বাণী

শাওন আসিল ফিরে সে ফিরে এল না
বরষা ফুরায়ে গেল আশা তবু গেল না।
ধানী রং ঘাগরি, মেঘ–রং ওড়না
পরিতে আমারে মাগো, অনুরোধ ক’রো না
কাজরির কাজল মেঘ পথ পেল খুঁজিয়া
সে কি ফেরার পথ পেল না মা, পেল না।।
আমার বিদেশিরে খুঁজিতে অনুক্ষণ
বুনো হাঁসের পাখার মত উড়ু উড়ু করে মন।
অথৈ জলে মাগো, মাঠ–ঘাট থৈ থৈ
আমার হিয়ার আগুন নিভিল কই?
কদম–কেশর বলে, ‘কোথা তোর কিশোর’,
চম্পাডালে ঝুলে শূন্য দোলনা।।

বাণী

শুধু নামে যাঁহার এত মধু সে বঁধু কেমন
শুধু নাম শুনে যাঁর জাগে জোয়ার পরানে এমন।।
	শুধু যাহার বাঁশির সুরে
	আমার এত নয়ন ঝুরে
ওগো না জানি তার রূপ কেমন মদন-মোহন।।
সে বুঝি লো' অপরূপ সে চির-নতুন
বাঁশির সুরের মতো আঁখি-সকরুণ।
	তারে আমি দেখি যদি
	কাঁদিব কি নিরবধি
ওগো, যেমন ক'রে ঐ যমুনা কাঁদে অনুক্ষণ।।

বাণী

শ্যামলা বরণ বাংলা মায়ের রূপ দেখে যা, আয় রে আয়
গিরি–দরি, বনে–মাঠে, প্রান্তরে রূপ ছাপিয়ে যায়।।
ধানের ক্ষেতে, বনের ফাঁকে, দেখে যা মোর কালো মা–কে
ধূলি–রাঙা পথের বাঁকে বৈরাগিনী বীণ বাজায়।।
ভীরু মেয়ে পালিয়ে বেড়ায় পল্লীগ্রামে এক্‌লাটি
বিজনমাঠে গ্রাম সে বসায় নিয়ে কাদা, খড়, মাটি
কালো মেঘের ঝারি নিয়ে করুণা–বারি ছিটায়।।
কাজলা–দীঘির পদ্মফুলে যায় দেখা তার পদ্ম–মুখ
খেলে বেড়ায় ডাকাত–মেয়ে বনে লয়ে বাঘ–ভালুক
ঝড়ের সাথে নৃত্যে মাতে বেদের সাথে সাপ নাচায়।।
নদীর স্রোতে পাথর নুড়ির কাঁকন চুড়ি বাজে তার
সাঁঝের বারান্দাতে দাঁড়ায় টীপ প’রে সন্ধ্যা–তারার।
ঊষার গাঙে ঘট ভরিতে যায় সে মেয়ে ভোর বেলায়।
হরিত শস্যে লুটায় আঁচল ঝিল্লিতে নূপুর বাজে
ভাটিয়ালি গায় ভাটির স্রোতে গায় বাউল মাঠের মাঝে (মা)।
গঙ্গা–তীরে শ্মশান–ঘাটে কেঁদে কভু বুক ভাসায়।।

বাণী

শক্তের তুই ভক্ত শ্যামা (তোরে) যায় না পাওয়া কেঁদে।
(তাই) শাক্ত সাধক রাখে তোরে ভক্তি-ডোরে বেঁধে।।
(মা) শাক্ত বড় শক্ত ছেলে
(সে) জানে দড়ি আলগা পেলে
যাবি পালিয়ে চোখে ধূলা দিয়ে মায়া জালে বেঁধে।।
(তুই) সুরাসুরে ভুলিয়ে রাখিস্‌ ইন্দ্রত্বের মোহে,
(ওমা) গুণের কিছু ঘাট নাই তোর নির্গুণ তাই কহে।
তোর মায়াতে ভুলে গিয়ে,
বিষ্ণু ঘুমান লক্ষী নিয়ে
(তোর) অন্ত খুঁজে শিব হয়েছেন ভবঘুরে বেদে।।

বাণী

শত জনম আঁধারে আলোকে তারকা-গ্রহে লোকে লোকে
প্রিয়তম! খুঁজিয়া ফিরেছি তোমারে।।
	স্বপন হয়ে রয়েছ নয়নে
	তপন হ’য়ে হৃদয়-গগনে,
হেরিয়া তোমারে বিরহ-যমুনা, প্রিয়তম! দুলিয়া উঠে বারে বারে।।
হে লীলা-কিশোর! ডেকেছে আমারে তোমার বাঁশি,
যুগে যুগে তাই তীর্থ-পথিক ফিরি উদাসী।
	দেখা দাও, তবু ধরা নাহি দাও
	ভালোবাস ব’লে তাই কি কাঁদাও,
তোমারি শুভ্র পূজার-পুষ্প প্রিয়তম! ফুটিয়া ওঠে অশ্রুধারে।।

বাণী

শ্রীকৃষ্ণ রূপের করো ধ্যান অনুক্ষণ
হবে নিমেষে সংসার-কালীয় দমন।।
	নব-জলধর শ্যাম
	রূপ যাঁর অভিরাম
(যাঁর)	আনন্দ ব্রজধাম লীলা নিকেতন।।
বিদ্যুৎ - বর্ণ পীতান্বরধারী,
বনমালা-বিভূষিত মধুবনারী;
গোপ-সখা গোপী-বঁধু মনোহারী
নওল-কিশোর তনু মদনমোহন।।