বাণী

তোমার আঁখির মত আকাশের দু’টি তারা
চেয়ে থাকে মোর পানে নিশীথে তন্দ্রাহারা
		সে কি তুমি? সে কি তুমি??
ক্ষীণ আঁখি–দীপ জ্বালি’ বাতায়নে জাগি একা,
অসীম অন্ধকারে খুঁজি তব পথ রেখা;
সহসা দখিনা বায়ে চাঁপা–বনে জাগে সাড়া।
		সে কি তুমি? সে কি তুমি??
বৈশাখী–ঝড়ের রাতে চমকিয়া উঠি জেগে’
বুঝি অশান্ত মম আসিলে ঝড়ের বেগে,
ঝড় চ’লে যায় কেঁদে ঢালিয়া শ্রাবণ ধারা
		সে কি তুমি? সে কি তুমি??

বাণী

যবে		তুলসীতলায় প্রিয় সন্ধ্যাবেলায় তুমি করিবে প্রণাম,
তব		দেবতার নাম নিতে ভুলিয়া বারেক প্রিয় নিও মোর নাম।।
		একদা এমনি এক গোধূলি বেলা
		যেতেছিলে মন্দির-পথে একেলা,
		জানি না কাহার ভুল তোমার পূজার ফুল
				আমি লইলাম —
সেই		দেউলের পথ সেই ফুলেরই শপথ
প্রিয়,		তুমি ভুলিলে হায় আমি ভুলিলাম।।
		পথের দুঁধারে সেই কুসুম ফোটে — হায় এরা ভোলেনি,
		বেঁধেছিলে তরু শাখে লতার যে ডোর হের আজো খোলেনি।
		একদা যে নীল নভে উঠেছিল চাঁদ
ছিল		অসীম আকাশ ভরা অনন্ত সাধ,
আজি		অশ্রু-বাদল সেথা ঝরে অবিরাম।।

বাণী

কোকিল, সাধিলি কি বাদ।
নিশি অবসান হল না মিটিতে সাধ।।
	মিলনের মোহ কেন
	ডাকিয়া ভাঙিলি হেন,
তুই রে সতিনী যেন — চন্দ্রাবলীর ফাঁদ।।
	সারা নিশি অভিমানে
	চাহিনি শ্যামের পানে,
জেগে দেখি কুহু-তানে — নাহি শ্যামচাঁদ।।
	ননদিনী কুটিলা কি
	পাঠায়েছে তোরে পাখি,
সুরের বাসরে ডাকি’ — আনিলি বিষাদ।।

বাণী

(যখন)		প্রেমের জ্বালায় অঙ্গ জ্বলে, জুড়াই জ্বালা গজলে।
		ছাতা দিয়ে মারি খোঁচা যেন সুরের বগলে॥
		সিঁড়ির ধারে পিঁড়ি পেতে বিড়ি বাঁধি হায় কলকাতায়,
		মিলন আশার তামাক ঠাসি হায় বিরহের শাল পাতায়,
		[‘‘আরে লুল্লু আট পয়সার বিড়ি কিনে লিস্‌রে হাঁ হাঁ”]
		জালিম বিবির দিলের ছিপি (দাদা) খুলি সুরের ফজলে॥
		কার্ফা তালে চার পা তুলে (হায়) ছুটাই তালের লাল ঘোড়া,
		ভজুয়া নাত্‌নি ছুটে আসে হায় ফেলে দিয়ে হায় ঝালবড়া;
		সুরে-তালে লাগে লড়াই যেন পাঠান মোগলে॥

বাণী

নূপুর মধুর রুনুঝুনু বোলে।
মন-গোকুলে রুনুঝুনু বোলে।।
	কূলের বাঁধন টুটে,
	যমুনা উথলি' ওঠে,
পুলকে কদম ফোটে পেখম খোলে
	শিখী পেখম খোলে।।
ব্রজনারী কুল ভুলে'
	লুটায় সে পদমুলে
চোখে জল, বুকে প্রেম- তরঙ্গ দোলে।।
	শ্রীমতি রাধারই সাথে
	বিশ্ব ছুটেছে পথে,
হরি হরি ব'লে মাতে ত্রিভুবন ভোলে।
	নামে ত্রিভুবন ভোলে।।

বাণী

কোথায় তুই খুঁজিস ভগবান্, সে যে রে তোরই মাঝে রয়,
			চেয়ে দেখ সে তোরই মাঝে রয়।
সাজিয়া যোগী ও দরবেশ খুঁজিস্ যায় পাহাড় জঙ্গলময়।।
আঁখি খোল্ ইচ্ছা-অন্ধের দল নিজেরে দেখ্ রে আয়নাতে,
দেখিবি তোরই এই দেহে নিরাকার তাঁহার পরিচয়।।
ভাবিস্ তুই ক্ষুদ্র কলেবর, ইহাতেই অসীম নীলাম্বর,
এ দেহের আধারে গোপন রহে সে বিশ্ব-চরাচর।
প্রাণে তোর প্রাণের ঠাকুর বেহেশ্‌তে স্বর্গে কোথাও নয়।।
এই তোর মন্দির-মসজিদ এই তোর কাশী-বৃন্দাবন,
আপনার পানে ফিরে চল কোথা তুই তীর্থে যাবি, মন!
এই তোর মক্কা-মদিনা, জগন্নাথ-ক্ষেত্র এই হৃদয়।।