বাণী

ফোরাতের পানিতে নেমে 
ফাতেমা দুলাল কাঁদে অঝোর নয়নে রে।।
দু'হাতে তুলিয়া পানি 
ফেলিয়া দিলেন অমনি — পড়িল কি মনে রে।।
দুধের ছাওয়াল আসগর এই পানি চাহিয়ে রে,
দুশ্‌মনের তীর খেয়ে বুকে ঘুমাল খুন পিয়ে রে;
শাদীর নওশা কাশেম শহীদ এই পানি বিহনে রে।।
এই পানিতে মুছিল রে হাতের মেহেদী সকিনার,
এই পানিরই ঢেউয়ে ওঠে, তারি মাতম্‌ হাহাকার;
শহীদানের খুন মিশে আছে, এই পানিরই সনে রে।।
বীর আব্বাসের বাজু শহীদ হ'ল এরি তরে রে,
এই পানির বিহনে জয়নাল খিয়াম তৃষ্ণায় মরে রে;
শোকে শহীদ হ'লেন হোসেন জয়ী হয়েও রণে রে।। 

বাণী

ফাগুন ফুরাবে যবে —
উঠিবে দীরঘ শ্বাস চম্পার বনে
কোয়েলা নীরব হবে।।
আমারে সেদিন যদি স্মরণে আসে
বেদনা জাগে ঝরা ফুল সুবাসে
আমার স্মৃতি যত ঝরা পাতার মত
ফেলিয়া দিও নীরবে।।
যবে বাসর নিশি ফুরাবে
রাতের মিলন-মালা প্রভাতে মলিন হবে;
সুখ শশী অস্ত যাবে —
আসিবে জীবনে তব বৈশাখী মলিন হবে;
লুটাবে পথের' পরে ভেঙে যাবে ঘর
সেদিন স্মরণে তব আসিবে কি তাহারে
গৃহহীন করিয়াছ যাহারে ভবে।।

বাণী

ফুল-ফাগুনের এলো মরশুম বনে বনে লাগল দোল্।
কুসুম-সৌখিন দখিন হাওয়ার চিত্ত গীত-উতরোল।।
অতনুর ঐ বিষ-মাখা শর নয় ও-দোয়েল শ্যামার শিস্,
ফোটা ফুলে উঠ্‌ল ভ’রে কিশোরী বনের নিচোল।।
গুল্‌বাহারের উত্তরী কার জড়াল তরু-লতায়,
মুহু মুহু ডাকে কুহু তন্দ্রা-অলস, দ্বার খোল।
রাঙা ফুলে ফুল্ল-আনন দোলে কানন-সুন্দরী,
বসন্ত তার এসেছে আজ বরষ পরে পথ-বিভোল্।

বাণী

ফিরে ফিরে কেন তারই স্মৃতি
মোরে কাঁদায় নিতি যে ফিরিবে না আর।
ফিরায়েছি যা’য় কাঁদাইয়া হায়
সে কেন কাঁদায় মোরে বারেবার।।
তারই দেওয়া ফুলমালা, যারে দলিয়াছি পায়
সেই ছিন্নমালা কুড়ায়ে নিরালা আজি রাখি হিয়ায়।
বারে বারে ডাকি প্রিয় নাম ধ’রে তা’র।।
হানি’ অবহেলা যারে দিয়েছি বিদায়
আজি তারি স্মৃতি, সে কোথায় সে কোথায়।
জ্বালি’ নয়ন-প্রদীপ জাগি বাতায়নে
নিশি ভোর হয়ে যায় বৃথা জাগরণে
আজি স্বর্গ শূন্য মোর তারি বিহনে
কাঁদি আকাশ বাতাস মোর করে হাহাকার।।

বাণী

ফুলের জলসায় নীরব কেন কবি?
ভোরের হাওয়ায় কান্না পাওয়ায় তব ম্লান ছবি
		নীরব কেন কবি।।
যে বীণা তোমার কোলের কাছে
বুক-ভরা সুর ল’য়ে জাগিয়া আছে,
তোমার পরশে ছড়াক্‌ হরষে
আকাশে-বাতাসে তা’র সুরের সুরভি
		নীরব কেন কবি।।
তোমার যে প্রিয়া গেল বিদায় নিয়া অভিমানে রাতে —
গোলাপ হয়ে কাঁদে তাহারই কামনা উদাস-প্রাতে।
ফিরে যে আসিবে না ভোলো তাহারে
চাহ তাহার পানে দাঁড়ায়ে যে দ্বারে,
অস্ত-চাঁদের বাসনা ভুলাতে
অরুণ-অনুরাগে উদিল রবি
		নীরব কেন কবি।।

বাণী

ফিরিয়া এসো এসো হে ফিরে
বঁধু এ ঘোর বাদলে নারি থাকিতে একা।
হায় গগনে মনে আজি মেঘের ভিড়
	যায় নয়ন-জলে মুছে কাজল-লেখা।।
ললাটে কর হানি’ কাঁদিছে আকাশ
শ্বসিছে শন-শন হুতাস বাতাস।
তোমারি মত ঝড় হানিছে দ্বারে কর,
	খোঁজে বিজলি তোমারি পথ-রেখা।।
মেঘেরে সুধাই তুমি কোথায়
কাঁদন আমার বাতাসে ডুবে যায়!
ঝড়ের নূপুর পরি’ রাঙা পায়
	শ্যামল-সুন্দর দাও দেখা।।