বাণী

		সই নদীর পারে বকুল তলায় সুবাস শীতল ছায়
(সখি)	আকুল তাহার আঁখি দুটি কাহার পানে চায়॥
		সই যা না লো দাঁড়ায়ে, কাঁটা বিঁধেছে মোর পায়ে
		তোরা দাঁড়া সখি ক্ষণেক, (সখি) ওকি হাসিস্ কেন হায়॥
		আমার কলসিটি যে ভারি, ডালে বেঁধেছে মোর শাড়ি
		তোরা বলিস ছলে হেরি ওরে (ওলো) ছি ছি একি দায়!
		যদি হেরেই থাকি ওরে, তোরা দুষিস্ কেন মোরে
ওলো		আমার আমি বশে নাই মোর (পাগল) আঁখির নেশায়॥

বাণী

সুবল সখা! এই দেখ্ এই পথে তাহার, সোনার নূপুর আছে পড়ে,
	বৃন্দাবনের বনমালী গেছে রে ইে পথ ধরে।
	হরি চন্দন গন্ধ পথে পথে পাই
	ঝরা ফুলে ছেয়ে আছে বনবীথি তাই।
	ভ্রমে ভ্রমর শ্রীচরণ-চিহ্ন ঘিরে
	রাঙ্গা কমল ভ্রমে, ভ্রমে শ্রীচরণ-চিহ্ন ঘিরে।
	ভাসে বাঁশির বেদন তার মৃদু সমীরে।
	তারে খুঁজবো কোথায় — সেই চোরের রাজায় খুঁজবো কোথায়?
	তারে খুঁজলে বনে, মনে লুকায়, চোরের রাজায় খুঁজবো কোথায়?
	সুবল রে —
	শ্রীদাম দেখেছে তারে রাখাল দলে,
	গোপিনীরা দেখিয়াছে যমুনা-জলে।
	বাঁশরি দেখেছে তারে কদম শাখায়
	কিশোরী দেখেছে তারে ময়ূর পাখায়।
	বৃন্দা এসেছে দেখে রাজা মথুরায়,
	যশোদানন্দ বলে কোলে সে ঘুমায়।
	জানি না কোথায় সে দে রে দেখায়ে দে কোথা ঘনশ্যাম
	কবে বুকে পাব তারে, মুখে জপি যাঁর নাম।।

বাণী

সখি, সে হরি কেমন বল্‌। 
নাম শুনে যা’র এত প্রেম জাগে চোখে আনে এত জল।।
সখি	সে কি আসে এই পৃথিবীতে
	গাহি’ রাধা নাম বাঁশরিতে?
যা’র অনুরাগে বিরহ-যমুনা হয়ে ওঠে চঞ্চল।।
তা’রে কি নামে ডাকিলে আসে
কোন্‌ রূপ কোন্‌ গুন পাইলে, সে রাধা সম ভালোবাসে?
	সখি শুনেছি সে নাকি কালো
	জ্বালে কেমনে সে এত আলো,
মায়া ভুলাইতে মায়াবী সে নাকি করে গো মায়ার ছল।।

বাণী

স্বদেশ আমার! জানি না তোমার শুধিব মা কবে ঋণ।
দিনের পরে মা দিন চ’লে যায় এলো না সে শুভদিন।।
		খাই দাই আর আরামে ঘুমাই
		পাগলের যেন ব্যথা-বোধ নাই
ললাট-লিখন বলিয়া এড়াই ভীরুতা, শক্তি ক্ষীণ।
অভাগিনী তুমি, সন্তান তব সমান ভাগ্যহীন।।
কত শতাব্দী করেছি মা পাপ মানুষেরে করি ঘৃণা
জানি মা মুক্তি পাব না তাহার প্রায়শ্চিত্ত বিনা।
		ক্ষুদ্র ম্লেচ্ছ কাঙাল ভাবিয়া
		রেখেছি যাদেরে চরণে দাবিয়া
তাদের চরণ-ধূলি মাখি যদি আসিবে সে শুভদিন
নূতন আলোকে জাগিবে পুলকে জননী ব্যথা-মলিন।।

বাণী

সখি তখন আমার বালিকা বয়স বেণু শুনেছিনু যবে।
আমি বুঝিনি সেদিন, ডাকে বাশুরিয়া আমারেই বেণু রবে, 
				সখি, আমারেই বেণু রবে।।
তার বাঁশরির সুরে মাঝে মাঝে সখি শিহরিয়া উঠিতাম গো —
মনে হ’ত ঐ সুরের আড়ালে আছে যেন মোর নাম গো।
ডাকিত — ‌‘রাধা জাগো, জাগো প্রিয়া’,
হের গো যমুনা তোমার বিরহে উঠিয়াছে উথলিয়া।।
শিহরিত কলেবর, জাগিত ভীতি গো,
ও কি পূর্বানুরাগ, ও কি প্রথম প্রীতি গো।সখি গো — 
সখি, হেরিনু স্বপনে নব জলধর রসে-ঢলঢল কালা
মোর বুকে এসে কাঁদে, বলে লহ, রাধে, কণ্ঠের বনমালা
তার শিরে শিখি-পাখা, চাঁচর চিকুর দোলে কপোলের কাছে লো
দোলে দোলে দোলে দোলে গো —
সে বাঁশী রেখে পায় মুখপানে চায়, কি যেন ভিক্ষা যাচে।।
আমি দিতে যে নারি লো, যাহা চায় তাহা আমি দিতে যে নারি লো;
ও বোঝে না কুলবতী কুলের বাধা,
দিতে যে নারী লো, দিতে যে নারি লো।

বাণী

সেদিন ব’লেছিলে এই সে ফুলবনে,
আবার হবে দেখা ফাগুনে তব সনে॥
ফাগুন এলো ফিরে লাগে না মন কাজে,
আমার হিয়া ভরি, উদাসী বেণু বাজে;
শুধাই তব কথা দখিনা সমীরণে॥
শপথ ভুলিয়াছ বন্ধু, ভুলিলে পথ কি গো,
বারেক দিয়ে দেখা লুকালে মায়ামৃগ।
আঁচলে ফুল লয়ে হল’ না মালা গাঁথা,
আসার পথ তব ঢাকিল ঝরা পাতা;
পূজার চন্দন শুকালো অঙ্গনে॥