বাণী

	কেঁদো না কেঁদো না মাগো কে বলেছে কালো?
	ইষৎ হাসিতে তোর ত্রিভুবন আলো, কে বলেছে কালো।।
		কে দিয়েছে গালি তোরে, মন্দ সে মন্দ!
		যে বলেছে কালি তোরে, অনধ সে অন্ধ!
মোর	তারায় সে দেখে নাই তার নয়ন-তারা য়নাই আলো!
		তাই তারায় সে দেখে নাই।।
রাখে	লুকিয়ে মা তোর নয়ন-কমল (মাগো)
		কোটি আলোর সহস্র দল
তোর	রূপ দেখে মা লজ্জায় শিব অঙ্গে ছাই মাখালো।।
তোর	নীল -কপোলে কোটি তারা, চন্দনেরি ফোটার পারা
		ঝিকিমিকি করে গো —
মা	তোর দেহলতায় অতুল কোটি রবি -শশীর মুকুল
		ফোটে আবার ঝরে গো —
তুমি	হোমের শিখা বহ্নি- জ্যোতি, তুমি স্বাহা দীপ্তিমতী
	আঁধার ভুবন ভবনে মা কল্যাণ-দীপ জ্বালো
		তুমি কল্যাণ-দীপ জ্বালা।।

বাণী

কথা কও, কও কথা, থাকিও না চুপ ক'রে।
মৌন গগনে হের কথার বৃষ্টি ঝরে।।
ধীর সমীরণ নাহি যদি কহে কথা
ফোটে না কুসুম, নাহি দোলে বনলতা।
কমল মেলে না দল, যদি ভ্রমর না গুঞ্জরে।।
শোন কপোতীর কাছে কপোত কি কথা কহে,
পাহাড়ের ধ্যান ভাঙি মুখর ঝর্ণা বহে।
আমার কথার লঘু মেঘগুলি হায়!
জ'মে হিম হয়ে যায় তোমার নীরবতায়;
এসো আরো কাছে এসো কথার নূপুর প'রে।।

গীতিচিত্রঃ অতনুর দেশ

বাণী

কিছু নাহি যার তোমারে দিবার কি তার ভিক্ষা লবে!
তুমি কেঁদে গেলে আমারে শুধুই নীরবে কাঁদিতে হবে।।
	হেথা একদিন কিশোর বেলায়
	বেঁধেছিনু ঘর পুতুল-খেলায়,
সে সাথি আমার ফিরিবে না আর নব বসন্ত-উৎসবে।।
একদা হেথায় ফুটেছিল হেনা,
সে-ফুল আবার ফুটিবে হেথায় সে তো আর আসিবে না
	ওগো ভিখারি কি দিব তোমায়
	শূন্য দেউলে কুসুম শুকায়,
ক্ষমিও আমার শত অপরাধ, ভিখারিনী আমি ভবে।।

বাণী

কেমনে রাখি আঁখি–বারি চাপিয়া
প্রাতে কোকিল কাঁদে নিশীথে পাপিয়া।।
এ ভরা ভাদরে আমার মরা নদী
উথলি’ উথলি’ উঠিছে নিরবধি
আমার এ ভাঙা ঘটে, আমার এ হৃদিতটে
চাপিতে গেলে ওঠে দু’কূল ছাপিয়া।।
নিষেধ নাহি মানে আমার এ পোড়া আঁখি
জল লুকাবো কত কাজল মাখি’ মাখি’
ছলনা ক’রে হাসি, অমনি জলে ভাসি
ছলিতে গিয়া আসি ভয়েতে কাঁপিয়া।।

বাণী

কার নিকুঞ্জে রাত কাটায়ে আস্‌লে প্রাতে পুষ্প-চোর।
ডাকছে পাখি, ‘বৌ গো জাগো’ আর ঘুমায়ো না, রাত্রি ভোর।।
যুঁই-কুঁড়িরা চোখ মেলে চায় চুম্‌কুড়ি দেয় মৌমাছি
শাপলা-বনে চাঁদ ডুবে যায় ম্লান চোখে হায় চায় চকোর।।
ঘোম্‌টা ঠেলি’ কয় চামেলি গোল ক’রো না গুল্‌-ডাকাত,
ঢুলছে নয়ন, দুলছে গলায় বেল-টগরের ছিন্ন ডোর।।
গুন্‌গুনিয়ে মোর আঙিনায় কোন্‌ সতীনের গাইছ গুন্‌
কার মালঞ্চে ফুল ফোটায়ে হুল ফোটালে বক্ষে মোর।।

বাণী

কোথায় তুই খুঁজিস ভগবান্, সে যে রে তোরই মাঝে রয়,
			চেয়ে দেখ সে তোরই মাঝে রয়।
সাজিয়া যোগী ও দরবেশ খুঁজিস্ যায় পাহাড় জঙ্গলময়।।
আঁখি খোল্ ইচ্ছা-অন্ধের দল নিজেরে দেখ্ রে আয়নাতে,
দেখিবি তোরই এই দেহে নিরাকার তাঁহার পরিচয়।।
ভাবিস্ তুই ক্ষুদ্র কলেবর, ইহাতেই অসীম নীলাম্বর,
এ দেহের আধারে গোপন রহে সে বিশ্ব-চরাচর।
প্রাণে তোর প্রাণের ঠাকুর বেহেশ্‌তে স্বর্গে কোথাও নয়।।
এই তোর মন্দির-মসজিদ এই তোর কাশী-বৃন্দাবন,
আপনার পানে ফিরে চল কোথা তুই তীর্থে যাবি, মন!
এই তোর মক্কা-মদিনা, জগন্নাথ-ক্ষেত্র এই হৃদয়।।