ঋতুভিত্তিক

  • উত্তরীয় লুটায় আমার ধানের ক্ষেতে

    বাণী

    		উত্তরীয় লুটায় আমার
    		ধানের ক্ষেতে, হিমেল্ হাওয়ায়।
    আমার চাওয়া জড়িয়ে আছে নীল আকাশের সুনীল চাওয়ায়॥
    		ভাটির শীর্ণা নদীর কূলে
    		আমার রবি-ফসল দুলে,
    নবান্নেরই সুঘ্রাণে মোর চাষির মুখে টপ্পা গাওয়ায়॥
    

    হৈমন্তী

  • এলো এলো রে বৈশাখী ঝড় এলো এলো রে

    বাণী

    এলো এলো রে বৈশাখী ঝড় এলো এলো রে,
    ঐ বৈশাখী ঝড় এলো এলো মহীয়ান সুন্দর।
    পাংশু মলিন ভীত কাঁপে অম্বর চরাচর থরথর।।
    ঘনবন–কুন্তলা বসুমতী সভয়ে করে প্রণতি,
    সভয়ে নত চরণে ভীতা বসুমতী।
    সাগর তরঙ্গ মাঝে তারি মঞ্জীর যেন বাজে বাজে রে
    পায়ে গিরি–নির্ঝর–ঝরঝর ঝরঝর।।
    ধূলি–গৈরিক নিশান দোলে ঈশান গগন চুম্বী,
    ডম্বরু ঝল্লরী ঝাঁঝর ঝনঝন বাজে
    এলো ছন্দ বন্ধন–হারা এলো রে
    এলো মরু–সঞ্চর বিজয়ী বীরবর।।
    
  • এলো ঐ বনান্তে পাগল বসন্ত

    বাণী

    এলো ঐ বনান্তে পাগল বসন্ত
    বনে বনে মনে মনে রং সে ছড়ায় রেচঞ্চল তরুণ দুরন্ত।।
    		বাঁশীতে বাজায় সে বিধুর
    		পরজ বসন্তের সুর
    পান্ডু কপোলে জাগে রঙ নব অনুরাগে রাঙা হ’ল ধূসর দিগন্ত।।
    		কিশলয়ে পর্ণে অশান্ত
    		ওড়ে তার অঞ্চল প্রান্ত
    পলাশ কলিতে তার ফুল ধনু লঘু ভার ফুলে ফুলে হাসি অফুরন্ত।।
    		এলোমেলো দখিনা মলয় রে
    		প্রলাপ বকিছে বনময় রে
    অকারণ মন-মাঝে বিরহের বেণু বাজে জেগে ওঠে বেদনা ঘুমন্ত।।
    
  • এলো বরষা শ্যাম সরসা প্রিয়-দরশা

    বাণী

    এলো বরষা শ্যাম সরসা প্রিয়-দরশা।।
    দাদুরি পাপিয়া চাতকী বোলে নব জলধারা-হরষা।।
    	নাচে বন-কুন্তলা যামিনী উতলা
    	খুলে পড়ে গগনে দামিনী মেখলা,
    চলে যেতে ঢ’লে পড়ে অভিসারে চপল যৌবন-মদ অলসা।।
    	একা কেতকী বনে কেকা কুহরে,
    	বহে পূব-হাওয়া কদম্ব শিহরে।
    	দুরন্ত ঝড়ে কোন্ অশান্ত চাহি রে
    	ঘরে নাহি রহে মন, যেতে চায় বাহিরে,
    যত ভয় জাগে তত সুন্দর লাগে শ্রাবণ-ঘন-তমসা।।
    
  • কত জনম যাবে তোমার বিরহে

    বাণী

    কত	জনম যাবে তোমার বিরহে
    	স্মৃতির জ্বালা পরান দহে।।
    	শূন্য গেহ মোর শূন্য জীবনে,
    একা	থাকারি ব্যথা কত সহে (ওগো)
    	স্মৃতির জ্বালা পরান দহে।।
    	দিয়েছি যে জ্বালা জীবন ভরি' হায়
    	গলি নয়ন -ধারায় সে ব্যথা বহে
    	স্মৃতির জ্বালা পরান দহে।।
    

  • কদম কেশর পড়ল ঝরি

    বাণী

    কদম কেশর পড়ল ঝরি তখন তুমি এলে।
    বাদল মেঘে গগন ঘেরি ঝড়ের কেতন মেলে।।
    	ঝরিয়ে বন-কেয়ার রেণু
    	বজ্ররবে বাজিয়ে বেণু,
    বৃষ্টি ভেজা দুর্বা দ’লে অরুণ-চরণ ফেলে।।
    নদীর দু’কূল ভাঙল যবে অধীর স্রোতের জলে,
    তখন দেখি হে অশান্ত তোমার তরী চলে।
    	যূথীর নীরব অশ্রু ঝরে
    	শ্যামল তোমার চরণ ’পরে,
    আকাশ চাহে তোমার পথে তড়িৎ প্রদীপ জ্বেলে।।
    
  • খেলে চঞ্চলা বরষা-বালিকা

    বাণী

    খেলে চঞ্চলা বরষা-বালিকা
    মেঘের এলোকেশে ওড়ে পুবালি বায়
    দোলে গলায় বলাকার মালিকা।।
    চপল বিদ্যুতে হেরি' সে চপলার
    ঝিলিক হানে কণ্ঠের মণিহার,
    নীল আঁচল হতে তৃষিত ধরার পথে
    ছুড়ে ফেলে মুঠি মুঠি বৃষ্টি শেফালিকা।।
    কেয়া পাতার তরী ভাসায় কমল-ঝিলে
    তরু-লতার শাখা সাজায় হরিৎ নীলে।
    ছিটিয়ে মেঠো জল খেলে সে অবিরল
    কাজলা দীঘির জলে ঢেউ তোলে
    আনমনে ভাসায় পদ্ম-পাতার থালিকা।।
    
  • গগনে খেলায় সাপ বরষা-বেদিনী

    বাণী

    	গগনে খেলায় সাপ বরষা-বেদিনী।
    	দূরে দাঁড়ায়ে দেখে ভয়-ভীতা মেদিনী।।
    	দেখায় মেঘের ঝাপি তুলিয়া
    	ফনা তুলি’ বিদ্যুৎ-ফণি ওঠে দুলিয়া,
    	ঝড়ের তুব্‌ড়িতে বাজে তার অশান্ত রাগিণী।।
    	মহাসাগরে লুটায় তার সর্পিল অঞ্চল
    	দিগন্তে দুলে তার এলোকেশ পিঙ্গল
    	ছিটায় মন্ত্রপূত ধারাজল অবিরল তন্বী-মোহিনী।।
    	অশনি-ডমরু ওঠে দমকি’
    	পাতালে বাসুকি ওঠে চমকি’
    তার 	ডাক শুনে ছুটে আসে নদীজল যেন পাহাড়িয়া নাগিনী।।
    

  • ঝড় এসেছে ঝড় এসেছে কাহারা যেন ডাকে

    বাণী

    ঝড় এসেছে ঝড় এসেছে কাহারা যেন ডাকে।
    বেরিয়ে এলো নতুন পাতা পল্লবহীন শাখে।।
    	ক্ষুদ্র আমার শুকনো ডালে
    	দুঃসাহসের রুদ্র ভালে
    কচি পাতার লাগলো নাচন ভীষণ ঘূর্ণিপাকে।
    স্তবির আমার ভয় টুটেছে গভীর শঙ্খ-রবে,
    মন মেতেছে আজ  নতুনের ঝড়ের মহোৎসবে।
    	কিশলয়ের জয়-পতাকা
    	অন্তরে আজ মেললো পাখা
    প্রণাম জানাই ভয়-ভাঙানো অভয়-মহাত্মাকে।।
    

  • তৃষিত আকাশ কাঁপে রে

    বাণী

    তৃষিত আকাশ কাঁপে রে।
    প্রখর রবির তাপে রে।।
    চাহিয়া তৃষ্ণার বারি
    চাতক ওঠে ফুকারি’
    করুণ-শান্ত বিলাপে রে।।
    রুদ্রযোগী ও-কে দূর বিমানে,
    নিমগ্ন রহিয়াছে যেন ধ্যানে।
    শকুন্তলা সম ভয়ে
    কাঁপে ধরা র’য়ে র’য়ে,
    অগ্নি-ঋষির অভিশাপ রে।।
    

  • দোলে বন-তমালের ঝুলনাতে

    বাণী

    দোলে	বন-তমালের ঝুলনাতে কিশোরী-কিশোর
    চাহে	দুঁহু দোঁহার মুখপানে চন্দ্র ও চকোর,
    যেন	চন্দ্র ও চকোর প্রেম-আবেশে বিভোর।।
    	মেঘ-মৃদঙ বাজে সেই ঝুলনের ছন্দে
    	রিম ঝিম বারিধারা ঝরে আনন্দে
    	হেরিতে যুগল শ্রীমুখ চন্দে
    	গগনে ঘেরিয়া এলো ঘন-ঘটা ঘোর।।
    	নব নীরদ দরশনে চাতকিনী প্রায়
    	ব্রজ-গোপিনী শ্যামরূপে তৃষ্ণা মিটায়
    গাহে	বন্দনা-গান দেব-দেবী অলকায়
    	ঝরে বৃষ্টিতে সৃষ্টির প্রেমাশ্রু-লোর।।
    
  • বকুল বনের পাখি ডাকিয়া আর ভেঙ্গো না ঘুম

    বাণী

    বকুল বনের পাখি ডাকিয়া আর ভেঙ্গো না ঘুম
    বকুল বাগানে মম, ফুরায়েছে ফুলের মরশুম॥
    ওগো, প্রিয় মোর দূর বিদেশে কারে আর ডাকিছ পাখি
    খুলিয়া পড়িছে হাতের, মলিন মালতী রাখি।
    নিভিয়া গিয়াছে প্রদীপ রেখে গেছে স্মৃতির ধূম॥
    ষোড়শী বাসন্তিকার রঙ দেহে মোর হয়েছে ম্লান।
    খেলার সাথী পরদেশে, কারে দিই এ প্রীতির কুম্‌কুম্‌॥
    
  • বরষা ঋতু এলো এলো বিজয়ীর সাজে

    বাণী

    	বরষা ঋতু এলো এলো বিজয়ীর সাজে
    বাজে	গুরু গুরু আনন্দ ডম্বরু অম্বর মাঝে।।
    বাঁকা	বিদ্যুৎ তরবারি ঘন ঘন চমকায়
    	হানে তীর বৃষ্টি অবিরল ধারায়
    শুনি’	রথ-চক্রের ধ্বনি অশনির রোলে
    			সিন্ধু তরঙ্গে মঞ্জির বাজে।।
    	ভীত বন-উপবন লুটায়ে লুটায়ে
    	প্রণতি জানায় সেই বিজয়ীর পায়ে।
    তার	অশান্ত গতিবেগ শুনি’ পুব হাওয়াতে
    	চলে মেঘ-কুঞ্জর-সেনা তারি সাথে
    	তূণীর কেতকীর জল-ধনু হাতে
    	চঞ্চল দুরন্ত গগনে বিরাজে।।
    
  • বসন্ত এলো এলো এলো রে

    বাণী

    বসন্ত এলো এলো এলো রে
    পঞ্চম স্বরে কোকিল কুহরে
    মুহু মুহু কুহু কুহু তানে।
    মাধবী নিকুঞ্জে পুঞ্জে পুঞ্জে
    ভ্রমর গুঞ্জে গুনগুন গানে।।
    পিয়া পিয়া ডেকে ওঠে পাপিয়া
    মহুল, পলাশ বন-ব্যাপিয়া
    সুরভিত সমীরণ চঞ্চল উন্মন
    আনে নব-যৌবন প্রাণে।।
    বেণুকার বনে বাঁশি বাজে
    বনমালী এলো বন-মাঝে
    নাচে তরু-লতিকা যেন গোপ-গোপিকা
    রাঙা হয়ে রঙের বানে।।
    
  • বৈকালী সুরে গাও চৈতালি গান

    বাণী

    বৈকালী সুরে গাও চৈতালি গান, বসন্ত হয় অবসান।
    নহবতে বাজে সকরুণ মূলতান।।
    নীরব আনমনা পিক চেয়ে আছে দূরে অনিমিখ
    ধূলি-ধূসর হলো দিক আসে বৈশাখ অভিযান।।
    চম্পা-মালা রবমলিন লুটায় ফুল-ঝরা বন-বীথিকায়,
    ঢেলে দাও সঞ্চিত প্রাণের মধু-যৌবন দেবতার পায়।
    অনন্ত বিরহ-ব্যথায় ক্ষণিকের মিলন হেথায়
    ফিরে নাহি আসে যাহা যায়-নিমেষের মধুতর গান।।
    
  • মম বন-ভবনে ঝুলন দোলনা দে দুলায়ে

    বাণী

    মম বন-ভবনে ঝুলন দোলনা দে দুলায়ে উতল পবনে
    মেঘ-দোলা দুলে বাদল গগনে।।
    আয় ব্রজের ঝিয়ারি পরি' সুনীল শাড়ি
    নীল কমল কুঁড়ি দুলায়ে শ্রবণে।।
    নবীন ধানের মঞ্জরি কর্ণে
    তপ্ত বক্ষ ঢাকি' শ্যামল পর্ণে
    ওড়না ছুপায়ে রাঙা রামধনু বর্ণে
    আয় প্রেম-কুমারীরা আয় লো,
    উদাসী বাঁশীর সুরে ডাকে শ্যামরায় লো।
    ঝরিবে আকাশে অবিরল বৃষ্টি
    শ্যাম-সখা সাথে হবে শুভ-দৃষ্টি
    এই ঝুলনের মধু-লগনে।।
    
  • মেঘ-মেদুর গগন কাঁদে হুতাশ পবন

    বাণী

    মেঘ-মেদুর গগন কাঁদে হুতাশ পবন
    কে বিরহী রহি’রহি’দ্বারে আঘাত হানো।
    শাওন ঘন ঘোর ঝরিছে বারি অঝোর
    কাঁপিছে কুটির মোর দীপ নেভানো।।
    বজ্রে বাজিয়া ওঠে তব সঙ্গীত,
    বিদ্যুতে ঝলকিছে আঁখি-ইঙ্গিত,
    চাঁচর চিকুরে তব ঝড় দুলানো, ওগো মন ভুলানো।।
    এক হাতে, সুন্দর, কুসুম ফোটাও!
    আর হাতে নিষ্ঠুর মুকুল ঝরাও।
    হে পথিক, তব সুর অশান্ত ব‍ায়
    জন্মান্তর হতে যেন ভেসে আসে হায়!
    বিজড়িত তব স্মৃতি চেনা অচেনায় প্রাণ কাঁদানো।।
    
  • মেঘলা-মতীর ধারা জলে কর স্নান

    বাণী

    মেঘলা-মতীর ধারা জলে কর স্নান (হে ধরণী)
    স্নিগ্ধ শীতল মেঘ-চন্দনে জুড়াও তাপিত প্রাণ (হে ধরণী)।।
    	তব বৈশাখী ব্রত শেষে
    	শ্যাম সুন্দর বেশে
    নব দেবতা এলো হেসে লহ আশিস বারি দান (হে তাপসী)।।
    	তব ভূষণ-হীন উপবাস ক্ষীণ কায়
    	হোক নবতর শ্যাম সমারোহে, পুষ্পিত সুষমায়।
    	তীর্থ-সলিলে কৃষ্ণা
    	দূর কর গো তৃষ্ণা
    শ্যাম দরশ পরশ ব্যাকুলা হরষে গাহ গান (হে তপতী)।।
    
  • সবুজ শোভার ঢেউ খেলে যায়

    বাণী

    সবুজ শোভার ঢেউ খেলে যায়
    নবীন আমন ধানের ক্ষেতে।।
    হেমন্তের ঐ শিশির-নাওয়া হিমেল হাওয়া
    	সেই নাচনে উঠলো মেতে।।
    টইটুম্বুর ঝিলের জলে
    কাঁচা রোদের মানিক ঝলে
    চন্দ্র ঘুমায় গগন-তলে সাদা মেঘের আঁচল পেতে।।
    নটকানো রঙ শাড়ি প’রে কে বালিকা
    ভোর না হতে যায় কুড়াতে শেফালিকা।
    	আনমনা মন উড়ে বেড়ায়
    	অলস প্রজাপতির পাখায়
    মৌমাছিদের সাথে সে চায় কমল-বনের তীর্থে যেতে।।
    
  • হেমন্তিকা এসো এসো হিমেল শীতল বন-তলে

    বাণী

    হেমন্তিকা এসো এসো হিমেল শীতল বন-তলে
    শুভ্র পূজারিণী বেশে কুন্দ-করবী-মালা গলে।।
    	প্রভাত শিশির নীরে নাহি'
    	এসো বলাকার তরণী বাহি'
    সারস মরাল সাথে গাহি' চরণ রাখি' শতদলে।।
    ভরা নদীর কূলে কূলে চাহিছে সচকিতা চখি —
    মানস-সরোবর হ'তে-অলক -লক্ষ্মী এলো কি?
    	আমন ধানের ক্ষেতে জাগে
    	হিল্লোল তব অনুরাগে,
    তব চরণের রঙ লাগে কুমুদে রাঙা কমলে।।