শ্যামা-সঙ্গীত

  • ওমা তোর ভুবনে জ্বলে এত আলো

    বাণী

    (মা)	ওমা তোর ভুবনে জ্বলে এত আলো
    	আমি কেন অন্ধ মাগো দেখি শুধু কালো॥
    মা	সর্বলোকে শক্তি ফিরিস নাচি
    	ওমা আমি কেন পঙ্গু হয়ে আছি
    	ওমা ছেলে কেন মন্দ হল জননী যার ভালো॥
    	তুই নিত্য মহা প্রসাদ বিলাস কৃপার দুয়ার খুলি
    	চির শুন্য রইল কেন আমার ভিক্ষা ঝুলি।
    	বিন্দু বারি পেলাম না মা সিন্ধুজলে রয়ে
    মা	ও তোর চোখের কাছে পড়ে আছি চোখের বালি হয়ে
    	মোর জীবন্মৃত এই দেহে মা চিতার আগুন জ্বালো॥
    
  • ওমা নির্গুণেরে প্রসাদ দিতে

    বাণী

    ওমা	নির্গুণেরে প্রসাদ দিতে তোর মত কেউ নাই।
    তোর	পায়ে মা তাই রক্তজবা গায়ে শ্মশান-ছাই।।
    		দৈত্য-অসুর হনন ছলে
    		ঠাঁই দিস্ তুই চরণ তলে,
    আমি	তামসিকের দলে মা গো তাই নিয়েছি ঠাঁই।।
    	কালো ব’লে গৌরী তোরে কে দিয়েছে গালি,
    (ওমা)	ত্রিভুবনের পাপ নিয়ে তোর অঙ্গ হ’ল কালি।
    		অপরাধ না করলে শ্যামা
    		ক্ষমা যে তোর পেতাম না মা,
    (আমি)	পাপী ব’লে আশা রাখি চরণ যদি পাই।।
    
  • ওরে আজই না হয় কালই তোরে

    বাণী

    ওরে		আজই না হয় কালই তোরে কালী কালী বল্‌তে হবে।
    তুই 		কাঁদ্‌বি ধ’রে কালীর চরণ মহাকাল আসিবে যবে।।
    		তুই জন্মের আগে ছিলি শিখে মা বল্‌তে মা কালীকে,
    তুই 		ভুল্‌লি আদি-জননীকে দু’দিন মা পেয়ে ভবে।।
    তুই 		কালি দিয়ে লিখ্‌লি হিসাব কেতাব-পুঁথি শিখ্‌লি পড়া,
    তোর		মাঠে ফসল ফুল্ ফুটালো কালো মেঘের কালি-ঝরা।
    		তোর চোখে জ্বলে কালীর কালো তাই জগতে দেখিস্ আলো,
    (কালি)	প্রসাদ গুণে সেই আলো তুই হৃদ্‌পদ্মে দেখ্‌বি কবে।।
    
  • করুণা তোর জানি মাগো আসবে শুভদিন

    বাণী

    		করুণা তোর জানি মাগো আসবে শুভদিন।
    		হোক না আমার চরম ক্ষতি থাক না অভাব ঋণ।।
    			আমায় ব্যথা দেওয়ার ছলে
    			টানিস্ মা তোর অভয় কোলে,
    		সন্তানে মা দুঃখ দিয়ে রয় কি উদাসীন।।
    (তোর)	কঠোরতার চেয়ে বেশি দয়া জানি ব’লে,
    		ভয় যত মা দেখাস্ তত লুকাই তোরই কোলে।
    			সন্তানে ক্লেশ দিস্ যে এমন
    			হয়ত মা তার আছে কারণ,
    তুই		কাঁদাস্ ব’লে বল্‌ব কি মা হ’লাম মাতৃহীন।।
    
  • কালো মেয়ের পায়ের তলায়

    বাণী

    		কালো মেয়ের পায়ের তলায় দেখে যা আলোর নাচন।
    (তার)		রূপ দেখে দেয় বুক পেতে শিব যার হাতে মরণ বাঁচন।।
    			কালো মায়ের আঁধার কোলে
    			শিশু রবি শশী দোলে
    (মায়ের)	একটুখানি রূপের ঝলক স্নিগ্ধ বিরাট নীল–গগন।।
    		পাগলী মেয়ে এলোকেশী নিশীথিনীর দুলিয়ে কেশ
    		নেচে বেড়ায় দিনের চিতায় লীলার রে তার নাই কো শেষ।
    			সিন্ধুতে মা’র বিন্দুখানিক
    			ঠিকরে পড়ে রূপের মানিক
    		বিশ্বে মায়ের রূপ ধরে না মা আমার তাই দিগ্‌–বসন।।
    

  • কে তোরে কি বলেছে মা

    বাণী

    কে	তোরে কি বলেছে মা ঘুরে বেড়াস কালি মেখে
    ওমা	বরাভয়া ভয়ঙ্করী সাজ পেলি তুই কোথা থেকে।।
    	তোর এলাকেশে প্রলয় দোলে
    	আমি চিনতে নারি গৌরী বলে।
    ওমা	চাঁদ লুকাল মেঘের কোলে তোর মুখে না হাসি দেখে।।
    ওমা	শঙ্কর কি গঙ্গা নিয়ে,কাঁদায় তোরে দুঃখ দিয়ে
    ওমা	শিবানী তোর চরণ তলে এনেছি তাই শিবকে ডেকে।।
    
  • কে বলে মোর মাকে কালো

    বাণী

    কে বলে মোর মাকে কালো, মা যে আমার জ্যোতির্মতী।
    কোটি চন্দ্র সূর্য তারা নিত্য করে যার আরতি।।
    	কালো রূপের মায়া দিয়ে
    	মহামায়া রয় লুকিয়ে,
    মায়ের শুভ্ররূপ দেখেছে শুভ্র শুচি যার ভকতি।।
    যোগীন্দ্র যাঁর চরণ-তলে ধ্যান করে রে যাঁর মহিমা,
    দু’টি নয়ন-প্রদীপ জ্বেলে খুঁজি সেই অসীমার সীমা।
    	সাজিয়ে কালী গৌরী মাকে
    	পূজা করি তমসাকে,
    মায়ের শুভ্ররূপ দেখেছে শুভ্র শুচি যার ভকতি।।
    
  • চোখের বাঁধন খুলে দে মা

    বাণী

    		চোখের বাঁধন খুলে দে মা খেলব না আর কানামাছি।
    আমি		মার খেতে আর পারি না মা এবার বুড়ি ছুঁয়ে বাঁচি।।
    			তুই পাবি অনেক মেয়ে ছেলে
    			যাদের সাধ মেটেনি খেলে খেলে,
    তুই		তাদের নিয়েই খেল না মা গো শ্রান্ত আমি রেহাই যাচি।
    		দুঃখ-শোক-ঋণ-অভাব ব্যাধি মায়ার খেলুড়িরা মিলে,
    		শত দিকে শত হাতে আঘাত হানে তিলে তিলে।
    			চোর হয়ে মা আর কত দিন 
    			ঘুরব ভবে শান্তিবিহীন,
    তোর		অভয় চরণ পাই না কেন মা তোর এত কাছে আছি।।
    
  • জগৎ জুড়ে জাল ফেলেছিস্ মা

    বাণী

    জগৎ জুড়ে জাল ফেলেছিস্ মা, শ্যামা কি তুই জেলের মেয়ে।
    (তোর) মায়ার জালে মহামায়া, বিশ্বভুবন আছে ছেয়ে॥
    	প’ড়ে মা তোর মায়ার ফাঁদে 
    	কোটি নরনারী কাঁদে;
    তোর মায়াজাল ততই বাঁধে পালাতে চায় যত ধেয়ে॥
    চতুর যে-মীন সে জানে মা জাল থেকে যে মুক্তি আছে;
    (তাই)	জেলে যখন জাল ফেলে মা সে লুকায় জেলের পায়ের কাছে।
    	জাল এড়িয়ে তাই সে বাঁচে।
    	তাই মা আমি নিলাম শরণ
    	তোর ও দুটি রাঙা চরণ,
    এড়িয়ে গেলাম মায়ার বাঁধন মা তোর অভয়-চরণ পেয়ে॥
    
  • জ্বালো দেয়ালি জ্বালো

    বাণী

    জ্বালো দেয়ালি জ্বালো
    অসীম তিমিরে শ‍্যামা মা যে অযুত কোটি আলো।।
    	এলো শক্তি অশিব নাশিনী
    	এলো অভয়া চির বিজয়িনী
    কালো রূপের স্নিগ্ধ লাবনি নয়ন মন জুড়ালো।।
    গ্রহ তারার দেওয়ালি জলিছে পবনে
    জ্বালো দীপালি জীবনের সব ভবনে।
    	এলো শিবানী প্রাণ দিতে সবে
    রক্ষা করিতে পীড়িত মানবে ধরাবে বাসিতে ভালো।।
    
  • তুই কালি মেখে জ্যোতি ঢেকে

    বাণী

    তুই কালি মেখে জ্যোতি ঢেকে পারবি না মা ফাঁকি দিতে।
    ঐ অসীম আঁধার হয় যে উজল মা, তোর ঈষৎ চাহনিতে।।
    		মায়ের কালি মাখা কোলে
    		শিশু কি মা, যেতে ভোলে?
    আমি দেখেছি যে, বিপুল স্নেহের সাগর দোলে তোর আঁখিতে।।
    কেন আমায় দেখাস মা ভয় খড়গ নিয়ে, মুন্ডু নিয়ে?
    আমি কি তোর সেই সন্তান ভুলাবি মা ভয় দেখিয়ে।
    		তোর সংসার কাজে শ্যামা,
    		বাধা আমি হব না মা,
    মায়ার বাঁধন খুলে দে মা ব্রহ্মময়ী রূপ দেখিতে।।
    
  • তোর কালো রূপ দেখতে মাগো

    বাণী

    (মাগো)	তোর কালো রূপ দেখতে মাগো, কাল্ হ’ল মোর আঁখি,
    		চোখের ফাঁকে যাস পালিয়ে মা তুই কালো পাখি॥
    আমার		নয়ন দুয়ার বন্ধ ক’রে এই দেহ পিঞ্জরে,
    		চঞ্চলা গো বুকের মাঝে রাখি তোরে ধ’রে;
    		চোখ্ চেয়ে তাই খুঁজে বেড়াই পাই না ভুবন ভ’রে
    		সাধ যায় মা জন্ম জন্ম অন্ধ হ’য়ে থাকি॥
    		কালো রূপের বিজলি চমক কোটি লোকের জ্যোতি,
    		অনন্ত তোর কালোতে মা সকল আলোর গতি।
    		তোর কালো রূপ কে বলে মা ‘তমঃ’,
    		ঐ রূপে তুই মহাকালি মাগো নমঃ নমঃ
    তুই		আলোর আড়াল টেনে মাগো দিস্ না মোরে ফাঁকি॥
    
  • তোর কালো রূপ লুকাতে মা

    বাণী

    তোর কালো রূপ লুকাতে মা বৃথাই আয়োজন।
    ঢাকতে নারে ও রূপ, কোটি চন্দ্র তপন।।
    	মাখিয়ে আলো আমার চোখে
    	লুকিয়ে রাখিস তোর কালোকে,
    তোর অতল কালো রূপে মাগো বিশ্ব নিমগন।।
    আঁধার নিশীথ সে যেন তোর কালো রূপের ধ্যান
    তোর গহন কালোয় গাহন ক’রে জুড়ায় ধরার প্রাণ।
    হেরি তোর কালো রূপ স্নিগ্ধ-করা
    	শ্যামা হ’ল বসুন্ধরা,
    নিবল কোটি সূর্য, তোরে খুঁজে অনুক্ষণ।।
    
  • ত্রিজগত আলো করে আছে

    বাণী

    	ত্রিজগত আলো করে আছে কালো মেয়ের পায়ের শোভা।
    	মহাভাবে বিভোর শঙ্কর, ঐ পা জড়িয়ে মনোলোভা।।
    	দলে দলে গগন বেয়ে গ্রহ তারা এলো ধেয়ে,
    ঐ	চরণ শোভা দেখবে বলে, ঐ পায়ের নূপুর হওয়ার ছলে
    সেই	শোভা কেমন বলতে গিয়ে ব্রহ্ম হলো চিরমৌনী বোবা।।
    ঐ	চরণ শোভা দেখার তরে, যোগী থাকেন ধেয়ান ধ'রে
    	ত্রিভুবন ভুলে অনন্তকাল যোগী থাকেন ধেয়ান ধ'রে।
    	ও শুধু চরণ শোভা নয়, ঐ যে পরব্রহ্ম জ্যোতি
    	শ্রী চণ্ডী বেদ পুরাণে ওরই প্রেম-আরতি
    মা	দেখ্‌ত যদি নিজের চরণ নিজেই দিত বিল্বজবা
    	আপনার ঐ রাঙা পায়ে নিজেই দিত বিল্বজবা।।
    
  • দেখে যারে রুদ্রাণী মা সেজেছে আজ ভদ্রকালী

    বাণী

    দেখে যারে রুদ্রাণী মা সেজেছে আজ ভদ্রকালী।
    শ্রান্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছে শ্মশান মাঝে শিব-দুলালী॥
    	আজ শান্ত সিন্ধু তীরে
    	অশান্ত ঝড় থেমেছে রে,
    মা’র কালো রূপ উপ্‌চে পড়ে ছাপিয়ে ভুবন গগন-ডালি॥
    আজ অভয়ার ওষ্ঠে জাগে শুভ্র করুণ শান্ত হাসি,
    আনন্দে তাই বসন ফেলি’ মহেন্দ্র ঐ বাজায়-বাঁশি,
    	ঘুমিয়ে আছে বিশ্ব ভুবন
    	মায়ের কোলে শিশুর মতন,
    পায়ের লোভে মনের বনে ফুল ফুটেছে পাঁচমিশালি॥
    
  • বল রে জবা বল

    বাণী

    বল্‌ রে জবা বল্ —
    কোন্ সাধনায় পেলি শ্যামা মায়ের চরণতল।।
    মায়া–তরুর বাঁধন টু’টে মায়ের পায়ে পড়লি লু’টে
    মুক্তি পেলি, উঠলি ফুটে আনন্দ–বিহ্বল।
    তোর সাধনা আমায় শেখা (জবা) জীবন হোক সফল।।
    কোটি গন্ধ –কুসুম ফোটে, বনে মনোলোভা —
    কেমনে মা’র চরণ পেলি, তুই তামসী জবা।
    তোর মত মা’র পায়ে রাতুল হবো কবে প্রসাদী ফুল,
    কবে উঠবে রেঙে —
    ওরে মায়ের পায়ের ছোঁয়া লেগে উঠবে রেঙে,
    কবে তোরই মতো রাঙবে রে মোর মলিন চিত্তদল।।
    
  • ভিখারিনী করে পাঠাইলি মোরে

    বাণী

    	ভিখারিনী করে পাঠাইলি মোরে, (মাগো) কি দিয়ে পূজিব বল।
    	হাতে আছে শুধু শূন্য প্রণাম, চোখে আছে শুধু জল।।
    	পূজা ধূপ নাই, চন্দন নাই, মাগো, লাজে মরি দিতে ভয় পাই
    	চুরি করে আনা দুটি জবা ফুল, একটি বিল্বদল।।
    তোর	ধনী ছেলে মেয়ে ঘটা করে তোর পূজা করে কত রূপে,
    মাগো	ভিখারি মেয়ের বেশে তুই কেন দাঁড়াইলি এসে, মোর কাছে চুপে চুপে
    	কিছু নাই মাগো হাতে দিতে তোর, শুধু নামখানি সম্বল মোর,
    যদি	চাস তুই ঐ রাঙা পায়ে দিব নামের সে শতদল।।
    
  • ভুল করেছি ওমা শ্যামা

    বাণী

    		ভুল করেছি ওমা শ্যামা বনের পশু বলি দিয়ে।
    (তাই)		পূজিতে তোর রাঙা চরণ এলাম মনের পশু নিয়ে॥
    			তুই যে বলিদান চেয়েছিস
    			কাম-ছাগ, ক্রোধ-রূপী মহিষ,
    		মা তোর পায়ে দিলাম লোভের জবা মোহ-রিপুর ধূপ জ্বালিয়ে॥
    মাগো		দিলাম হৃদয়-কমন্ডলুর মদ-সলিল তোর চরণে,
    		মাৎসর্য্যের পূর্ণাহুতি দিলাম পায়ে পূর্ণ মনে।
    			ষড় রিপুর উপচারে
    			যে পূজা চাস্ মা বারে বারে
    		সেই পূজারই মন্ত্র মাগো ভক্তরে তোর দে শিখিয়ে॥
    
  • মহাকালের কোলে এসে

    বাণী

    	মহাকালের কোলে এসে গৌরী হ’ল মহাকালী,
    	শ্মশান–চিতার ভস্ম মেখে ম্লান হ’ল মার রূপের ডালি।।
    		তবু মায়ের রূপ কি হারায়
    	সে যেছড়িয়ে আছে চন্দ্র তারায়,
    	মায়ের রূপের আরতি হয় নিত্য সূর্য–প্রদীপ জ্বালি’ ।।
    	উমা হ’ল ভৈরবী হায় বরণ ক’রে ভৈরবেরে,
    হেরি’	শিবের শিরে জাহ্নবী রে শ্মশানে মশানে ফেরে।
    		অন্ন দিয়ে ত্রি–জগতে
    		অন্নদা মোর বেড়ায় পথে,
    	ভিক্ষু শিবের অনুরাগে ভিক্ষা মাগে রাজদুলালী।।
    
  • মা আমি তোর অন্ধ ছেলে

    বাণী

    মা! আমি তোর অন্ধ ছেলে হাত ধ’রে মোর নিয়ে যা মা।
    পথ নাহি পাই যেদিকে চাই দেখি আঁধার ঘোর ত্রিযামা।।
    	আমি নিজে পথ চলিতে যাই
    	বারে বারে পথ ভুলি মা তাই
    মায়া-কূপে পড়ে কাঁদি কোথায় দয়াময়ী শ্যামা।।
    মা তুই যবে হাত ধ’রে চলিস্ রয় না পতন-ভয়,
    তুই যবে পথ দেখাস্ মা গো সে পথ জ্যোতির্ময়।
    	কি হবে জ্ঞান-প্রদীপ নিয়ে সাথে
    	বৃথা এ দীপ জন্মান্ধের হাতে
    তুই যদি হ’স নির্ভর মোর পথের ভয় আর রবে না মা।।