দোলে বন-তমালের ঝুলনাতে

বাণী

দোলে	বন-তমালের ঝুলনাতে কিশোরী-কিশোর
চাহে	দুঁহু দোঁহার মুখপানে চন্দ্র ও চকোর,
যেন	চন্দ্র ও চকোর প্রেম-আবেশে বিভোর।।
	মেঘ-মৃদঙ বাজে সেই ঝুলনের ছন্দে
	রিম ঝিম বারিধারা ঝরে আনন্দে
	হেরিতে যুগল শ্রীমুখ চন্দে
	গগনে ঘেরিয়া এলো ঘন-ঘটা ঘোর।।
	নব নীরদ দরশনে চাতকিনী প্রায়
	ব্রজ-গোপিনী শ্যামরূপে তৃষ্ণা মিটায়
গাহে	বন্দনা-গান দেব-দেবী অলকায়
	ঝরে বৃষ্টিতে সৃষ্টির প্রেমাশ্রু-লোর।।

মাকে আদর করে কালী বলি

বাণী

মাকে আদর করে কালী বলি সে সত্যি কালো নয় রে।
তার ঈষৎ হাসির এক ঝলকে জগৎ আলো হয় রে,
			ত্রি-জগৎ আলো হয় রে।।
(কালো নয় কালো নয়, চরণে যার মহাকাল
পায়ের নখে চাঁদের মালা, কালো নয় কালো নয়)
			সত্যি কালো নয় রে।।
(আমরা) আপনভোলা পাগলী গিরিবালা
মুন্ডামালায় মনে করে কুন্দফুলের মালা;
(রয়) মরা-ছেলে বুকের ধ’রে শ্মশানে তন্ময় রে,
রয় শ্মশানে তন্ময় রে।
শ্মশানে সে থাকে ব’লে ভয়ঙ্করী নয় রে!
(ভবের) খেলা-শেষে সকলেরে দেয় সে বরাভয় রে।।
(সে) মারে যাকে, মালা করে তারেও পরে রয় রে!
(সেই) তামসিকও যায়রে তরে (মাকে) তামসী যে কয় রে।।

তব বাঁশরি কি হরি শুনিতে পাব না

বাণী

তব বাঁশরি কি হরি শুনিতে পাব না পাশরিয়া আছি বলে।
তব রাস উৎসবে ভিখারির মত বসে আছি পথ তলে।।
		যে ডাকে, যদি তারি হও একা
		ডাকে না যে, সে কি পাইবে না দেখা,
কাঁদে না যে ছেলে জননী কি তারে ডাকিয়া লয় না কোলে।।
(হরি!) পথ ভুলিয়া যে ঘোরে অরণ্যে দেখাবে না তারে পথ
(তুমি) সেদিনো ফিরায়ে দাওনি কংস দুর্যোধনের রথ।
		হরি! তুমি যদি নাহি ডাক আগে
		তাহার কি কভু হরি-প্রেম জাগে?
না শুনিয়া বাঁশি ব্রজবাসিনীরা যেত কি যমুনার জলে।।

চরণে দলিয়া গিয়াছে চলিয়া

বাণী

চরণে দলিয়া গিয়াছে চলিয়া
			তবু কেন তারে ভালোবাসি।
বলিতে পারি না বোঝাতে পারি না
			আঁখি-জলে যায় বুক ভাসি’।।
কেন সে বিরাজে		হৃদয়েরি মাঝে
তার স্বর যেন 		সদা প্রাণে বাজে
কি বাঁধনে মোরে		বেঁধেছে বল সে
			দিয়ে গেছে গলে প্রেম-ফাঁসি।।

বন-হরিণীরে তব বাঁকা আঁখির

বাণী

	বন-হরিণীরে তব বাঁকা আঁখির।
	ওগো শিকারী, মেরো না তীর।।
	ভীরু-হিরণী বনের ছায়ায়,
	(চপলা) খেলে বেড়ায় সে অধীর।
তার	সুখ-হাসি-সাধ ল’য়ে হে নিষাদ
		দিও না নয়নে নীর।।
	আজো বোঝে না সে বাঁকা-চোখের ভাষা,
	পিয়ার লাগি’ জাগেনি পিয়াসা।
	সরল চোখে তার প্রেমের লালী
	(নয়নে) ফোটেনি আবেশ মদির।
তার	আয়নার প্রায় স্বচ্ছ হিয়ায়
		আঁকিও না হায়, দাগ গভীর।।

ছি ছি ছি কিশোর হরি

বাণী

ছি ছি ছি কিশোর হরি, হেরিয়া লাজে মরি
সেজেছ এ কোন রাজ সাজে
যেন সঙ্ সেজেছ, হরি হে যেন সঙ্‌ সেজেছ —
ফাগ মুছে তুমি পাপ বেঁধেছ হরি হে যেন সঙ্ সেজেছ;
সংসারে তুমি সঙ্ সাজায়ে নিজেই এবার সঙ্ সেজেছ।
বামে শোভিত তব মধুরা গোপিনী নব
সেথা মথুরার কুবুজা বিরাজে।
মিলেছে ভাল, বাঁকায় বাঁকায় মিলেছে ভাল,
ত্রিভঙ্গ অঙ্গে কুবুজা সঙ্গে বাঁকায় বাঁকায় মিলেছে ভাল।
হরি ভাল লাগিল না বুঝি হৃদয়-আসন
তাই সিংহাসনে তব মজিয়াছে মন
প্রেম ব্রজধাম ছেড়ে নেমে এলে কামরূপ
হরি, এতদিনে বুঝিলাম তোমার স্বরূপ
তব স্বরূপ বুঝি না হে
গোপাল রূপ ফেলে ভূপাল রূপ নিলে স্বরূপ বুঝি না হে।
হরি মোহন মুরলী কে হরি’ নিল
কুসুম কোমল হাতে এমন নিঠুর রাজদন্ড দিল
মোহন মুরলী কে হরি।
দন্ড দিল কে, রাধারে কাঁদালে বলে দন্ড দিল কে
দন্ডবৎ করি শুধাই শ্রীহরি দন্ড দিল কে
রাঙা চরণ মুড়েছে কে সোনার জরিতে 
খুলে রেখে মধুর নূপুর, হরি হে খুলে রেখে মধুর নূপুর।
হেথা সবাই কি কালা গো ?
কারুর কি কান নাই নূপুর কি শোনে নাই, সবাই কাল গো
কালায় পেয়ে হল হেথায় সবাই কি কালা গো।
তব এ রূপ দেখিতে নারি, হরি আমি ব্রজনারী,
ফিরে চল তব মধুপুর
সেথা সকলি যে মধুময়, অন্তরে মধু বাহিরে মধু
সেথা সকলি যে মধুময় — ফিরে চল হরি মধুপুর।