শ্যামা নামের লাগলো আগুন আমার দেহ ধূপ–কাঠিতে। যত জ্বলি সুবাস তত ছড়িয়ে পড়ে চারিভিতে।। ভক্তি আমার ধূমের মত উর্দ্ধে ওঠে অবিরত, শিব–লোকের দেব–দেউলে মা’র শ্রীচরণ পরশিতে।। ওগো অন্তর–লোক শুদ্ধ হল পবিত্র সেই ধূপ–সুবাসে, মা’র হাসিমুখ চিত্তে ভাসে চন্দ্রসম নীল আকাশে। যা কিছু মোর পুড়ে কবে চিরতরে ভস্ম হবে মা’র ললাটে আঁকব তিলক সেই ভস্ম–বিভূতিতে।।
শাওন–রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে বাহিরে ঝড় বহে, নয়নে বারি ঝরে।। ভুলিও স্মৃতি মম, নিশীথ–স্বপন সম আঁচলের গাঁথা মালা ফেলিও পথ ‘পরে।। ঝুরিবে পূবালি বায় গহন দূর–বনে, রহিবে চাহি’ তুমি একেলা বাতায়নে। বিরহী কুহু–কেকা গাহিবে নীপ–শাখে যমুনা–নদীপারে শুনিবে কে যেন ডাকে। বিজলী দীপ–শিখা খুঁজিবে তোমায় প্রিয়া দু’ হাতে ঢেকো আঁখি যদি গো জলে ভরে।।
শূন্য আজি গুল-বাগিচা যায় কেঁদে দখিন হাওয়া। রাঙা গুলের বাজার আজি স্মৃতির কাটায় ছাওয়া।। ধূলি ঢাকা ফুল সমাধি আজি সে গুলিস্তানে ছিল যথায় খুশির জলসা বুলবুলির গজল গাওয়া।। শুকনো পাতায় ছেয়েছে আজ সাকির চরণ রেখা নাহি সেথায় বঁধুর লাগি বঁধূর আসা-যাওয়া।। নাহি মিঠা পানির নহর আছে প'ড়ে বালুচর এ যেন গো হৃদয়ের ভরা-ডুবির পথ বাওয়া।।
শ্যামে হারায়েছি বলে কাঁদি না বিশাখা হারায়েছি শ্যামের হৃদয় আমি তারি তরে কাঁদি গো সেই নিদয়ের তরে নয় তার হৃদয়ের তরে কাঁদি গো হারায়েছি শ্যামের হৃদয়। যে হৃদয় ছিল একা গোপিকার রাধিকার কুবুজা করেছে তারে জয়, সখি গো কুবুজা তারে কু বুঝায়েছে যে রাধা ছাড়া জানত না সই কুবুজা তারে কু বুঝায়েছে কুবুজা করেছে তারে জয়। কি হবে মথুরা গিয়া, হেরি সে হৃদয়হীন পাষাণ দেবতায় সে কিছুই দেবে না, দেবতাই বটে গো সে দেবতাই বটে গো পাষাণ খুঁজে না রাধা তার প্রিয় আনন্দঘন শ্যামরায় তোরা যেতে চাস যা লো — ঠাকুর দেখিতে তোরা যেতে চাস যা লো, সখি গো ধরম-করম মম তনু-মন-যৌবন সঁপিনু চরণে যার সে পর-পুরুষ, হ’ল আজি অপরার পুরুষ স্বভাব ভ্রমবার। সে ভ্রমরাই সমতুল ফুলে ফুলে ভ্রমে সে ভ্রমরাই সমতুল তারে, দেখলে ভ্রমে জাতিকুল, ভ্রমরাই সমতুল পুরুষ স্বভাব ভ্রমরার যা’র হরি ছাড়া বোধ নাই প্রবোধ দিস্নে তায়, সজনী সবারই পোহাবে নিশি, পোহাবে না রাধারই এ আঁধার রজনী॥
শিউলি তলায় ভোর বেলায় কুসুম কুড়ায় পল্লী-বালা। শেফালি পুলকে ঝ’রে পড়ে মুখে খোঁপাতে চিবুকে আবেশ-উতলা।। ঘোম্টা খুলিয়া তার পিঠে লুটায় শিথিল কবরী লুটিছে পায়, নৃত্যের ভঙ্গে ফুল তোলে রঙ্গে, আধো আঁধার বন তার রূপে উজালা।। নিলাজ পাঁয়জোরে তার ওঠে ঝঙ্কার রিনিঝিনি, মন কয় চিনি চিনি এ কি গো বন-দেবীর সতিনী শিশির ধরে’ পায় আল্তার রঙ্ চায় পাখি তারি গান গায় বনে নিরালা।।
