বাণী

ঝুলনের এই মধু লগনে।
মেঘ দোলায় দোলে; দোলে রে বাদল গগনে।।
উদাসী বাঁশির সুরে ডাকে শ্যামরায়,
ব্রজের ঝিয়ারি আয়, পরি নীল শাড়ি আয়,
নীল কমল কুঁড়ি দোলায়ে শ্রবণে।।
বাঁশির কিশোর ব্রজগোপী চিতচোর,
অনুরাগে ডাকে আয় দুলিবি কে ঝুলনে।।
মেঘ মৃদং বাজে, বাজে কী ছন্দে,
রিমঝিম বারিধারা ঝরে আনন্দে।
বুঝি এলো গোকুল ব্রজে নেমে
কৃষ্ণ রাখাল প্রেমে শুনি বাঁশি তায়
ফোটে হাসি গোপীজন আননে।।

বাণী

ঝর্‌ল যে-ফুল ফোটার আগেই তারি তরে কাঁদি, হায়!
মুকুলে যার মুখের হাসি চোখের জলে নিভে যায়।।
হায় যে-বুলবুল গুল্‌বাগিচায় গোলাপ কুঁড়ির গাইত গান,
আকুল ঝড়ে আজ সে প'ড়ে পথের ধূলায় মূরছায়।।
সুখ-নদীর উপকূলে বাঁধিল যে সোনার ঘর,
আজ কাঁদে সে গৃহ-হারা বালুচরে নিরাশায়।।
যাবার যারা, যায় না তারা — থাকে কাঁটা, ঝরে ফুল।
শুকায় নদী মরুর বুকে, প্রভাত আলো মেঘে ছায়।।

বাণী

ঝাঁপিয়া অঞ্চলে কেন বিধুবদন অবনত কাঁদে নয়ান।
অভিমান পরিহর হরি-হৃদি বিহারিণী প্রেম দিয়া জুড়াও এ প্রাণ।
তুয়া বিনা নয়নে অন্যে না হেরি
একই রাধা আছে ত্রিভুবন ঘেরি’
(আমি রাধা ছাড়া জানি’ না
অনন্ত বিশ্বে রাধারই রূপধারা,
রাধা ছাড়া দেখি না)
ভৃঙ্গার ভরি’ তুমি শৃঙ্গার রস
করাও পান, তাই হই যে অবশ।।
তুমি রাধা হয়ে মধু দিলে মাধব হই,
তুমি ধারা হয়ে নামিলে সৃষ্টিতে রই
রাধা, সকলি তোমার খেলা
তবে কেন কর অভিমান, কেন কর হেলা।
প্রতি দেহ-বিম্বে তোরি
পদতলে হর হয়ে রহি তাই ছবি।
হরিরত হর-জ্ঞান মহামায়া হরিলী
(এ যে) তোমারই ইচ্ছা, আমি নিজে নিজে রূপ ধরিণী।
ভোল মানের খেলা
দূরে থেকোনা, দাও চরণ ভেলা
আমি তরে’ যাই, তরে’ যাই
রাধা-প্রেম যমুনায় ডুবিয়া মরে’ যাই।।

পাঠান্তর : রেকর্ডের জন্য কবি এই গানটির বহু অংশ বর্জন করেন।বর্জিত অংশগুলো এই:
গলে দিয়া পীতধড়া গো, পদতলে দিয়া শিখী-চূড়া গো
পদযুগ ধরিয়া চাহি ক্ষমা, ক্ষম অপরাধ প্রিয়তমা!
হরি-মনোরমা ক্ষমা কর গো।।
তব প্রেমে অবগাহন করি সব দাহন চিরতরে জুড়াব
কল্প-কদম-তরু-তলে চিরদিন তোমার প্রেম-কণা কেশর কুড়াব।।

বাণী

ঝরা ফুল দ’লে কে অতিথি
সাঝেঁর বেলা এলে কানন-বীথি।।
চোখে কি মায়া ফেলেছে ছায়া
যৌবন মদির দোদুল কায়া
তোমার ছোঁয়ায় নাচন লাগে দখিন হাওয়ায়
লাগে চাদেঁর স্বপন বকুল চাঁপায়,
কোয়েলিয়া কুহরে কু কু গীতি।।

বাণী

ঝড়-ঝঞ্ঝার ওড়ে নিশান, ঘন-বজ্রে বিষাণ বাজে।
জাগো জাগো তন্দ্রা-অলস রে, সাজো সাজো রণ-সাজে।।
দিকে দিকে ওঠে গান, অভিযান অভিযান!
আগুয়ান আগুয়ান হও ওরে আগুয়ান
ফুটায়ে মরুতে ফুল-ফসল।
জড়ের মতন বেঁচে কি ফল? কে র’বি প’ড়ে লাজে।।
বহে স্রোত জীবন-নদীর, চল চঞ্চল অধীর,
তাহে ভাসিবি কে আয়, দূর সাগর ডেকে যায়।
হ’বি মৃত্যু-পাথার পার, সেথা অনন্ত প্রাণ বিরাজে।।
	পাঁওদল্‌ রণে চল্‌, চল্‌ রণে চল্‌
	পাঁওদল আগে চল্‌, চল্‌ রণে চল্‌
মরুতে ফোটাতে পারে ওই পদতল প্রাণ-শতদল।
	বিঘ্ন-বিপদে করি’ সহায়
	না-জানা পথের যাত্রী আয়,
স্থান দিতে হবে আজি সবায়, বিশ্ব-সভা-মাঝে।।

বাণী

ঝুম্‌কো লতায় জোনাকি, মাঝে মাঝে বৃষ্টি।
আবোল-তাবোল বকে কে, তারও চেয়ে মিষ্টি।।
আকাশে সব ফ্যাকাশে, ডালিম-দানা পাকেনি
চাঁদ ওঠেনি কোলে তার, মা ব’লে সে ডাকেনি।।
রাগ করেছে বাঘিনী, বারো বছর হাসে না
স্বপ্ন তাহার ভেঙ্গে যায়, খোকা কেন আসে না।।
পাথর হয়ে আছে ঝিনুক, দুধের বাটি, দোলনা!
মাকে বলে ‘খোকা কই?’ কিছুই খেলা হ’ল না।।
তেমনি আছে ঘরের জিনিস, কিছুই ভাল লাগে না
পা আছড়ে মা কেঁদে কয় ‘খোকা কেন ভাঙে না!’

চলচ্চিত্র : ‘দিকশূল’