অনাদি কাল হতে অনন্তলোক
বাণী
অনাদি কাল হতে অনন্তলোক গাহে তোমারি জয়। আকাশ–বাতাস রবি–গ্রহ তারা চাঁদ, হে প্রেমময়।। সমুদ্র–কল্লোল নির্ঝর–কলতান – হে বিরাট, তোমার উদার জয়গান; ধ্যান গম্ভীর কত শত হিমালয় গাহে তোমারি জয়।। তব নামের বাজায় বীণা বনের পল্লব জনহীন প্রান্তর স্তব করে, নীরব। সকল জাতির কোটি উপাসনালয় গাহে তোমারি জয়।। আলোকের উল্লাসে, আঁধারের তন্দ্রায় তব জয়গান বাজে অপরুপ মহিমায়, কোটি যুগ–যুগান্ত সৃষ্টি প্রলয় গাহে তোমারি জয়।।
অয়ি চঞ্চল-লীলায়িত-দেহা চির-চেনা
বাণী
অয়ি চঞ্চল-লীলায়িত-দেহা চির-চেনা ফোটাও মনের বনে তুমি বকুল হেনা।। যৌবন-মদ গর্বিতা তন্বী আননে জ্যোৎস্না, নয়নে বহ্নি, তব চরণের পরশ বিনা অশোক তরু মুঞ্জরে না।। নন্দন-নন্দিনী তুমি দয়িতা চির-আনন্দিতা, প্রথম কবির প্রথম লেখা তুমি কবিতা। নৃত্য শেষের তব নুপুরগুলি হায় রয়েছে ছড়ানো আকাশের তারকায় সুর-লোক-উর্বশী হে বসন্ত-সেনা ! চির-চেনা।।
অ-মা! তোমার বাবার নাকে
বাণী
অ-মা! তোমার বাবার নাকে কে মেরেছে ল্যাং? খাঁদা নাকে নাচ্ছে ন্যাদা-নাক ডেঙাডেং-ড্যাং! ওঁর নাক্টাকে কে করল খ্যাঁদা র্যাঁদা বুলিয়ে? চাম্চিকে-ছা ব’সে যেন ন্যাজুড় ঝুলিয়ে! বুড়ো গুরুর টিকে যেন শুয়ে কোলা ব্যাং! অ-মা! আমি হেসে মরি, নাক ডেঙাডেং-ড্যাং! ওঁর খ্যাঁদা নাকের ছেঁদা দিয়ে টুকিকে দেয় ‘টু’! ছোড়্দি’ বলে সর্দি ওটা, এ রাম! ওয়াক্! থুঃ কাছিম যেন উপুড় হয়ে ছড়িয়ে আছেন ঠ্যাং! অ-মা! আমি হেসে মরি, নাক ডেঙাডেং-ড্যাং! দাদু বুঝি চীনাম্যান মা, নাম বুঝি চ্যাংচু? তাই বুঝি ওঁর মুখ্টা অমন চ্যাপ্টা সুধাংশু! জাপান দেশের নোটিশ উনি নাকে এঁটেছেন! অ-মা! আমি হেসে মরি, নাক ডেঙাডেং-ড্যাং! দাদুর নাকি ছিল না মা অমন বাদুড়-নাক, ঘুম দিলে ঐ চ্যাপ্টা নাকেই বাজ্তো সাতটা শাঁখ, দিদিমা তাই থ্যাবড়া মেরে ধ্যাব্ড়া করেছেন! অ-মা! আমি হেসে মরি, নাক ডেঙাডেং-ড্যাং! লম্ফানন্দে লাফ দিয়ে মা চ’লতে বেঁজির ছা, দাড়ির জালে প’ড়ে যাদুর আটকে গেছে গা, বিল্লি-বাচ্চা দিল্লি যেতে নাসিক এসেছেন! অ-মা! আমি হেসে মরি, নাক ডেঙাডেং-ড্যাং! দিদিমা কি দাদুর নাকে টাঙতে ‘আল্মানক্’ গজাল ঠুঁকে দেছেন ভেঙে বাঁকা নাকের কাঁখ? মুচি এসে দাদুর আমার নাক ক’রেছে ‘ট্যান’! অ-মা! আমি হেসে মরি, নাক ডেঙাডেং-ড্যাং! বাঁশির মতন নাসিকা মা মেলে নাসিকে, সেথায় নিয়ে চল দাদু দেখন-হাসিকে। সেথায় গিয়ে করুন দাদু গরুড় দেবের ধ্যান, খাঁদু-দাদু নাকু হবেন, নাক ডেঙাডেং-ড্যাং!
‘খাঁদু-দাদু’
[সঞ্চিতা, কাজী নজরুল ইসলাম, নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা, ২০০৫]
অন্ধকারে এসে তুমি অন্ধকারে গেছ চ’লে
বাণী
অন্ধকারে এসে তুমি অন্ধকারে গেছ চ’লে। তোমার পায়ের রেখা জাগে শূন্য গৃহের অঙ্গন-তলে।। কেন আমায় জাগালে না আঘাতে ঘুম ভাঙালে না, দ’লে কেন গেলে না গো যাবার বেলা চরণ-তলে।। কৃষ্ণা তিথির চাঁদের মত এসেছিলে গভীর রাতে, আলোর পরশ বুলিয়ে দিলে ঘুমন্ত মোর নয়ন-পাতে; তাই রজনীগন্ধা সুখে চেয়ে আছে উর্ধ্ব মুখে, ফুলগুলিরে জাগিয়ে গেলে নিঠুর আমায় গেলে ছ’লে।।