কীর্তন

  • নব কিশলয়-রাঙা শয্যা পাতিয়া

    বাণী

    নব কিশলয়-রাঙা শয্যা পাতিয়া
    বালিকা-কুঁড়ির মালিকা গাঁথিয়া
    আমি একেলা জাগি রজনী
    বঁধু,এলো না তো কই সৃজনী,
    বিজনে বসিয়া রচিলাম বৃথা
    বনফুল দিয়া ব্যজনী।
    কৃষ্ণচূড়ার কলিকা অফুট
    আমি তুলি আনিবৃথা রচিনু মুকুট,
    মোর হৃদয়ের রাজা এলো না,
    মোর হৃদি-সিংহাসন শূন্য রহিল
    আমি যাহার লাগিয়া বাসর সাজাই
    সে ভাবে মিছে এ খেলনা (সখি)।
    সে-যে জীবন লইয়া খেলা করে সখি,
    আমি মরণের তীরে ব'সে তা'রে ডাকি
    হেসে যায় বঁধু আনঘরে
    সে-যে জীবন লইয়া খেলা করে।
    সে-যে পাষাণের মুরতি বৃথা পূজা-আরতি
    	নিবেদন করি তার পায়:
    সাধে কি গো বলে সবে পাষাণ গলেছে কবে?
    	তবু মন পাষাণেই ধায় (সখি রে)।
    আমি এবার মরিয়া পুরুষ হইব,বঁধু হবে কুলবালা
    দিয়ে তারে ব্যথা যাব যথাতথা বুঝিবে সেদিন কালা,
    বিরহিণীর কি যে জ্বালা তখনি বুঝিবে কালা।
    দিয়ে তারে ব্যথা যাব যথাতথা বুঝিবে সেদিন কালা।।
    

  • না মিটিতে মনোসাধ যেয়ো না হে শ্যামচাঁদ

    বাণী

    	না মিটিতে মনোসাধ যেয়ো না হে শ্যামচাঁদ
    	আঁধার করিয়া ব্রজধাম, সখা হে —।
    	সোনার বরনী রাই অঙ্গে মাখিয়া ছাই
    	দিশা নাই কাঁদে অবিরাম, সখা হে —।।
    	অবিরাম কাঁদে রাই
    	তারে কাঁদায় যে তারি তরে
    	অবিরাম কাঁদে সখা হে।
    	এখনো মাধবী-লতা
    	কহেনি কুসুম-কথা
    		জড়াইয়া তরুর গলে,
    	এখনো ফোটেনি ভাষা
    	আধ-ফুট ভালোবাসা
    		ঢাকা লাজ পল্লব-তলে।
    		বলা হলো না,হলো না,
    	বুকের ভাষা মুখে বলা যে হলো না।
    সখা	আমরা নারী, বলতে নারি!
    	দুঃখের কথা মুখে বলতে নারি
    	নয়ন জলে গলতে পারি
    	তবু মুখে বলতে নারি
    	মরণ-কোলে ঢলতে পারি
    সখা	মুখ ফুটে তবু বলতে নারি, সখা হে —
    	নবীন নীরদ-বরণ শ‍্যাম জানিতাম মোরা তখনি,
    ঐ	করুণ সজল কাজল মেঘে থাকে গো ভীষণ অশনি।
    	তুমি আগুন জ্বালিলে,
    ওহে	নিরদয়! বুকে কেন আগুন জ্বালিলে।
    বুকে	আগুন জ্বালায়ে চোখে সলিল ঢালিলে।
    তাহে	আগুন নেভে কি?
    	চোখেরি জলে ডুবে আগুন নেভে কি
    	সথা হে- আগুন নেভে কি।।
    
  • ফিরে যা সখি ফিরে যা ঘরে

    বাণী

    ফিরে যা সখি ফিরে যা ঘরে
    থাকিতে দে লো এ পথে পড়ে
    যে পথ ধরে গিয়াছে হরি চলি’
    আমি যাব না আর গোকুলে,
    সখি শিশিরে আর ভয় কি করি ভেসেছি যবে অকূলে
    সখি দিসনে লো দিসনে লো রাখ গোপী-চন্দন,
    চন্দনে জুড়ায় না প্রাণের ক্রন্দন।
    দ্বিগুণ বাজায় জ্বালা নব মালতী-মালা,
    ও যে মালা নয়, মনে হয় সাপিনীর বন্ধন।।
    সখি যাহার লাগিয়া বসন ভূষণ, সেই গেল যদি চলে
    কি হবে এ ছার ভূষণের ভার ফেলে দে যমুনা-জলে।
    সকলের মায়া কাটায়েছি সখি, টুটিয়াছে সব বন্ধন,
    যেতে দে আমায়, যথা মথুরায় বিহরে নন্দ-নন্দন।।
    দেখব তারে, রাজার সাজে দেখব তারে
    রাজার সাজে কেমন মানায় গো-রাখা রাখাল-রাজে।
    
  • বাজে মঞ্জুল মঞ্জির রিনিকি ঝিনি

    বাণী

    বাজে মঞ্জুল মঞ্জির রিনিকি ঝিনি
    নীর ভরণে চলে রাধা বিনোদিনী
    তার চঞ্চল নয়ন টলে টলমল
    যেন দু'টি ঝিনুকে ভরা সাগর জল।।
    ও সে আঁখি না পাখি গো
    রাই ইতি-উতি চায়
    কভু তমাল-বনে কভু কদম-তলায়।
    রাই শত ছলে ধীরে পথ চলে কভু কন্টক বেঁধে চরণে
    তবু যে কাঁটা-লতায় আঁচল জড়ায় বেণী খুলে যায় অকারণে।
    গিয়ে যমুনার তীরে চায় ফিরে ফিরে আনমনে ব'সে গণে ঢেউ
    চকিতে কলসি ভরি’লয় তার যেই মনে হয় আসে কেউ।
    হায় হায় কেউ আসে না
    “ভোলো অভিমান রাধারানী” বলি’ শ্যাম এসে সম্ভাষে না।
    রাই চলিতে পারে না পথ আর,
    বিরস বদন অলস চরণ শূন্য-কলসি লাগে ভার।
    বলি,কালা নাহি এলো যমুনা তো ছিল লইয়া শীতল কালো জল।
    কেন ডুবিয়া সে-কলে উঠিলি আবার কাঁদায়ে ভাসাতে ধরাতল।।
    

  • বাঁধিয়া দুইজনে দুঁহু ভুজ

    বাণী

    বাঁধিয়া দুইজনে দুঁহু ভুজ বন্ধনে কাঁদিছে শ্যাম রাই।
    মিলনের মাঝে এত বেদনা যে বাজে গো – দেখি নাই, শুনি নাই।।
    সাগরে মিশে নদী, তবু কাঁদে নিরবধি, বুঝি না কেন গো –
    বুকে যত পায়, তত তৃষ্ণা বেড়ে যায়, সাধ মেটে না যেন গো।।
    সাধ কি মেটে গো চাঁদকে হেরে চকোরিণীর সাধ কি মেটে গো –
    মেঘ দেখে চাতকিনীর সাধ কি মেটে গো।
    হের, নব নাগরি নব নাগর মাতিল প্রেম-রসে,
    নব প্রভাত-কমলে যেন বন ভ্রমর বসে।
    নব সোনার শতদলে যেন নব মেঘের ছায়া
    কনকমালা ঘিরিল যেন বন নীল গিরি কায়া।
    গিরিধারীরে ধরিল, ধিরিধিরি রাধা গিরিধারীরে ধরিল।।
    আধ অধরে ধরে নাক’ হাসি, আধ-অধরে বাঁশি,
    হেরি’ আধ অঙ্গ দাস হতে চায়, আধ অঙ্গ দাসী;
    শ্রীচরণ ঘিরিয়া মন মধুকর গাহে, চরণাম্বুজ-রজ মাধুকরী চাহে।।
    বলে, ভিক্ষা দাও, ভিক্ষা দাও –
    ওই চরণ কমল-মধু ভিক্ষা দাও, ভিক্ষা দাও,
    ঐ যুগল-রূপ রাধা-শ্যাম দেখি যেন অবিরাম (ভিক্ষা দাও, ভিক্ষা দাও)
    আমি আনন্দ-যমুনা হয়ে, চরণ ধুয়ে যাব বয়ে, (ভিক্ষা দাও, ভিক্ষা দাও)
    আমি নিত্য হৃদি-ব্রজধামে
    হেরিব মোর রাধা-শ্যামে, (ভিক্ষা দাও, ভিক্ষা দাও)।।
    

    বেতার গীতিচিত্রঃ ‌‘যুগল মিলন’

  • ব্রজবাসী মোরা এসেছি মথুরা

    বাণী

    ব্রজবাসী মোরা এসেছি মথুরা, দ্বার ছেড়ে দাও দ্বারী।
    মথুরার রাজা হ’য়েছে মোদের কানাই গোঠ বিহারী।।
    [মথুরার রাজা হয়েছে হায় তোমাদের রাজা হয়েছে ভাই —
    কানাই গোঠ বিহারী, দ্বার ছেড়ে দাও দ্বারী।]*
    রাজ-দণ্ড কেমন মানায় শোভিত যে হাতে বাঁশি
    [শোভিত যে হাতে বাঁশি]*
    মুকুট মাথায় কেমন দেখায় শিরে শিখী-পাখা ধারী।।
    [সে শিরে শিখী-পাখা ধারী
    দ্বার ছেড়ে দাও দ্বারী।]*
    শ্যামলী ধেনুর দুগ্ধের ক্ষীর এনেছি কানুর লাগিয়া
    পাঠায়েছে তারে মথিয়া নবনী, যশোদা-নিশীথ জাগিয়া,
    বনমালী লাগি নব-নীপ-মালা আনিয়াছি হের [মোরা] গাঁথিয়া,
    কুড়ায়ে এনেছি ফেলে এসেছিল যে বাঁশরি বনচারী।।
    ব্রজের দুলাল রাখাল ব’সেছে রাজার আসন ’পরে,
    সারা গোকুলের এনেছি আশিস তাই রে তাহার তরে।
    পাঠায়েছে গোপী-চন্দন তাই রাই অনুরাগ ভরে
    (পাঠায়েছে রাই অনুরাগ ভরা গোপী চন্দন,
    পাঠায়েছে রাই [তাই] হরির লাগিয়া হরি চন্দন।)
    নয়ন-যমুনা ছানিয়া এনেছি আকুল অশ্রুবারি।।
    [দ্বার ছেড়ে দাও দ্বারী।।]*
    

    * রেকর্ডে গীত

  • ব্রজের দুলাল ব্রজে আবার

    বাণী

    ব্রজের দুলাল ব্রজে আবার আসবে ফিরে কবে?
    জাগবে কি আর ব্রজবাসী ব্যাকুল বেণুর রবে?
    	বাজবে নূপুর তমাল-ছায়ায়
    	বইবে উজান হৃদ্‌-যমুনায়,
    অভাগিনী রাধার কি আর তেমন সুদিন হবে? সখী গো!
    গোঠে নাহি যায় রাখালেরা আর লুটায়ে কাঁদে পথের ধূলায়,
    ধেনু ছুটে যায় মথুরা পানে না হেরি গোঠে রাখাল-রাজায়।
    উড়িয়া গিয়াছে শুক-সারি পাখি শুনি না কৃষ্ণ-কথা (আর),
    শ্যাম-সহকার তরুরে না-হেরি শুকালো মাধবী-লতা।
    শ্যাম বিনে নাই সে শ্যাম-কান্তি, শুকায়েছে সব।
    কদম তমাল তরু পল্লব হাসি উৎসব শুকায়েছে সব। সখি গো —
    চির-বসন্ত ছিল যথা আজ সেথা শূন্যতা হাহাকার রবে কাঁদে শ্যাম (হে)
    ললিতা বিশাখা নাই, নাই চন্দ্রাবলী নাই ব্রজে শ্রীদাম সুদাম। (সখী গো)
    
  • মণি-মঞ্জির বাজে অরুণিত চরণে

    বাণী

    মণি-মঞ্জির বাজে অরুণিত চরণে সখি
    রুনু ঝুনু রুনু ঝুনু মণি-মঞ্জির বাজে।
    হের গুঞ্জা-মালা গলে বনমালী চলিছে কুঞ্জ মাঝে।।
    চলে নওল কিশোর,
    হেলে দুলে চলে নওল কিশোর।
    হেরি সে লাবনি কৌস্তুভমণি নিষ্প্রভ হ’ল লাজে।
    চরণ-নখরে শ্যামের আমার চাঁদের মালা বিরাজে।। সখি গো —
    বঁধূর চলার পথে পরান পাতিয়া র’ব চলিতে দলিয়া যাবে শ্যাম;
    আমি হইয়া পথের ধূলি বক্ষে লইব তুলি’ চরণ-চিহ্ন অভিরাম।
    ভুলে যা তোরা রাধারে কৃষ্ণ-নিশির আঁধারে
    হারায়ে সে গেছে চিরতরে,
    কালো যমুনার জলে ডুবেছে সে অতল তলে
    ভেসে গেছে সে শ্যাম-সাগরে।।
    ঐ বাঁশি বাজিছে শোন রাধা ব’লে,
    তরুণ তমাল চলে, অঙ্গ-ভঙ্গে শিখি-পাখা টলে।
    তা’র হাসিতে বিজলি, কাজল-মেঘে যেন উঠিছে উছলি’।
    রূপ দেখে যা দেখে যা,
    কোটি চাঁদের জোছনা-চন্দন মেখে যা, মোর শ্যামলে দেখে যা।।
    
  • মম মধুর মিনতি শোন ঘনশ্যাম

    বাণী

    মম মধুর মিনতি শোন ঘনশ্যাম গিরিধারী
    কৃষ্ণমুরারী, আনন্দ ব্রজে তব সাথে মুরারি।।
    যেন নিশিদিন মুরলী-ধ্বনি শুনি
    উজান বহে প্রেম-যমুনারি বারি
    নূপুর হয়ে যেন হে বনচারী
    চরণ জড়ায়ে ধরে কাঁদিতে পারি।।
    
  • মাকে আদর করে কালী বলি

    বাণী

    মাকে আদর করে কালী বলি সে সত্যি কালো নয় রে।
    তার ঈষৎ হাসির এক ঝলকে জগৎ আলো হয় রে,
    			ত্রি-জগৎ আলো হয় রে।।
    (কালো নয় কালো নয়, চরণে যার মহাকাল
    পায়ের নখে চাঁদের মালা, কালো নয় কালো নয়)
    			সত্যি কালো নয় রে।।
    (আমরা) আপনভোলা পাগলী গিরিবালা
    মুন্ডামালায় মনে করে কুন্দফুলের মালা;
    (রয়) মরা-ছেলে বুকের ধ’রে শ্মশানে তন্ময় রে,
    রয় শ্মশানে তন্ময় রে।
    শ্মশানে সে থাকে ব’লে ভয়ঙ্করী নয় রে!
    (ভবের) খেলা-শেষে সকলেরে দেয় সে বরাভয় রে।।
    (সে) মারে যাকে, মালা করে তারেও পরে রয় রে!
    (সেই) তামসিকও যায়রে তরে (মাকে) তামসী যে কয় রে।।
    
  • মায়ের চেয়েও শান্তিময়ী মিষ্টি বেশি মেয়ের চেয়ে

    বাণী

    	মায়ের চেয়েও শান্তিময়ী মিষ্টি বেশি মেয়ের চেয়ে
    	চঞ্চলা এই লীলাময়ী মুক্তকেশী কালো মেয়ে।।
    সে	মিষ্টি যত দুষ্টু তত এই কালো মেয়ে
    	গিরিঝর্ণা সম এলো ধেয়ে এই পাবর্তী মেয়ে
    	করুণা অমৃত ধারায় ভুবন ছেয়ে এলো এই কালো মেয়ে।।
    	মাকে চোখে চোখে রাখি
    	যদি কভু দেয় সে ফাঁকি
    	আমি ভয়ে ভয়ে থাকি গো
    	এই মায়াময়ী মেয়ে নিয়ে ভয়ে ভয়ে থাকি গো।
    আমি	বহু সাধ্য-সাধনাতে পেয়েছি এই মা-কে রে
    	কোটি জনম তপস্যাতে পেয়েছি এই মা-কে রে
    	কোথায় রাখি, আমি কাঙালিনী
    	কোথায় রাখি স্বর্গের এই রত্ন পেয়ে
    আমি	কোথায় রাখি স্বর্গের এই রত্ন পেয়ে।।
    

  • মোরে সেইরূপে দেখা দাও হরি

    বাণী

    মোরে সেইরূপে দেখা দাও হরি।
    তুমি ব্রজের বালারে রাই কিশোরীরে
    ভুলাইলে যেই রূপ ধরি’।।
    হরি বাজায়ো বাঁশরি সেই সাথে,
    যে বাঁশি শুনিয়া ধেনু গোঠে যেত উজান বহিত যমুনাতে।
    যে নূপুর শুনে ময়ূর নাচিত এসো হে সেই নূপুর পরি।।
    নন্দ যশোদা কোলে গোপাল
    যে রূপে খেলিতে, ক্ষীর ননী খেতে এসো সেই রূপে ব্রজ দুলাল।
    যে পীত বসনে কদম তলায় নাচিতে এসো সে বেশ পরি।।
    কংসে বধিলে যে রূপে শ্যাম,
    কুরুক্ষেত্রে হলে সারথি এসো সেইরূপে এ ধরাধাম।
    যে রূপে গাহিলে গীতা নারায়ণ, এসো সে বিরাট রূপ ধরি।।
    
  • যা সখি যা তোরা গোকুলে ফিরে

    বাণী

    যা সখি যা তোরা গোকুলে ফিরে।
    যে পথে শ্যামরায় চ’লে গেছে মথুরায়
    কাঁদিতে দে ল’য়ে সেই পথ ধূলিরে॥
    এ তো ধূলি নয়, ধূলি নয়
    হরি-চরণ-চিহ্ন-আঁকা এ যে হরি-চন্দন ধূলি নয়, ধূলি নয়
    এই ধূলি মাখিয়া,
    হ’য়ে পাগলিনী ফিরিব ‘শ্যাম শ্যাম’ ডাকিয়া।
    হব যোগিনী এই ধূলি-তিলক-আঁকিয়া॥ (সখি গো)
    শুনিয়াছি দূতি মুখে, প্রিয়তম আছে সুখে সেই মম পরম প্রসাদ।
    ভুলিয়া এ রাধিকায়, সে যদি সুখ পায় তার সে সুখে সাধিব না বাদ॥
    আমার দীরঘ শ্বাসে উৎসব-বাতি তার যদি নিভে যায়।
    তাই ওলো ললিতা আমি হব ধূলি-দলিতা যাব না লো তার মথুরায়॥
    আমি মথুরায় যাব, না গেলে মথুরাতে মোর শ্যামে আর ফিরে পাব না। (সখি গো)
    হারানো মানিক কভু ফিরে লোকে পায়
    হারানো হৃদয় ফিরে নাহি পাওয়া যায়॥
    
  • শুকসারী সম তনু মন মম

    বাণী

    শুকসারী সম তনু মন মম নিশিদিন গাহে তব নাম।
    শুকতারা সম ছলছল আঁখি পথ চেয়ে থাকি ঘনশ্যাম।।
    	হে চির সুন্দর আধো রাতে আসি’
    	বল বল কে বাজায় আশার বাঁশি,
    কেন মোর জীবন-মরণ শ্রীহরি তব শ্রীচরণে সঁপিলাম।
    কেন গোপন রোদনের যমুনায় জোয়ার আসে?
    কেন নব নীরদ মায়া ঘনায় হৃদি-আকাশে।
    	দেখা যদি নাহি দেবে কেন মোরে ডাকিলে
    	কেন, অনুরাগ-তিলক ললাটে আঁকিলে
    কেন কুহু কেকা সম বিরহ অভিমান অন্তরে কাঁদে অবিরাম।।
    
  • শ্যামে হারায়েছি বলে কাঁদি না বিশাখা

    বাণী

    শ্যামে হারায়েছি বলে কাঁদি না বিশাখা হারায়েছি শ্যামের হৃদয়
    আমি তারি তরে কাঁদি গো সেই নিদয়ের তরে নয়
    তার হৃদয়ের তরে কাঁদি গো হারায়েছি শ্যামের হৃদয়।
    যে হৃদয় ছিল একা গোপিকার রাধিকার কুবুজা করেছে তারে জয়, সখি গো
    কুবুজা তারে কু বুঝায়েছে
    যে রাধা ছাড়া জানত না সই কুবুজা তারে কু বুঝায়েছে
    কুবুজা করেছে তারে জয়।
    কি হবে মথুরা গিয়া, হেরি সে হৃদয়হীন পাষাণ দেবতায়
    সে কিছুই দেবে না, দেবতাই বটে গো সে দেবতাই বটে গো
    পাষাণ খুঁজে না রাধা তার প্রিয় আনন্দঘন শ্যামরায়
    তোরা যেতে চাস যা লো —
    ঠাকুর দেখিতে তোরা যেতে চাস যা লো, সখি গো
    ধরম-করম মম তনু-মন-যৌবন সঁপিনু চরণে যার
    সে পর-পুরুষ, হ’ল আজি অপরার পুরুষ স্বভাব ভ্রমবার।
    সে ভ্রমরাই সমতুল ফুলে ফুলে ভ্রমে সে ভ্রমরাই সমতুল
    তারে, দেখলে ভ্রমে জাতিকুল, ভ্রমরাই সমতুল পুরুষ স্বভাব ভ্রমরার
    যা’র হরি ছাড়া বোধ নাই প্রবোধ দিস্‌নে তায়, সজনী
    সবারই পোহাবে নিশি, পোহাবে না রাধারই এ আঁধার রজনী॥
    
  • সখি কই গোপীবল্লভ শ্যামল পল্লব কান্তি

    বাণী

    সখি কই গোপীবল্লভ শ্যামল পল্লব কান্তি
    সখি আমার হরি বিনে হরি চন্দনে নাহি শান্তি।
    ঐ দেখ্ দেখ্ শ্যাম দাঁড়িয়ে
    ও নহে কদম তমাল পিয়াল পিয়া মোর ঐ দাঁড়িয়ে।
    ও নহে তরুণ শাখা ও যে মোর বঁধু আসে বাহু বাড়িয়ে।
    পুষ্প পাগল তরু কি কখনো দুলে গো অমন করিয়া
    (ও যে) বনমালা গলে বনমালী মোর নাচিছে হেলিয়া দুলিয়া।
    তোরা দেখে আয় তোরা দেখে আয়
    অভিমানে শ্যাম আসিছে না কাছে ডেকে আয় তারে ডেকে আয়
    তারি বিগলিত নীল লাবনি কি ঐ যমুনার কালো জলে
    বিজলির আঁখি ইঙ্গিতে সে কি ডাকে মোরে মেঘ দলে।
    সখি গো! তোরা যেতে দে মোরে যেতে দে আর দিস্‌নে বাধা
    (ঐ) গহন কালোতে গাহন করিয়া জুড়াক আলোক রাধা।।
    
  • সখি গো বৃথা প্রবোধ দিস্‌নে ললিতে

    বাণী

    সখি গো বৃথা প্রবোধ দিস্‌নে ললিতে
    কোন্ প্রাণে তুই বলতে পারিলি মোর শ্রীকৃষ্ণে ভুলিতে।।
    সেই নন্দপুরের চন্দ্র বিহনে নাহি আনন্দ মোর।
    তারে না হেরিলে তিলেকের তরে বাঁচে না চিত-চকোর।।
    বলে দে বলে দে কোথা আমার প্রাণসখা
    				ভাসি আমি আঁখি-নীরে 
    কেঁদে কেঁদে অন্ধ হলাম ভাসি আমি আঁখি-নীরে।
    সখি, এই তো আমার সাধনা
    আমার মত জগত কাঁদুক, এই তো আমার কামনা।।
    কাঁদতে হবে — 
    যে হরিরে মোর হরিবে, তায় রাধার মত কাঁদতে হবে।
    সে কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলে চিরজীবন কাঁদবে ভবে।
    সখি কাঁদলে তারে যায় না পাওয়া
    তাহলে সখি আমি পেতাম 
    যদি কাঁদলে তারে পাওয়া যেত যশোমতী তারে হারাত না।
    সে যে প্রেমের চির-কাঙাল 
    প্রেম বিনে তায় যায় না পাওয়া।
    
  • সখি তখন আমার বালিকা বয়স

    বাণী

    সখি তখন আমার বালিকা বয়স বেণু শুনেছিনু যবে।
    আমি বুঝিনি সেদিন, ডাকে বাশুরিয়া আমারেই বেণু রবে, 
    				সখি, আমারেই বেণু রবে।।
    তার বাঁশরির সুরে মাঝে মাঝে সখি শিহরিয়া উঠিতাম গো —
    মনে হ’ত ঐ সুরের আড়ালে আছে যেন মোর নাম গো।
    ডাকিত — ‌‘রাধা জাগো, জাগো প্রিয়া’,
    হের গো যমুনা তোমার বিরহে উঠিয়াছে উথলিয়া।।
    শিহরিত কলেবর, জাগিত ভীতি গো,
    ও কি পূর্বানুরাগ, ও কি প্রথম প্রীতি গো।সখি গো — 
    সখি, হেরিনু স্বপনে নব জলধর রসে-ঢলঢল কালা
    মোর বুকে এসে কাঁদে, বলে লহ, রাধে, কণ্ঠের বনমালা
    তার শিরে শিখি-পাখা, চাঁচর চিকুর দোলে কপোলের কাছে লো
    দোলে দোলে দোলে দোলে গো —
    সে বাঁশী রেখে পায় মুখপানে চায়, কি যেন ভিক্ষা যাচে।।
    আমি দিতে যে নারি লো, যাহা চায় তাহা আমি দিতে যে নারি লো;
    ও বোঝে না কুলবতী কুলের বাধা,
    দিতে যে নারী লো, দিতে যে নারি লো।
    
  • সখি বল কোন দেশে যাই

    বাণী

    সখি বল কোন দেশে যাই।
    সে বৃন্দা আছে সে বন আছে তবু সে বৃন্দাবন নাই —
    গোবিন্দ বিনে লো বৃন্দে (বৃন্দে গো) রাধার বৃন্দাবন হয়েছে আঁধার।
    বনে সীতার ছিল যে রাম, মোর বনে নাই ঘনশ্যাম।
    আমি কি লয়ে থাকি, কেন দেহ রাখি।
    পিঞ্জর আছে প'ড়ে, নাই শ্যাম পাখি,
    আর ময়ূর ডাকে না 'কে গো' বলিয়া।
    পাপিয়া ডাকে না পিয়া।
    কৃষ্ণপ্রিয়া গো 'প্রিয়া প্রিয়া' বলে পাপিয়া ডাকে না পিয়া।
    পথে পথে আর রহে না গো ব্রজগোপিনী আড়ি পাতিয়া।
    আজি রাধার সাথে সবার আড়ি,
    কৃষ্ণপ্রিয়ার কৃষ্ণ গেছে ছাড়ি'
    তাই রাধার সাথে সবার আড়ি, সখি গো —
    শুকায়ে গিয়াছে দ্বাদশ কুঞ্জ,
    পূর্ণ চাঁদেরই ব্রজে একাদশীর তিথি,
    হয়ত আবার বাজিবে বেণু তার, রবে না ব্রজে যবে রাধার স্মৃতি।।
    
  • সখি যায়নি ত শ্যাম মথুরায়

    বাণী

    সখি যায়নি ত শ্যাম মথুরায়,
    আর আমি কাঁদব না সই।
    সে যে রয়েছে তেমনি ঘিরে আমায়।
    মোর অন্তরতম আছে অন্তরে অন্তরালে সে যাবে কোথায়?
    আছে ধেয়ানে স্বপনে জাগরণে মোর নয়নের জলে আঁখি-তারায়।।
    কে বলে সখি অন্ধকার, এ বৃন্দাবনে কৃষ্ণ নাই, সখি গো –
    আমি অন্তরে পেয়েছি লো, বাহিরে হারিয়ে তায়,
    যাক্‌ না সে মথুরায়, যেথা তা’র প্রাণ চায়।।
    শ্যামে হেরিয়াছি যমুনার কালো জলে, সাগরে,
    আষাঢ়ের ঘন মেঘে হেরিয়াছি নাগরে।
    হেরিয়াছি তায় শ্যাম-শস্যে হেমন্তে,
    পীত-ধড়া হেরি তায় কুস্‌মি বসন্তে।।
    এঁকেছিলাম শ্যামের ছবি সেদিন সখি খেলার ছলে,
    আঁকিনি লো চরণ তাহার, পালায়ে সে যাবে ব’লে।
    আনিয়া দে আজ সে চিত্রপট আঁকিব লো আজ চরণ তা’র,
    সে যায়নি মথুরা কাঁদিস নে তোরা আছে আছে শ্যাম হৃদে আমার।।