বাণী

দূরের বন্ধু আছে আমার ঐ গাঙের পারের গাঁয়ে।
ঝরা পাতার পত্র আমার যায় ভেসে তার পায়ে।।
জানি জানি আমার দেশে আমার নেয়ে আসবে ভেসে,
চির-ঋণী আছে সে যে আমার প্রেমের দায়ে।।
নতুন আশার পাল তুলে সে আসবে ফিরে ঘরে,
ফুটেছে তাই কাশ-কুসুমের হাসি শুকনো চরে।
পিদিম জ্বেলে তা'রি আশায় গহীন গাঙের সোঁতে ভাসাই
ঐ পিদিমের পথ ধরে সে আসবে সোনার নায়ে।।

বাণী

দাসী হতে চাই না আমি হে শ্যাম কিশোর বল্লভ,
আমি তোমার প্রিয়া হওয়ার দুঃখ লব।
	জানি জানি হে উদাসীন
	দুঃখ পাব অন্ত বিহীন
বঁধুর আঘাত মধুর যে নাথ সে গরবে সকল সব।।
তোমার যারা সেবিকা নাথ, আমি নাহি তাদের দলে,
সবর্নাশের আশায় আমি ভেসেছি প্রেম পাথার জলে।
	দয়া যে চায় যাচুক চরণ
	আমার আশা করব বরণ
বিরহে হোক মধুর মরণ, আজীবন সুদূরে রব।।

বাণী

দেশ গৌড়-বিজয়ে দেবরাজ গগনে এলো বুঝি সমর-সাজে।
তাহারি মেঘ-মৃদঙ্গ গুরু গুরু আষাঢ়-প্রভাতে সহসা বাজে।।
	গহন কৃষ্ণ ঐরাবত-দল
	রবিরে আবরি’ ঘিরিল নভতল,
হানে খরশর বৃষ্টি ধারা জল — পবন-বেগে প্রতি ভবন-মাঝে।।
	বনের এলোকেশ বিজলি-পাশে
	বাঁধিয়া দেব্-সেনা অট্রহাসে।
	শ্যামল গৌড়ের অমল হাসি
	শস্যে-কুসুমে ওঠে প্রকাশি’,
অঙ্গে তাহার আঘাত-রাশি — দেব-আশীর্বাদ হয়ে বিরাজে।।

বাণী

দেখলে তোমায় বাসতে ভালো হয় না কারো ভুল।
রূপ-দীপালি দোদুল দেহ প্রেম ঢুল্ ঢুল্।।
	সোহাগ কথার মায়ার ফাঁদে
	ব্যাকুল হিয়া সদাই কাঁদে,
রই চেয়ে ঐ বদন-চাঁদে চকোর আকুল।।
সুনীল চোখের মায়া দেখি সজল আকাশে,
কাজল-কালো অলক-লতা মেঘেতে ভাসে।
	গোলাপ বনে গেলে সখি
	তোমায় যবে পাশে দেখি,
আমার ভুল হয়ে যায় কোন্‌টি তুমি, কোন্‌টি গোলাপ ফুল।।

বাণী

দূর বেণুকুঞ্জে বাজে মুরলী মুহু মুহু
	যেন বারে বারে
	ডাকে আমারে
বাঁশুরিয়ার মধুর সুরের কুহু।।

বাণী

দাও দাও দরশন পদ্ম-পলাশ লোচন,
	কেঁদে দু’ নয়ন হ’ল অন্ধ।
আকাশ বাতাস ঘেরা, তব ও মন্দির বেড়া
	আর কতকাল রবে বন্ধ॥
পাখি যেমন সন্ধ্যাকালে, বন্ধু-স্বজন পালে পালে
উড়ে এসে ব’সেছিল ডালে হে।
রাত পোহালে একে এক, উড়ে গেল দিগ্বিদিকে,
	প’ড়ে আছি একা নিরানন্দ।
টুটিল বাঁধন মায়ার, কবে শুনিব এবার
	ও রাঙা চরণ নূপুর ছন্দ॥
দুখ-শোক রৌদ্রজলে, ফেলে মোরে পলে পলে
	ছলিতেছ হরি কত ছল হে
জীবনের বোঝা প্রভু, বহিতে কি হবে তবু
	সহিতে পারি না আর দ্বন্দ্ব।
মরণের সোনার ছোঁওয়ায়, ডেকে লও ও রাঙা পায়
	দেখাও এবার মুখ-চন্দ॥