বাণী

কোথায় তুই খুঁজিস ভগবান্, সে যে রে তোরই মাঝে রয়,
			চেয়ে দেখ সে তোরই মাঝে রয়।
সাজিয়া যোগী ও দরবেশ খুঁজিস্ যায় পাহাড় জঙ্গলময়।।
আঁখি খোল্ ইচ্ছা-অন্ধের দল নিজেরে দেখ্ রে আয়নাতে,
দেখিবি তোরই এই দেহে নিরাকার তাঁহার পরিচয়।।
ভাবিস্ তুই ক্ষুদ্র কলেবর, ইহাতেই অসীম নীলাম্বর,
এ দেহের আধারে গোপন রহে সে বিশ্ব-চরাচর।
প্রাণে তোর প্রাণের ঠাকুর বেহেশ্‌তে স্বর্গে কোথাও নয়।।
এই তোর মন্দির-মসজিদ এই তোর কাশী-বৃন্দাবন,
আপনার পানে ফিরে চল কোথা তুই তীর্থে যাবি, মন!
এই তোর মক্কা-মদিনা, জগন্নাথ-ক্ষেত্র এই হৃদয়।।

বাণী

কঠিন ধরায় ফোটাতে ফসল-ফুল।
কে জানে মহা-সিন্ধু কেন গো হইয়া ওঠে ব্যাকুল।।
	মেঘ হ’য়ে কেন আকাশ ভরিয়া
	বারিধারা রূপে পড়ে গো ঝরিয়া,
কত লোক ভাবে উৎপাত এলো, কত লোক ভাবে ভুল।।
কার বাঁধা-ঘর ভেঙে গেল হায় বোঝে না’ক তাহা মেঘ,
কুলে কুলে আনে ফুলের বন্যা তাহার প্রেমের বেগ।
	জানে না কাহার করিল সে ক্ষতি
	সে জানে স্নিগ্ধ হ’ল বসুমতী,
যে অকূলের পথে টানে, সে বোঝে না ভাসিল কাহার কুল।।

বাণী

কিছু নাহি যার তোমারে দিবার কি তার ভিক্ষা লবে!
তুমি কেঁদে গেলে আমারে শুধুই নীরবে কাঁদিতে হবে।।
	হেথা একদিন কিশোর বেলায়
	বেঁধেছিনু ঘর পুতুল-খেলায়,
সে সাথি আমার ফিরিবে না আর নব বসন্ত-উৎসবে।।
একদা হেথায় ফুটেছিল হেনা,
সে-ফুল আবার ফুটিবে হেথায় সে তো আর আসিবে না
	ওগো ভিখারি কি দিব তোমায়
	শূন্য দেউলে কুসুম শুকায়,
ক্ষমিও আমার শত অপরাধ, ভিখারিনী আমি ভবে।।

বাণী

কিশোর গোপ-বেশ মুরলিধারী শ্রীকৃষ্ণ গোবিন্দ।
দ্বিভুজ শ্যাম সুন্দর মূরতি অপরূপ অনিন্দ্য।।
	পরমাত্মারূপী পরম মনোহর
	গোলকবিহারী চিন্ময় নটবর,
ময়ূর পাখাধারী চিকুর চাঁচর মণি-মঞ্জীর শোভিত শ্রীচরণারবিন্দ।।
গলে দোলে নব বিকশিত কদম ফুলের মালা
খেলে ঘিরে যাঁরে প্রেমময়ী গোপবালা,
	শোভিত স্বর্ণবর্ণ পীতবাসে
	ওঙ্কার বিজড়িত শ্রীরাধার পাশে,
পদ্মপলাশ আঁখি মৃদু-হাসে — যেরূপ ধেয়ায় মুনি ঋষি দেববৃন্দ।।

বাণী

কুমকুম আবির ফাগের ল’য়ে কালিকা।
খেলিছে ‘রসিয়া’ হোরি ব্রজ-বালিকা।।
	হোরির অনুরাগে
	যমুনায় দোলা লাগে,
মাধব সনে ঐ খেলে মাধবিকা।।
	রঙের গাগরিতে
	রঙিলা ঘাগরিতে,
রঙের মাতন লাগায় নাগর-নাগরিকা।।
	জেগেছে রঙের নেশা
	মাধবী মধু-মেশা,
মনের বনে দোলে রাঙা ফুল-মালিকা।।

বাণী

কাঁদিছে তিমির-কুন্তলা সাঁঝ আমার হৃদয় গগনে।
এসো প্রিয়া এসো বঁধূ-বেশে এই বিদায়-গোধূলি-লগনে।।
	দিনের চিতার রক্ত-আলোকে
	শুভ-দৃষ্টি গো হবে চোখে চোখে,
আমার মরণ-উৎসব-ক্ষণে শঙ্খ বাজুক সঘনে।।
চাঁদের প্রদীপ জ্বালাইয়া হের খুঁজিছে মোদেরে তারাদল,
সজল-বসনা বাদল-পরীর নয়ন করিছে ছল ছল।।
	মরণে তোমারে পাইব বলিয়া 
	জীবনে করেছি আরাধনা প্রিয়া,
এসো মায়ালোক-বিহারিণী মোর কুহেলি-আঁধার-স্বপনে।।