ভৈরবী

  • তোমার সৃষ্টি মাঝে হরি হেরিতে

    বাণী

    তোমার সৃষ্টি মাঝে হরি হেরিতে যে নিতি পাই তোমায়।
    তোমার রূপের আবছায়া ভাসে গগনে, সাগরে, তরুলতায়॥
    চন্দ্রে তোমার মধুর হাসি, সূর্যে তোমার জ্যোতি প্রকাশ;
    করুণা সিন্ধু তব আভাস বারি-বিন্দুতে হিমকণায়॥
    ফোটা ফুলে হরি, তোমার তনুর গোপী-চন্দন গন্ধ পাই,
    হাওয়ায় তোমার স্নেহের পরশ অন্নে তোমার প্রসাদ খাই।
    রাসবিহারী তোমার রূপ গোলে, দুঃখ শোকের হিন্দোলে,
    তুমি, ঠাঁই দাও যবে ধর কোলে মোর বন্ধু স্বজন কেঁদে ভাসায়॥
    
  • তোমার হাতের সোনার রাখি

    বাণী

    তোমার হাতের সোনার রাখি আমার হাতে পরালে।
    আমার বিফল বনের কুসুম তোমার পায়ে ঝরালে।।
    		খুঁজেছি তোমায় তারার চোখে
    		কত সে-গ্রহে কত সে-লোকে,
    আজ কি তৃষিত মরুর আকাশ বাদল-মেঘে ভরালে।।
    দূর অভিমানের স্মৃতি কাঁদায় কেন আজি গো!
    মিলন-বাঁশি সহসা ওঠে ভৈরবীতে বাজি’ গো!
    		হেনেছ হেলা, দিয়েছ ব্যথা
    		মনে পড়ে আজ কেন সে-কথা,
    মরণ-বেলায় কেন এ গলায় মালার মতন জড়ালে।।
    

  • দাও দাও দরশন পদ্ম-পলাশ লোচন

    বাণী

    দাও দাও দরশন পদ্ম-পলাশ লোচন,
    	কেঁদে দু’ নয়ন হ’ল অন্ধ।
    আকাশ বাতাস ঘেরা, তব ও মন্দির বেড়া
    	আর কতকাল রবে বন্ধ॥
    পাখি যেমন সন্ধ্যাকালে, বন্ধু-স্বজন পালে পালে
    উড়ে এসে ব’সেছিল ডালে হে।
    রাত পোহালে একে এক, উড়ে গেল দিগ্বিদিকে,
    	প’ড়ে আছি একা নিরানন্দ।
    টুটিল বাঁধন মায়ার, কবে শুনিব এবার
    	ও রাঙা চরণ নূপুর ছন্দ॥
    দুখ-শোক রৌদ্রজলে, ফেলে মোরে পলে পলে
    	ছলিতেছ হরি কত ছল হে
    জীবনের বোঝা প্রভু, বহিতে কি হবে তবু
    	সহিতে পারি না আর দ্বন্দ্ব।
    মরণের সোনার ছোঁওয়ায়, ডেকে লও ও রাঙা পায়
    	দেখাও এবার মুখ-চন্দ॥
    
  • দোপাটি লো লো করবী

    বাণী

    দোপাটি লো, লো করবী, নেই সুরভি রূপ আছে
    রঙের পাগল রূপ পিয়াসি সেই ভালো আমার কাছে।।
    	গন্ধ ফুলের জলসাতে তোর
    	গুণীর সভায় নেইকে আদর
    গুল্ম বনে দুল হয়ে তুই, দুলিস একা ফুল গাছে।।
    লাজুক মেয়ে পল্লী বধূ জল নিতে যায় একলাটি
    করবী নেয় কবরীতে বেণীর শেষে দোপাটি
    	গন্ধ ল'য়ে স্নিগ্ধ মিঠে
    	আলো ক'রে থাকিস ভিটে,
    নেই সুবাস, আছে গায়ে কাঁটা, সেই গরবে মন নাচে।।
    
  • না মিটিতে সাধ মোর নিশি পোহায়

    বাণী

    		না মিটিতে সাধ মোর নিশি পোহায়।
    		গভীর আঁধার ছেয়ে আজো হিয়ায়।।
    			আমার নয়ন ভ’রে
    			এখনো শিশির ঝরে,
    		এখনো বাহুর ’পরে বঁধূ ঘুমায়।।
    			এখনো কবরী-মূলে
    			কুসুম পড়েনি ঢুলে,
    		এখনো পড়েনি খুলে’ মালা খোঁপায়।।
    			নিভায়ে আমার বাতি
    			পোহাল সবার রাতি,
    (আমি) 	নিশি জেগে’ মালা গাঁথি, প্রাতে শুকায়।।
    
  • নাইয়া ধীরে চালাও তরণী

    বাণী

    	নাইয়া! ধীরে চালাও তরণী
    	একে ভরা ভাদর তায় বালা মাতোয়ালা মেঘলা রজনী।।
    	হায় পারে নেওয়ার ছলে নিলে মাঝ নদীতে
    	যৌবন-নদী টলমল নারি রোধিতে
    ঐ	ব্যাকুল বাতাস হরি’ নিল লাজ বাস
    তায়	চঞ্চল-চিত যে তুমি চাহ বধিতে
    	পায়ে ধরি ছাড়, বঁধু আমি পরের ঘরের ঘরণী।।
    	তরঙ্গ ঘোর রঙ্গ করে, অঙ্গে লাগে দোল্
    	একি এ নেশার ঘোরে তনু মন আঁখি লোল্।
    	দুলিছে নদী দুলে বায়ু দুলিছে তরী
    	কেমনে থির রাখি মোর চিত উতরোল ।
    	ওঠে ডিঙি পান্‌সি ভরি’ বারি কি করি কিশোরী রমণী।।
    
  • নাচে সুনীল দরিয়া আজি

    বাণী

    নাচে	সুনীল দরিয়া আজি দিল্-দরিয়া পূর্ণিমা চাঁদেরে পেয়ে।
    	কূলে তার ঝুমুর ঝুমুর ঘুঙুর বাজে মিঠে আওয়াজে
    				নাচে জল্-পরীর মেয়ে।।
    	তার জল-ছলছল্ কূলে কূলে
    	ফেনিল যৌবন ওঠে দু’লে,
    	চাঁদিনী উজল্ তনু ঝলমল্
    		পরানে উছল জাগে জোয়ার —
    		আধো ঘুমে আসে তার নয়ন ছেয়ে।।
    	জল-বালা মুক্তা-মালা গাঁথে নিরালা চাঁদের তরে,
    	কাজল-বরণী তরুণী তটিনী চলেছে ধেয়ে।।
    
  • নিশি ভোর হলো জাগিয়া পরান-পিয়া

    বাণী

    নিশি ভোর হলো জাগিয়া, পরান-পিয়া
    কাঁদে ‘পিউ কাহাঁ’ পাপিয়া, পরান-পিয়া।।
    	ভুলি’ বুলবুলি-সোহাগে
    	কত গুল্‌বদনী জাগে
    রাতি গুল্‌সনে যাপিয়া, পরান-পিয়া।।
    	জেগে রয়, জাগার সাথী
    	দূরে চাঁদ, শিয়রে বাতি
    কাঁদি ফুল-শয়ন পাতিয়া, পরান-পিয়া।।
    	গেয়ে গান চেয়ে কাহারে
    	জেগে র’স কবি এপারে
    দিলি দান কারে এ হিয়া, পরান-পিয়া।।
    
  • নিশীথ-স্বপন তোর ভু’লে যা

    বাণী

    নিশীথ-স্বপন তোর ভু’লে যা নিশি-শেষে।
    বাদল-অবসানে আকাশ উঠেছে হেসে।।
    চখার পাশে আসে বিরহ-রাতের চখি
    আঁধার লুকাল ঐ দূর বনে এলোকেশে।।
    শরম-রাঙা গালে জাগিল কুমারী ঊষা,
    তরুণ অরুণ ঐ এসো রাঙা বর-বেশে।।
    
  • প্রভাত বীণা তব বাজে হে

    বাণী

    প্রভাত বীণা তব বাজে হে
    উদার অম্বর মাঝে হে।।
    তুষার কান্তি তব প্রশান্তি
    শুভ্র আলোকে রাজে হে।।
    তব আনন্দিত গভীর বাণী
    শোনে ত্রিভুবন যুক্ত পাণি
    মন্ত্রমুগ্ধ ভাব গঙ্গা নিস্তরঙ্গা লাজে হে।।
    
  • প্রভু রাখ এ মিনতি ত্রিভুবন-পতি

    বাণী

    (প্রভু)		রাখ এ মিনতি ত্রিভুবন-পতি তব পদে মতি।
    		আঁখির আগে যেন সদা জাগে তব ধ্রুব-জ্যোতি।।
    			সংসার মরুমাঝে তুমি মেঘ-মায়া,
    			বিষাদ-শোক তাপে তুমি তরু-ছায়া,
    		সান্ত্বনা দাতা তুমি দুঃখ ত্রাতা অগতির গতি।।
    		জননীর মত আছ ঊর্ধ্বে জাগি
    		জলে স্থলে শূন্যে অগণিত তব দান মোদের লাগি১।
    			ঝঞ্ঝার মাঝে তব বিষাণ বাজে,
    			সহসা ঢলি পড় বনে ফুল-সাজে,
    		কোমলে কঠোরে হে প্রভু বিরাজে তব মহাশক্তি।।
    

    ১. দোলে কালো নিশার কোলে / আলো-উষসী / তিমির তলে তব তিলক জ্বলে / ঐ পূর্ণ শশী।

  • প্রিয় এমন রাত যেন যায় না বৃথাই

    বাণী

    প্রিয় এমন রাত যেন যায় না বৃথাই
    পরি চাঁপা ফুলের শাড়ি খয়েরিটিপ,
    জাগি বাতায়নে জ্বালি আঁখি প্রদীপ,
    মালা চন্দন দিয়ে মোর থালা সাজাই।।
    তুমি আসিবে বলে সুদূর অতিথি
    জাগে চাঁদের তৃষা লয়ে কৃষ্ণা তিথি,
    কভু ঘরে আসিকভু বাহিরে চাই।।
    আজি আকাশে বাতাসে কানাকানি,
    জাগে বনে বনে নবফুলের বাণী,
    আজি আমার কথা যেন বলিতে পাই।।
    
  • ফিরে ফিরে কেন তারই স্মৃতি

    বাণী

    ফিরে ফিরে কেন তারই স্মৃতি
    মোরে কাঁদায় নিতি যে ফিরিবে না আর।
    ফিরায়েছি যা’য় কাঁদাইয়া হায়
    সে কেন কাঁদায় মোরে বারেবার।।
    তারই দেওয়া ফুলমালা, যারে দলিয়াছি পায়
    সেই ছিন্নমালা কুড়ায়ে নিরালা আজি রাখি হিয়ায়।
    বারে বারে ডাকি প্রিয় নাম ধ’রে তা’র।।
    হানি’ অবহেলা যারে দিয়েছি বিদায়
    আজি তারি স্মৃতি, সে কোথায় সে কোথায়।
    জ্বালি’ নয়ন-প্রদীপ জাগি বাতায়নে
    নিশি ভোর হয়ে যায় বৃথা জাগরণে
    আজি স্বর্গ শূন্য মোর তারি বিহনে
    কাঁদি আকাশ বাতাস মোর করে হাহাকার।।
    

  • ফিরে ফিরে দ্বারে আসে যায়

    বাণী

    ফিরে ফিরে দ্বারে আসে যায় কে নিতি।
    তার অধরে হাসি আর নয়নে প্রীতি।।
    দোদুল্ তাহার কায়া ঘনায় চোখে মায়া,
    জেগে ওঠে দেখে তা’য় পুরানো স্মৃতি।।
    তাহার চরণ-পাতে তাহার সাথে সাথে,
    আসে আঁধার রাতে শুক্লা চাঁদের তিথি।।
    গেলে মন দিতে চাহে না সে নিতে,
    ধরিতে গেলে চোখে সে কী তার ভীতি।।
    ডাকি প্রিয় ব’লে তবু যায় সে চ’লে,
    পায়ে পায়ে দ’লে হৃদয় ফুল-বীথি।।
    
  • ফুল-ফাগুনের এলো মরশুম

    বাণী

    ফুল-ফাগুনের এলো মরশুম বনে বনে লাগল দোল্।
    কুসুম-সৌখিন দখিন হাওয়ার চিত্ত গীত-উতরোল।।
    অতনুর ঐ বিষ-মাখা শর নয় ও-দোয়েল শ্যামার শিস্,
    ফোটা ফুলে উঠ্‌ল ভ’রে কিশোরী বনের নিচোল।।
    গুল্‌বাহারের উত্তরী কার জড়াল তরু-লতায়,
    মুহু মুহু ডাকে কুহু তন্দ্রা-অলস, দ্বার খোল।
    রাঙা ফুলে ফুল্ল-আনন দোলে কানন-সুন্দরী,
    বসন্ত তার এসেছে আজ বরষ পরে পথ-বিভোল্।
    
  • বকুল ছায়ে ছিনু ঘুমায়ে গোপন পায়ে

    বাণী

    বকুল ছায়ে ছিনু ঘুমায়ে গোপন পায়ে আসিলে তুমি।
    রাতের শেষে ভোরের মতন ভাঙিলে স্বপন নয়ন চুমি’॥
    ফুলের বুকে মধুর সম আসিলে তুমি আামার প্রাণে
    মরুর বুকে উঠিল ফুটে রঙিন কুসুম বেদন ভুলি’॥
    জাগিয়া হেরি পরান ভরি উঠিতেছে ঢেউ এ কি এ ব্যথার
    বেদনা যত মধুও তত হিয়াতে শরম নয়নে আশার।
    অকালে ফাগুন আগুন শিখায় রাঙিল মনের কানন-ভূমি॥
    
  • বল্লরি-ভুজ-বন্ধন খোলো

    বাণী

    	বল্লরি-ভুজ-বন্ধন খোলো।
    	অভিসার-নিশি অবসান হ’ল।।
    	পান্ডুর চাঁদ হের অস্তাচলে
    	জাগিয়া শ্রান্ত-তনু পড়েছে ঢ’লে,
    তার 	মল্লিকা১ মালা ম্লান বক্ষতলে — 
    	অভিমান-অবনত আঁখি তোলো।।
    	উতল সমীর আমি নিমেষের২ ভুল,
    	কুসুম ঝরাই কভু৩ ফোটাই মুকুল।
    	আলোকে শুকায় মোর প্রেমের শিশির
    	দিনের বিরহ আমি মিলন নিশির,
    	হে প্রিয়, ভীরু এ স্বপন-বিলাসীর — 
    	অকরুণ প্রণয় ভোলো ভোলো।।
    

    ১. মিলনের, ২. ক্ষণিকের, ৩. আমি

  • বাগিচায় বুলবুলি তুই

    বাণী

    বাগিচায়		বুলবুলি তুই ফুল শাখাতে দিসনে আজি দোল
    আজো তার		ফুল কলিদের ঘুম টুটেনি তন্দ্রাতে বিলোল।।
    আজো হায়		রিক্ত শাখায় উত্তরী বায় ঝুরছে নিশি-দিন
    আসেনি		দখনে হাওয়া গজল গাওয়া মোমাছি বিভোল।।
    কবে সে		ফুল কুমারী ঘোমটা চিরি', আসবে বাহিরে (রে)
    শিশিরের		স্পর্শ-সুখে ভাঙবে রে ঘুম রাঙবে রে কপোল।
    ফাগুনের		মুকুল-জাগা দু'কূল ভাঙা আসবে ফুলেল বান
    কুঁড়িদের		ওষ্ঠ পুটে লুটবে হাসি ফুটবে গালে টোল।।
    কবি তুই		গন্ধে ভুলে ' ডুবলি জলে কূল পেলিনে আর
    ফুলে তোর		বুক ভ'রেছিস আজকে জলে ভররে আঁখির কোল।।
    
  • ভবানী শিবানী দশপ্রহরণধারিনী

    বাণী

    ভবানী শিবানী দশপ্রহরণধারিনী
    দুখ-পাপ-তাপ হারিণী ভবানী।।
    কলুষ-রিপু-দানব-জয়ী
    জগৎ-মাতা করুণাময়ী
    জয় পরমাশক্তি মাতা ত্রিলোকধারিণী।।
    

    নাটিকাঃ ‘শ্রীমন্ত’

  • ভোরে স্বপনে কে তুমি দিয়ে দেখা

    বাণী

    	ভোরে স্বপনে কে তুমি দিয়ে দেখা, লুকালে সহসা
    মোর	তপনের রাঙা কিরণ যেন ঘিরিল তমসা।।
    	না ফুটিতে মোর কথার কুড়িঁ
    	চপল বুলবুলি গেলে উড়ি'
    গেলে	ভাসিয়া ভোরের সুর যেন বিষাদ অলসা।।
    	জেগে দেখি হায়, ঝরা ফুলে আছে ছেয়ে তোমার পথতল,
    	ওগো অতিথি, কাদিছেঁ বনভূমি ছড়ায়ে ফুল দল!
    	মুখর আমার গানের পাখি
    	নীরব হলো হায় বারেক ডাকি'
    যেন	ফাগুনের জোছনা-বর্ষিত রাতে নামিল বরষা।।