ত্রিতাল

  • বসন্ত মুখর আজি

    বাণী

    বসন্ত মুখর আজি।
    দক্ষিণ সমীরণে মর্মর গুঞ্জনে
    বনে বনে বিহ্বল বাণী ওঠে বাজি’।।
    অকারণ ভাষা তার ঝর ঝর ঝরে
    মুহু মুহু কুহু কুহু পিয়া পিয়া স্বরে,
    পলাশ বকুলে অশোক শিমুলে —
    সাজানো তাহার কল–কথার সাজি।।
    দোয়েল মধুপ বন–কপোত কূজনে,
    ঘুম ভেঙে দেয় ভোরে বাসর শয়নে।
    মৌনী আকাশ সেই বাণী–বিলাসে
    অস্ত চাঁদের মুখে মৃদু মৃদু হাসে,
    বিরহ–শীর্ণা গিরি–ঝর্ণার তীরে —
    পাহাড়ি বেণু হাতে ফেরে সুর ভাঁজি’।।
    
  • বাদল ঝর ঝর আসিল ভাদর

    বাণী

    বাদল ঝর ঝর আসিল ভাদর
    বহিছে তরলতর পুবালি পবন।
    মেঘলা যামিনী, দামিনী চমকায়
    কালো মেয়ের ভীরু প্রেমের মতন।।
    আমি ভুলে গেছি, মেঘেরা ভোলেনি
    সেই কালো চোখ, সেই বিনুনী-বেণী,
    প্রিয়ার দূতী সম, স্বরণে আনে মম
    এসেছিল একদিন এমন শুভ-লগন।।
    আর কিছু ছিল কি, ছিল না ত’ স্মরণে,
    শুধু জানি দুই জন ছিনু এই ভুবনে।
    সহসা মোদের মাঝে ছুটে এলো পারাপার
    কে কোথায় হারাইনু, কূল নাহি পেনু আর,
    মনে পড়ে বরষায়, তার সেই অসহায়
    বিদায় বেলার আঁখি অশ্রু-সঘন।।
    
  • বিরহী বেণুকা যেন বাজে সখি ছায়ানটে

    বাণী

    বিরহী বেণুকা যেন বাজে সখি ছায়ানটে।
    উথলি’ উঠিল বারি শীর্ণা যমুনাতটে।।
    	নীরব কুঞ্জে কুহু
    	গেয়ে ওঠে মুহু মুহু,
    আঁধার মধু বনে বকুল চম্পা ফোটে।।
    সহসা সরস হল বিরস বৃন্দাবন,
    চন্দ্রা যামিনী হাসে খুলি মেঘ-গুণ্ঠন।
    	সে এলো, তারে নিরখি’
    	পরান কি রবে সখি,
    আবেশে অঙ্গ মম থরথর কেঁপে ওঠে।।
    
  • বিষাদিনী এসো শাওন সন্ধ্যায়

    বাণী

    বিষাদিনী এসো শাওন সন্ধ্যায়
    		কাঁদিব দুজনে।
    দীপালির উৎসবে আঁধারের ঠাঁই নাহি
    		কাহারো হাসি যদি নিভে যায়।
    তোমারি মতো তাই ম্লান-মুখ চিরদিন
    		লুকায়ে রাখি অবগুণ্ঠনে॥
    
  • বুল্‌বুলি নীরব নার্গিস বনে

    বাণী

    বুল্‌বুলি নীরব নার্গিস–বনে।
    ঝরা বন–গোলাপের বিলাপ শোনে।।
    শিরাজের নওরোজে ফাল্গুন মাসে
    যেন তার প্রিয়ার সমাধির পাশে,
    তরুণ ইরান–কবি কাঁদে নিরজনে।।
    উদাসীন আকাশ থির হ’য়ে আছে,
    জল–ভরা মেঘ ল’য়ে বুকের কাছে।
    সাকির শরাবের পিয়ালার ‘পরে
    সকরুণ অশ্রুর বেল ফুল ঝরে,
    চেয়ে আছে ভাঙা চাঁদ মলিন–আননে।।
    
  • বেণুকা ও-কে বাজায় মহুয়া বনে

    বাণী

    বেণুকা ও-কে বাজায় মহুয়া বনে।
    কেন ঝড় তোলে তার সুর আমার মনে।।
    বলে আয় সে দুরন্তে সখি
    আমারে কাঁদাবে সারা জনম ও-কি,
    সে কি ভুলিতে তারে দেবে না জীবনে।।
    সখি, ভাল ছিল তার তীর-ধনুক নিঠুর,
    বাজে আরো সকরুণ তা’র বেণুকার সুর।
    সখি, কেন সে বন-বিলাসী
    আমারই ঘরের পাশে বাজায় বাঁশি,
    আছে আরো কত দেশ, কত নারী ভুবনে।।
    
  • বেদনার সিন্ধু-মন্থন শেষ হে ইন্দ্রানী

    বাণী

    বেদনার সিন্ধু-মন্থন শেষ, হে ইন্দ্রানী,
    জাগো, জাগো করে সুধা-পাত্রখানি।।
    রোদন-সায়রে ধুয়ে পুষ্পতনু
    এসো অশ্রুর বরষার ইন্দ্র-ধনু,
    হের কুলে অনুরাগে জীবন-দেবতা জাগে
    	ধরিবে বলিয়া তব পদ্মপাণি।।
    তব দুখ-রাত্রির তপস্যা শেষ- এলো শুভ দিন,
    অতল-তমসা-লক্ষ্মী গো তুমি অমরার
    এসো এসো পার হ'য়ে ব্যথার পাথার।
    অশ্রুত অশ্রুর নীরবতা কর দূর
    	কূলে কূলে হাসির তরঙ্গ হানি।।
    

  • ব্রজ-দুলাল ঘন শ‍্যাম

    বাণী

    ব্রজ-দুলাল ঘন শ‍্যাম
    মোর হৃদে কর বিহার হে।।
    নব অনুরাগের জ্বালায়ে বাতি
    অঙ্গে অঙ্গে রাখি তব শেজ পাতি’
    গাঁথি অশ্রু-মোতিহার হে।।
    আরতি-প্রদীপ আঁখিতে জ্বালায়ে রাখি
    পথ-পানে চাহি বার বার হে।।
    নিবেদন করি নাথ তব চরণে
    নিত্য পূজা-উপচার হে
    বিরহ-গন্ধ ধূপ বেদনা চন্দন
    পূজাঞ্জলি আঁখি-ধার হে
    দেবতা এসো, খোল দ্বার হে।।
    
  • ভগবান শিব জাগো জাগো

    বাণী

    ভগবান শিব জাগো জাগো, ছাড়িয়া গেছেন দেবী শিবানী সতী।
    শক্তিহীন আজি সৃষ্টি চন্দ্র-সূর্য তারা হীন-জ্যোতি।।
    	হে শিব, সতীহারা হয়ে নিষ্প্রাণ
    	ভূ-ভারত হইয়াছে শবের শ্মশান,
    কোলে ল’য়ে প্রাণহীন জড়-সন্তান — শিবনাম জপে ধ’রা অশ্রুমতী।।
    
  • ভবনে আসিল অতিথি সুদূর

    বাণী

    ভবনে আসিল অতিথি সুদূর।
    সহসা উঠিল বাজি রুমু রুমু ঝুম
    	নীরব অঙ্গনে চঞ্চল নূপুর।।
    মুহু-মুহু বন-কুহু বোলে
    দোয়েল ধ্যান ভুলি চমকি আঁখি খোলে
    	কে গো কে বলে বন-ময়ূর।।
    দগ্ধ হিয়ার জ্বালা জুড়ায়ে
    সজল মেঘের শীতল চন্দন কে দিল বুলায়ে?
    বকুল কেয়া বীথি হ'তে
    ছুটে এলো সমীরণ চঞ্চল স্রোতে
    চাঁদিনী নিশীথের আবেশ আনে
    	মিলন তন্দ্রাতুর অলস-দুপুর।।
    
  • ভারতলক্ষ্মী মা আয় ফিরে এ ভারতে

    বাণী

    ভারতলক্ষ্মী মা আয় ফিরে এ ভারতে
    ব্যথায় মোদের চরণ ফেলে অরুণ আশার সোনার রথে॥
    অশ্রু গঙ্গার জলে ধুই মা তোর চরণ নিতি
    ত্রিশ কোটি কণ্ঠে বাজে রোদনে তোর বোধনগীতি
    আয় মা দলিত রাঙা হৃদয় বিছানো পথে॥
    বিজয়া তোর হ’ল কবে শতাব্দী চলিয়া যায়
    ভারত-বিজয়-লক্ষ্মী ভারতে ফিরিয়া আয়
    বিসর্জনের কান্না মা এবার তুই এসে থামা
    সফল কর এ তপস্যা মা স্থান দে স্বাধীন জগতে॥
    
  • ভোরে ঝিলের জলে শালুক-পদ্ম

    বাণী

    ভোরে ঝিলের জলে শালুক-পদ্ম তোলে কে
    		ভ্রমর-কুন্তলা কিশোরী
    ফুল দেখে বেভুল সিনান বিসরি’।।
    একি নূতন লীলা আঁখিতে দেখি ভুল
    কমল ফুল যেন তোলে কমল ফুল
    ভাসায়ে আকাশ-গাঙে অরুণ-গাগরি।।
    ঝিলের নিথর জলে আবেশে ঢল ঢল
    গ’লে পড়ে শত সে তরঙ্গে,
    শারদ-আকাশে দলে দলে আসে
    মেঘ, বলাকার খেলিতে সঙ্গে।
    আলোক-মঞ্জরি প্রভাত বেলা
    বিকশি’ জলে কি গো করিছে খেলা
    বুকের আঁচলে ফুল উঠিছে শিহরি’।।
    
  • ভোরের হাওয়া এলে

    বাণী

    ভোরের হাওয়া এলে ঘুম ভাঙাতে কি
    		চুম হেনে নয়ন-পাতে।
    ঝিরি ঝিরি ধীরি ধীরি কুণ্ঠিত ভাষা
    		গুণ্ঠিতারে শুনাতে॥
    হিম-শিশিরে মাজি’ তনুখানি
    ফুল-অঞ্জলি আন ভরি’ দুই পাণি,
    ফুলে ফুলে ধরা যেন ভরা ফুলদানি
    		বিশ্ব-সুষমা সভাতে॥
    
  • মধুর নূপুর রুমুঝুমু বাজে

    বাণী

    মধুর নূপুর রুমুঝুমু বাজে।
    কে এলে মনোহর নটবর-সাজে।।
    নিশীথের ফুল ঝরে রাঙা পায়ে
    মাধবী রাতের চাঁদ এলে কি লুকায়ে,
    'পিয়া পিয়া' ব'লে পাখি ডাকে বন-মাঝে।।
    
  • মম তনুর ময়ূর-সিংহাসনে

    বাণী

    মম তনুর ময়ূর-সিংহাসনে এসো রূপকুমার ফর্‌হাদ্‌।
    (মোর)ঘুম যবে ভাঙিল, প্রিয়, গগনে ঢলিয়া পড়িল চাঁদ।।
    আমি শিঁরি – হেরেমের১ নন্দিনী গো
    ছিনু অহঙ্কারের কারা-বন্দিনী গো,
    ভেবেছিনু তুমি শুধু রূপের পাগল —
    বুঝি নাই কা’রে বলে প্রেম-উন্মাদ।।
    গিরি-পাষাণে আঁকিলে তুমি যে ছবি মম, দিলে যে মধু,
    সেই মধু চেয়ে, সেই শিলা বুকে ল’য়ে কাঁদি,
    ফিরে এসো, ফিরে এসো বঁধু।
    ল’য়ে যাও সেই প্রেম-লোকে, বিরহী
    কাঁদিছে যথায় ‘শিঁরি শিঁরি’ কহি’—
    আজ ভরিয়াছে বিষাদের বিলাপে গোলাপের সাধ।।
    

    ১. বাদশাহ

  • মম প্রাণ-শতদল হোক প্রণামী-কমল

    বাণী

    মম প্রাণ-শতদল হোক প্রণামী-কমল (ওগো) তব চরণে
    আমার এ হৃদয় নাথ হোক তন্ময় তোমারি স্বরণে তোমারি স্বরণে॥
    তব পূজার বেদী হোক আমার এ মন
    হোক্ আরতি-প্রদীপ মোর এ দুটি নয়ন
    নাথ, লহ মোরে পায় তোমারি সেবায় জীবনে-মরণে॥
    মম দুঃখে সুখে মম তৃষিত বুকে তুমি বিরাজ,
    মোর সকল কাজে বীণা-বেণু সম নিশিদিন বাজো॥
    মোর দেহখানি, নাথ চন্দন প্রায়
    হোক্ ক্ষয় তব মন্দির-পাষাণ-শিলায়,
    পাই যেন লয়, নাথ, তব সৃষ্টির রূপে বরণে॥
    
  • মম মধুর মিনতি শোন ঘনশ্যাম

    বাণী

    মম মধুর মিনতি শোন ঘনশ্যাম গিরিধারী
    কৃষ্ণমুরারী, আনন্দ ব্রজে তব সাথে মুরারি।।
    যেন নিশিদিন মুরলী-ধ্বনি শুনি
    উজান বহে প্রেম-যমুনারি বারি
    নূপুর হয়ে যেন হে বনচারী
    চরণ জড়ায়ে ধরে কাঁদিতে পারি।।
    
  • মরম-কথা গেল সই মরমে ম’রে

    বাণী

    মরম-কথা গেল সই মরমে ম’রে।
    শরম বারণ যেন করিল চরণ ধ’রে।।
    ছল ক’রে কত শত সে মম রুধিত পথ
    লাজ ভয়ে পলায়েছি সে ফিরেছে ব্যথাহত
    অনাদরে প্রেম-কুসুম গিয়াছে ম’রে।।
    কত যুগ মোর আশে ব’সে ছিল পথ-পাশে
    কত কথা কত গান জানায়েছে ভালোবেসে
    শেষে অভিমানে নিরাশে গিয়াছে স’রে।।
    

  • মাগো চিন্ময়ী রূপ ধরে আয়

    বাণী

    মাগো চিন্ময়ী রূপ ধ’রে আয়।
    মৃন্ময়ী রূপ তোর পূজি শ্রী দুর্গা তাই দুর্গতি কাটিল না হায়।।
    	যে মহা-শক্তির হয় না বিসর্জন
    	অন্তরে বাহিরে প্রকাশ যার অনুখন
    মন্দিরে দুর্গে রহে না যে বন্দী সেই দুর্গারে দেশ চায়।।
    আমাদের দ্বিভুজে দশভুজা-শক্তি দে পরম ব্রহ্মময়ী।
    শক্তিপূজার ফল ভক্তি কি পাব শুধু হব না কি বিশ্বজয়ী?
    এই পূজা-বিলাস সংহার কর্‌ যদি, পুত্র শক্তি নাহি পায়।।
    
  • মৃত্যু নাই নাই দুঃখ আছে শুধু প্রাণ

    বাণী

    মৃত্যু নাই, নাই দুঃখ, আছে শুধু প্রাণ।
    আনন্ত আনন্দ হাসি অফুরান।।
    	নিরাশার বিবর হ’তে
    	আয় রে বাহির পথে,
    দেখ্ নিত্য সেথায় — আলোকের অভিযান।।
    ভিতর হ’তে দ্বার বন্ধ ক’রে
    জীবন থাকিতে কে আছিস্‌ ম’রে।
    	ঘুমে যারা অচেতন
    	দেখে রাতে কু-স্বপন,
    প্রভাতে ভয়ের নিশি হয় অবসান।।