সিন্ধু-কাফি

  • আমি চিরতরে দূরে চলে যাব

    বাণী

    আমি চিরতরে দূরে চলে যাব
    তবু আমারে দেব না ভুলিতে
    আমিবাতাস হইয়া জড়াইব কেশ
    বেণী যাবে যবে খুলিতে।।
    তোমার সুরের নেশায় যখন
    ঝিমাবে আকাশ কাঁদিবে পবন
    রোদন হইয়া আসিব তখন
    তোমার বক্ষে দুলিতে।।
    আসিবে তোমার পরমোৎসব —
    কত প্রিয়জন কে জানে,
    মনে প’ড়ে যাবে কোন্‌ সে ভিখারি
    পায়নি ভিক্ষা এখানে।
    তোমার কুঞ্জ-পথে যেতে হায় 
    চমকি’ থামিয়া যাবে বেদনায়
    দেখিবে কে যেন ম’রে মিশে আছে
    তোমার পথের ধূলিতে।। 
    
  • এসো শারদ প্রাতের পথিক এসো

    বাণী

    এসো শারদ প্রাতের পথিক এসো শিউলি বিছানো পথে।
    এসো ধুইয়া চরণ শিশিরে এসো অরুণ-কিরণ-রথে।।
    দলি, শাপলা শালুক শতদল এসো রাঙায়ে তোমার পদতল
    নীল লাবনি ঝরায়ে চলচল এসো অরণ্য পর্বতে।।
    এসো ভাদরের ভরা নদীতে ভাসায়েকেতকী পাতার তরণী
    এসো বলাকার রঙ পালক কুড়ায়ে বাহি’ ছায়াপথ-সরণি।
    শ্যাম শস্যে কুসুমে হাসিয়া এসো হিমেল হাওয়ায় ভাসিয়া
    এসো ধরনীরে ভালোবাসিয়া দুর নন্দন-তীর হতে।।
    
  • গুল–বাগিচার বুলবুলি আমি

    বাণী

    গুল–বাগিচার বুলবুলি আমি রঙিন প্রেমের গাই গজল।
    অনুরাগের লাল শারাব মোর আঁখি ঝলে ঝলমল (হায়)।।
    	আমার গানের মদির ছোঁয়ায়
    	গোলাপ কুঁড়ির ঘুম টুটে যায়,
    সে গান শুনে প্রেমে–দীওয়ানা কবির আঁখি ছলছল (হায়)।।
    লাল শিরাজীর গেলাস হাতে তন্বী সাকি পড়ে ঢুলে,
    আমার গানের মিঠা পানির লহর বহে নহর–কূলে।
    ফুটে ওঠে আনারকলি নাচে ভ্রমর রং–পাগল (হায়)।।
    	সে সুর শুনে দিশেহারা
    	ঝিমায় গগন ঝিমায় তারা,
    চন্দ্র জাগে তন্দ্রাহারা বনের চোখে শিশির জল (হায়)।।
    

    ১. বনের পাতায়

  • দিও বর হে মোর স্বামী যবে যাই

    বাণী

    দিও বর হে মোর স্বামী যবে যাই আনন্দ ধামে
    যেন প্রাণ ত্যাজি হে স্বামী শ্রীকৃষ্ণ গোবিন্দ নামে॥
    ভাসি যেন আমি ভাগীরথী নীরে অথবা প্রয়াগে যমুনার তীরে
    অন্তিম সময়ে হেরি আঁখি নীরে যেন মোর রাধা শ্যামে॥
    ব্রজগোপালের শুনায়ে নূপুর মরণ আমার করিও মধুর
    বাজায়ো বাঁশি দাঁড়ায়ো আসি’ রাধারে লইয়া বামে॥
    
  • দুরন্ত বায়ু পূরবইয়াঁ বহে

    বাণী

    দুরন্ত বায়ু পূরবইয়াঁ বহে অধীর আনন্দে
    তরঙ্গে দুলে আজি নাইয়া রণ-তুরঙ্গ-ছন্দে।।
    অশান্ত অম্বর-মাঝে মৃদঙ্গ গুরুগুরু বাজে,
    আতঙ্কে থরথর অঙ্গ মন অনন্তে বন্দে।।
    ভূজঙ্গী দামিনীর দাহে দিগন্ত শিহরিয়া চাহে,
    বিষন্ন ভয়-ভীতা যামিনী খোঁজে সেতারা চন্দে।।
    মালঞ্চে এ কি ফুল-খেলা, আনন্দে ফোটে যূথী বেলা,
    কুরঙ্গী নাচে শিখী-সঙ্গে মাতি’ কদম্ব-গন্ধে।।
    একান্তে তরুণী তমালী অপাঙ্গে মাঝে আজি কালি,
    বনান্তে বাঁধা প’ল দেয়া কেয়া-বেণীর বন্ধে।।
    দিনান্তে বসি’ কবি একা পড়িস্‌ কি জলধারা-লেখা,
    হিয়ায় কি কাঁদে কুহু-কেকা আজি অশান্ত দ্বন্দ্বে।।
    
  • ব্রজগোপী খেলে হোরী

    বাণী

    ব্রজ–গোপী খেলে হোরী
    খেলে আনন্দ নবঘন শ্যাম সাথে।
    রাঙা অধরে ঝরে হাসির কুম্‌কুম্‌
    অনুরাগ–আবীর নয়ন–পাতে।।
    পিরীতি–ফাগ মাখা গোরীর সঙ্গে
    হোরি খেলে হরি উন্মাদ রঙ্গে।
    বসন্তে এ কোন্ কিশোর দুরন্ত
    রাধারে জিনিতে এলো পিচ্‌কারী হাতে।।
    গোপীনীরা হানে অপাঙ্গ খর শর ভ্রুকুটি ভঙ্গ
    অনঙ্গ আবেশে জর জর থর থর শ্যামের অঙ্গ।
    শ্যামল তনুতে হরিত কুঞ্জে
    অশোক ফুটেছে যেন পুঞ্জে পুঞ্জে
    রঙ–পিয়াসি মন ভ্রমর গুঞ্জে
    ঢালো আরো ঢালো রঙ প্রেম–যমুনাতে।।
    
  • মন দিয়ে যে দেখি তোমায় তাই দেখিনে

    বাণী

    মন দিয়ে যে দেখি তোমায় তাই দেখিনে নয়ন দিয়ে।
    পরান আছে বিভোর হয়ে তোমার নামের ধেয়ান নিয়ে॥
    	হৃদয় জুড়ে আছ ব’লে,
    	এড়িয়ে চলি নানান ছলে।
    আছ আমার অন্তরে, তাই অন্তরালে রই লুকিয়ে॥
    আমার কথা শুনাই না গো তোমার কথা শোনার আশায়,
    ভরে আছে অন্তর মোর বন্ধু তোমার ভালোবাসায়।
    	তোমায় ভালো বাসতে পেরে
    	পেয়েছি মোর আনন্দেরে
    অমর হলাম হে প্রিয় মোর তোমার প্রেমের সুধা পিয়ে॥
    
  • যাহা কিছু মম আছে প্রিয়তম

    বাণী

    যাহা কিছু মম আছে প্রিয়তম সকলি নিয়ো হে স্বামী
    যত সাধ আশা প্রীতি ভালোবাসা সঁপিনু চরণে আমি॥
    	ধ’রে যা’রে রাখি আমার বলিয়া
    	সহসা কাঁদায়ে যায় সে চলিয়া
    অনিমেষ, আঁখি তুমি ধ্রুবতারা জাগো দিবসযামী॥
    	মায়ারি ছলনায় পুতুল খেলায়
    	ভুলাইয়া প্রভু রেখেছিলে আমায়
    ভুলেছি সে খেলা আজি অবেলায় তোমারই দুয়ারে থামি॥