ভাটিয়ালী

  • আমার গহীন জলের নদী

    বাণী

    আমার		গহীন জলের নদী
    আমি			তোমার জলে ভেসে রইলাম জনম অবধি।।
    ও ভাই		তোমার বানে ভেসে গেল আমার বাঁধা ঘর
    আমি			চরে এসে বস্‌লাম রে ভাই ভাসালে সে চর।
    এখন			সব হারিয়ে তোমার জলে রে আমি ভাসি নিরবধি।।
    			ঘর ভাঙিলে ঘর পাব ভাই ভাঙ্‌লে কেন মন
    ও ভাই		হারালে আর পাওয়া না যায় মনেরি রতন।
    ও ভাই		জোয়ারে মন ফেরে না আর রে ও সে ভাটিতে হারায় যদি।।
    তুমি			যখন ভাঙ রে নদী (ভাঙ যখন কূল রে নদী) ভাঙ একই ধার
    আর			মন যখন ভাঙ রে নদী দুই কূল ভাঙ তার
    ও ভাই		চর পড়ে না মনের কূলে রে
    ও সে			একবার সে ভাঙে যদি, ও ভাই একবার সে ভাঙে যদি।।
    
  • আমি কুল ছেড়ে চলিলাম ভেসে বলিস ননদীরে

    বাণী

    আমি	কুল ছেড়ে চলিলাম ভেসে বলিস ননদীরে সই, বলিস ননদীরে।
    	শ্রীকৃষ্ণ নামের তরণীতে প্রেম-যমুনার তীরে বলিস ননদীরে
    				সই, বলিস্‌ ননদীরে।।
    	সংসারে মোর মন ছিল না, তবু মানের দায়ে
    আমি	ঘর করেছি সংসারেরি শিকল বেঁধে পায়ে
    	শিক্‌লি-কাটা পাখি কি আর পিঞ্জরে সই ফিরে।।
    	বলিস গিয়ে কৃষ্ণ নামের কলসি বেঁধে গলে
    	হডুবেছে রাই কলঙ্কিনী কালিদহের জলে।
    	কলঙ্কেরই পাল তুলে সই, চললেম অকূল-পানে
    	নদী কি সই, থাকতে পারে সাগর যখন টানে।
    	রেখে গেলাম এই গোকুলে কুলের বৌ-ঝিরে।।
    
  • আমি ময়নামতীর শাড়ি দেবো

    বাণী

    আমি ময়নামতীর শাড়ি দেবো, চলো আমার বাড়ি
    ওগো ভিনগেরামের নারী
    তোরে সোনাল ফুলের বাজু দেবো চুড়ি বেলোয়ারি।।
    তোরে বৈঁচী ফুলের পৈঁচী দেবো কলমিলতার বালা,
    রক্ত-শালুক দিবো পায়ে, পরবে আলতা তা'রি।।
    হলুদ-চাঁপার বরণ কন্যা এসো আমার নায়
    সরষে ফুলের সোনার রেণু মাখাবো ওই গায়!
    ঠোঁটে দিবো রাঙা পলাশ মহুয়া ফুলের মউ,
    বকুল-ডালে ডাকবে পাখি, 'বউ গো কথা কও!'
    আমি সব দিবো গো, যা পারি আর যা দিতে না পারি।।
    
  • এ কুল ভাঙ্গে ও কুল গড়ে

    বাণী

    এ-কূল ভাঙে ও-কূল গড়ে এই তো নদীর খেলা।
    সকাল বেলা আমির, রে ভাই (ও ভাই) ফকির, সন্ধ্যাবেলা॥
    সেই নদীর ধারে কোন্ ভরসায়
    বাঁধলি বাসা, ওরে বেভুল, বাঁধলি বাসা, কিসের আশায়?
    যখন ধরলো ভাঙন পেলি নে তুই পারে যাবার ভেলা।
    এই তো বিধির খেলা রে ভাই এই তো বিধির খেলা॥
    এই দেহ ভেঙে হয় রে মাটি, মাটিতে হয় দেহ
    যে কুমোর গড়ে সেই দেহ, তার খোঁজ নিল না কেহ (রে ভাই)।
    রাতে রাজা সাজে নাচমহলে
    দিনে ভিক্ষা মেগে বটের তলে
    শেষে শ্মশান ঘাটে গিয়ে দেখে সবাই মাটির ঢেলা
    এই তো বিধির খেলা রে ভাই ভব নদীর খেলা॥
    
  • ও কুল-ভাঙ্গা নদী রে

    বাণী

    	ও, কুল-ভাঙ্গা নদী রে,
    	আমার চোখের নীর এনেছি মিশাতে তোর নীরে।।
    	যে লোনা জলের সিন্ধুতে নদী, নিতি তব আনাগোনা
    	মোর চোখের জল লাগবে না ভাই তার চেয়ে বেশি লোনা।
    	আমায় কাঁদাতে দেখে আসবিনে তুই রে,
    	উজান বেয়ে ফিরে' নদী, উজান বেয়ে ফিরে'।।
    		আমার মন বোঝে না, নদী —
    তাই	বারে বারে আসি ফিরে তোর কাছে নিরবধি।
    	তোরই অতল তলে ডুবিতে চাই রে,
    		তুই ঠেলে দিস তীরে (ওরে)।।
    
  • ও ভাই আমার এ না’ যাত্রী না লয়

    বাণী

    ও ভাই	আমার এ না’ যাত্রী না লয় ভাঙা আমার তরী।
    আমি		আপনারে ল’য়ে রে ভাই এপার ওপার করি।।
    আমি		এই জলেরি আয়নাতে ভাই দেখেছিলাম তায়
    এখন		আয়না আছে প’ড়ে রে ভাই আয়নার মানুষ নাই।
    তাই		চোখের জলে নদীর জলে রে আমি তারেই খুঁজে মরি।।
    আমি		তারি আশে তরী নিয়ে ঘাটে ব’সে থাকি
    আমার	তারির নাম ভাই জপমালা, তারেই কেঁদে ডাকি।
    আমার	নয়ন-তারা লইয়া গেছে রে নয়ন নদীর জলে ভরি’।।
    ঐ		নদীর জলও শুকায় রে ভাই, সে জল আসে ফিরে
    আর		মানুষ গেলে ফিরে নাকি দিলে মাথার কিরে।
    আমি		ভালোবেসে গেলাম ভেসে গো আমি হলাম দেশান্তরী।।
    
  • ওরে মাঝি ভাই

    বাণী

    				ওরে মাঝি ভাই।
    ও তুই, কি দুখ পেয়ে কূল হারালি অকূল দরিয়ায়॥
    চোখের জল্ তুই ছাপাতে চাস্, নদীর জলে এসে,
    শেষে নদীই এলো চক্ষে রে তোর; তুই চলিলি ভেসে।
    ও তুই কলস দেখে নামলি জলে রে, এখন ডুবে দেখিস্ কলস নাই॥
    	ও তুই কূলে যাহার কূল পেলিনে তরী অগাধ জলে
    	মিছে খুঁজে মরিস ওরে পাগল, তরী বাওয়ার ছলে।
    ও রে দুই ধারে এর চোরা বালি রে, (ও) তোর হেথায় মনের মানুষ নাই॥
    
  • কুঁচবরণ কন্যা রে তার মেঘ-বরণ কেশ

    বাণী

    		কুঁচবরণ কন্যা রে তার মেঘ-বরণ কেশ।
    ওরে		আমায় নিয়ে যাও রে নদী সেই সে কন্যার দেশ রে।।
    		পরনে তার মেঘ-ডম্বুর উদয়-তারার শাড়ি
    ওরে		রূপ নিয়ে তার চাঁদ-সুরুজে করে কাড়াকাড়ি রে
    আমি		তারি লাগি রে
    		আমি তারি লাগি বিবাগী ভাই আমার চির-পথিক বেশ।।
    		পিছ্‌লে পড়ে চাঁদের কিরণ নিটোল তারি গায়ে
    ওরে		সন্ধ্যা-সকাল আসে তারি’ আল্‌তা হতে পায়ে রে।
    ও সে		রয় না ঘরে রে
    ও সে		রয় না ঘরে ঘুরে’ বেড়ায় ময়নামতীর চরে
    তা’রে		দেখ্‌লে মরা বেঁচে ওঠে জ্যান্ত মানুষ মরে রে
    ও সে		জল-তরঙ্গে বাজে রে তার সোনার চুড়ির রেশ।।
    
  • কোন্ বিদেশের নাইয়া তুমি

    বাণী

    স্ত্রীঃ		কোন্ বিদেশের নাইয়া তুমি আইলা আমার গাঁও
    		কুল-বধূর সিনান ঘাটে বাঁধলে তোমার নাও॥
    পুরুষঃ		বাণিজ্যেরই লাইগ্যা কন্যা বেড়াই ভেসে স্রোতে
    		(ওগো) তোমার রূপের হাট দেখলাম যাইতে এই পথে।
    স্ত্রীঃ		বুঝি তাই বাঁশের বাঁশি, তাই দিয়ে কি হে বিদেশি
    		অমূল্য এই মনের মানিক, কিনতে তুমি চাও॥
    পুরুষঃ		তোমায় পাবো বলে আজো শূন্য আমার তরী (রে কন্যা)
    স্ত্রীঃ		অমন করে চাই ও না গো আমি ভয়ে মরি।
    পুরুষঃ		ভয়ে মরার চেয়ে কন্যা ডুবে মরা ভালো
    স্ত্রীঃ		আমার মন ডুবেছে দেখে তোমার নয়ন কাজল কালো (রে বন্ধু)
    উভয়েঃ	নূতন প্রেমের যাত্রী দু’জন ছোট্ট মোদের নাও
    		ওরে গহীন জলের আকুল জোয়ার অকূলে ভাসাও 
    		মোদের অকূলে ভাসাও॥
    
  • তোর রূপে সই গাহন ক’রে জুড়িয়ে গেল গা

    বাণী

    তোর রূপে সই গাহন ক’রে জুড়িয়ে গেল গা
    তোর গাঁয়েরি নদীর ঘাটে বাঁধলাম এ মোর না।।
    	তোর চরণের আলতা লেগে
    	পরান আমার উঠল রেঙে (রে)
    ও তোর বাউরি কেশের বিনুনীতে জড়িয়ে গেল পা।
    তোর বাঁকা ভুরু বাঁকা আঁখি বাঁকা চলন, সই,
    দেখে পটে আঁকা ছবির মতন দাঁড়িয়ে পথে রই।
    	উড়ে এলি’ দেশান্তরী
    	তুই কি ডানা-কাটা পরী (রে)
    তুই শুকতারারি সতিনী সই সন্ধ্যাতারার জা’।।
    
  • তোমায় কূলে তুলে বন্ধু আমি নামলাম জলে

    বাণী

    		তোমায় কূলে তুলে বন্ধু আমি নামলাম জলে।
    আমি		কাঁটা হয়ে রই নাই বন্ধু তোমার পথের তলে॥
    আমি		তোমায় ফুল দিয়েছি কন্যা তোমার বন্ধুর লাগি’
    		যদি আমার শ্বাসে শুকায় সে ফুল তাই হলাম বিবাগী।
    		আমি বুকের তলায় রাখি তোমায় গো, ওরে শুকায়নি ক’ গলে॥
    (ওই)		যে-দেশ তোমার ঘর্‌ রে বন্ধু সে দেশ হতে এসে,
    আমার	দুখের তরী দিছি ছেড়ে, (বন্ধু) চলতেছে সে ভেসে।
    এখন		যে-পথে নাই তুমি বন্ধু গো, তরী সেই পথে মোর চলে॥
    
  • তোমার আসার আশায় দাঁড়িয়ে থাকি

    বাণী

    তোমার আসার আশায় দাঁড়িয়ে থাকি একলা বালুচরে
    নদীর পানে চেয়ে চেয়ে মন যে কেমন করে।।
    অনেক দূরে তরী বেয়ে আসে যদি কেউ,
    আমার বুকে দুলে ওঠে উজান নদীর ঢেউ;
    নয়ন মুছে চেয়ে দেখি সে গিয়েছে স'রে।।
    আঁচল-ঢাকা ফুলগুলিও শুকায় বুকের তলে
    ঘরে ফিরি গাগরি মোর ভ'রে নয়ন জলে।
    বিদেশে তো যায় অনেকে আবার ফিরে আসে,
    কপাল দোষে তুমি শুধু রইলে পরবাসে;
    অধীর নদী রোদন বাজে বুকের পিঞ্জরে।।
    

  • দুধে আলতায় রঙ যেন তার

    বাণী

    দুধে আলতায় রঙ যেন তার সোনার অঙ্গ ছেয়ে
    		(সে) ভিন্ গেরামের মেয়ে।
    চাঁদের কথা যায় ভুলে লোক তাহার মুখে চেয়ে,
    		ভিন্ গেরামের মেয়ে।
    ও পারে ওই চরে যখন চুল খুলে সে দাঁড়ায়,
    কালো মেঘের ভিড় লেগে যায় আকাশের ওই পাড়ায়,
    পা ছুঁতে তার নদীর জলে (ও ভাই) জোয়ার আসে ধেয়ে।।
    চোখ তুলে সে মেঘের পানে ভুরু যখন হানে,
    অম্‌নি ওঠে রামধনু গো সেই চাহনির টানে।
    কপালের সে ঘাম মুছে গো আঁচল যখন খুলে,
    ধানের ক্ষেতে ঢেউ খেলে যায়, দরিয়া ওঠে দুলে।
    আমি চোখের জলে খুঁজি তারেই (ও ভাই) দুখের তরী বেয়ে।।
    
  • পিয়াল ফুলের পিয়ালায় বঁধু

    বাণী

    পিয়াল ফুলের পিয়ালায় বঁধু অন্তর-মধু ঢেলে পিয়াব তোমায়।
    রচিব হৃদয়ে মাধবী-কুঞ্জ বাহিরে ফাগুন যদি যেতে চায়।।
    		বেল-ফুল যায় যদি ঝুরে
    		প্রেম-ফুল দিব ডালি ভ’রে,
    নিশি জেগে আমি গান শোনাব বনের বিহগ যদি মাগে বিদায়।।
    		আর যদি নাহি বহে দখিনা বাতাস
    	(বঁধু)	অঞ্চল আছে মোর, আছে কেশ-পাশ,
    যায় যদি যাক্ ডুবে চৈতালী চাঁদ আমার চাঁদ যেন চ’লে নাহি যায়।
    
  • পুবান হাওয়া পশ্চিমে যাও কাবার পথে বইয়া

    বাণী

    		পুবান হাওয়া পশ্চিমে যাও কাবার পথে বইয়া
    		যাও রে বইয়া এই গরিবের সালামখানি লইয়া।।
    		কাবার জিয়ারতের আমার নাই সম্বল ভাই
    		সারা জনম সাধ ছিল যে মদিনাতে যাই (রে ভাই)
    		মিটল না সাধ, দিন গেল মোর দুনিয়ার বোঝা বইয়া।।
    (তোমার)	পানির সাথে লইয়া যাও রে আমার চোখের পানি
    		লইয়া যাও রে এই নিরাশের, দীর্ঘ নিশাসখানি।
    		নবীজীর রওজায় কাঁদিও ভাই রে আমার হইয়া।।
    		মা ফাতেমা হজরত আলীর মাজার যথায় আছে
    আমার	সালাম দিয়া আইস তাদের পায়ের কাছে (রে ভাই!)
    		কাবায় মোনাজাত করিও আমার কথা কইয়া।।
    
  • বন্ধু রে বন্ধু — পরান বন্ধু

    বাণী

    		বন্ধু রে, বন্ধু — পরান বন্ধু
    আমার	দূরের বন্ধু আছে আমার ঐ গাঙের পারের গাঁয়ে।
    		ঝরা-পাতর পত্র আমার যায় ভেসে তার পায়ে।।
    			জানি জানি আমার দেশে
    			আমার নেয়ে আসবে ভেসে,
    ওরে		চির ঋণী আছে সে যে আমার প্রেমের দায়ে।।
    		নূতন আশার পাল তু সে আসবে ফিরে ঘরে
    		ফুটেছে তাই কাশ-কুসুমের হাসি শুকনো চরে।
    			পিদমি জ্বেলে তারি আশায়
    			গহীন গাঙের স্রোতে ভাসায়
    ওরে		ঐ পিদিমের পথ ধ'রে সে আসবে সোনার নায়ে।।
    
  • বাঁশি বাজায় কে কদম তলায়

    বাণী

    বাঁশি বাজায় কে কদম তলায় ওলো ললিতে
    শুনে সরে না পা পথ চলিতে।।
    তার বাঁশির ধ্বনি যেন ঝুরে ঝুরে
    আমারে খোঁজে লো ভুবন ঘুরে
    (ওসে) কি যেন চাহে মোরে বলিতে।।
    আছে গোকুল নগর আরো কত নারী
    কত রূপবতী বৃন্দাবন-কুমারী
    	আছে গোকুল নগরে।
    কেন আমারি নাম লয়ে বংশীধারী
    আসে নিতি-নিতি মোরে ছলিতে।
    সখি নির্মল কুলে মোর কৃষ্ণ -কালি
    কেন লাগালে কালিয়া বনমালী
    আমার বুকে দিল তুষের আগুন জ্বালি
    আরো কত জনম যাবে জ্বলিতে।।
    
  • যখন আমার কুসুম ঝরার বেলা তখন তুমি এলে

    বাণী

    যখন আমার কুসুম ঝরার বেলা তখন তুমি এলে
    ভাটির স্রোতে ভাসলো যখন ভেলা পারের পথিক এলে।।
    	আঁধার যখন ছাইল বনতল
    	পথ হারিয়ে এলে হে চঞ্চল
    দীপ নিভাতে এলে হে বাদল ঝড়ের পাখা মেলে।।
    শূন্য যখন নিবেদনের থালা তখন তুমি এলে
    শুকিয়ে যখন ঝরল বরণ-মালা তখন তুমি এলে।
    	নিরশ্রু এই নয়ন পাতে
    	শেষ পূজা মোর আজকে রাতে
    নিবু নিবু প্রাণ শিখাতে আরতি দীপ জ্বেলে।।