বাণী

(ওমা)	দুঃখ-অভাব-ঋণ যত মোর (শ্যামা) রাখলাম তোর পায়ে।
(এবার)	তুই দিবি মা, ভক্তের তোর সকল ঋণ মিটায়ে।।
		মাগো		সমন হাতে মোর মহাজন
				ধরতে যদি আসে এখন,
		তোরই পায়ে পড়বে বাঁধন ছেলের ঋণের দায়ে।।
ওমা		সুদ আসলে এ সংসারের বেড়েই চলে দেনা,
এবার		ঋণ মুক্তির তুই নে মা ভার, রইব তোরই কেনা।
				আমি আমার আর নহি ত
		(আমি)	তোর পায়ে যে নিবেদিত,
এখন		তুই হয়েছিস্ জামিন আমার দে ওদের বুঝায়ে।।

বাণী

ও কে কলসি ভাসায়ে জলে আনমনে।
তীরে ব’সে কী ভাবে আর ঢেউ গণে।।
নিয়ে শিথিল আঁচল খেলে উতল সমীর
তার আল্‌তা পায়ের মুছে নেয় নদী-নীর,
খুলে কবরী জড়ায় হাতের কাঁকনে।।
সে জল্‌কে আসার ছলে নদী-তীরে
শুধু ওপার পানে চাহে ফিরে ফিরে,
খুলে পায়ের নূপুর ফেলে দেয় সে নীরে —
আসে ঘরে ফিরে নিয়ে জল নয়নে।।

বাণী

ও বন্ধু! দেখ্‌লে তোমায়, বুকের মাঝে জোয়ার-ভাঁটা খেলে।
আমি এক্‌লা ঘাটে কুলবধূ কেন তুমি এলে
			বন্ধু, কেন তুমি এলে।।
ও বন্ধু, আমার অঙ্গে কাঁটা দিয়ে ওঠে বাজাও যখন বাঁশি
আমি খিড়্‌কি দুয়ার দিয়ে বন্ধু, জল ভরিতে আসি
ভেসে’ নয়ন-জলে ঘরে ফিরি ঘাটে কলস ফেলে।।
আমার পাড়ায়, বন্ধু, তোমার নাম যদি নেয় কেউ
বুকে আমার দুলে ওঠে পদ্মা নদীর ঢেউ বন্ধু পদ্মা নদীর ঢেউ।
	ওগো ও চাঁদ, এনো না আর
	দু’কূল-ভাঙা এমন জোয়ার
কত ছল ক’রে জল লুকাই চোখের কাঁচা কাঠে আগুন জ্বেলে।।

বাণী

ও তুই কারে দেখে ঘোমটা দিলি নতুন বউ বল গো
তুই উঠলি রেঙে যেন পাকা কামরাঙ্গার ফল গো।।
তোর মন আইঢাই কি দেখে কে জানে
তুই চুন বলে দিস হলুদ বাটা পানে
তুই লাল নটে শাক ভেবে কুটিস শাড়ির আঁচল গো।।
তুই এ ঘর যেতে ও ঘরে যাস পায়ে বাধে পা
বউ তোর রঙ্গ দেখে হাসছে ননদ জা।
তুই দিন থাকিতে পিদিম জ্বালিস ঘরে
ওলো রাত আসিবে আরো অনেক পরে
কেন ভাতের হাঁড়ি মনে ক'রে উনুনে দিস জল গো।।

বাণী

ওহে রসিক রসাল কদলী।
ভাবুকের তুমি ভাবের আধার পেটুকের প্রাণ-পুতলী।।
আহা, তুমি যুগে যুগে বর্তমান
বৃন্দাবনে মোহন বাঁশি বাঙলায় মর্তমান।
বহুরূপী তুমি বহুনামধারী চম্প বীচে কাঁঠালি।।
তোমার কাঁচকলা রূপের উপাসক পেট-রোগা যত ভক্ত,
ঝোলে কি ভাজায় তোমারে সাজায় (তুমি) মজাও পলতা শুক্ত।
নৈবেদ্যে ও আদ্য শ্রাদ্ধে দয়াময়, জগতের যত নর-বানর
তোমার কৃপার কাঙালি।।

কৌতুক নাটিকা : ‘পণ্ডিত মশায়ের ব্যাঘ্র শিকার’

বাণী

শ্রীরাধা : ওলো বিন্দে! গোবিন্দে আর দিস্‌নে ব্যথা, দিস্‌নে।
ওর দু নয়নে লো অঝোর ধারে বারি ঝরে, চোখে কি দেখিস্ নে?
চোখের মাথা খেলি নাকি?
[ঐ সজল কাজল চোখ দেখে তুই ঐ ডাগর চোখের চাওয়া দেখে তুই]
ওর অশ্রুত নিবেদন অশ্রুতে ঝরে, ওরে কাঁদিতে দেখিলে মন কেমন করে।
আমি রেইতে নারি — [হ’য়ে নারী সইতে নারি ওর নয়ন-বারি]।
মোর পায়ে ধরার সাধে পদে-পদে অপরাধে আপনারে বাঁধে,
কলঙ্ক হতে, সখি অধিক জোছনা দেয় কলঙ্কী-চাঁদে।
ওরে তাই ভালোবাসি গো — [ত্রিভুবন ভালোবাসে ওরে]।
এ-কুলে ও-কুলে যত নারী আছে, বৃন্দে, গোবিন্দে সকলে চায় —
ও সকলের প্রিয় তবু কারো সে নয় কভু,
প্রেমময় প্রেম দিয়ে কেবলি কাঁদায়, ওরে কে ধ’রে রাখবে?
[ঐ দুরন্তরে বল্ ঐ উড়ন্ত পাখির]
আমারি প্রিয়তমে সকলে বাসে ভালো গরবিনী আমি সেই গরব-ভরে।
নিন্দা করি’, ‘বৃন্দা, বৃন্দাবনে লো — মনে মনে ক্ষমা চাই চরণ ধ’রে।
ওর মন যে জানি লো, [ও চন্দ্রা’র বুকে কাঁদে ‘রাধা, রাধা’ ব’লে]
ওর মনে যদি থাকত কিছু আবেশে, এ বেশে কি আসত?
[চোর কি নিজে দেয় ধরা সই? অ-ধরা, ধরায়, ধরা পড়ত না সই]
ও অত মুখ্যু নয় লো’
[কোটি কোটি মুমুক্ষেরে মোক্ষ দেয় যে, সে অত মুখ্যু নয় লো]
প্রাণ গোবিন্দে, আন্ লো বৃন্দে — জুড়াক এ বুকের জ্বালা।
বনমালী-কণ্ঠে নাহি জড়ালে সখি, প্রাণ-হীন আমি বনমালা!
মোর কৃষ্ণ প্রাণ লো
কৃষ্ণ ধ্যান, কৃষ্ণ জ্ঞান, কৃষ্ণ অভিমান — কৃষ্ণ প্রাণ লো!
মোর কৃষ্ণ বিরহ, কৃষ্ণ কলহ, কৃষ্ণ প্রাণ লো!

‌‘কলহ-কলহান্তরিতা’