বাণী

হাওয়াতে নেচে’ নেচে’ যায় ঐ তটিনী।
পাহাড়ের পথ-ভোলা কিশোরী নটিনী।।
		তরঙ্গ আঁচল দুলায়ে
		বনভূমির মন ভুলায়ে,
চলেছে চপল পায়ে একাকিনী উদাসিনী।।
এঁকে বেঁকে থম্‌কে গিয়ে,
হরিণীরে চম্‌কে দিয়ে।
ছুটিয়া যায় সুদূরে
আয় আয় বলি, ডাকে কে কুলের বধূরে,
নেচে চলে পথ বেভুল ঘর-ছাড়া বিবাগিনী।।

বাণী

হে বিধাতা! হে বিধাতা! হে বিধাতা!
দুঃখ-শোক-মাঝে, তোমারি পরশ রাজে,
কাঁদায়ে জননী-প্রায়, কোলে কর পুনরায়, শান্তি-দাতা।।
ভুলিয়া যাই হে যবে সুখ-দিনে তোমারে
স্মরণ করায়ে দাও আঘাতের মাঝারে।
দুঃখের মাঝে তাই, হরি হে, তোমারে পাই দুঃখ-ত্রাতা।।
দারা-সুত-পরিজন-রূপে হরি, অনুখন
তোমার আমার মাঝে আড়াল করে সৃজন।
তুমি যবে চাহ মোরে, লও হে তোদের হ’রে
ছিঁড়ে দিয়ে মায়া-ডোর, ক্রোড়ে ধর আপন।
ভক্ত সে প্রহ্লাদ ডাকে যবে ‘নারায়ণ’,
নির্মম হয়ে তার পিতারও হর জীবন।
সব যবে ছেড়ে যায় দেখি তব বুকে হায় আসন পাতা।।

বাণী

হে মহামৌনী, তব প্রশান্ত গম্ভীর বাণী শোনাবে কবে
যুগ যুগ ধরি’ প্রতীক্ষারত আছে জাগি’ ধরণী নীরবে॥
যে-বাণী শোনার অনুরাগে উদার অম্বর জাগে
অনাহত যে-বাণীর ঝঙ্কার বাজে ওঙ্কার প্রণবে॥
চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-তারায় জ্বলে যে-বাণীর শিখা
পুষ্পে-পর্ণে শত বর্ণে যে-বাণী-ইঙ্গিত লিখা।
যে অনাদি বাণী সদা শোনে যোগী-ঋষি মুনি জনে
যে-বাণী শুনি না শ্রবণে বুঝি অনুভবে॥

বাণী

কৃষ্ণ	: হের আহিরিণী মানস-গঙ্গা দুকূল পাথার।
রাধা	: হরি ভয়ে মরি একা নারী কিসে হব পার।।
কৃষ্ণ	: পারের কাণ্ডারি আমি প্যারী এসো আমার নায়।
রাধা	: ওগো একেলা গোপের কুলবধু আমি, তুমিও তরুণ মাঝি তায়।।
কৃষ্ণ	: যৌবন ভার ভারি পসার রাধে! তবু নাহি ভয়।
রাধা	: ওইটুকু তরী, ভয়ে মরি হরি, ভার যদি নাহি সয়।
উভয়ে	: হের মানস-গঙ্গায় উঠিয়াছে ঢেউ ঝড় বহে অনিবার।।
রাধা	: নাই পারের কড়ি পারে যাব কি করি,
কৃষ্ণ	: দিয়ে মন বাঁধা পারে চল কিশোরী।
উভয়ে	: মোরা ভেসেছি অকূলে প্রেমের গোকুলে কুলের ভয় কি আর।।

বাণী

হে মাধব, হে মাধব, হে মাধব!
তোমারেই প্রাণের বেদনা কব তোমারি শরণ লব।।
সুখের সাগরে লহরি সমান
হিল্লোলি’ উঠে যেন তব নমি গান
দুঃখে শোকে কাঁদে যবে প্রাণ যেন নাম না ভুলি তব।।
তুমি ছাড়া বিশ্বে কাহারও কাছে
এ প্রাণ যেন কিছু নাহি যাচে।
যেনতোমারি অধিক কেহ প্রিয় নাহি হয়
বিশ্ব ভুবনে যেন হেনি তুমি-ময়
কলঙ্ক-লাঞ্ছনা যত বাধা ভয় তব প্রেমে সকলি স’ব।।

বাণী

হিন্দু-মুসলমান দুটি ভাই ভারতের দুই আঁখি-তারা।
এক বাগানে দুটি তরু — দেবদারু আর কদমচারা।।
	যেন গঙ্গা সিন্ধু নদী
	যায় গো ব’য়ে নিরবধি,
এক হিমালয় হতে আসে, এক সাগরে হয় গো হারা।।
	বুলবুল আর কোকিল পাখি
	এক কাননে যায় গো ডাকি’,
ভাগীরথী যমুনা বয় মায়ের চোখের যুগল-ধারা।।
পেটে-ধরা ছেলের চেয়েও চোখে ধরার মায়া বেশি,
অতীতে ছিল অতিথি, আজ সে সখা প্রতিবেশী।
	ফুল পাতিয়ে গোলাপ বেলি
	এক সে-মায়ের বুকে খেলি,
পাগল তারা — ভিন্ন ভাবে আল্লা ভগবানে যারা।।