাম শ্রীচরণ ধরি’
    		ব্রজবুলি হলে রেইত বুকে চরণ-চিহ্ন আঁকা।।
    
  • এ কি অপরূপ রূপের কুমার

    বাণী

    এ কি অপরূপ রূপের কুমার হেরিলাম সখি যমুনা কূলে,
    তার	এ সুনীল লাবনি গলিয়া গলিয়া ঢলিয়া পড়িছে গগন-মূলে ॥
    যেন	কমল ফুটেছে সখি, সহস্র-দল রূপে-কমল ফুটেছে,
    	রূপের সাগর মন্থন করি’ সখি চাঁদ যেন উঠছে। সখি গো —
    	কালো সে রূপের মাঝে হয়ে যায় হারা
    	কোটি আলো-রাধিকা-রবি, শশী, তারা,
    	প্রেম-যমুনার তীরে সই আমি রিবধি দেখি তারে,
    		দেখি আর চেয়ে রই।
    	আমি এই রূপ চেয়ে থাকি
    সখি	জনমে জনমে জীবনে মরণে এই রূপ চেয়ে থাকি।
    ঐ	মোহন কালোর গহন কাননে হারাইয়া যাক আঁখি ॥
    
  • এসো মাধব এসে পিও মধু

    বাণী

    এসো মাধব এসে পিও মধু।
    এসো মাধবী লতার কুঞ্জ বিতানে (মধু) মাধবী রাতে এসো বঁধু।।
    এসো মৃদুল মধুর পা ফেলে
    এসো ঝুমুর ঝুমুর ঘুমুর বাজায়ে শ্রবণে অমিয়া মধু ঢেলে,
    এসো বাজায়ে বাঁশরি যে সুর-লহরী শুনে কুল ভোলে ব্রজবধূ।।
    এসো নিবিড় নীরদ বরণ শ্যাম
    তমাল কাননে কাজল বুলায়ে দুলায়ে চাঁচর চিকুর দাম,
    এসো বামে হেলায়ে শিখী-পাখা ত্রিভঙ্গ ঠামে এসো বঁধু।।
    এসো নারায়ণ এসো অবতার
    পার্থসারথি বেশে এসো পাপ কুরুক্ষেত্রে আরবার,
    তুমি মহাভারতের ভাগ্যবিধাতা গীতি উদ্গাতা নহ শুধু।।
    
  • ওগো প্রিয়তম তুমি চ’লে গেছ আজ

    বাণী

    ওগো	প্রিয়তম তুমি চ’লে গেছ আজ আমার পাওয়ার বহু দূরে।
    তবু	মনের মাঝে বেণু বাজে সেই পুরানো সুরে সুরে॥
    	বাজে মনের মাঝে বেণু বাজে
    	প্রিয় বাজাতে যে বেণু বনের মাঝে আজো তার রেশ মনে বাজে॥
    	তব কদম-মালার কেশরগুলি
    	আজি ছেয়ে আছে ওগো পথের ধূলি,
    	ওগো আজিকে করুণ রোদন তুলি’ বয় যমুনা ভাটি সুরে॥
    	(আর উজান বয় না,)
    	ওগো আজিকে আঁধার তমাল বনে, বসে আছি উদাস মনে
    	ওগো তোমার দেশে চাঁদ উঠেছে আমার দেশে বাদল ঝুরে॥
    	সেথা চাঁদ উঠেছে —
    	ওগো শুল্কা তিথির চতুর্দশীর চাঁদ উঠেছে
    	সেথা শুল্কা তিথির চতুর্দশীর চাঁদ উঠেছে
    	সখি তাদের দেশে আকাশে আজ আমার দেশের চাঁদ উঠেছে।
    	ওগো মোর গগনে কৃষ্ণা তিথি আমার দেশে বাদল ঝুরে॥
    
  • কেন প্রাণ ওঠে কাঁদিয়া

    বাণী

    কেন		প্রাণ ওঠে কাঁদিয়া
    		কাঁদিয়া কাঁদিয়া কাঁদিয়া গো।
    আমি		যত ভুলি ভুলি করি, তত আঁকড়িয়া ধরি
    		শ্যামের সে রূপ ভোলা কি যায়, নিখিল শ্যামল যার শোভায়
    		আকাশে সাগরে বনে কান্তারে লতায় পাতায় সে রূপ ভায়।
    আমার		বঁধুর রূপের ছায়া বুকে ধরি’ আকাশ-আরশি নীল গো
    বহে		ভুবন প্লাবিয়া কালারে ভাবিয়া কালো সাগর-সলিল গো। সখি গো —
    		যদি ফুল হয়ে ফুটি তরু-শাখে, সে যে পল্লব হয়ে ঘিরে থাকে। সখি গো —
    আমি		যেদিকে তাকাই হেরি ও-রূপ কেবল
    সে যে		আমারি মাঝারে রহে করি’ নানা ছল
    সে যে		বেণী হয়ে দোলে পিঠে চপল চতুর।
    সে যে		আঁখির তারায় হাসে কপট নিঠুর।
    		তারে কেমনে ভুলিব, সখি কেমনে ভুলিব।
    থাকে		কবরী-বন্ধে কালো ডোর হয়ে কাল্‌ফণী কালো কেশে গো
    থাকে		কপালের টিপে, চোখের কাজলে কপোলের তিলে মিশে’ গো!
    আমার 	এ-কূল ও-কূল দু’কূল গেল।
    		কূলে সই পড়িল কালি সেও কালো রূপে এলো।
    রাখি		কি দিয়া মন বাঁধিয়া, বাঁধিয়া বাঁধিয়া বাঁধিয়া গো।।
    

  • কেন হেরিলাম নব ঘনশ্যাম কালারে

    বাণী

    কেন হেরিলাম নব ঘনশ্যাম কালারে কাল্‌ কালিন্দী-কূলে।
    (সে যে) বাঁশরির তানে সকরুণ গানে ডাকিল প্রেম-কদম্ব মূলে।।
    কেন কলস ভরিতে গেনু যমুনা-তীরে,
    মোর কলস সাথে গেল ভাসি, লাজ-কূল-মান আকুল নীরে।
    কলসির জল মোর নয়নে ভরিয়া সই আসিনু ফিরে।।
    সখি হে তোদের সে রাই নাই, গোকুলের রাই গোকুলে নাই।
    সে যে হারাইয়া গেছে শ্যামের রূপে লো নবীন নীরদে বিজলি প্রায়।
    সে রবি-শশী সম ডুবিয়া গেছে লো সুনীল রূপের গগন-গায়।।
    হরি-চন্দন-পঙ্কে লো সখি শীতল ক’রে দে জ্বালা,
    দুলায়ে দে গলে বল্লভ-রূপী শ্যাম পল্লব মালা।
    নীল কমল আর অপরাজিতার, শেজ্‌ পেতে দে লো কোমর বিথার
    পেতে দে শয্যা পেতে দে, নীল শয্যা পেতে দে পেতে দে!
    পরাইয়া দে লো সখি অঙ্গে নীলাম্বরী, জড়াইয়া কালো বরণ আমি যেন মরি।।
    
  • কোন রস-যমুনার কূলে বেণু-কুঞ্জে

    বাণী

    কোন রস-যমুনার কূলে বেণু-কুঞ্জে
    হে কিশোর বেণুকা বাজাও।
    মোর অনুরাগ যায় সেথা, তনু যেতে নারে,
    তুমি সেই ব্রজের পথ দেখাও।।
    মোর অন্ধ আঁখি কাঁদে চাঁদের তৃষায়
    তব পানে হাত তুলে রাত কেটে যায়,
    বঁধু, এই ভিখারিনী সেই মাধুকরী চায় –
    মধুবনে, গোপীগণে যে মধু দাও।।
    প্রেমহীন-নীরস জীবন ল’য়ে
    পথে পথে ফিরি বৈরাগিনী হয়ে,
    বুঝি আমি চাই তব প্রেম নাহি পাই –
    কৃপা কর প্রেমময়, তুমি মোরে চাও।।
    
  • গভীর ঘুম ঘোরে স্বপনে শ্যাম-কিশোরে

    বাণী

    গভীর ঘুম ঘোরে স্বপনে শ্যাম-কিশোরে হেরে’ প্রেমময়ী রাধা।
    রাধারে ত্যজিয়া আঁধার নিশীথে চন্দ্রার সাথে বাঁধা।(শ্যাম-চাঁদ)
    যেন চাঁদের বুকে কলঙ্ক গো নির্মল শ্যাম-চাঁদের বুকে চন্দ্রা যেন কলঙ্ক গো।।
    অরুণ নয়ানে মলিন বয়ানে জাগিল অভিমানিনী
    (ভাবে) রাধার হৃদয় আধার যাহার সে কেন ভজে কামিনী।
    শ্রীরাধার মান ভয়হীন, তাই শ্রীরাধা অভিমানিনী,
    পরমশুদ্ধ প্রেম শ্রীরাধার, নির্ভয় অভিমানিনী।।
    কৃষ্ণকেও সে ভয় করে না, নির্ভয় অভিমানিনী রাধা বুঝতে নারে গো
    চির-সরল অমৃতময় গরল কেন হয় বুঝতে নারে গো
    কাঁপে থরথর সারা কলেবর, ভাবে রাধা একি বিপরীত।
    প্রেম ভিক্ষু কহে, বুঝি বুঝিবার নহে চঞ্চল শ্যামের রীত।।
    বোঝা যে যায় না চঞ্চল শ্যামের রীত
    অবুঝ মনের বোঝা যায় না তাতে তবু কখন সে রাধার, কখন সে চন্দ্রার।।
    

    গীতিচিত্র: ‘অভিমানিনী’

  • গাও কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ নাম

    বাণী

    গাও কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ নাম।
    গাও দেহমন শুক সারি, গাও রে ব্রজের নরনারী
    গাহ কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ নাম।।
    গাও তাঁরি নাম যমুনার বারি
    গাও কুহু কেকা ধেনু বন-চারী,
    গাহরে শ্রীদাম গাহ সুদাম।।
    গাহ রে সজল শ্যামল গগন
    কদম্ব-তরু তমাল কানন,
    গাহ রে ভ্রমর মাধবী-লতা কৃষ্ণ-কথা, শ্রবণ অভিরাম।।
    গাহ লো বিশাখা, গাহ লো ললিতা
    গাহ শ্যাম-দায়িতা চন্দ্রাবলী (শ্যাম নাম),
    গাহ লো চন্দ্রাবলী,
    ভুবন ছাপিয়া গগন ব্যাপিয়া উঠুক কাঁপিয়া নাম-কাকলি।
    (শ্যাম-নাম কাকলি।) তোরা গেয়ে যা গেয়ে যা।
    হয়ে শ্যাম-নামে বিবাগী পথে পথে ধেয়ে যা।
    ঘনশ্যাম পল্লবে মনো-বন ছেয়ে যা।
    বহিয়া যাক শ্যাম-নাম সুরধুনী
    মধুর হোক মৃত্যু শ্যাম নাম শুনি’।।
    

    নাটক : ‘চক্রব্যুহ’

  • চাঁপার কলির তুলিকায় কাজল লেখায়

    বাণী

    চাঁপার কলির তুলিকায়, কাজল লেখায় শ্রীমতী শ্রীহরির ছবি আঁকে।
    রাই ছবি আঁকে পটে গো, যারে হেরে নিতি গোঠে যেতে
    যমুনার তটে গো, সে বংশী বাজায়ে মঞ্জির পায়ে
    নাচে ছায়া বটে গো, রাই ছবি আঁকে পটে গো।
    আঁকিয়া শ‍্যামের মূরতি আঁকিল না রাধা শ্রীচরণ ,
    রাধা চরণ আঁকে না, তুলি তুলিয়া রাখে চরণ আঁকে না।
    তখন ললিতা বলে- ‘রাধা! রাধা! রাধা!
    তুই আঁকলি না কেন চরণ রাধা!’
    ‘জীবন মরণ যে চরণে বাঁধা, আঁকলি না কেন চরণ রাধা —
    বিশ্বের ত্রাণ বৃন্দাবনের ধ‍্যানজ্ঞান ব্রজগোপী সাধা’ —
    ‘আঁকলি না কেন চরণ রাধা’ —!
    তখন রাধা কেঁদে বলে- ‘ওগো ললিতা —
    সখি আঁকিলে চরণ যাবে সে পালায়ে আমি হব পদদলিতা।
    পলায়ে যাবে গো মথুরায়, আবার পালায়ে যাবে গো —
    চির চপল সে মথুরায় আবার পালায়ে যাবে গো —
    থাক লুকানো হৃদয়ে শ্রীচরণ।’
    
  • ছি ছি ছি কিশোর হরি

    বাণী

    ছি ছি ছি কিশোর হরি, হেরিয়া লাজে মরি
    সেজেছ এ কোন রাজ সাজে
    যেন সঙ্ সেজেছ, হরি হে যেন সঙ্‌ সেজেছ —
    ফাগ মুছে তুমি পাপ বেঁধেছ হরি হে যেন সঙ্ সেজেছ;
    সংসারে তুমি সঙ্ সাজায়ে নিজেই এবার সঙ্ সেজেছ।
    বামে শোভিত তব মধুরা গোপিনী নব
    সেথা মথুরার কুবুজা বিরাজে।
    মিলেছে ভাল, বাঁকায় বাঁকায় মিলেছে ভাল,
    ত্রিভঙ্গ অঙ্গে কুবুজা সঙ্গে বাঁকায় বাঁকায় মিলেছে ভাল।
    হরি ভাল লাগিল না বুঝি হৃদয়-আসন
    তাই সিংহাসনে তব মজিয়াছে মন
    প্রেম ব্রজধাম ছেড়ে নেমে এলে কামরূপ
    হরি, এতদিনে বুঝিলাম তোমার স্বরূপ
    তব স্বরূপ বুঝি না হে
    গোপাল রূপ ফেলে ভূপাল রূপ নিলে স্বরূপ বুঝি না হে।
    হরি মোহন মুরলী কে হরি’ নিল
    কুসুম কোমল হাতে এমন নিঠুর রাজদন্ড দিল
    মোহন মুরলী কে হরি।
    দন্ড দিল কে, রাধারে কাঁদালে বলে দন্ড দিল কে
    দন্ডবৎ করি শুধাই শ্রীহরি দন্ড দিল কে
    রাঙা চরণ মুড়েছে কে সোনার জরিতে 
    খুলে রেখে মধুর নূপুর, হরি হে খুলে রেখে মধুর নূপুর।
    হেথা সবাই কি কালা গো ?
    কারুর কি কান নাই নূপুর কি শোনে নাই, সবাই কাল গো
    কালায় পেয়ে হল হেথায় সবাই কি কালা গো।
    তব এ রূপ দেখিতে নারি, হরি আমি ব্রজনারী,
    ফিরে চল তব মধুপুর
    সেথা সকলি যে মধুময়, অন্তরে মধু বাহিরে মধু
    সেথা সকলি যে মধুময় — ফিরে চল হরি মধুপুর।
    
  • ঝাঁপিয়া অঞ্চলে কেন বিধুবদন অবনত

    বাণী

    ঝাঁপিয়া অঞ্চলে কেন বিধুবদন অবনত কাঁদে নয়ান।
    অভিমান পরিহর হরি-হৃদি বিহারিণী প্রেম দিয়া জুড়াও এ প্রাণ।
    তুয়া বিনা নয়নে অন্যে না হেরি
    একই রাধা আছে ত্রিভুবন ঘেরি’
    (আমি রাধা ছাড়া জানি’ না
    অনন্ত বিশ্বে রাধারই রূপধারা,
    রাধা ছাড়া দেখি না)
    ভৃঙ্গার ভরি’ তুমি শৃঙ্গার রস
    করাও পান, তাই হই যে অবশ।।
    তুমি রাধা হয়ে মধু দিলে মাধব হই,
    তুমি ধারা হয়ে নামিলে সৃষ্টিতে রই
    রাধা, সকলি তোমার খেলা
    তবে কেন কর অভিমান, কেন কর হেলা।
    প্রতি দেহ-বিম্বে তোরি
    পদতলে হর হয়ে রহি তাই ছবি।
    হরিরত হর-জ্ঞান মহামায়া হরিলী
    (এ যে) তোমারই ইচ্ছা, আমি নিজে নিজে রূপ ধরিণী।
    ভোল মানের খেলা
    দূরে থেকোনা, দাও চরণ ভেলা
    আমি তরে’ যাই, তরে’ যাই
    রাধা-প্রেম যমুনায় ডুবিয়া মরে’ যাই।।
    

    পাঠান্তর : রেকর্ডের জন্য কবি এই গানটির বহু অংশ বর্জন করেন।বর্জিত অংশগুলো এই:
    গলে দিয়া পীতধড়া গো, পদতলে দিয়া শিখী-চূড়া গো
    পদযুগ ধরিয়া চাহি ক্ষমা, ক্ষম অপরাধ প্রিয়তমা!
    হরি-মনোরমা ক্ষমা কর গো।।
    তব প্রেমে অবগাহন করি সব দাহন চিরতরে জুড়াব
    কল্প-কদম-তরু-তলে চিরদিন তোমার প্রেম-কণা কেশর কুড়াব।।

  • তুমি আমারে কাঁদাও নিজেরে আড়াল রাখি

    বাণী

    তুমি আমারে কাঁদাও নিজেরে আড়াল রাখি',
    তুমি চাও আমি নিশি-দিন যেন তব নাম ধরে ডাকি।।
    হে লীলা-বিলাসী অন্তরতম, অন্তর-মধু চাও বুঝি মম
    গোপনে করিতে পান, ওগো বঁধু, অন্তরালে সে থাকি।।
    বিরহ তোমার ছল, কেন নাহি বুঝি!
    আমাতে রহিয়া কাঁদাও আমারে তবু কেন মরি খুঁজি'।
    ভুলিয়া থাকি সুখের মোহে তাই বুঝি প্রিয় কাঁদাও বিরহে —
    বন্ধু, ওগো বন্ধু;
    তুমি অন্তরে এলে রাজ-সমারোহে নয়নেরে দিয়ে ফাঁকি।।
    
  • তুমি কোন্ পথে এলে

    বাণী

    তুমি	কোন্ পথে এলে হে মায়াবী কবি
    	বাজায়ে বাঁশের বাঁশরি।
    এলো	রাজ-সভা ছাড়ি’ ছুটি,
    	গুণিজন তোমার সে সুরে পাশরি’।।
    তোমার	চলার শ্যাম-বনপথ
    	কদম-কেশর-কীর্ণ,
    তুমি	কেয়ার বনের খেয়াঘাটে হলে
    	গোপনে কি অবতীর্ণ?
    তুমি	অপরাজিতার সুনীল মাধুরী
    	দু’চোখে আনিলে করিয়া কি চুরি?
    তোমায়	নাগ-কেশরের ফণী-ঘেরা মউ
    	পান করাল কে কিশোরী?
    	জনপুরী যবে কল-কোলাহলে
    	মগ্নোৎসব রাজ সভাতলে,
    তুমি	একাকী বসিয়া দূর নদী-তটে
    	ছায়া-বটে বাঁশি বাজালে,
    তুমি	বসি’ নিরজনে ভাঁট ফুল দিয়া
    	বালিকা বাণীরে সাজালে।।
    যবে	রুদ্র আসিল ডম্বরু-করে
    	ত্রিশূল বিঁধিয়া নীল অম্বরে,
    তুমি	ফেলিয়া বাঁশরি আপনা পাশরি,
    	এলে সে-প্রলয় নাটে গো,
    তুমি	প্রাণের রক্তে রাঙালে তোমার
    	জীবন-গোধূলি পাটে গো।।
    	হে চির-কিশোর, হে চির-তরুণ,
    	চির-শিশু চির-কোমল করুণ।
    	দাও অমিয়া আরো অমিয়া,
    দাও	উদয়-ঊষারে লজ্জা গো তুমি
    	গোধূলির রঙে রঙিয়া।
    	প্রখর রবি-প্রদীপ্ত গগনে,
    	তুমি রাঙা মেঘ খেল আন্‌মনে,
    	উৎসব-শেষে দেউলাঙ্গনে
    	নিরালা বাজাও বাঁশরি,
    আমি	স্বপন-জড়িত ঘুমে সেই সুর
    	শুনিব সকল পাশরি’।।
    
  • তোরা বলিস্ লো সখি মাধবে মথুরায়

    বাণী

    তোরা বলিস্ লো সখি, মাধবে মথুরায়
    কেমনে রাধার কাঁদিয়া বরষ যায়॥
    খর-বৈশাখে কি দাহন থাকে বিরহিণী একা জানে
    ঘৃত-চন্দন পদ্ম পাতায় দারুণ দহন-জ্বালা না জুড়ায়
    ‘ফটিক জলে’র সাথে আমি কাঁদি চাহিয়া গগন-পানে।
    জ্বালা না জুড়ায় গো —
    হরি-চন্দন বিনা ঘৃত-চন্দনে জ্বালা না জুড়ায় গো
    শ্যাম-শ্রীমুখ-পদ্ম বিনা পদ্ম পাতায় জ্বালা না জুড়ায়॥
    বরষায় অবিরল ঝর ঝর ঝরে জল জুড়াইল জগতের নারী
    রাধার গলার মালা হইল বিজলি-জ্বালা তৃষ্ণা মিটিল না তা’রি!
    সখি রে, তৃষ্ণা মিটিল না তা’রি।
    প্রবাসে না যায় পতি সব নারী ভাগ্যবতী বন্ধু রে বাহুডোরে বাঁধে
    ললাটে কাঁকন হানি’ একা রাধা অভাগিনী প্রদীপ নিভায়ে ঘরে কাঁদে।
    জ্বালা তা’র জুড়ালো না জলে গো
    শাওনের জলে তা’র মনের আগুন দ্বিগুণ জ্বলে গো
    কৃষ্ণ-মেঘ গেছে চ’লে, অকরুণ অশনি হানিয়া হিয়ায় (সখি)॥
    আশ্বিনে পরবাসী প্রিয় এলো ঘরে গো মিটিল বধূর মন-সাধ (সখি রে)
    রাধার চোখের জলে মলিন হইয়া যায় কোজাগরী চাঁদ (মলিন হইয়া যায় গো)।
    আগুন জ্বালালে শীত যায় নাকি রাধার কি হ’ল হায়
    বুক ভরা তার জ্বলিছে আগুন তবু শীত নাহি যায়।
    যায় না, যায় না আগুন জ্বলে —
    বুকের আগুন জলে, তবু শীত যায় না, যায় না,
    শীত যদি বা যায় নিশীথ না, যায় গো
    যায় না, যায় না, রাধার যে কি হ’ল হায়॥
    কলিয়া কৃষ্ণ-ছূড়া, ছড়ায়ে ফাগের গুঁড়া আসিল বসন্ত
    রাধা-অনুরাগে রেঙে কে ফাগ খেলিবে গো, নাই ব্রজ-কিশোর দুরন্ত।
    মাধবী-কুঞ্জে কুহু কুহরিছে মুহুমুহু ফুল-দোলনায় সবে দোলে,
    এ মধু মাধবী রাতে রাধার মাধব নাই
    দুলিবে রাধা কার কোলে সখি রে —  রাধা দোলে কার কোলে গো
    শ্যাম-বল্লভ বিনা রাধা দোলে কার কোলে গো, বল্ সখি, দোলে কার কোলে।
    ফুল-দোলে দোলে সবে পিয়াল-শাখে
    রাধার প্রিয়া নাই, বাহু দু’টি দিয়া বাঁধিবে কাহাকে,
    ঝরা-ফুল-সাথে রাধা ধূলাতে লুটায়॥
    
  • নন্দকুমার বিনে সই আজি বৃন্দাবন অন্ধকার

    বাণী

    নন্দকুমার বিনে সই আজি বৃন্দাবন অন্ধকার
    				নাহি ব্রজে আনন্দ আর।
    যমুনার জল দ্বিগুণ বেড়েছে ঝরি’ গোকূলে অশ্রুধার।।
    শীতল জানিয়া মেঘ-বরণ শ্যামের শরণ লইয়া সই
    তৃষিতা চাতকী জ্বলে মরি হায় বিরহ-দাহনে ভস্ম হই।
    শীতল মেঘে অশনি থাকে
    কে জানিত সখি সজল কাজল শীতল মেঘে অশনি থাকে।
    ব্রজে বাজে না বেণু আর চরে না ধেনু
    (আর) পড়ে না গোকুলে শ্যাম চরণ রেণু
    তার ফেলে যাওয়া বাঁশি নিয়ে শ্রীদাম সুদাম
    ধায় মথুরার পথে আর কাঁদে অবিরাম।
    কৃষ্ণে না হেরি দূর বন পার উড়ে গেছে শুক সারি
    কৃষ্ণ যেথায় সেই মথুরায় চলো যাই ব্রজনারী।।